কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ
চালক ও হেলপার গ্রেফতার, সুপারভাইজার পলাতক
কুমিল্লা ব্যুরো
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লায় নগরীর পদুয়ার বাজার এলাকায় বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে চালক, হেলপার এবং সুপারভাইজার। মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও হেলপার বাবু শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে সুপারভাইজার আলম পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া দু’জনের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই তরুণীকে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। আদালতে জবানবন্দি নিয়ে তাকে তার মায়ের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।
গণপরিবহনে এমন ঘটনায় বিস্মিত খোদ চালক-মালিকসহ শ্রমিক নেতারা। তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তরুণীর পরিবার সূত্র ও মামলার বিবরণে জানা যায়, তরুণী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার আবদুল্লাহপুরে তার চাচাতো বোনের বাসায় যায়। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সে বাড়ির উদ্দেশে বোনের বাসা থেকে রওনা হয়। সেখান থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের একটি বাসে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি শাসনগাছা বাস স্টেশনে পৌঁছলে তরুণী চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে নামিয়ে দিতে অনুরোধ জানায়।
এ সময় বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার ওই স্টেশনে নামিয়ে দেবে জানিয়ে টেনশন না করতে বলেন। কিন্তু বাসের চালক তরুণীকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে না নামিয়ে কৌশলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে যায়। ভোর ৪টার দিকে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল, হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম বাসটির দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে যায়।
এরপর হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় একটি ঘরে নিয়ে আবার ধর্ষণ করে। সকাল ৬টার দিকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলে।
ঘটনাটি তরুণী মোবাইল ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ২টার দিকে ধর্ষিতার মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের মামলা করেন। আর এই ঘটনা বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ধর্ষিতার মা জানান, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করত। করোনার কারণে পাঁচ মাস আগে সে বাড়ি চলে আসে। চাকরির সন্ধানে তার মেয়ে চাচাতো বোনের বাসায় গিয়েছিল। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার মেয়ে নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হয়। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের পরিচালক বিমল দে বলেন, যে বাসটিতে ঘটনা ঘটেছে সে বাসটির মালিক পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। এ ব্যাপারে দুলাল হোসেন অপু বলেন, ঘটনা জানার পর আমরা গাড়ির চালক ও হেলপারসহ দু’জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছি।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ
চালক ও হেলপার গ্রেফতার, সুপারভাইজার পলাতক
কুমিল্লায় নগরীর পদুয়ার বাজার এলাকায় বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে চালক, হেলপার এবং সুপারভাইজার। মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও হেলপার বাবু শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে সুপারভাইজার আলম পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া দু’জনের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই তরুণীকে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। আদালতে জবানবন্দি নিয়ে তাকে তার মায়ের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।
গণপরিবহনে এমন ঘটনায় বিস্মিত খোদ চালক-মালিকসহ শ্রমিক নেতারা। তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তরুণীর পরিবার সূত্র ও মামলার বিবরণে জানা যায়, তরুণী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার আবদুল্লাহপুরে তার চাচাতো বোনের বাসায় যায়। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সে বাড়ির উদ্দেশে বোনের বাসা থেকে রওনা হয়। সেখান থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের একটি বাসে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি শাসনগাছা বাস স্টেশনে পৌঁছলে তরুণী চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে নামিয়ে দিতে অনুরোধ জানায়।
এ সময় বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার ওই স্টেশনে নামিয়ে দেবে জানিয়ে টেনশন না করতে বলেন। কিন্তু বাসের চালক তরুণীকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে না নামিয়ে কৌশলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে যায়। ভোর ৪টার দিকে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল, হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম বাসটির দরজা-জানালা বন্ধ করে তরুণীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে যায়।
এরপর হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় একটি ঘরে নিয়ে আবার ধর্ষণ করে। সকাল ৬টার দিকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলে।
ঘটনাটি তরুণী মোবাইল ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ২টার দিকে ধর্ষিতার মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জেনে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের মামলা করেন। আর এই ঘটনা বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ধর্ষিতার মা জানান, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করত। করোনার কারণে পাঁচ মাস আগে সে বাড়ি চলে আসে। চাকরির সন্ধানে তার মেয়ে চাচাতো বোনের বাসায় গিয়েছিল। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার মেয়ে নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হয়। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
‘তিশা প্লাস’ পরিবহনের পরিচালক বিমল দে বলেন, যে বাসটিতে ঘটনা ঘটেছে সে বাসটির মালিক পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুলাল হোসেন অপু। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। এ ব্যাপারে দুলাল হোসেন অপু বলেন, ঘটনা জানার পর আমরা গাড়ির চালক ও হেলপারসহ দু’জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছি।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, এ ঘটনায় বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল ও বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।