ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন তিন মাস স্থগিত
বিশেষজ্ঞদের মত : দায় ইসি ও মন্ত্রণালয়ের
ভোট নিয়ে আশঙ্কাই সত্য হল -বিশ্লেষক * আইনি ত্রুটিগুলো নিয়ে আগ থেকে বলার পরও আমলে নেয়নি ইসি * আইনে সামান্য সংশোধনী করে দ্রুত এ নির্বাচন করা সম্ভব * ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮টি ওয়ার্ডের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ
যুগান্তর রিপোর্ট
১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। আলাদা দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। এরপরই নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম।
আদেশের পর নির্বাচন ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ত্রুটি রেখেই ইসি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক মাস আগে থেকে তারা নতুন কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ, হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের পর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় দেয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে ত্রুটিগুলো সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। ভোটের বিষয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা। ইসির এক কমিশন সভায় আইনের ত্রুটির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু আমলে নেননি। উল্টো বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নানা বিষয়ে ত্রুটির কারণেই নির্বাচন স্থগিত করেছেন আদালত। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন শেষ পর্যন্ত তাদের শঙ্কাই সত্য হয়েছে। তাদের মতে, ত্রুটিগুলো সংশোধন করে তফসিল দেয়া হলে রিট করার সুযোগ থাকত না। নির্বাচনও স্থগিত হতো না। নির্বাচন স্থগিতের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তারা নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন।
আদালতের আদেশের কারণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উপনির্বাচন এবং নতুন যুক্ত ১৮ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কোটায় নারী সদস্য নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে। তিন মাসের স্থগিতাদেশের সঙ্গে ৯ জানুয়ারির তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার সচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ আদেশের পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নির্বাচনের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হল। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এসব ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার শেষ দিন আজ। নির্বাচন স্থগিতের পর শাসক দলের দুই মন্ত্রী প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন এর সঙ্গে সরকারের কোনো যোগসাজশ নেই। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলেছেন নিশ্চিত পরাজয় জেনেই সুযোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন স্থগিতের দায় ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এর মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করেই তফসিল ঘোষণা করার দায় ইসির। সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়নি। যেসব ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- সেগুলোর চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মেয়াদ ও কার্যকাল সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। এগুলোসহ ওয়ার্ডের সীমানা যথাযথ নির্ধারণ না করার দায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তিনি বলেন, বেরাইদ ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ রয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তারা পদে বহাল আছেন কিনা, তাদের কার্যক্রম কী হবে সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কিছু পরিষ্কার করেনি। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির সঙ্গে নতুন ১৮ ওয়ার্ড যুক্ত করে কর্পোরেশনের কার্যক্রমও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে মন্ত্রণালয়। পুরো কর্পোরেশনের কার্যক্রমও স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচন স্থগিতাদেশ মোটেই অপ্রত্যাশিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ বা প্রতিপালন না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি অদক্ষতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। এক মাস আগ থেকেই আমরা বলে আসছিলাম আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ না করে তফসিল হলে সমস্যা দেখা দেবে। এখন তা-ই হল। তিনি বলেন, আইনি করণীয় সম্পন্ন করে দুই-তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। কাউন্সিলরদের মেয়াদ পরিষদের বাকি মেয়াদ পর্যন্ত হবে- এমন দু’কয়েকটি শব্দ আইনে যুক্ত করে আইন সংশোধন করা সম্ভব।
এদিকে নির্বাচন স্থগিতাদেশের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার বিকালে জরুরি বৈঠক করেন কমিশনাররা। বৈঠকের পর এক নির্বাচন কমিশনার জানান, এতে হাইকোর্টের রায়ের আইনজীবীর সার্টিফিকেট কপি নিয়ে আলোচনা হয়। আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পর কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার আদালতে রিট আবেদন করেন ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তাদের মধ্যে আতাউর ভাটারা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আর জাহাঙ্গীর বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আইনি জটিলতা রেখেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখেছি। নির্বাচন না করার মতো কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। এজন্যই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করে নির্বাচনের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, ভোটার তালিকা নিয়েই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। যিনি এ মামলার বাদী, উনি নিজেও ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়ে গেছেন। ভোটার তালিকার সিডিও তাকে দেয়া হয়েছে। সে ভোটার তালিকায় উনার নামও আছে। সেক্ষেত্রে ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো সমস্যা আছে বলে মনে করেন না তিনি।
ডিএনসিসির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা দুটি রিটের ওপর মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবীরা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের নাগরিকরা ভোটার হতে পারলেও তারা প্রার্থী হতে পারছেন না। প্রার্থিতা দাখিলের শেষদিন ধার্য করা হয়েছে ১৮ জানুয়ারি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তিনশ’ ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত প্রস্তাবক ও সমর্থকের নাম সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক। ফলে তারা (আবেদনকারী) যেখানে ভোটার তালিকাই সংগ্রহ করতে পারছেন না, সেখানে প্রার্থী হবেন কীভাবে? এটা তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার শামিল। আইনজীবীরা বলেন, নতুন করে যুক্ত ওয়ার্ডগুলোর ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও এখন যদি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়, সেক্ষেত্রে ওইসব চেয়ারম্যান-মেম্বারের মেয়াদের অবসান এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদ কতদিন হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এসব আইন জটিলতা নিরসন করেই তফসিল ঘোষণা করলে ভালো হতো। শুনানিতে আইনজীবীরা আরও বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ৫(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘মেয়রের পদসহ কর্পোরেশনের শতকরা পঁচাত্তর ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরগণের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইলে, কর্পোরেশন এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে যথাযথভাবে গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।’ উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টির ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সংখ্যা পঁচাত্তর শতাংশ হয় না। কারণ নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। সে হিসাবে মেয়র পদই তো গঠিত হচ্ছে না।’ তাছাড়া সম্প্রসারিত ৩৬টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন, তারা পুরো পাঁচ বছর পাবেন না কেন- সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয় ওই রিট আবেদনে। এতে আরও যুক্তি দেখানো হয়, নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদ কত দিন হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এ অবস্থায় ইসির তফসিল ঘোষণা আইনসম্মত হয়নি বলে শুনানিতে উল্লেখ করা হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইনি জটিলতার বিষয়গুলো তারা আগ থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। কমিশনের একটি সভার কার্যপত্রে সম্ভাব্য জটিলতার বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়। কার্যপত্রের ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় বিবেচ্য বিষয়’ অংশে উল্লেখ করে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী কর্পোরেশনের মেয়াদ প্রথম সভা থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হবে। তবে কর্পোরেশন এলাকা রদবদল বা বর্ধিত করা হলে ওই অংশের পরিষদের মেয়াদ কতদিন হবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। অর্থাৎ দুই সিটিতে যুক্ত হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদের বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। সিটি কর্পোরেশন আইনে বিষয়টি স্পষ্ট না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ আইনে রয়েছে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ১৪(৫)(ক) ও ১৪(৫)(খ) ধারার রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এরূপ যে কোনো সদস্য তার পদের মেয়াদের অনুত্তীর্ণ অংশের জন্য নবগঠিত পরিষদের পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। আর নতুন ভোটারদের বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়েছে, চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া ২ জানুয়ারি প্রকাশ এবং তা ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। যদিও ওই বৈঠকের পর ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেছিলেন, নির্বাচনে আইনগত কোনো জটিলতা নেই।
নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আইনি দুর্বলতা ও সমাধানের কথা আগ থেকেই বসে আসছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা আমলে নেয়া হয়নি। এখন সরকার ও ইসি পরস্পরকে দোষারোপ করছে। তিনি বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়া এবং আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম। এ নির্বাচন যেন অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে না যায়, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদসহ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ভোট হওয়ার কথা ছিল।
আদালতে যা ঘটেছে : আদালতে রিটকারী আতাউর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া। আর জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী ও মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন সেলিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
বুধবার আদেশের আগে আদালত নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চান। জবাবে তিনি আদালতে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আর স্থগিত হওয়ার সুযোগ নেই। পরে আদালত আদেশ দেন। আদেশের পর রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ৯ জানুয়ারি জারি করা তফসিল ও সার্কুলারের ওপরে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঘোষিত তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তিন মাসের রুল জারি করেছেন আদালত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার সচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আদেশের বিষয়টি নির্বাচন কমশিনকে অবহিত করা হয়েছে। কমিশন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এর আগে রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়ে। রিটে ডিএসসিসির ১৮টি ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত চাওয়া হয়। আক্তার হোসেনসহ ৮ জন স্থানীয় ভোটার বাদী হয়ে রিটটি করেন। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ রিটের শুনানি (স্ট্যান্ড ওভার) মুলতবি করেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বিশেষজ্ঞদের মত : দায় ইসি ও মন্ত্রণালয়ের
ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন তিন মাস স্থগিত
ভোট নিয়ে আশঙ্কাই সত্য হল -বিশ্লেষক * আইনি ত্রুটিগুলো নিয়ে আগ থেকে বলার পরও আমলে নেয়নি ইসি * আইনে সামান্য সংশোধনী করে দ্রুত এ নির্বাচন করা সম্ভব * ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮টি ওয়ার্ডের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। আলাদা দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। এরপরই নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম।
আদেশের পর নির্বাচন ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ত্রুটি রেখেই ইসি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক মাস আগে থেকে তারা নতুন কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ, হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের পর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় দেয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে ত্রুটিগুলো সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। ভোটের বিষয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা। ইসির এক কমিশন সভায় আইনের ত্রুটির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু আমলে নেননি। উল্টো বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নানা বিষয়ে ত্রুটির কারণেই নির্বাচন স্থগিত করেছেন আদালত। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন শেষ পর্যন্ত তাদের শঙ্কাই সত্য হয়েছে। তাদের মতে, ত্রুটিগুলো সংশোধন করে তফসিল দেয়া হলে রিট করার সুযোগ থাকত না। নির্বাচনও স্থগিত হতো না। নির্বাচন স্থগিতের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তারা নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন।
আদালতের আদেশের কারণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উপনির্বাচন এবং নতুন যুক্ত ১৮ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কোটায় নারী সদস্য নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে। তিন মাসের স্থগিতাদেশের সঙ্গে ৯ জানুয়ারির তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার সচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ আদেশের পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নির্বাচনের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হল। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এসব ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার শেষ দিন আজ। নির্বাচন স্থগিতের পর শাসক দলের দুই মন্ত্রী প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন এর সঙ্গে সরকারের কোনো যোগসাজশ নেই। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলেছেন নিশ্চিত পরাজয় জেনেই সুযোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন স্থগিতের দায় ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এর মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করেই তফসিল ঘোষণা করার দায় ইসির। সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়নি। যেসব ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- সেগুলোর চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মেয়াদ ও কার্যকাল সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। এগুলোসহ ওয়ার্ডের সীমানা যথাযথ নির্ধারণ না করার দায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তিনি বলেন, বেরাইদ ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ রয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তারা পদে বহাল আছেন কিনা, তাদের কার্যক্রম কী হবে সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কিছু পরিষ্কার করেনি। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির সঙ্গে নতুন ১৮ ওয়ার্ড যুক্ত করে কর্পোরেশনের কার্যক্রমও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে মন্ত্রণালয়। পুরো কর্পোরেশনের কার্যক্রমও স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচন স্থগিতাদেশ মোটেই অপ্রত্যাশিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ বা প্রতিপালন না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি অদক্ষতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। এক মাস আগ থেকেই আমরা বলে আসছিলাম আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ না করে তফসিল হলে সমস্যা দেখা দেবে। এখন তা-ই হল। তিনি বলেন, আইনি করণীয় সম্পন্ন করে দুই-তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। কাউন্সিলরদের মেয়াদ পরিষদের বাকি মেয়াদ পর্যন্ত হবে- এমন দু’কয়েকটি শব্দ আইনে যুক্ত করে আইন সংশোধন করা সম্ভব।
এদিকে নির্বাচন স্থগিতাদেশের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার বিকালে জরুরি বৈঠক করেন কমিশনাররা। বৈঠকের পর এক নির্বাচন কমিশনার জানান, এতে হাইকোর্টের রায়ের আইনজীবীর সার্টিফিকেট কপি নিয়ে আলোচনা হয়। আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পর কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার আদালতে রিট আবেদন করেন ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তাদের মধ্যে আতাউর ভাটারা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আর জাহাঙ্গীর বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আইনি জটিলতা রেখেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখেছি। নির্বাচন না করার মতো কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। এজন্যই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করে নির্বাচনের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, ভোটার তালিকা নিয়েই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। যিনি এ মামলার বাদী, উনি নিজেও ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়ে গেছেন। ভোটার তালিকার সিডিও তাকে দেয়া হয়েছে। সে ভোটার তালিকায় উনার নামও আছে। সেক্ষেত্রে ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো সমস্যা আছে বলে মনে করেন না তিনি।
ডিএনসিসির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা দুটি রিটের ওপর মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবীরা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের নাগরিকরা ভোটার হতে পারলেও তারা প্রার্থী হতে পারছেন না। প্রার্থিতা দাখিলের শেষদিন ধার্য করা হয়েছে ১৮ জানুয়ারি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তিনশ’ ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত প্রস্তাবক ও সমর্থকের নাম সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক। ফলে তারা (আবেদনকারী) যেখানে ভোটার তালিকাই সংগ্রহ করতে পারছেন না, সেখানে প্রার্থী হবেন কীভাবে? এটা তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার শামিল। আইনজীবীরা বলেন, নতুন করে যুক্ত ওয়ার্ডগুলোর ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও এখন যদি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়, সেক্ষেত্রে ওইসব চেয়ারম্যান-মেম্বারের মেয়াদের অবসান এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদ কতদিন হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এসব আইন জটিলতা নিরসন করেই তফসিল ঘোষণা করলে ভালো হতো। শুনানিতে আইনজীবীরা আরও বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ৫(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘মেয়রের পদসহ কর্পোরেশনের শতকরা পঁচাত্তর ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরগণের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইলে, কর্পোরেশন এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে যথাযথভাবে গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।’ উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টির ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সংখ্যা পঁচাত্তর শতাংশ হয় না। কারণ নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। সে হিসাবে মেয়র পদই তো গঠিত হচ্ছে না।’ তাছাড়া সম্প্রসারিত ৩৬টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন, তারা পুরো পাঁচ বছর পাবেন না কেন- সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয় ওই রিট আবেদনে। এতে আরও যুক্তি দেখানো হয়, নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদ কত দিন হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এ অবস্থায় ইসির তফসিল ঘোষণা আইনসম্মত হয়নি বলে শুনানিতে উল্লেখ করা হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইনি জটিলতার বিষয়গুলো তারা আগ থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। কমিশনের একটি সভার কার্যপত্রে সম্ভাব্য জটিলতার বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়। কার্যপত্রের ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় বিবেচ্য বিষয়’ অংশে উল্লেখ করে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী কর্পোরেশনের মেয়াদ প্রথম সভা থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হবে। তবে কর্পোরেশন এলাকা রদবদল বা বর্ধিত করা হলে ওই অংশের পরিষদের মেয়াদ কতদিন হবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। অর্থাৎ দুই সিটিতে যুক্ত হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদের বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। সিটি কর্পোরেশন আইনে বিষয়টি স্পষ্ট না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ আইনে রয়েছে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ১৪(৫)(ক) ও ১৪(৫)(খ) ধারার রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এরূপ যে কোনো সদস্য তার পদের মেয়াদের অনুত্তীর্ণ অংশের জন্য নবগঠিত পরিষদের পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। আর নতুন ভোটারদের বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়েছে, চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া ২ জানুয়ারি প্রকাশ এবং তা ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। যদিও ওই বৈঠকের পর ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেছিলেন, নির্বাচনে আইনগত কোনো জটিলতা নেই।
নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আইনি দুর্বলতা ও সমাধানের কথা আগ থেকেই বসে আসছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা আমলে নেয়া হয়নি। এখন সরকার ও ইসি পরস্পরকে দোষারোপ করছে। তিনি বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়া এবং আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম। এ নির্বাচন যেন অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে না যায়, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদসহ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ভোট হওয়ার কথা ছিল।
আদালতে যা ঘটেছে : আদালতে রিটকারী আতাউর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া। আর জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী ও মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন সেলিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
বুধবার আদেশের আগে আদালত নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চান। জবাবে তিনি আদালতে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আর স্থগিত হওয়ার সুযোগ নেই। পরে আদালত আদেশ দেন। আদেশের পর রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ৯ জানুয়ারি জারি করা তফসিল ও সার্কুলারের ওপরে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঘোষিত তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তিন মাসের রুল জারি করেছেন আদালত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার সচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আদেশের বিষয়টি নির্বাচন কমশিনকে অবহিত করা হয়েছে। কমিশন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এর আগে রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়ে। রিটে ডিএসসিসির ১৮টি ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত চাওয়া হয়। আক্তার হোসেনসহ ৮ জন স্থানীয় ভোটার বাদী হয়ে রিটটি করেন। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ রিটের শুনানি (স্ট্যান্ড ওভার) মুলতবি করেন।