ছেঁড়া বস্তা সরবরাহ করে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ
jugantor
রংপুর অঞ্চলের সরকারি খাদ্যগুদাম 
ছেঁড়া বস্তা সরবরাহ করে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ
বস্তাগুলো গ্রহণে বাধ্য করেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক

  রংপুর ব্যুরো ও ডিমলা প্রতিনিধি  

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুর অঞ্চলের সরকারি খাদ্যগুদামে নতুন বস্তা সরবরাহের পরিবর্তে অতি নিম্নমানের ছেঁড়া বস্তা দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে খাদ্য অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি চক্র এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।

সম্প্রতি নীলফামারীর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের ছেঁড়াফাটা বস্তা সরবরাহ করা হলে সেখানকার এক খাদ্য কর্মকর্তা তা গ্রহণ না করে ফেরত পাঠালে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

এভাবে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন খাদ্যগুদামে প্রায় ৭ লাখ বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে। এ নিয়ে খাদ্য বিভাগের রংপুরে অঞ্চলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে খাদ্য অধিদফতরের ওই দরপত্রে ৩০ কেজি ধারণক্ষমতার প্রতি বস্তা ৫৩ টাকা, আর ৫০ কেজি ধারণক্ষমতার প্রতি বস্তা ৭৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়; যা খোলা বাজারে যথাক্রমে ১০-১২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের এক গোপন পত্র থেকে জানা যায়, ওই বস্তাগুলো নাটোর জুট মিলস ও বিভিন্ন নামের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রংপুর অঞ্চল গুদামের আওতায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও রংপুর খাদ্যগুদামে সরবরাহ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ রংপুরের স্মারক নং ১৯২০ (০৮/০৯/২০২০) মোতাবেক নীলফামারী সদর এলএসডিতে ১ লাখ পিস ৩০ কেজি ধারণক্ষমতা খালি বস্তা চলাচলের সূচি জারি করেন। যার প্রোগ্রাম নং-২১/ডিআরটিসি।

ওই চলাচল সূচির আওতায় নীলফামারী সদর এলএসডিতে ১৩ সেপ্টেম্বর খালি বস্তার ৪টি ট্রাক প্রবেশ করে। নীলফামারী জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হকসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বস্তাগুলো যাচাইকালে চরম ত্রুটি পাওয়া যায়।

বস্তাগুলো বিভিন্ন এলএসডিতে ব্যবহৃত। এগুলো ২০১৫-১৬ সালের, ছেঁড়াফাটা ও সেলাই করা। কিছু বস্তায় ৫-৬ বছর আগের মহিলা বিষয়ক দফতরের বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত ও বিলি বিতরণের স্টেনসিল রয়েছে।

বস্তাগুলো উল্টানো ও ক্যালেন্ডার করা। এ কারণে নীলফামারী সদর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান ব্যবহার অযোগ্য বস্তাগুলো কুড়িগ্রাম সদর এলএসডিতে পাঠিয়ে দেন।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয়ভাবে খাদ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে কুড়িগ্রাম সদর এলএসডিতে ৭ লাখ বস্তা সরবরাহ করা হয়।

কোম্পানিগুলো বিভিন্ন খাতের ব্যবহৃত বস্তা খোলা বাজার থেকে ১০-১২ টাকা দরে ক্রয় করে তা উল্টিয়ে স্টেনসিল ব্যবহার ও ক্যালেন্ডার করে পুনরায় নতুন বস্তা দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি জানার পরও রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুস সালাম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি ওই নিম্নমানের বস্তাগুলো বিভিন্ন খাদ্যগুদামে গ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন।

মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নতুন বস্তার পরিবর্তে পুরাতন ছেঁড়াফাটা রিপেয়ারিং বস্তা গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়।

এক হিসাবে দেখা গেছে, দরপত্র অনুযায়ী নতুন বস্তার নামে পুরাতন বস্তা সরবরাহ করে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, কুড়িগ্রামের বস্তাগুলো পরিদর্শন করেছি সেখানে নিম্নমানের বস্তা ছিল না।

নীলফামারী ১ লাখ পিস বস্তা ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খালি বস্তাগুলো ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছিল সেখানে আমার কিছু করার নেই।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান বলেন, নীলফামারীতে কোনো খারাপ বস্তা দেয়া হয়নি। খাদ্য বিভাগের দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে বস্তাগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।

