জাপানি মায়ের জিম্মায় থাকবে দুই শিশু
বাবার মামলা খারিজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের সেই দুই শিশুকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা। এছাড়া দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। নাবালিকা দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সেদিক বিবেচনায় রেখে এ রায় দেওয়া হয়। রোববার দুপুরে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় দেন।
রায়ের সময় এক সন্তান জেসমিন মালিকা তার মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে ছিলেন। তবে বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে বাড়িতে ছিলেন অপর সন্তান লাইলা লিনা।
রায়ের পর জেসমিন মালিকা বলেন, বাবাকে আমরা ভালোবাসলেও আমরা মায়ের সঙ্গেই থাকতে চাই। বাবা আমাদের সঙ্গে যখন দেখা করতে চাইবেন, আমরা অবশ্যই তার সঙ্গে দেখা করব। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মা নাকানো এরিকো বলেন, আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আদালত বাবার করা মামলা খারিজ করে দেওয়ায় দুই শিশু মায়ের হেফাজতে থাকবে।
অপরদিকে রায়ে সংক্ষুব্ধ বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাদীর সঙ্গে বিবাহের সময় বিবাদী ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছিলেন। সুতরাং তাদের বিবাহ মুসলিম রীতিনীতি মেনেই হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী তাদের সন্তান মুসলিম হবে। কিন্তু জাপানে তার মায়ের তত্ত্বাবধানে এই সন্তানদের মুসলিম রীতিনীতি মেনে লালন-পালন করার মতো পরিবেশ নেই। এছাড়াও আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণে যেসব দলিল উপস্থাপন করেছি যেসব নজির দিয়েছি, তার কোনো পর্যালোচনা এ রায়ে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। আপিল বিচারের ধারাবাহিকতা। তাই আপিল নিষ্পত্তির পরই সিদ্ধান্ত হবে সন্তানরা কাদের সঙ্গে থাকবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ : রায়ে আদালত বলেছেন, মামলা করার কারণ আদালতের কাছে প্রমাণ করতে পারেনি বাদীপক্ষ। বরং আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, জাপান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা দুই শিশুর বেড়ে ওঠা জাপানে। সেখানে তারা লেখাপড়া করেছে। তাদের মা নাকানো এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনটি সন্তান জন্মের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সন্তানদের পাশে ছিলেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, জাপানে বেড়ে ওঠা দুই শিশুর প্রাথমিক শুশ্রূষাকারী তাদের মা নাকানো এরিকো। অথচ তাকে কিছু না জানিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ অন্য একটি দেশে নিয়ে আসাটা মাতৃত্বের বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন রূপটিকে অসম্মান করার নামান্তর।
রায়ে আদালত আরও বলেছেন, বাবা হিসাবে ইমরান শরীফ নাবালিকা দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার পূর্ণ হকদার। তবে জাপানি মায়ের কাছে দুই নাবালিকার হেফাজত তাদের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক, তথা সার্বিক মঙ্গলজনক বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
বাবার মামলা খারিজ যে কারণে : মামলার কাগজপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাপানি নারী নাকানো এরিকো ও ইমরান শরীফ দম্পতির বিয়ে, জাপানে তাদের তিন কন্যা সন্তানের জন্ম, তাদের কর্মজীবন, সংসার জীবনের নানা তথ্য উঠে এসেছে এই মামলায়। রায়ে আদালত বলেছেন, জাপান থেকে আসা দুই শিশুর মা-বাবা দুজনই বলেছেন, জাপানে থাকার সময় দুই নাবালিকা শিশু পড়াশোনায় খুব মেধাবী ছিল। তাদের ফল খুব ভালো ছিল। তাদের বাবা দাবি করেন, এ দেশে আনার পর দুই শিশুকে একটা প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি করানো হয়। একই সঙ্গে তারা অনলাইনে আমেরিকার একটি স্কুলে পড়াশোনা করছিল। আদালত বলেন, জাপানে পড়াশোনা করা দুই মেধাবী শিশুকে বাবার একান্ত চিন্তাভাবনা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত সমীচীন নয়। আদালত রায়ে আরও বলেছেন, জাপানের টোকিও পারিবারিক আদালতে একই বিষয়ে মামলা চলা অবস্থায় মায়ের সম্মতি ছাড়া বাবা দুই শিশুকে এ দেশে নিয়ে আসেন। একই বিষয়ে জাপানে বিচারাধীন মামলার তথ্য লুকিয়ে একই বিষয়ে মামলা করার সাধারণ যৌক্তিক চিন্তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর বিষয়টি নাবালিকা কন্যাদের মানসিক বিকাশের স্বার্থে নিঃসন্দেহে মারাত্মক ও অনুসরণ অযোগ্য কাজ বলে প্রতীয়মান হয়। রায়ে এই দম্পতির দুই মেয়ের মতামত তুলে ধরেছেন আদালত। বড় মেয়ে স্পষ্ট বলেছে, তার জন্ম বেড়ে ওঠা জাপানে। বাবার বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। তবে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। তার স্কুলের সব বন্ধু জাপানে থাকে। সে জাপানে যেতে চায়। রায়ে আদালত বলেছেন, জাপান ছেড়ে আসার আগ পর্যন্ত তিন বোন একসঙ্গে ছিল। তারা এখনো বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। সে ক্ষেত্রে অভ্যাসগত বসবাসের জায়গা থেকেও তিন বোনকে বিচ্ছিন্ন করা তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে মঙ্গলজনক হবে না বলে প্রতীয়মান হয়।
এ প্রসঙ্গে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আদালত বলেন, নাবালক-নাবালিকার হেফাজত ঠিক করার ক্ষেত্রে তাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল বা কল্যাণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এই দম্পতির সব ধরনের তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে আদালত বলেছেন, সাধারণ অন্য দশটা মায়ের মতো জাপানি মা তার সন্তানদের দেখভাল করেন। বাবা বাসায় থাকা সাপেক্ষে স্ত্রীকে সহযোগিতা করতেন। তবে নাবালিকা কন্যাদের প্রাথমিক যত্নকারী হিসাবে জাপানি মায়ের তুলনায় বাবার কাছে তাদের হেফাজত অধিকতর কল্যাণকর, তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বাদী। ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন ইমরান শরীফ। মামলায় বাদীপক্ষের তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। আর বিবাদীপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাপানি মা এরিকো। আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ ও দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে রোববার এই রায় ঘোষণা করেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জাপানি মায়ের জিম্মায় থাকবে দুই শিশু
বাবার মামলা খারিজ

বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের সেই দুই শিশুকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা। এছাড়া দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। নাবালিকা দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সেদিক বিবেচনায় রেখে এ রায় দেওয়া হয়। রোববার দুপুরে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় দেন।
রায়ের সময় এক সন্তান জেসমিন মালিকা তার মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে ছিলেন। তবে বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে বাড়িতে ছিলেন অপর সন্তান লাইলা লিনা।
রায়ের পর জেসমিন মালিকা বলেন, বাবাকে আমরা ভালোবাসলেও আমরা মায়ের সঙ্গেই থাকতে চাই। বাবা আমাদের সঙ্গে যখন দেখা করতে চাইবেন, আমরা অবশ্যই তার সঙ্গে দেখা করব। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মা নাকানো এরিকো বলেন, আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আদালত বাবার করা মামলা খারিজ করে দেওয়ায় দুই শিশু মায়ের হেফাজতে থাকবে।
অপরদিকে রায়ে সংক্ষুব্ধ বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাদীর সঙ্গে বিবাহের সময় বিবাদী ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছিলেন। সুতরাং তাদের বিবাহ মুসলিম রীতিনীতি মেনেই হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী তাদের সন্তান মুসলিম হবে। কিন্তু জাপানে তার মায়ের তত্ত্বাবধানে এই সন্তানদের মুসলিম রীতিনীতি মেনে লালন-পালন করার মতো পরিবেশ নেই। এছাড়াও আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণে যেসব দলিল উপস্থাপন করেছি যেসব নজির দিয়েছি, তার কোনো পর্যালোচনা এ রায়ে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। আপিল বিচারের ধারাবাহিকতা। তাই আপিল নিষ্পত্তির পরই সিদ্ধান্ত হবে সন্তানরা কাদের সঙ্গে থাকবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ : রায়ে আদালত বলেছেন, মামলা করার কারণ আদালতের কাছে প্রমাণ করতে পারেনি বাদীপক্ষ। বরং আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, জাপান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা দুই শিশুর বেড়ে ওঠা জাপানে। সেখানে তারা লেখাপড়া করেছে। তাদের মা নাকানো এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনটি সন্তান জন্মের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সন্তানদের পাশে ছিলেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, জাপানে বেড়ে ওঠা দুই শিশুর প্রাথমিক শুশ্রূষাকারী তাদের মা নাকানো এরিকো। অথচ তাকে কিছু না জানিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ অন্য একটি দেশে নিয়ে আসাটা মাতৃত্বের বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন রূপটিকে অসম্মান করার নামান্তর।
রায়ে আদালত আরও বলেছেন, বাবা হিসাবে ইমরান শরীফ নাবালিকা দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার পূর্ণ হকদার। তবে জাপানি মায়ের কাছে দুই নাবালিকার হেফাজত তাদের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক, তথা সার্বিক মঙ্গলজনক বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
বাবার মামলা খারিজ যে কারণে : মামলার কাগজপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাপানি নারী নাকানো এরিকো ও ইমরান শরীফ দম্পতির বিয়ে, জাপানে তাদের তিন কন্যা সন্তানের জন্ম, তাদের কর্মজীবন, সংসার জীবনের নানা তথ্য উঠে এসেছে এই মামলায়। রায়ে আদালত বলেছেন, জাপান থেকে আসা দুই শিশুর মা-বাবা দুজনই বলেছেন, জাপানে থাকার সময় দুই নাবালিকা শিশু পড়াশোনায় খুব মেধাবী ছিল। তাদের ফল খুব ভালো ছিল। তাদের বাবা দাবি করেন, এ দেশে আনার পর দুই শিশুকে একটা প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি করানো হয়। একই সঙ্গে তারা অনলাইনে আমেরিকার একটি স্কুলে পড়াশোনা করছিল। আদালত বলেন, জাপানে পড়াশোনা করা দুই মেধাবী শিশুকে বাবার একান্ত চিন্তাভাবনা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত সমীচীন নয়। আদালত রায়ে আরও বলেছেন, জাপানের টোকিও পারিবারিক আদালতে একই বিষয়ে মামলা চলা অবস্থায় মায়ের সম্মতি ছাড়া বাবা দুই শিশুকে এ দেশে নিয়ে আসেন। একই বিষয়ে জাপানে বিচারাধীন মামলার তথ্য লুকিয়ে একই বিষয়ে মামলা করার সাধারণ যৌক্তিক চিন্তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর বিষয়টি নাবালিকা কন্যাদের মানসিক বিকাশের স্বার্থে নিঃসন্দেহে মারাত্মক ও অনুসরণ অযোগ্য কাজ বলে প্রতীয়মান হয়। রায়ে এই দম্পতির দুই মেয়ের মতামত তুলে ধরেছেন আদালত। বড় মেয়ে স্পষ্ট বলেছে, তার জন্ম বেড়ে ওঠা জাপানে। বাবার বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। তবে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। তার স্কুলের সব বন্ধু জাপানে থাকে। সে জাপানে যেতে চায়। রায়ে আদালত বলেছেন, জাপান ছেড়ে আসার আগ পর্যন্ত তিন বোন একসঙ্গে ছিল। তারা এখনো বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। সে ক্ষেত্রে অভ্যাসগত বসবাসের জায়গা থেকেও তিন বোনকে বিচ্ছিন্ন করা তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে মঙ্গলজনক হবে না বলে প্রতীয়মান হয়।
এ প্রসঙ্গে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আদালত বলেন, নাবালক-নাবালিকার হেফাজত ঠিক করার ক্ষেত্রে তাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল বা কল্যাণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এই দম্পতির সব ধরনের তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে আদালত বলেছেন, সাধারণ অন্য দশটা মায়ের মতো জাপানি মা তার সন্তানদের দেখভাল করেন। বাবা বাসায় থাকা সাপেক্ষে স্ত্রীকে সহযোগিতা করতেন। তবে নাবালিকা কন্যাদের প্রাথমিক যত্নকারী হিসাবে জাপানি মায়ের তুলনায় বাবার কাছে তাদের হেফাজত অধিকতর কল্যাণকর, তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বাদী। ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন ইমরান শরীফ। মামলায় বাদীপক্ষের তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। আর বিবাদীপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাপানি মা এরিকো। আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ ও দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে রোববার এই রায় ঘোষণা করেন।