দলীয় কর্মসূচিতে সরকারি সুবিধা নিচ্ছে আ.লীগ
জোটের বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ডাবল স্ট্যান্ডার্ড পার্টি। কারণ, তারা মুখে বলে একটা, কাজ করে আরেকটা। রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে কোনো মূল্যে বিরোধী দলের কর্মসূচি তারা করতে দেবে না। অন্যদিকে দলীয় কর্মসূচিতেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। যুগপৎ আন্দোলন মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি কর্নেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচি সরকার পতন আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। বিএনপির পদযাত্রাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মরণযাত্রা বলেছেন-এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার এমন মন্তব্যে বোঝা যায়, কিশোর কুমারের একটা গান আছে না, মরণযাত্রা নিয়ে, ওইটা ওনার মনে পড়েছে। উনি ওনার নিজের চিন্তা করছেন কি না জানি না।’
১২ দলীয় জোট গঠনের পর মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এটাই আনুষ্ঠানিক বৈঠক। গত শুক্রবার গণতন্ত্রের মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব। বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। এ সময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের প্রোগ্রামের সময় তিন দিন আগে থেকে যানবাহন বন্ধ করে দেয়। তিন দিন আগে পুলিশকে নামিয়ে দিয়ে চেকপোস্ট বসায়। মোবাইল ফোন পর্যন্ত তারা চেক করতে থাকে। ঢাকার সমাবেশের আগে তারা ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে তারা হাজার হাজার লোককে ধরে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কৌশল। যে কোনো মূল্যে হোক বিরোধী দলকে তারা কর্মসূচি করতে দেবে না। অন্যদিকে ভিন্নমত সহ্য না করে তাদেরটা করতেই থাকবে। সেক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করবে। আওয়ামী লীগের চরিত্র ও কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে এসে গেছে। তারা এ দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন। ১২ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির কারি মো. আবু তাহের, জমিয়তে ওলামায় ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের তফাজ্জল হোসেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আগামী দিনে সরকার পতনের আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে, সে ব্যাপারে জোট নেতাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী দিনে আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে নানা ধরনের প্রলোভন, লোভ-লালসা দেখানো হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে যাতে কোনো অবিশ্বাস, সন্দেহ তৈরি না হয়। জোটের অতীত কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে সামনের দিনগুলোয় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা।
আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নসহ সার্বিক বিষয়ে আরও সমন্বয় প্রয়োজন বলে জোটের পক্ষ থেকে অনেকে দাবি জানান। এ লক্ষ্যে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দল নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমন্বয় কমিটি করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে বিএনপির এক নেতা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গোটা জাতিকে একটা অশান্তিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশের মানুষ কেউ জানে না, কীভাবে নির্বাচন হবে। তার ভোটটা দিতে পারবে কি পারবে না, সেটা তারা জানে না। কারণ, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) অতীতে যে কাজগুলো করেছে, এতে মানুষ নিশ্চিত হয়ে গেছে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কোনোদিন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হয় না।
নতুন দল ও জোট যুক্ত হওয়ার কারণে আন্দোলন ভিন্নমাত্রা পেয়েছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই। মানুষের মধ্যে একটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য দল এই দাবির সঙ্গে একমত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছে। এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় মাত্রা যোগ করেছে এবং মানুষকে আশ্বস্ত করছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের চলমান যে আন্দোলন, সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। দেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ভবিষ্যতের কর্মসূচি কী হওয়া উচিত এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য, আর কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।
১২ দলীয় জোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আলোচনা করে একটা স্থির সিদ্ধান্তের দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমি সুনির্দিষ্টভাবে সেই সিদ্ধান্তের কথা এখনই বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে চাই, সারা দেশে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করাই মূল লক্ষ্য।
সরকার ছদ্মবেশে বাকশাল কায়েম করেছে : এদিকে বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও ভোটের অধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। অথচ গণতন্ত্রের জন্যই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর তারা বাকশাল গঠন করে। এখন ক্ষমতায় এসে ছদ্মবেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে।
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন এ জাতি ব্যর্থ জাতিতে পরিণত হবে। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই দেশকে বাঁচাতে আইনজীবীদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে এ আলোচনার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দির সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আব্দুল জব্বার ভুঁইয়া প্রমুখ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জোটের বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল
দলীয় কর্মসূচিতে সরকারি সুবিধা নিচ্ছে আ.লীগ

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ডাবল স্ট্যান্ডার্ড পার্টি। কারণ, তারা মুখে বলে একটা, কাজ করে আরেকটা। রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে কোনো মূল্যে বিরোধী দলের কর্মসূচি তারা করতে দেবে না। অন্যদিকে দলীয় কর্মসূচিতেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। যুগপৎ আন্দোলন মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি কর্নেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচি সরকার পতন আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। বিএনপির পদযাত্রাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মরণযাত্রা বলেছেন-এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার এমন মন্তব্যে বোঝা যায়, কিশোর কুমারের একটা গান আছে না, মরণযাত্রা নিয়ে, ওইটা ওনার মনে পড়েছে। উনি ওনার নিজের চিন্তা করছেন কি না জানি না।’
১২ দলীয় জোট গঠনের পর মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এটাই আনুষ্ঠানিক বৈঠক। গত শুক্রবার গণতন্ত্রের মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব। বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। এ সময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের প্রোগ্রামের সময় তিন দিন আগে থেকে যানবাহন বন্ধ করে দেয়। তিন দিন আগে পুলিশকে নামিয়ে দিয়ে চেকপোস্ট বসায়। মোবাইল ফোন পর্যন্ত তারা চেক করতে থাকে। ঢাকার সমাবেশের আগে তারা ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে তারা হাজার হাজার লোককে ধরে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কৌশল। যে কোনো মূল্যে হোক বিরোধী দলকে তারা কর্মসূচি করতে দেবে না। অন্যদিকে ভিন্নমত সহ্য না করে তাদেরটা করতেই থাকবে। সেক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করবে। আওয়ামী লীগের চরিত্র ও কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে এসে গেছে। তারা এ দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন। ১২ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির কারি মো. আবু তাহের, জমিয়তে ওলামায় ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের তফাজ্জল হোসেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আগামী দিনে সরকার পতনের আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে, সে ব্যাপারে জোট নেতাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী দিনে আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে নানা ধরনের প্রলোভন, লোভ-লালসা দেখানো হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে যাতে কোনো অবিশ্বাস, সন্দেহ তৈরি না হয়। জোটের অতীত কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে সামনের দিনগুলোয় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা।
আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নসহ সার্বিক বিষয়ে আরও সমন্বয় প্রয়োজন বলে জোটের পক্ষ থেকে অনেকে দাবি জানান। এ লক্ষ্যে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দল নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমন্বয় কমিটি করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে বিএনপির এক নেতা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গোটা জাতিকে একটা অশান্তিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশের মানুষ কেউ জানে না, কীভাবে নির্বাচন হবে। তার ভোটটা দিতে পারবে কি পারবে না, সেটা তারা জানে না। কারণ, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) অতীতে যে কাজগুলো করেছে, এতে মানুষ নিশ্চিত হয়ে গেছে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কোনোদিন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হয় না।
নতুন দল ও জোট যুক্ত হওয়ার কারণে আন্দোলন ভিন্নমাত্রা পেয়েছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই। মানুষের মধ্যে একটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য দল এই দাবির সঙ্গে একমত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছে। এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় মাত্রা যোগ করেছে এবং মানুষকে আশ্বস্ত করছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের চলমান যে আন্দোলন, সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। দেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ভবিষ্যতের কর্মসূচি কী হওয়া উচিত এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য, আর কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।
১২ দলীয় জোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আলোচনা করে একটা স্থির সিদ্ধান্তের দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমি সুনির্দিষ্টভাবে সেই সিদ্ধান্তের কথা এখনই বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে চাই, সারা দেশে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করাই মূল লক্ষ্য।
সরকার ছদ্মবেশে বাকশাল কায়েম করেছে : এদিকে বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও ভোটের অধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। অথচ গণতন্ত্রের জন্যই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর তারা বাকশাল গঠন করে। এখন ক্ষমতায় এসে ছদ্মবেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে।
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন এ জাতি ব্যর্থ জাতিতে পরিণত হবে। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই দেশকে বাঁচাতে আইনজীবীদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে এ আলোচনার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দির সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আব্দুল জব্বার ভুঁইয়া প্রমুখ।