রংপুর অঞ্চলের সরকারি খাদ্যগুদাম 

ছেঁড়া বস্তা সরবরাহ করে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বস্তাগুলো গ্রহণে বাধ্য করেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক
 রংপুর ব্যুরো ও ডিমলা প্রতিনিধি 
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুর অঞ্চলের সরকারি খাদ্যগুদামে নতুন বস্তা সরবরাহের পরিবর্তে অতি নিম্নমানের ছেঁড়া বস্তা দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে খাদ্য অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি চক্র এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।

সম্প্রতি নীলফামারীর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের ছেঁড়াফাটা বস্তা সরবরাহ করা হলে সেখানকার এক খাদ্য কর্মকর্তা তা গ্রহণ না করে ফেরত পাঠালে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

এভাবে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন খাদ্যগুদামে প্রায় ৭ লাখ বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে। এ নিয়ে খাদ্য বিভাগের রংপুরে অঞ্চলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

কেন্দ্রীয়ভাবে খাদ্য অধিদফতরের ওই দরপত্রে ৩০ কেজি ধারণক্ষমতার প্রতি বস্তা ৫৩ টাকা, আর ৫০ কেজি ধারণক্ষমতার প্রতি বস্তা ৭৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়; যা খোলা বাজারে যথাক্রমে ১০-১২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের এক গোপন পত্র থেকে জানা যায়, ওই বস্তাগুলো নাটোর জুট মিলস ও বিভিন্ন নামের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রংপুর অঞ্চল গুদামের আওতায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও রংপুর খাদ্যগুদামে সরবরাহ করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ রংপুরের স্মারক নং ১৯২০ (০৮/০৯/২০২০) মোতাবেক নীলফামারী সদর এলএসডিতে ১ লাখ পিস ৩০ কেজি ধারণক্ষমতা খালি বস্তা চলাচলের সূচি জারি করেন। যার প্রোগ্রাম নং-২১/ডিআরটিসি।

ওই চলাচল সূচির আওতায় নীলফামারী সদর এলএসডিতে ১৩ সেপ্টেম্বর খালি বস্তার ৪টি ট্রাক প্রবেশ করে। নীলফামারী জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হকসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বস্তাগুলো যাচাইকালে চরম ত্রুটি পাওয়া যায়।

বস্তাগুলো বিভিন্ন এলএসডিতে ব্যবহৃত। এগুলো ২০১৫-১৬ সালের, ছেঁড়াফাটা ও সেলাই করা। কিছু বস্তায় ৫-৬ বছর আগের মহিলা বিষয়ক দফতরের বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত ও বিলি বিতরণের স্টেনসিল রয়েছে।

বস্তাগুলো উল্টানো ও ক্যালেন্ডার করা। এ কারণে নীলফামারী সদর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান ব্যবহার অযোগ্য বস্তাগুলো কুড়িগ্রাম সদর এলএসডিতে পাঠিয়ে দেন।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয়ভাবে খাদ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে কুড়িগ্রাম সদর এলএসডিতে ৭ লাখ বস্তা সরবরাহ করা হয়।

কোম্পানিগুলো বিভিন্ন খাতের ব্যবহৃত বস্তা খোলা বাজার থেকে ১০-১২ টাকা দরে ক্রয় করে তা উল্টিয়ে স্টেনসিল ব্যবহার ও ক্যালেন্ডার করে পুনরায় নতুন বস্তা দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। 

বিষয়টি জানার পরও রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুস সালাম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি ওই নিম্নমানের বস্তাগুলো বিভিন্ন খাদ্যগুদামে গ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন।

মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নতুন বস্তার পরিবর্তে পুরাতন ছেঁড়াফাটা রিপেয়ারিং বস্তা গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়।

এক হিসাবে দেখা গেছে, দরপত্র অনুযায়ী নতুন বস্তার নামে পুরাতন বস্তা সরবরাহ করে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, কুড়িগ্রামের বস্তাগুলো পরিদর্শন করেছি সেখানে নিম্নমানের বস্তা ছিল না।

নীলফামারী ১ লাখ পিস বস্তা ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খালি বস্তাগুলো ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছিল সেখানে আমার কিছু করার নেই।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান বলেন, নীলফামারীতে কোনো খারাপ বস্তা দেয়া হয়নি। খাদ্য বিভাগের দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে বস্তাগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন