ছয় মাসের বাস্তবায়ন পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
আর্থিক সংকটের ধাক্কা এডিপিতে
হামিদ-উজ-জামান
২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চলমান আর্থিক সংকটের ধাক্কা লেগেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। ডলার ও টাকার সংকটে অনেক প্রকল্পে কাক্সিক্ষত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কমেছে।
পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময় এই হার ছিল ২৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়নে গতি না থাকায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি এখনো ১০ শতাংশ বরাদ্দই ব্যয় করতে পারেনি ৯টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘পুরোপুরি অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এটা হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। কেননা কোনো বছর একটু বেশি বাস্তবায়ন হবে আবার কোনো বছর কম হবে এটাই স্বাভাবিক। এখন যেটুকু বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে সেটুকু শেষ কোয়ার্টারে গিয়ে হয়তো পূরণ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত হতাশার কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করছি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে।’
তবে বর্তমান অবস্থায় প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, চলমান সংকটের ধাক্কায় হয়তো এডিপির বাস্তবায়ন কমেছে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। অর্থাৎ যেসব প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ স্থগিত বা কমানো হয়েছে সেগুলোর আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হলে এখানেই শেষ করা উচিত।
এক্ষেত্রে হিসাব করে দেখতে হবে অপ্রয়োজনীয় হিসাবে চিহ্নিত প্রকল্পের অনুকূলে কত টাকা খরচ হয়েছে। আর সেগুলো শেষ পর্যন্ত টানতে গেলে আরও কত টাকা লাগবে। সেই সঙ্গে দেখতে হবে শেষ করলে লাভ কী হবে। যদি দেখা যায় লাভ তেমন হবে না তাহলে যা অপচয় হয়েছে হোক, আরও অপচয় বাড়ানো ঠিক হবে না।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে গত ছয় মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ৬০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে (৬ মাসে) এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ২৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ যুগান্তরকে বলেন, চলমান সংকটের প্রভাব পড়েছে এডিপিতে। কেননা অর্থবছরের শুরুতে এ, বি এবং সি ক্যাটাগরি ভাগ করে প্রকল্পের গুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে কারণে অনেক প্রকল্প কম বরাদ্দ পাচ্ছে। কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ স্থগিতও আছে।
তাই ওই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কম হয়েছে। সেটির প্রভাব পড়েছে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। আগামীতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আছে। এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। যেসব প্রকল্প বরাদ্দ কম পাচ্ছে বা পাচ্ছে না পরবর্তীকালে সেগুলো মেয়াদ বাড়াতে হবে। আর মেয়াদ বাড়লে অবধারিতভাবেই প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি পায়।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ৯টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার এডিপি বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এগুলো হলো-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এক টাকাও খরচ করতে পারেনি); অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ); বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (২ দশমিক ৪৯ শতাংশ) এবং জরনিরাপত্তা বিভাগ (২ দশমিক ৯৯ শতাংশ)।
এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
তবে এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্রও আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাস্তবায়ন করেছে সর্বোচ্চ ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
সেতু বিভাগ, বাস্তবায়ন করেছে ৪৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন করেছ ৪৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাস্তবায়ন করেছে ৪০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
আর্থিক সংকটের ধাক্কা এডিপিতে
ছয় মাসের বাস্তবায়ন পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
চলমান আর্থিক সংকটের ধাক্কা লেগেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। ডলার ও টাকার সংকটে অনেক প্রকল্পে কাক্সিক্ষত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কমেছে।
পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময় এই হার ছিল ২৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়নে গতি না থাকায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি এখনো ১০ শতাংশ বরাদ্দই ব্যয় করতে পারেনি ৯টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘পুরোপুরি অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এটা হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। কেননা কোনো বছর একটু বেশি বাস্তবায়ন হবে আবার কোনো বছর কম হবে এটাই স্বাভাবিক। এখন যেটুকু বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে সেটুকু শেষ কোয়ার্টারে গিয়ে হয়তো পূরণ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত হতাশার কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করছি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে।’
তবে বর্তমান অবস্থায় প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, চলমান সংকটের ধাক্কায় হয়তো এডিপির বাস্তবায়ন কমেছে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। অর্থাৎ যেসব প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ স্থগিত বা কমানো হয়েছে সেগুলোর আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হলে এখানেই শেষ করা উচিত।
এক্ষেত্রে হিসাব করে দেখতে হবে অপ্রয়োজনীয় হিসাবে চিহ্নিত প্রকল্পের অনুকূলে কত টাকা খরচ হয়েছে। আর সেগুলো শেষ পর্যন্ত টানতে গেলে আরও কত টাকা লাগবে। সেই সঙ্গে দেখতে হবে শেষ করলে লাভ কী হবে। যদি দেখা যায় লাভ তেমন হবে না তাহলে যা অপচয় হয়েছে হোক, আরও অপচয় বাড়ানো ঠিক হবে না।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে গত ছয় মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ৬০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে (৬ মাসে) এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ২৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ যুগান্তরকে বলেন, চলমান সংকটের প্রভাব পড়েছে এডিপিতে। কেননা অর্থবছরের শুরুতে এ, বি এবং সি ক্যাটাগরি ভাগ করে প্রকল্পের গুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে কারণে অনেক প্রকল্প কম বরাদ্দ পাচ্ছে। কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ স্থগিতও আছে।
তাই ওই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কম হয়েছে। সেটির প্রভাব পড়েছে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। আগামীতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আছে। এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। যেসব প্রকল্প বরাদ্দ কম পাচ্ছে বা পাচ্ছে না পরবর্তীকালে সেগুলো মেয়াদ বাড়াতে হবে। আর মেয়াদ বাড়লে অবধারিতভাবেই প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি পায়।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ৯টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার এডিপি বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এগুলো হলো-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এক টাকাও খরচ করতে পারেনি); অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ); বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (২ দশমিক ৪৯ শতাংশ) এবং জরনিরাপত্তা বিভাগ (২ দশমিক ৯৯ শতাংশ)।
এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
তবে এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্রও আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাস্তবায়ন করেছে সর্বোচ্চ ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
সেতু বিভাগ, বাস্তবায়ন করেছে ৪৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন করেছ ৪৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাস্তবায়ন করেছে ৪০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।