দায়িত্ব নেয়ার দেড় বছরের মধ্যে কোনো প্রকল্প পাইনি: গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র
jugantor
যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার
দায়িত্ব নেয়ার দেড় বছরের মধ্যে কোনো প্রকল্প পাইনি: গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র

  তানজিমুল হক, রাজশাহী ব্যুরো  

২৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

মনিরুল ইসলাম বাবু

রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার যাত্রা শুরু ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি। আয়তন ১৪ দশমিক ২৭ বর্গকিলোমিটার। এখানে ৩৯ হাজার ৭৬৬ জন লোকের বাস। মোট ভোটার প্রায় ৩২ হাজার।

নারী ও পুরুষ ভোটার প্রায় সমান। এটি একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলাম বাবু।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী আমিনুল ইসলামকে পরাজিত করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নিয়ে তিনি পৌর এলাকার বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান রয়েছে অনেক কাজ।

পৌরবাসীকে এখনও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। অপর্যাপ্ত ড্রেনের কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সড়কে পর্যাপ্ত বাতি নেই। নাগরিক দুর্ভোগের পাশাপাশি গোদাগাড়ী পৌর এলাকায় প্রধান সমস্যা মাদক ব্যবসা। হেরোইন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে এই এলাকাটির বদনাম রয়েছে।

মহিষালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমানের অভিযোগ, ‘বর্তমান মেয়র রাস্তাঘাটের সেভাবে উন্নয়ন করতে পারেননি। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে চলাচলের ক্ষেত্রে পৌরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

পৌর এলাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র বাবু পৌর এলাকাকে মাদকমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।’

এসব অভিযোগের জবাব ও নিজের সফলতার কথা জনাতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার দেড় বছরের মধ্যে কোনো প্রকল্প পাইনি। এ কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এখন প্রকল্প পাচ্ছি। ফলে উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। দায়িত্ব নেয়ার সময় পৌরসভার প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। এই সমস্যা দূর করতে জলবায়ু ফান্ডের টাকায় ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ চলছে।

ইতিমধ্যে ৫ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৫ কোটি টাকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না। রাস্তাঘাটের সংস্কারে সোয়া ৬ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। আরও পৌনে ৮ কোটি টাকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ২০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার হয়েছে। এই টাকা দিয়ে পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। পৌরসভার চারটি পয়েন্ট যথাক্রমে- সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ী সদর এবং মহিশালবাড়ি এলাকায় চারটি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে।’

মেয়র বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রায় দেড় যুগ পৌরসভার সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। সময় আমার কাছে সবচেয়ে বড় বাধা। শুধু সময়ের অভাবে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারছি না।

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘পৌরসভার সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক। দেশবিরোধী এই অপরাধ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। মাদকের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘মাদক সমস্যা থাকলেও পৌর এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই নেই।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমার পৌরসভা দুর্নীতিমুক্ত। এখানে উন্নয়ন কাজ কিংবা সেবা পেতে টেবিলে টেবিলে ঘুষ দিতে হয় না। আমার নেতৃত্বাধীন পরিষদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’

মহিশালবাড়ি এবং সুলতানগঞ্জ এলাকায় খাল দখল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মেয়র মনিরুল বলেন, ‘ইতিমধ্যে দখলদারদের আলটিমেটাম দিয়েছি। এছাড়া কিছু লোক ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। তাদেরকেও জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। ছেড়ে না দিলে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিভক্ত। এ কারণে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিএফ চাল বিতরণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’

শিক্ষার মানোন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।’

তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীর দেয়া করের টাকায় সড়ক বাতি ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সেবা পেয়ে পৌরবাসী সন্তুষ্ট।’

যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার

দায়িত্ব নেয়ার দেড় বছরের মধ্যে কোনো প্রকল্প পাইনি: গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র

 তানজিমুল হক, রাজশাহী ব্যুরো 
২৯ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ
মনিরুল ইসলাম বাবু
গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু। ছবি- যুগান্তর

রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার যাত্রা শুরু ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি। আয়তন ১৪ দশমিক ২৭ বর্গকিলোমিটার। এখানে ৩৯ হাজার ৭৬৬ জন লোকের বাস। মোট ভোটার প্রায় ৩২ হাজার।

নারী ও পুরুষ ভোটার প্রায় সমান। এটি একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলাম বাবু।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী আমিনুল ইসলামকে পরাজিত করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নিয়ে তিনি পৌর এলাকার বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান রয়েছে অনেক কাজ।

পৌরবাসীকে এখনও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। অপর্যাপ্ত ড্রেনের কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সড়কে পর্যাপ্ত বাতি নেই। নাগরিক দুর্ভোগের পাশাপাশি গোদাগাড়ী পৌর এলাকায় প্রধান সমস্যা মাদক ব্যবসা। হেরোইন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে এই এলাকাটির বদনাম রয়েছে।

মহিষালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমানের অভিযোগ, ‘বর্তমান মেয়র রাস্তাঘাটের সেভাবে উন্নয়ন করতে পারেননি। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে চলাচলের ক্ষেত্রে পৌরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

পৌর এলাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র বাবু পৌর এলাকাকে মাদকমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।’

এসব অভিযোগের জবাব ও নিজের সফলতার কথা জনাতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার দেড় বছরের মধ্যে কোনো প্রকল্প পাইনি। এ কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এখন প্রকল্প পাচ্ছি। ফলে উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। দায়িত্ব নেয়ার সময় পৌরসভার প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। এই সমস্যা দূর করতে জলবায়ু ফান্ডের টাকায় ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ চলছে।

ইতিমধ্যে ৫ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৫ কোটি টাকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না। রাস্তাঘাটের সংস্কারে সোয়া ৬ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। আরও পৌনে ৮ কোটি টাকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ২০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার হয়েছে। এই টাকা দিয়ে পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। পৌরসভার চারটি পয়েন্ট যথাক্রমে- সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ী সদর এবং মহিশালবাড়ি এলাকায় চারটি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে।’

মেয়র বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রায় দেড় যুগ পৌরসভার সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। সময় আমার কাছে সবচেয়ে বড় বাধা। শুধু সময়ের অভাবে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারছি না।

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘পৌরসভার সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক। দেশবিরোধী এই অপরাধ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। মাদকের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘মাদক সমস্যা থাকলেও পৌর এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই নেই।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমার পৌরসভা দুর্নীতিমুক্ত। এখানে উন্নয়ন কাজ কিংবা সেবা পেতে টেবিলে টেবিলে ঘুষ দিতে হয় না। আমার নেতৃত্বাধীন পরিষদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’

মহিশালবাড়ি এবং সুলতানগঞ্জ এলাকায় খাল দখল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মেয়র মনিরুল বলেন, ‘ইতিমধ্যে দখলদারদের আলটিমেটাম দিয়েছি। এছাড়া কিছু লোক ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। তাদেরকেও জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। ছেড়ে না দিলে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিভক্ত। এ কারণে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিএফ চাল বিতরণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’

শিক্ষার মানোন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।’

তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীর দেয়া করের টাকায় সড়ক বাতি ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সেবা পেয়ে পৌরবাসী সন্তুষ্ট।’

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন