রাশিয়ায় ‘শান্তি সফরে’ চীনের প্রেসিডেন্ট শি
পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে ডিনার
যুগান্তর ডেস্ক
২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বয়স এক দশকেরও বেশি। এই দীর্ঘ সময়ে দুদেশের দুই রাষ্ট্রনায়কের দেখাও হয়েছে অনেকবার। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বরাজনীতির এই টালমাটাল হাওয়ায় এবারই প্রথম মিত্র রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে গেলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে মস্কোর নুকোভো বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহন করা বিমান। আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি চেরনিশেঙ্কোর তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর জমকালো ‘গার্ড অব অর্নারের’ মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা জানায় সেনাবাহিনী। বিকাল সাড়ে ৪টার পর পুতিনের সঙ্গে শি সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া অনানুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং একত্রে নৈশভোজ করেন এই দুই বিশ্বনেতা। নৈশভোজের বিরতি শেষে আবার ফেরেন বাকি আলোচনায়। দুই রাউন্ড মিলিয়ে মোট সাড়ে চার ঘণ্টা বৈঠক হয় দুজনার। ‘প্রিয় বন্ধু’ শি’র তিন দিনের এ মস্কো সফর চলবে ২২ মার্চ পর্যন্ত। বিবিসি, সিএনএন, তাস, রয়টার্স।
সোমবার শুরু হওয়া এই রাষ্ট্রীয় সফরকে ‘শান্তি সফর’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনেকের ধারণা যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চায় চীন। মস্কো দুদেশের সম্পর্ককে ‘নতুন যুগের সূচনা’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ। ক্রেমলিন জানায়, দুই দেশের অংশীদারত্ব ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার জন্য একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে তারা। তিন দিনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। চুক্তিও হবে অনেক। ২০৩০ সাল পর্যন্ত রুশ-চীনা অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করবেন দুই প্রেসিডেন্ট। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শির সফরকে ‘শান্তির জন্য একটি সফর’ বলে স্বাগত জানিয়েছে। যার লক্ষ্য হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে বহুপাক্ষিকতার চর্চা, বৈশ্বিক শাসন উন্নতকরণ এবং বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখাকে। মস্কো সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ইউক্রেন শান্তির বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে সোমবার ক্রেমলিন জানায়। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, অবশ্যই পুতিন এ সংকট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন। শি জিনপিং সত্যিকারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হবেন। পুতিন ও শি মস্কোতে আলোচনার সময় ইউক্রেনের সংঘাত সমাধানের জন্য বেইজিং নির্ধারিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করতে পারে। তবে বিমানবন্দর থেকে ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই বন্ধুর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কথা হয় দুজনার। দোভাষীর মাধ্যমে বন্ধু শি-কে পুতিন জানান, শান্তির জন্য তখন আমরা প্রস্তুত ছিলাম। শান্তির জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত। যুদ্ধ বন্ধে ওই ১২ দফা নিয়ে আমরা আরও আলোচনা করব।’ এ সময় শি-কে আবারও ‘প্রিয় বন্ধু’ সম্বোধন করেন পুতিন। প্রত্যুত্তরে পুতিনকেও ‘প্রিয় বন্ধু’ সম্বোধন করে শি বলেন, আমি ‘নিশ্চিত’ আগামী বছরে নির্ধারিত রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রুশদের সমর্থন পাবেন আপনি। বলেন, ‘আপনার শক্তিশালী নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ। রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। আমি নিশ্চিত যে, জনগণ আপনার ভালো প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করবে।’
যুদ্ধ সমাপ্তির কাজ করবেন শি-যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন : মস্কো সফরে শি জিনপিং যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য কাজ করবে বলে প্রত্যাশা যুক্তরাজ্য-ইউক্রেনের। সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফরকে কেন্দ্র করে এমন আহ্বান জানায় দুই দেশ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো বলেন, ‘শি জিনপিংয়ের সফর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে নিকোলেঙ্কো বলেন, ইউক্রেনের প্রত্যাশা, ইউক্রেনে যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য মস্কোর ওপর তার প্রভাব বিস্তার করবেন শি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘শি ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উৎসাহিত করবেন বলে আশা করছি।’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রাশিয়ায় ‘শান্তি সফরে’ চীনের প্রেসিডেন্ট শি
পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে ডিনার
চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বয়স এক দশকেরও বেশি। এই দীর্ঘ সময়ে দুদেশের দুই রাষ্ট্রনায়কের দেখাও হয়েছে অনেকবার। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বরাজনীতির এই টালমাটাল হাওয়ায় এবারই প্রথম মিত্র রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে গেলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে মস্কোর নুকোভো বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহন করা বিমান। আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি চেরনিশেঙ্কোর তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর জমকালো ‘গার্ড অব অর্নারের’ মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা জানায় সেনাবাহিনী। বিকাল সাড়ে ৪টার পর পুতিনের সঙ্গে শি সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া অনানুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং একত্রে নৈশভোজ করেন এই দুই বিশ্বনেতা। নৈশভোজের বিরতি শেষে আবার ফেরেন বাকি আলোচনায়। দুই রাউন্ড মিলিয়ে মোট সাড়ে চার ঘণ্টা বৈঠক হয় দুজনার। ‘প্রিয় বন্ধু’ শি’র তিন দিনের এ মস্কো সফর চলবে ২২ মার্চ পর্যন্ত। বিবিসি, সিএনএন, তাস, রয়টার্স।
সোমবার শুরু হওয়া এই রাষ্ট্রীয় সফরকে ‘শান্তি সফর’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনেকের ধারণা যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চায় চীন। মস্কো দুদেশের সম্পর্ককে ‘নতুন যুগের সূচনা’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ। ক্রেমলিন জানায়, দুই দেশের অংশীদারত্ব ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার জন্য একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে তারা। তিন দিনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। চুক্তিও হবে অনেক। ২০৩০ সাল পর্যন্ত রুশ-চীনা অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করবেন দুই প্রেসিডেন্ট। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শির সফরকে ‘শান্তির জন্য একটি সফর’ বলে স্বাগত জানিয়েছে। যার লক্ষ্য হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে বহুপাক্ষিকতার চর্চা, বৈশ্বিক শাসন উন্নতকরণ এবং বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখাকে। মস্কো সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ইউক্রেন শান্তির বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে সোমবার ক্রেমলিন জানায়। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, অবশ্যই পুতিন এ সংকট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন। শি জিনপিং সত্যিকারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হবেন। পুতিন ও শি মস্কোতে আলোচনার সময় ইউক্রেনের সংঘাত সমাধানের জন্য বেইজিং নির্ধারিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করতে পারে। তবে বিমানবন্দর থেকে ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই বন্ধুর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কথা হয় দুজনার। দোভাষীর মাধ্যমে বন্ধু শি-কে পুতিন জানান, শান্তির জন্য তখন আমরা প্রস্তুত ছিলাম। শান্তির জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত। যুদ্ধ বন্ধে ওই ১২ দফা নিয়ে আমরা আরও আলোচনা করব।’ এ সময় শি-কে আবারও ‘প্রিয় বন্ধু’ সম্বোধন করেন পুতিন। প্রত্যুত্তরে পুতিনকেও ‘প্রিয় বন্ধু’ সম্বোধন করে শি বলেন, আমি ‘নিশ্চিত’ আগামী বছরে নির্ধারিত রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রুশদের সমর্থন পাবেন আপনি। বলেন, ‘আপনার শক্তিশালী নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ। রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। আমি নিশ্চিত যে, জনগণ আপনার ভালো প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করবে।’
যুদ্ধ সমাপ্তির কাজ করবেন শি-যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন : মস্কো সফরে শি জিনপিং যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য কাজ করবে বলে প্রত্যাশা যুক্তরাজ্য-ইউক্রেনের। সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফরকে কেন্দ্র করে এমন আহ্বান জানায় দুই দেশ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো বলেন, ‘শি জিনপিংয়ের সফর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে নিকোলেঙ্কো বলেন, ইউক্রেনের প্রত্যাশা, ইউক্রেনে যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য মস্কোর ওপর তার প্রভাব বিস্তার করবেন শি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘শি ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উৎসাহিত করবেন বলে আশা করছি।’