সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে

 সংসদ প্রতিবেদক 
০৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা বিশ্বে খাদ্যমন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, পরিচালনা ও পরিবহণ ব্যয়, বিদ্যুতের ঘাটতি প্রতিটি মানুষের জীবন অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, বিশ্বের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

রোববার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য আফসারুল আমীনের মৃত্যুতে সংসদে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরে তা সর্বসম্মতক্রমে গ্রহণ করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব বিশ্বব্যাপী। এখন তো কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। ক্রয় করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার পরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি সই হয়েছে। জলবিদ্যুৎও আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। কয়লা কেনার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমরা আবার চালু করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। যদিও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাঙ্কশন, পালটা স্যাঙ্কশন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি তেলের অভাব, যার জন্য এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে জ্বালানির অভাব হচ্ছে। সেখানে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত দেশেও বহু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী। আমি জানি না আর কখনো এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল কিনা। হয়তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তো দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল।

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। সব জিনিস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের খাদ্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। বিশ্বের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো বিশ্ব পরিস্থতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। তবে আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য তাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমাদের যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছি।

প্রয়াত সংসদ-সদস্য আফসারুল আমীনকে স্মরণ করে তিনি বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। দলের প্রতি তার নিষ্ঠা ও সততা ছিল অতুলনীয়। তিনি মন্ত্রী হিসাবেও অত্যন্ত সাফল্য দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, এটা খুবই কষ্টের যে, যেদিন সংসদ শুরু করলাম সেদিন শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করি। আজকে আবার শোকপ্রস্তাব জানাতে হচ্ছে। এবারের সংসদে আমরা এতজন সংসদ-সদস্যকে হারালাম বোধহয় আর কখনো হয়নি।

শোকপ্রস্তাবের ওপর প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সরকারি দলের এমপি ওয়াসিকা আয়শা খান, মোতাহার হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মুদ্রাস্ফীতি-লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ ভুগছে-প্রধানমন্ত্রী : এদিকে রোববার চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ সারা বিশ্বে গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও এখন আর তা (গ্যাস-তেল-কয়লা) কেনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমি জানি এজন্য এই গ্রীষ্মে মানুষ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি, অন্যদিকে লোডশেডিং-এই দুটি সমস্যায় আমার দেশের মানুষ ভুগছে।

শেখ হাসিনা গণভবন থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের জাতীয় বাজেট দিয়েছি এবং আমরা এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারি এবং আওয়ামী লীগ তা করতে পারে। তিনি বলেন, অনেকেই (এই বাজেট নিয়ে) অনেক কথাই বলবে, কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ দেশের ও দেশের মানুষের মঙ্গল কিসে-তা জানি। শেখ হাসিনা বলেন, একদল লোক দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল থাকায় এর অপব্যবহার করছে। আওয়ামী সরকারই বেসরকারি খাতে যেগুলোর লাইসেন্স দিয়েছে। সরকার যাই করুক না কেন, তারা এসি রুমে বসে সরকারের সব কাজের সমালোচনা করে ও ‘কিন্তু’ (ত্রুটি) খুঁজে বেড়ায়। তারা দেশের জনগণকে হতাশ করার জন্য এবং বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু কথাও ছড়িয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিন্তু তারা এ থেকে কী পায়-আমি জানি না। তারা সম্ভবত কিছু হাদিয়া (টাকা) সংগ্রহ করে থাকতে পারে-আমি আসলে বলতে পারব না। তবে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে তৃপ্তি পায়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৮০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ উদ্বোন করেন-যা সপ্তাহে ছয় দিন এই রুটে চলাচল করবে।

চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন নীলফামারী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। কারণ হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রুটটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। পণ্য বোঝাই ওয়াগনের পাশাপাশি এই রুটে চলছে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস।

মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রেলওয়ে সচিব ড. মো. হুমায়ন কবির। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, এমপি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে এই ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে নীলফামারীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভালো সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বলেন, এটি কেবল জনগণের যাতায়াতের সুবিধাই নিয়ে আসবে না, বরং এর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও বাড়াবে।

গেট বন্ধ থাকার পরও মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইনে হাঁটা বা রেললাইন পার হওয়ার চেষ্টা না করার ব্যাপারে দেশবাসীকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। শনিবার ভারতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না। এই ঘটনায় ২৮৮ জন মারা গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি সত্যিই খুব দুঃখজনক।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন