নিবন্ধিত দলের তথ্য যাচাই থেকে সরে আসল ইসি
নির্বাচনের আগে জটিলতা তৈরির শঙ্কা
সিইসিসহ তিনজন নির্বাচন কমিশনার বিপক্ষে, দুজন পক্ষে * কর্মপরিকল্পনায় নিবন্ধন বহাল বা বাতিলের বিষয়ে মে মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা
কাজী জেবেল
২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তথ্য যাচাইয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও এ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। এ কার্যক্রম চালাতে গেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন ধরনের জটিলতা ও বিতর্ক তৈরি হতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) তিনজন নির্বাচন কমিশনার এই প্রক্রিয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
অপরদিকে বাকি দুজন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের আগেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা-তা যাচাইয়ের পক্ষে ছিলেন। নির্বাচন কমিশনারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নিবন্ধিত দলগুলোর তথ্য যাচাই না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আপাতদৃষ্টিতে আগামী নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কোনোটি এসব কারণে বাদ পড়ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা অংশে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কিনা-তা যাচাই করে দেখার আইনানুগ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা-তা খতিয়ে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কর্মপরিকল্পনায় গত সেপ্টেম্বরে নিবন্ধিত দলগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেই তথ্য পর্যালোচনা করে আগামী মে মাসের মধ্যে নিবন্ধন বহাল বা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কর্মপরিকল্পনার ওই অবস্থান থেকে সরে এলো ইসি।
চারজন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৪০টি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে কোনো সংসদ নির্বাচনে অন্তত একটি আসনে জয়ী হওয়ার শর্ত পূরণ করায় ২২টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে।
ওই সময়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আসনে জয়ী না হয়েও শুধু দলীয় প্রতীকে অন্তত ৫ শতাংশ ভোট পাওয়ার শর্ত পূরণ করায় আরও চারটি দল নিবন্ধন পেয়েছে। এই দুই শর্ত পূরণ করতে পারেনি কিন্তু দেশের অন্তত একশ উপজেলা বা থানা ও এক-তৃতীয়াংশ জেলায় দলীয় কার্যালয় ও কমিটি আছে-এমন সাংগঠনিক কাঠামো দেখিয়ে বাকি ১৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ওই ১৩টি রাজনৈতিক দলের মাঠপর্যায়ের কার্যালয় আছে কিনা-সেই তথ্য যাচাইয়ের সুপারিশ করেছিল ইসি সচিবালয়ের একটি কমিটি। কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য ওই সুপারিশ উপস্থাপন করা হলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নিবন্ধিত দলের তথ্য যাচাইয়ের পক্ষে মত দেন। আরেক নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানাও যাচাইয়ের পক্ষে ছিলেন।
অপরদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আনিছুর রহমান তথ্য যাচাইয়ের বিপক্ষে মতামত দেন। তাদের মতামতের সঙ্গে সায় দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তথ্য যাচাই না করার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই ১৩টি রাজনৈতিক দল হচ্ছে-জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিসভার মঙ্গলবারের বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। ওই সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া সময়সাপেক্ষ। ওই সংশোধনী পাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত নিবন্ধন সংক্রান্ত ধারা ৯০-এর (১)(খ) ও ৯০ ঘ উপধারা দুটি অকার্যকর।
ইসির রাজনৈতিক দলের তথ্য যাচাই সংক্রান্ত কমিটির প্রথম প্রতিবেদনে ওই উপধারা দুটি উল্লেখ করে ভোটের আগে তথ্য যাচাই না করার সুপারিশ করেছিল। যদিও ওই একই কমিটি পরে তাদের সুপারিশ পরিবর্তন করে যাচাইয়ের জন্য বলেছিল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
নির্বাচনের আগে জটিলতা তৈরির শঙ্কা
নিবন্ধিত দলের তথ্য যাচাই থেকে সরে আসল ইসি
সিইসিসহ তিনজন নির্বাচন কমিশনার বিপক্ষে, দুজন পক্ষে * কর্মপরিকল্পনায় নিবন্ধন বহাল বা বাতিলের বিষয়ে মে মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তথ্য যাচাইয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও এ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। এ কার্যক্রম চালাতে গেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন ধরনের জটিলতা ও বিতর্ক তৈরি হতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) তিনজন নির্বাচন কমিশনার এই প্রক্রিয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
অপরদিকে বাকি দুজন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের আগেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা-তা যাচাইয়ের পক্ষে ছিলেন। নির্বাচন কমিশনারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নিবন্ধিত দলগুলোর তথ্য যাচাই না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আপাতদৃষ্টিতে আগামী নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কোনোটি এসব কারণে বাদ পড়ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা অংশে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কিনা-তা যাচাই করে দেখার আইনানুগ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা-তা খতিয়ে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কর্মপরিকল্পনায় গত সেপ্টেম্বরে নিবন্ধিত দলগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেই তথ্য পর্যালোচনা করে আগামী মে মাসের মধ্যে নিবন্ধন বহাল বা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কর্মপরিকল্পনার ওই অবস্থান থেকে সরে এলো ইসি।
চারজন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৪০টি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে কোনো সংসদ নির্বাচনে অন্তত একটি আসনে জয়ী হওয়ার শর্ত পূরণ করায় ২২টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে।
ওই সময়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আসনে জয়ী না হয়েও শুধু দলীয় প্রতীকে অন্তত ৫ শতাংশ ভোট পাওয়ার শর্ত পূরণ করায় আরও চারটি দল নিবন্ধন পেয়েছে। এই দুই শর্ত পূরণ করতে পারেনি কিন্তু দেশের অন্তত একশ উপজেলা বা থানা ও এক-তৃতীয়াংশ জেলায় দলীয় কার্যালয় ও কমিটি আছে-এমন সাংগঠনিক কাঠামো দেখিয়ে বাকি ১৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ওই ১৩টি রাজনৈতিক দলের মাঠপর্যায়ের কার্যালয় আছে কিনা-সেই তথ্য যাচাইয়ের সুপারিশ করেছিল ইসি সচিবালয়ের একটি কমিটি। কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য ওই সুপারিশ উপস্থাপন করা হলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নিবন্ধিত দলের তথ্য যাচাইয়ের পক্ষে মত দেন। আরেক নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানাও যাচাইয়ের পক্ষে ছিলেন।
অপরদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আনিছুর রহমান তথ্য যাচাইয়ের বিপক্ষে মতামত দেন। তাদের মতামতের সঙ্গে সায় দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তথ্য যাচাই না করার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই ১৩টি রাজনৈতিক দল হচ্ছে-জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিসভার মঙ্গলবারের বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। ওই সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া সময়সাপেক্ষ। ওই সংশোধনী পাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত নিবন্ধন সংক্রান্ত ধারা ৯০-এর (১)(খ) ও ৯০ ঘ উপধারা দুটি অকার্যকর।
ইসির রাজনৈতিক দলের তথ্য যাচাই সংক্রান্ত কমিটির প্রথম প্রতিবেদনে ওই উপধারা দুটি উল্লেখ করে ভোটের আগে তথ্য যাচাই না করার সুপারিশ করেছিল। যদিও ওই একই কমিটি পরে তাদের সুপারিশ পরিবর্তন করে যাচাইয়ের জন্য বলেছিল।