সিদ্ধিরগঞ্জে ২ মেয়েসহ গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা : গ্রেফতার ১
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক গৃহবধূ ও তার দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সিআইখোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছয়তলা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নাজনীন (২৬) এবং তার দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)। এ ঘটনায় আহত সুমাইয়া (১৫) নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সে নিহত নাজনীনের ভাগনি। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় আব্বাস নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আব্বাস সম্পর্কে নাজনীনের ভগ্নিপতি। সে খুনের দায় স্বীকার করেছে।
জানা যায়, সিআইখোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার জোনাকী ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী সুমন।
রাতের ডিউটি শেষে সকালে বাসায় এসে তিনি স্ত্রী নাজনীন, কন্যা নুসরাত ও খাদিজার লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান এলাকার লোকজন।
এলাকাবাসীই সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে ঘটনাস্থলে যান ডিবি, পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ সিআইডি এবং সিআইডির ঢাকার ক্রাইমসিন বিভাগের সদস্যরা। তারা সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া পুলিশকে বলে, ‘আমার বাবা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমার বাবাই খালামণি ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছে। আমার বাবা মাদকাসক্ত। আমাকে মারধর করেছে। সে কারণেই আমি ও আমার মা খালামণির বাসায় চলে আসি।’
নিহত নাজনীনের স্বামী সুমন জানান, ‘ডিউটি শেষে সকাল ১০টায় বাসায় ফিরে দেখি দরজা খোলা। ভেতরে প্রবেশ করেই স্ত্রী-সন্তানদের লাশ দেখতে পাই। আহত অবস্থায় ভায়রার মেয়ে সুমাইয়াকে পড়ে থাকতে দেখি। অন্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি পুলিশকে জানান।’
নিহতের বোন ইয়াসমিন (আব্বাসের স্ত্রী) জানান, তিনি আদমজী ইপিজেডে সুপ্রিম স্মার্ট নিটওয়্যার নামের একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করেন। তার স্বামী আব্বাস মিয়া মাদকাসক্ত।
প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে মারধর করার কারণে তিনি বুধবার রাতে ছোট বোন নাজনীনের বাসায় চলে যান। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ওই বাসা থেকে কর্মস্থলে যান তিনি। সেখানেই হত্যাকাণ্ডের খবর পান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক সাজ্জাদ রোমন জানান, মা ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ফারুক জানিয়েছেন, ‘বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে থেকে আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
চড় দেয়ার ক্ষোভ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা : রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ জানান, আব্বাস প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় দায় স্বীকার করেছে।
সে (আব্বাস) বলেছে, দীর্ঘদিন আগে তার ভায়রা তথা নিহতের স্বামী সুমন মিয়া পারিবারিক একটি ঘটনার জেরে তাকে (আব্বাস) চড় মেরেছিলেন। সেই থেকে তার মনে ক্ষোভের জন্ম নেয়। এছাড়া কোনো কিছু হলেই তার স্ত্রী ও সন্তান ভায়রার বাসায় চলে আসে।
এ কারণে সে পরিকল্পনা করতে থাকে ওই বাড়ির অস্তিত্বই রাখবে না সে। যেন আর কখনও ওই বাড়িতে না যায় স্ত্রী-সন্তান। এই পরিকল্পনা থেকেই আব্বাস নাজনীন ও তার দুই সন্তানকে খুন করে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সিদ্ধিরগঞ্জে ২ মেয়েসহ গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা : গ্রেফতার ১
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক গৃহবধূ ও তার দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সিআইখোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছয়তলা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নাজনীন (২৬) এবং তার দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)। এ ঘটনায় আহত সুমাইয়া (১৫) নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সে নিহত নাজনীনের ভাগনি। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় আব্বাস নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আব্বাস সম্পর্কে নাজনীনের ভগ্নিপতি। সে খুনের দায় স্বীকার করেছে।
জানা যায়, সিআইখোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার জোনাকী ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী সুমন।
রাতের ডিউটি শেষে সকালে বাসায় এসে তিনি স্ত্রী নাজনীন, কন্যা নুসরাত ও খাদিজার লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান এলাকার লোকজন।
এলাকাবাসীই সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে ঘটনাস্থলে যান ডিবি, পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ সিআইডি এবং সিআইডির ঢাকার ক্রাইমসিন বিভাগের সদস্যরা। তারা সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া পুলিশকে বলে, ‘আমার বাবা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমার বাবাই খালামণি ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছে। আমার বাবা মাদকাসক্ত। আমাকে মারধর করেছে। সে কারণেই আমি ও আমার মা খালামণির বাসায় চলে আসি।’
নিহত নাজনীনের স্বামী সুমন জানান, ‘ডিউটি শেষে সকাল ১০টায় বাসায় ফিরে দেখি দরজা খোলা। ভেতরে প্রবেশ করেই স্ত্রী-সন্তানদের লাশ দেখতে পাই। আহত অবস্থায় ভায়রার মেয়ে সুমাইয়াকে পড়ে থাকতে দেখি। অন্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি পুলিশকে জানান।’
নিহতের বোন ইয়াসমিন (আব্বাসের স্ত্রী) জানান, তিনি আদমজী ইপিজেডে সুপ্রিম স্মার্ট নিটওয়্যার নামের একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করেন। তার স্বামী আব্বাস মিয়া মাদকাসক্ত।
প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে মারধর করার কারণে তিনি বুধবার রাতে ছোট বোন নাজনীনের বাসায় চলে যান। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ওই বাসা থেকে কর্মস্থলে যান তিনি। সেখানেই হত্যাকাণ্ডের খবর পান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক সাজ্জাদ রোমন জানান, মা ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ফারুক জানিয়েছেন, ‘বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে থেকে আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
চড় দেয়ার ক্ষোভ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা : রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ জানান, আব্বাস প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় দায় স্বীকার করেছে।
সে (আব্বাস) বলেছে, দীর্ঘদিন আগে তার ভায়রা তথা নিহতের স্বামী সুমন মিয়া পারিবারিক একটি ঘটনার জেরে তাকে (আব্বাস) চড় মেরেছিলেন। সেই থেকে তার মনে ক্ষোভের জন্ম নেয়। এছাড়া কোনো কিছু হলেই তার স্ত্রী ও সন্তান ভায়রার বাসায় চলে আসে।
এ কারণে সে পরিকল্পনা করতে থাকে ওই বাড়ির অস্তিত্বই রাখবে না সে। যেন আর কখনও ওই বাড়িতে না যায় স্ত্রী-সন্তান। এই পরিকল্পনা থেকেই আব্বাস নাজনীন ও তার দুই সন্তানকে খুন করে।