ফের খোলাবাজার থেকে এলএনজি কিনছে সরকার
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ থাকার পর ফের খোলাবাজার থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। প্রথম দফায় ৮৫০ কোটি টাকায় প্রায় ৬২ হাজার টন এলএনজি কেনা হবে। আগামী জুন পর্যন্ত সরকার ১২ কার্গো এলএনজি খোলাবাজার থেকে কেনার পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। যার প্রথম চালান আসবে চলতি মাসের শেষদিকে। ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে এই এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের প্রতিবছর ৮০টি কার্গো পরিচালনা করার সক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ৫৬টি কার্গো আসছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়। আর খোলাবাজার থেকে ২৪টি কার্গো আনার সুযোগ রয়েছে। তবে বর্তমানে যে দাম তাতে এত কার্গো আনা কঠিন।
জানা যায়, প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম পড়বে ১৯.৭৮ মার্কিন ডলারের মতো। খোলাবাজার থেকে কেনা এই এলএনজি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের দিকে দেশে এসে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ঠিকাদার হিসাবে আছে ফ্রান্সের কোম্পানি টোটাল গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার বিজনেস সার্ভিসেস।
শিল্পকারখানার মালিকরা বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী যে চরম গ্যাস সংকট চলছিল, তা কিছুটা হলেও নিরসন হবে। গ্যাসের চাপ বাড়লে শিল্পকারখানাগুলো সচল হবে। বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে সারা দেশে অনেক কারখানা দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কাতারের রাস গ্যাস প্রথম এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি কার্গো আসে ওমান থেকেও। দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খোলাবাজার থেকেও এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়।
প্রথমদিকে এলএনজি পাওয়া যেত প্রতি এমএমবিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) ৬ থেকে ৭ ডলারে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পর থেকে দাম বাড়তে থাকবে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের কারণে দাম বেড়ে ৬২ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় গত বছরের জুলাইয়ে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। মোট ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হতো দীর্ঘমেয়াদি এবং খোলাবাজার থেকে আনা এলএনজি দিয়ে। এর মধ্যে খোলাবাজার থেকে আনা হয় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই এলএনজি আনা বন্ধ হওয়ার পর গ্যাসের ঘাটতি দেখা দেয়। ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় রেশনিংও শুরু করে। কিন্তু ঘাটতি মেটাতে পারছিল না। এই সিদ্ধান্তের পর সেই ঘাটতি কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতি মেটাতে খোলাবাজারের এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ফের খোলাবাজার থেকে এলএনজি কিনছে সরকার
দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ থাকার পর ফের খোলাবাজার থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। প্রথম দফায় ৮৫০ কোটি টাকায় প্রায় ৬২ হাজার টন এলএনজি কেনা হবে। আগামী জুন পর্যন্ত সরকার ১২ কার্গো এলএনজি খোলাবাজার থেকে কেনার পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। যার প্রথম চালান আসবে চলতি মাসের শেষদিকে। ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে এই এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের প্রতিবছর ৮০টি কার্গো পরিচালনা করার সক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ৫৬টি কার্গো আসছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়। আর খোলাবাজার থেকে ২৪টি কার্গো আনার সুযোগ রয়েছে। তবে বর্তমানে যে দাম তাতে এত কার্গো আনা কঠিন।
জানা যায়, প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম পড়বে ১৯.৭৮ মার্কিন ডলারের মতো। খোলাবাজার থেকে কেনা এই এলএনজি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের দিকে দেশে এসে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ঠিকাদার হিসাবে আছে ফ্রান্সের কোম্পানি টোটাল গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার বিজনেস সার্ভিসেস।
শিল্পকারখানার মালিকরা বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী যে চরম গ্যাস সংকট চলছিল, তা কিছুটা হলেও নিরসন হবে। গ্যাসের চাপ বাড়লে শিল্পকারখানাগুলো সচল হবে। বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে সারা দেশে অনেক কারখানা দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কাতারের রাস গ্যাস প্রথম এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি কার্গো আসে ওমান থেকেও। দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খোলাবাজার থেকেও এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়।
প্রথমদিকে এলএনজি পাওয়া যেত প্রতি এমএমবিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) ৬ থেকে ৭ ডলারে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পর থেকে দাম বাড়তে থাকবে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের কারণে দাম বেড়ে ৬২ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় গত বছরের জুলাইয়ে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। মোট ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হতো দীর্ঘমেয়াদি এবং খোলাবাজার থেকে আনা এলএনজি দিয়ে। এর মধ্যে খোলাবাজার থেকে আনা হয় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই এলএনজি আনা বন্ধ হওয়ার পর গ্যাসের ঘাটতি দেখা দেয়। ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় রেশনিংও শুরু করে। কিন্তু ঘাটতি মেটাতে পারছিল না। এই সিদ্ধান্তের পর সেই ঘাটতি কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতি মেটাতে খোলাবাজারের এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছেন।