নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলন
রাশেদ-ফারুকসহ আরও ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন
আরও ১৩ ছাত্র জামিনে মুক্ত
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৫ মামলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের আরও ৩২ শিক্ষার্থী জামিন পেলেন। এদের মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান, সোহেল ইসলাম ও ফারুক হাসান রয়েছেন। সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের একাধিক মামলায় ৪২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে জামিন পাওয়া আরও ১৩ শিক্ষার্থী সোমবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আগের দিন রোববার ৯ জন শিক্ষার্থী জামিনে মুক্তি পান। এ নিয়ে দুই দিনে মোট ২২ শিক্ষার্থী মুক্তি পেলেন।
সোমবার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পৃথক ১০ মামলায় ১৪ আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত, এদের মধ্যে ১২ জনই শিক্ষার্থী। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- রিসানাতুল ফেরদৌস, বায়েজিদ, আমিনুল এহসান বায়েজিদ, যাবের আহমেদ উল্লাহ, শামীম, জোবাইর হোসেন, গাজী ইমাম বুখারী, সাদ্দাম, মো. ইহসান উদ্দিন ইফাজ, মাহবুবুর রহমান, সাইদুল ইসলাম তৌহিদ, শাহরিয়ার হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান ও সোহেল। এর মধ্যে শেষের দু’জন ছাড়া সবাই শিক্ষার্থী।
প্রায় একই সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পৃথক ৫ মামলায় ২০ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এরা হলেন- মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বী, রাকিবুল হাসান, রাশেদ খান, সাখাওয়াত হোসেন, আতিকুর রহমান, সাইদুর রহমান, সোহেল ইসলাম, মাসুদ সরকার, জসীম উদ্দিন, আবু সাঈদ, আলী হোসেন, মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন আকাশ, ফারুক হাসান, তরিকুল ইসলাম, ইউসুফ চৌধুরী, সাইদুল ইসলাম তৌহিদ, আলমগীর হোসেন ও মাহবুবুর রহমান আরমান। এর মধ্যে প্রথম পাঁচজন শিক্ষার্থীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এরা সবগুলো মামলায় জামিন পেয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় এদিন সকালে ছয় শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন গ্রহণ করেননি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরা হলেন- শিক্ষার্থী সোহেল ইসলাম, মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন আকাশ, ফারুক হাসান, তরিকুল ইসলাম ও রাশেদ খান। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে মহানগর দায়রা জজ আদালতের ওই জামিন আবেদনগুলো প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করা হলে শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের জামিন মঞ্জুর করেন।
এদের মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ফোরাম সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ২ জুলাই গ্রেফতার করা হয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে। পরের দিন গ্রেফতার করা হয় আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুককে। ১২ জুলাই গ্রেফতার করা হয় পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা সোহেলকে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত এপ্রিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা হয়।
এদিন জামিন শুনানি উপলক্ষে সোমবার সকাল ৯টা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করতে শুরু করেন কারারুদ্ধ শিক্ষার্থীদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের একাধিক মামলার আসামি ঢাবি ছাত্র রাশেদের মা সালেহা বেগম ও তার স্ত্রীকে সকাল থেকেই আদালতের বারান্দায় শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সকালে রাশেদের জামিন আবেদন উচ্চ আদালতে (ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত) শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় তা গ্রহণ করেননি আদালত। জামিন আবেদন ফেরতের কথা শুনেই সালেহা বেগমের দুই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে থাকে। পরে বিকালে আদালত রাশেদের জামিন মঞ্জুর করলে তিনি আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে শুকরিয়া আদায় করেন।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের মামলায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিসানাতুল ফেরদৌসের বাবা তার সন্তানের জামিন আদেশ শুনে বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। যুগান্তরকে তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমার ছেলে কখনও এ কাজ করতে পারে না। এজন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
আদালত সূত্র জানায়, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে ভাংচুর, উসকানি ও পুলিশের কর্তব্য-কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৫১টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় গ্রেফতার ৯৯ জনের মধ্যে ৫৪ জনই শিক্ষার্থী। এদিকে জামিন শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা বলেছেন, এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। সন্দেহজনকভাবে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা সবাই ছাত্র। জামিন না পেলে তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুনানি শেষে আদালত ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন।
২৯ জুলাই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হন। এরপর ঘাতক বাসচালকের শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস হয়ে ওঠে। কোথাও কোথাও পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। এসব ঘটনায় মোট ৫১টি মামলা হয়। এর আগে চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উপাচার্যের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এসএম কামরুল আহসান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এসব ঘটনায় আরও চারটি মামলা করে পুলিশ।
জেলগেটে ‘ঈদের আনন্দ’ : কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাংচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় বন্দি আরও ১৩ জন শিক্ষার্থী দুই দফায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সোমবার সকাল ৯টার আগে এবং বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়া ছাত্রদের স্বজনরা তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান ৯ শিক্ষার্থী।
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শিক্ষার্থীরা যখন একে একে বেরিয়ে আসছিলেন তখন জেলগেটে সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ। স্বজনরা একে অপরের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোমবার সকালে মু্ক্তিপ্রাপ্তরা হলেন- সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র জাহিদুল হক, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র নূর মোহাম্মদ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ছাত্র খালিদ রেজা, একই বিভাগের তরিকুল ইসলাম, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র রেদোয়ান আহমেদ, জেনেটিক অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ছাত্র রাশেদুল ইসলাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজির ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন, বিবিএর ছাত্র আজিজুল করিম, আইইউবির বিবিএ’র ছাত্র শিহাব শাহরিয়ার।
বিকাল সাড়ে ৪টায় মুক্তি পাওয়া চার শিক্ষার্থী হলেন- ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিসালাত ও বায়েজিদ আদনান, আইইউবির ছাত্র আমিনুল বায়েজিদ এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাবের আহমেদ উল্লাস।
সোমবার সকালে জেলগেটে কথা হয় মুক্তি পাওয়া ছাত্র জাহিদুল করিমের ছোট বোন জাফরিন হকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, গত ১৪টা দিন আমাদের পরিবারের ওপর যে কি পরিমাণ ঝড় গেছে তা বোঝানো যাবে না। প্রায় দিনই আমরা কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে ভাইয়ার খোঁজ নিতাম। ভাইয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মনে হচ্ছে আমাদের পরিবারে ‘ঈদের খুশি’ চলছে। আমার ভাইসহ গ্রেফতার হওয়া সব শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। খালিদ রেজার বাবা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছেলেকে ছাড়া আমাদের পরিবারের ঈদ মাটি হয়ে যেত। এখন মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। এজন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার মোহাম্মদ জাহেদুল আলম সোমবার বিকালে বলেন, জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ছাত্রদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। দুই দিনে মোট ২২ ছাত্রকে মুক্তি দেয়া হল।
রাশেদ-ফারুকসহ আরও ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন
নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলন
আরও ১৩ ছাত্র জামিনে মুক্ত
যুগান্তর রিপোর্ট
২১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৫ মামলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের আরও ৩২ শিক্ষার্থী জামিন পেলেন। এদের মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান, সোহেল ইসলাম ও ফারুক হাসান রয়েছেন। সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের একাধিক মামলায় ৪২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে জামিন পাওয়া আরও ১৩ শিক্ষার্থী সোমবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আগের দিন রোববার ৯ জন শিক্ষার্থী জামিনে মুক্তি পান। এ নিয়ে দুই দিনে মোট ২২ শিক্ষার্থী মুক্তি পেলেন।
সোমবার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পৃথক ১০ মামলায় ১৪ আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত, এদের মধ্যে ১২ জনই শিক্ষার্থী। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- রিসানাতুল ফেরদৌস, বায়েজিদ, আমিনুল এহসান বায়েজিদ, যাবের আহমেদ উল্লাহ, শামীম, জোবাইর হোসেন, গাজী ইমাম বুখারী, সাদ্দাম, মো. ইহসান উদ্দিন ইফাজ, মাহবুবুর রহমান, সাইদুল ইসলাম তৌহিদ, শাহরিয়ার হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান ও সোহেল। এর মধ্যে শেষের দু’জন ছাড়া সবাই শিক্ষার্থী।
প্রায় একই সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পৃথক ৫ মামলায় ২০ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এরা হলেন- মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বী, রাকিবুল হাসান, রাশেদ খান, সাখাওয়াত হোসেন, আতিকুর রহমান, সাইদুর রহমান, সোহেল ইসলাম, মাসুদ সরকার, জসীম উদ্দিন, আবু সাঈদ, আলী হোসেন, মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন আকাশ, ফারুক হাসান, তরিকুল ইসলাম, ইউসুফ চৌধুরী, সাইদুল ইসলাম তৌহিদ, আলমগীর হোসেন ও মাহবুবুর রহমান আরমান। এর মধ্যে প্রথম পাঁচজন শিক্ষার্থীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এরা সবগুলো মামলায় জামিন পেয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় এদিন সকালে ছয় শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন গ্রহণ করেননি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরা হলেন- শিক্ষার্থী সোহেল ইসলাম, মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন আকাশ, ফারুক হাসান, তরিকুল ইসলাম ও রাশেদ খান। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে মহানগর দায়রা জজ আদালতের ওই জামিন আবেদনগুলো প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করা হলে শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের জামিন মঞ্জুর করেন।
এদের মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ফোরাম সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ২ জুলাই গ্রেফতার করা হয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে। পরের দিন গ্রেফতার করা হয় আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুককে। ১২ জুলাই গ্রেফতার করা হয় পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা সোহেলকে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত এপ্রিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা হয়।
এদিন জামিন শুনানি উপলক্ষে সোমবার সকাল ৯টা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করতে শুরু করেন কারারুদ্ধ শিক্ষার্থীদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের একাধিক মামলার আসামি ঢাবি ছাত্র রাশেদের মা সালেহা বেগম ও তার স্ত্রীকে সকাল থেকেই আদালতের বারান্দায় শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সকালে রাশেদের জামিন আবেদন উচ্চ আদালতে (ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত) শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় তা গ্রহণ করেননি আদালত। জামিন আবেদন ফেরতের কথা শুনেই সালেহা বেগমের দুই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে থাকে। পরে বিকালে আদালত রাশেদের জামিন মঞ্জুর করলে তিনি আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে শুকরিয়া আদায় করেন।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের মামলায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিসানাতুল ফেরদৌসের বাবা তার সন্তানের জামিন আদেশ শুনে বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। যুগান্তরকে তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমার ছেলে কখনও এ কাজ করতে পারে না। এজন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
আদালত সূত্র জানায়, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে ভাংচুর, উসকানি ও পুলিশের কর্তব্য-কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৫১টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় গ্রেফতার ৯৯ জনের মধ্যে ৫৪ জনই শিক্ষার্থী। এদিকে জামিন শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা বলেছেন, এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। সন্দেহজনকভাবে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা সবাই ছাত্র। জামিন না পেলে তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুনানি শেষে আদালত ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন।
২৯ জুলাই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হন। এরপর ঘাতক বাসচালকের শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস হয়ে ওঠে। কোথাও কোথাও পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। এসব ঘটনায় মোট ৫১টি মামলা হয়। এর আগে চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উপাচার্যের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এসএম কামরুল আহসান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এসব ঘটনায় আরও চারটি মামলা করে পুলিশ।
জেলগেটে ‘ঈদের আনন্দ’ : কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাংচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় বন্দি আরও ১৩ জন শিক্ষার্থী দুই দফায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সোমবার সকাল ৯টার আগে এবং বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়া ছাত্রদের স্বজনরা তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান ৯ শিক্ষার্থী।
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শিক্ষার্থীরা যখন একে একে বেরিয়ে আসছিলেন তখন জেলগেটে সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ। স্বজনরা একে অপরের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোমবার সকালে মু্ক্তিপ্রাপ্তরা হলেন- সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র জাহিদুল হক, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র নূর মোহাম্মদ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ছাত্র খালিদ রেজা, একই বিভাগের তরিকুল ইসলাম, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র রেদোয়ান আহমেদ, জেনেটিক অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ছাত্র রাশেদুল ইসলাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজির ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন, বিবিএর ছাত্র আজিজুল করিম, আইইউবির বিবিএ’র ছাত্র শিহাব শাহরিয়ার।
বিকাল সাড়ে ৪টায় মুক্তি পাওয়া চার শিক্ষার্থী হলেন- ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিসালাত ও বায়েজিদ আদনান, আইইউবির ছাত্র আমিনুল বায়েজিদ এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাবের আহমেদ উল্লাস।
সোমবার সকালে জেলগেটে কথা হয় মুক্তি পাওয়া ছাত্র জাহিদুল করিমের ছোট বোন জাফরিন হকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, গত ১৪টা দিন আমাদের পরিবারের ওপর যে কি পরিমাণ ঝড় গেছে তা বোঝানো যাবে না। প্রায় দিনই আমরা কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে ভাইয়ার খোঁজ নিতাম। ভাইয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মনে হচ্ছে আমাদের পরিবারে ‘ঈদের খুশি’ চলছে। আমার ভাইসহ গ্রেফতার হওয়া সব শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। খালিদ রেজার বাবা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছেলেকে ছাড়া আমাদের পরিবারের ঈদ মাটি হয়ে যেত। এখন মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। এজন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার মোহাম্মদ জাহেদুল আলম সোমবার বিকালে বলেন, জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ছাত্রদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। দুই দিনে মোট ২২ ছাত্রকে মুক্তি দেয়া হল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023