শুধু বৈশ্বিক নয়, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও দায়ী
দেশের অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে সিপিডি
৭৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির শঙ্কা * বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনার দায় নিচ্ছে জনগণ * নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার উপক্রম * ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, কমিশন গঠনের তাগিদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থনীতিতে বেড়েছে তিন ধরনের ঝুঁকি। এগুলো হচ্ছে-দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট শুধু বৈশ্বিক কারণে নয়, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও দায়ী। সামষ্টিক পর্যায়ের ঝুঁকি এখন ব্যক্তি পর্যায়ে বিস্তৃতি হচ্ছে। এই বাড়তি ঝুঁকি এ সময়ের বড় সমস্যা। সর্বশেষ হচ্ছে বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কোনো মেকানিজমই কাজ করছে না। বড়রা ছোটদের খেয়ে ফেলছে। বাজারে ক্রমেই ছোটরা আরও ছোট্ট হচ্ছে। বড়দের প্রভাব এখন অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাড়ছে। তবে এসব ঝড় ও ঝুঁকির মাত্রা আগামীতে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট : সিপিডির সুপারিশমালা’ সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে এসব আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়। ধানমন্ডি সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ঝড় ও ঝুঁকির কারণে অর্থনীতির গতি শ্লথ হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব কম আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই সংকটময় এ প্রক্রিয়া থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফ’র ঋণ এবং ঋণের শর্ত পূরণে যেসব সংস্কারে হাত দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। শর্তের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম নিতে হবে সরকারকে।
ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি তুলে বাজারের ওপর এসবের মূল্য নির্ধারণ ছেড়ে দেওয়া, মাসে একবার মূল্য পর্যালোচনা, গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ বাড়ানো, শক্তিশালী রপ্তানি খাতে ভর্তুকি বন্ধ এবং সম্ভাবনাময় খাতে ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সিপিডির পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনার দায় জনগণকে নিতে হচ্ছে। এসব খাতের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার কারণে ভর্তুকি বাড়ছে। বাড়তি ভর্তুকির দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। ভোক্তারা এখন যে মূল্য পরিশোধ করছে, তা যদি বাজারনির্ভর হতো বাড়তি ভর্তুকি গুনতে হতো না।
তিনি আরও বলন, বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে যে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটির জন্য বাড়তি চার্জ দিতে হচ্ছে, তার দায় ভোক্তার ঘাড়ে চাপানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং বাড়তি ক্যাপাসিটির জন্য বাড়তি চার্জ দিতে হচ্ছে, তার কারণে সরকারকে ভর্তুকির দায় মেটাতে হচ্ছে। এই ক্যাপাসিটি চার্জের মতো কার্যক্রম থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। আগামীতে নতুন প্রকল্প নেওয়া ও পুরাতন প্রকল্প নবায়নের ক্ষেত্রে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে ভর্তুকির দায় থেকে বিদ্যুৎ খাত বের হয়ে আসতে পারবে।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রয়োজন। সেই কমিশন ব্যাংকের ভেতরে কী হচ্ছে, তথ্য বের করে এনে সমস্যা নিরূপণের উদ্যোগ নেবে। ব্যাংক পরিচালন কার্যক্রমে নৈতিকতা ও আপ টু মার্ক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে, যার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনি দুর্বল দিকগুলো শক্তিশালী হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আহরণ নেতিবাচক, এডিপিতে ধীরগতি, ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ গ্রহণ, পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকিং খাতে তারল্য হ্রাস এবং লেনদেন ভারসাম্যে সমস্যা ও রিজার্ভে নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। এসব অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে সরকারকে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। তিনি আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ব্যক্তি কর মুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যক্তি কর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, নিম্নআয় মানুষের জন্য ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর দেওয়ার সীমা ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর ছাড় বাতিল করার প্রস্তাব দেন।
জীবনযাত্রা ব্যয় প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমছে। কিন্তু দেশের বাজারে প্রতিফলন নেই। বর্তমানে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে দেশে চালের মূল্য বেশি। বাজারে সয়াবিন তেল এবং চিনি বিক্রি হচ্ছে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি মূল্যে। গরুর মাংস অভ্যন্তরীণ বাজারের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পণ্যের মূল্য বেশির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। ঢাকায় চারজনের একটি পরিবারের মাসিক খাদ্য ব্যয় এখন (শাকসবিজ ও ডাল দিয়ে) ৭১৩১ টাকা এবং মাছ-মাংস যুক্ত হলে এ ব্যয় দাঁড়াবে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয় অধিকাংশ খাতেই শ্রমিক, দিনমজুর, চাকরিজীবীদের মাসিক আয় দিয়ে এই খাদ্য ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। প্রকৃত অর্থে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশ বিরাজ করছে। এটি গড় মূল্যস্ফীতি দিয়ে বোঝা যাচ্ছে না। এখন সরকার কর ব্যবস্থাপনা দিয়ে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান আমদানিকৃত ২৮টি পণ্যের ওপর উচ্চ কর আরোপ আছে। এটি কমাতে পারলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। মানুষকে নগদ টাকা সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি খোলাবাজারে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ ও পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়ানোর সুপাশি করা হয়। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করা, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া প্রতিযোগিতা অ্যাক্ট সংশোধন করতে হবে।
ড. ফাহমিদা ব্রিফিংয়ে বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন হচ্ছে। নতুন বাজেটে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হচ্ছে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, তা পুনরুদ্ধার করা। বিগত সময় অর্জনকে সামনে রেখে নতুন বাস্তবায়তার প্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার মধ্যে যে কোনো একটি গুরুত্ব দেওয়া। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারের সামগ্রিকভাবে ব্যয় এবং আমদানিও হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে তারল্য নিম্নগামী প্রবণতা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতে তারল্য ৬৬ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা কমেছে। অপরদিকে ব্যাংকের বাইরে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। যদিও একদিকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমছে, সঞ্চয় করতে পারছে না। অন্যদিকে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। এটি বাজারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা।
এছাড়া বিদেশি ঋণের অগ্রগতি ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের প্রবৃদ্ধি না হয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছে। এ খাতে ৩ হাজার ৬৫ কোটি টাকার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। রিজার্ভ বাড়ছে না, বরং কমছে। রপ্তানি কিছুটা বাড়ছে। তবে এটি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্য পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। সামগ্রিক অর্থনীতি কর্মকাণ্ডে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এডিপি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ নেতিবাচক। সামগ্রিক ব্যয় এক দশমিক তিন শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। ব্যয় সঠিকভাবে না হলে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি হবে না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
দেশের অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে সিপিডি
শুধু বৈশ্বিক নয়, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও দায়ী
৭৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির শঙ্কা * বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনার দায় নিচ্ছে জনগণ * নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার উপক্রম * ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, কমিশন গঠনের তাগিদ
অর্থনীতিতে বেড়েছে তিন ধরনের ঝুঁকি। এগুলো হচ্ছে-দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট শুধু বৈশ্বিক কারণে নয়, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও দায়ী। সামষ্টিক পর্যায়ের ঝুঁকি এখন ব্যক্তি পর্যায়ে বিস্তৃতি হচ্ছে। এই বাড়তি ঝুঁকি এ সময়ের বড় সমস্যা। সর্বশেষ হচ্ছে বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কোনো মেকানিজমই কাজ করছে না। বড়রা ছোটদের খেয়ে ফেলছে। বাজারে ক্রমেই ছোটরা আরও ছোট্ট হচ্ছে। বড়দের প্রভাব এখন অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাড়ছে। তবে এসব ঝড় ও ঝুঁকির মাত্রা আগামীতে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট : সিপিডির সুপারিশমালা’ সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে এসব আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়। ধানমন্ডি সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ঝড় ও ঝুঁকির কারণে অর্থনীতির গতি শ্লথ হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব কম আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই সংকটময় এ প্রক্রিয়া থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফ’র ঋণ এবং ঋণের শর্ত পূরণে যেসব সংস্কারে হাত দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। শর্তের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম নিতে হবে সরকারকে।
ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি তুলে বাজারের ওপর এসবের মূল্য নির্ধারণ ছেড়ে দেওয়া, মাসে একবার মূল্য পর্যালোচনা, গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ বাড়ানো, শক্তিশালী রপ্তানি খাতে ভর্তুকি বন্ধ এবং সম্ভাবনাময় খাতে ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সিপিডির পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনার দায় জনগণকে নিতে হচ্ছে। এসব খাতের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার কারণে ভর্তুকি বাড়ছে। বাড়তি ভর্তুকির দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। ভোক্তারা এখন যে মূল্য পরিশোধ করছে, তা যদি বাজারনির্ভর হতো বাড়তি ভর্তুকি গুনতে হতো না।
তিনি আরও বলন, বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে যে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটির জন্য বাড়তি চার্জ দিতে হচ্ছে, তার দায় ভোক্তার ঘাড়ে চাপানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং বাড়তি ক্যাপাসিটির জন্য বাড়তি চার্জ দিতে হচ্ছে, তার কারণে সরকারকে ভর্তুকির দায় মেটাতে হচ্ছে। এই ক্যাপাসিটি চার্জের মতো কার্যক্রম থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। আগামীতে নতুন প্রকল্প নেওয়া ও পুরাতন প্রকল্প নবায়নের ক্ষেত্রে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে ভর্তুকির দায় থেকে বিদ্যুৎ খাত বের হয়ে আসতে পারবে।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রয়োজন। সেই কমিশন ব্যাংকের ভেতরে কী হচ্ছে, তথ্য বের করে এনে সমস্যা নিরূপণের উদ্যোগ নেবে। ব্যাংক পরিচালন কার্যক্রমে নৈতিকতা ও আপ টু মার্ক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে, যার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনি দুর্বল দিকগুলো শক্তিশালী হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আহরণ নেতিবাচক, এডিপিতে ধীরগতি, ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ গ্রহণ, পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকিং খাতে তারল্য হ্রাস এবং লেনদেন ভারসাম্যে সমস্যা ও রিজার্ভে নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। এসব অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে সরকারকে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। তিনি আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ব্যক্তি কর মুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যক্তি কর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, নিম্নআয় মানুষের জন্য ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর দেওয়ার সীমা ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর ছাড় বাতিল করার প্রস্তাব দেন।
জীবনযাত্রা ব্যয় প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমছে। কিন্তু দেশের বাজারে প্রতিফলন নেই। বর্তমানে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে দেশে চালের মূল্য বেশি। বাজারে সয়াবিন তেল এবং চিনি বিক্রি হচ্ছে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি মূল্যে। গরুর মাংস অভ্যন্তরীণ বাজারের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পণ্যের মূল্য বেশির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। ঢাকায় চারজনের একটি পরিবারের মাসিক খাদ্য ব্যয় এখন (শাকসবিজ ও ডাল দিয়ে) ৭১৩১ টাকা এবং মাছ-মাংস যুক্ত হলে এ ব্যয় দাঁড়াবে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয় অধিকাংশ খাতেই শ্রমিক, দিনমজুর, চাকরিজীবীদের মাসিক আয় দিয়ে এই খাদ্য ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। প্রকৃত অর্থে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশ বিরাজ করছে। এটি গড় মূল্যস্ফীতি দিয়ে বোঝা যাচ্ছে না। এখন সরকার কর ব্যবস্থাপনা দিয়ে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান আমদানিকৃত ২৮টি পণ্যের ওপর উচ্চ কর আরোপ আছে। এটি কমাতে পারলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। মানুষকে নগদ টাকা সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি খোলাবাজারে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ ও পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়ানোর সুপাশি করা হয়। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করা, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া প্রতিযোগিতা অ্যাক্ট সংশোধন করতে হবে।
ড. ফাহমিদা ব্রিফিংয়ে বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন হচ্ছে। নতুন বাজেটে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হচ্ছে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, তা পুনরুদ্ধার করা। বিগত সময় অর্জনকে সামনে রেখে নতুন বাস্তবায়তার প্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার মধ্যে যে কোনো একটি গুরুত্ব দেওয়া। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারের সামগ্রিকভাবে ব্যয় এবং আমদানিও হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে তারল্য নিম্নগামী প্রবণতা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতে তারল্য ৬৬ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা কমেছে। অপরদিকে ব্যাংকের বাইরে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। যদিও একদিকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমছে, সঞ্চয় করতে পারছে না। অন্যদিকে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। এটি বাজারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা।
এছাড়া বিদেশি ঋণের অগ্রগতি ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের প্রবৃদ্ধি না হয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছে। এ খাতে ৩ হাজার ৬৫ কোটি টাকার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। রিজার্ভ বাড়ছে না, বরং কমছে। রপ্তানি কিছুটা বাড়ছে। তবে এটি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্য পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। সামগ্রিক অর্থনীতি কর্মকাণ্ডে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এডিপি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ নেতিবাচক। সামগ্রিক ব্যয় এক দশমিক তিন শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। ব্যয় সঠিকভাবে না হলে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি হবে না।