সরকারের হাতে ক্ষমতা রেখে বিল পাশ
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা সরকারের কাছে রাখার বিধান রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে এটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়। তবে বিল পাশের তীব্র বিরোধিতা করেন বিরোধী দলের সদস্যরা। জনস্বার্থবিরোধী আইন আখ্যা দিয়ে বিল পাশের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন গণফোরামের সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান।
গত ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধন আনা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই অধ্যাদেশটি সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। সে অনুযায়ী গত ৫ জানুয়ারি অধ্যাদেশটি সংসদে উত্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসবের উৎপাদন বৃদ্ধি, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।
এতদিন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করত। এখন দাম বাড়ানোর জন্য এই শুনানির দরকার হবে না। সরকার প্রয়োজন মনে করলে দাম বাড়াতে পারবে।
বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পানির ট্যাংকের নিচে ফুটো থাকলে কখনোই তা ভরাট করা যাবে না। যতদিন পর্যন্ত রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থাকবে, ততদিন এখানে লস থাকবে। সাবসিডিটা কী। আশা করি, মন্ত্রী বিস্তারিত বলবেন। সাবসিডির নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে প্রাইভেট পাওয়ার প্ল্যান্টকে সেখানে পেমেন্ট করে।
বিলটি জনমত যাচাইয়ের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে গণফোরামের সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, সরকার গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এই আইনটিকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার কারণ লুটপাট আর দুর্নীতি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় এই সদস্য আরও বলেন, বিদ্যুতের অরাজকতা আর লুটপাট নিয়ে কথা বললে সরকারের গায়ে লাগে। প্রধানমন্ত্রী তাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিলে কী হবে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আছে, তিনি করতে পারেন।
মোকাব্বির খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর তার নির্বাচনি এলাকার জনগণ মনে করছেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে, এ কারণে তাকে কম কথা বলার অনুরোধ করেছেন। এজন্য তিনি বেশি কিছু বলতে চান না।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষ দিশেহারা। সামনে রমজান। এর আগে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে। বিলের সংশোধনী নিয়ে মোকাব্বির খান বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়লে সবকিছুর ওপর এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু এতে সরকারের কিছু যায় আসে না।
গণতান্ত্রিক সরকার আর ইনডেমনিটি, কালো আইন একসঙ্গে যায় না। মানুষের ওপর আস্থা হারালে সরকার কালো আইন করে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার কি জনগণের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই আইন করছে এই আইনের একমাত্র উদ্দেশ্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো।
পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ঢাকায় দিনের বেলা গ্যাস থাকে না। সকাল থেকে ৩টা-৪টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।
গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়। তিনি বলেন, দেশের মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। এরকম খারাপ সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না।
বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুতে যে সাবসিডি, সেটা মূলত জনগণের প্রতি ইনভেস্টমেন্ট। কুইক রেন্টাল ছিল স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা।
ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১০ বছরের জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হলে সেখানে থাকুন বা না থাকুন ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এমন বলা যাবে না যে, যে কয়দিন থাকবেন সে কয়দিনের ভাড়া দেবেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সময় বিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ। এর অর্ধেকই চুরি হতো। এখন সিস্টেম লস ৬৭ শতাংশ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল বিলটি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সরকারের হাতে ক্ষমতা রেখে বিল পাশ
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা সরকারের কাছে রাখার বিধান রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে এটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়। তবে বিল পাশের তীব্র বিরোধিতা করেন বিরোধী দলের সদস্যরা। জনস্বার্থবিরোধী আইন আখ্যা দিয়ে বিল পাশের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন গণফোরামের সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান।
গত ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধন আনা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই অধ্যাদেশটি সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। সে অনুযায়ী গত ৫ জানুয়ারি অধ্যাদেশটি সংসদে উত্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসবের উৎপাদন বৃদ্ধি, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।
এতদিন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করত। এখন দাম বাড়ানোর জন্য এই শুনানির দরকার হবে না। সরকার প্রয়োজন মনে করলে দাম বাড়াতে পারবে।
বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পানির ট্যাংকের নিচে ফুটো থাকলে কখনোই তা ভরাট করা যাবে না। যতদিন পর্যন্ত রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থাকবে, ততদিন এখানে লস থাকবে। সাবসিডিটা কী। আশা করি, মন্ত্রী বিস্তারিত বলবেন। সাবসিডির নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে প্রাইভেট পাওয়ার প্ল্যান্টকে সেখানে পেমেন্ট করে।
বিলটি জনমত যাচাইয়ের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে গণফোরামের সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, সরকার গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এই আইনটিকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার কারণ লুটপাট আর দুর্নীতি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় এই সদস্য আরও বলেন, বিদ্যুতের অরাজকতা আর লুটপাট নিয়ে কথা বললে সরকারের গায়ে লাগে। প্রধানমন্ত্রী তাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিলে কী হবে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আছে, তিনি করতে পারেন।
মোকাব্বির খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর তার নির্বাচনি এলাকার জনগণ মনে করছেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে, এ কারণে তাকে কম কথা বলার অনুরোধ করেছেন। এজন্য তিনি বেশি কিছু বলতে চান না।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষ দিশেহারা। সামনে রমজান। এর আগে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে। বিলের সংশোধনী নিয়ে মোকাব্বির খান বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়লে সবকিছুর ওপর এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু এতে সরকারের কিছু যায় আসে না।
গণতান্ত্রিক সরকার আর ইনডেমনিটি, কালো আইন একসঙ্গে যায় না। মানুষের ওপর আস্থা হারালে সরকার কালো আইন করে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার কি জনগণের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই আইন করছে এই আইনের একমাত্র উদ্দেশ্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো।
পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ঢাকায় দিনের বেলা গ্যাস থাকে না। সকাল থেকে ৩টা-৪টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।
গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়। তিনি বলেন, দেশের মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। এরকম খারাপ সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না।
বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুতে যে সাবসিডি, সেটা মূলত জনগণের প্রতি ইনভেস্টমেন্ট। কুইক রেন্টাল ছিল স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা।
ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১০ বছরের জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হলে সেখানে থাকুন বা না থাকুন ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এমন বলা যাবে না যে, যে কয়দিন থাকবেন সে কয়দিনের ভাড়া দেবেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সময় বিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ। এর অর্ধেকই চুরি হতো। এখন সিস্টেম লস ৬৭ শতাংশ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল বিলটি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।