রাতে সেনা তল্লাশি দিনে বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার জান্তা-লবিস্ট
যুগান্তর ডেস্ক
০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মিয়ানমারে শনিবার রাতভর বিক্ষোভের প্রধান কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে আন্দোলনকারীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় ব্যাপক ধরপাকড় ও মারধর করা হয়। সেনা সদস্যের মারধরে অং সান সু চির দল এনএলডির একজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এরপর রোববার সকাল থেকে রাজপথে নেমে আসেন লাখো মানুষ। জান্তাবিরোধী নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে দেশটির বিভিন্ন শহর। বিক্ষোভকারীদের দমনে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এদিকে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় বলে জানিয়েছেন একজন ইসরাইলি-কানাডিয়ান লবিস্ট। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা জানান, শনিবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায়। বেশ কয়েকটি এলাকায় গুলির ঘটনাও ঘটে। কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে তারা। এ সময় সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির একজন কর্মকর্তা খিন মং লাত নিরাপত্তা বাহিনীর মারধরে নিহত হয়েছেন। সু চির একজন আইনজীবীকেও খুঁজছিল সেনাবাহিনী। পরামর্শক গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ঘুষি মেরে, বুটের লাথি দিয়ে, পিটিয়ে ও টেনেহিঁচড়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা নিয়ে যান। এছাড়া তারা অনেক বাড়িতে গুলি চালান এবং আসবাবপত্র তছনছ করেন।
রোববার ইয়াঙ্গুনের অন্তত তিনটি এলাকায় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। তবে হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশের লাশিও শহরেও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক মন্দিরের শহর বাগানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এছাড়া আরও আধা ডজন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিন সবচেয়ে বেশি লোক জমায়েত হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। সেখানে আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহতদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালন করার পর অবস্থান ধর্মঘট করেন। মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইর একজন আন্দোলনকারী নেতা জনতার উদ্দেশে বলেন, তারা মানুষকে পাখির মতো হত্যা করছে। তাদের বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহ না করি আমরা তাহলে কী করব? আমরা অবশ্যই বিদ্রোহ করব।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ‘তহবিল গঠনের চেষ্টা’ : মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে চান। দেশটির জান্তা সরকারের নিয়োগ দেওয়া একজন লবিস্ট এ তথ্য জানিয়েছেন। ইসরাইলি-কানাডিয়ান লবিস্ট বেন মানাশে জানান, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে সামরিক সরকার।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের জেনারেলরা তাকে ও তার প্রতিষ্ঠান ‘ডিকেন্স অ্যান্ড ম্যাডসন কানাডা’কে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগে সহায়তা করতেও দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির বদলে পশ্চিম ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আগাতে তারা জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা চীনের পুতুল হতে চান না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রাতে সেনা তল্লাশি দিনে বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার জান্তা-লবিস্ট
মিয়ানমারে শনিবার রাতভর বিক্ষোভের প্রধান কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে আন্দোলনকারীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় ব্যাপক ধরপাকড় ও মারধর করা হয়। সেনা সদস্যের মারধরে অং সান সু চির দল এনএলডির একজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এরপর রোববার সকাল থেকে রাজপথে নেমে আসেন লাখো মানুষ। জান্তাবিরোধী নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে দেশটির বিভিন্ন শহর। বিক্ষোভকারীদের দমনে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এদিকে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় বলে জানিয়েছেন একজন ইসরাইলি-কানাডিয়ান লবিস্ট। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা জানান, শনিবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায়। বেশ কয়েকটি এলাকায় গুলির ঘটনাও ঘটে। কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে তারা। এ সময় সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির একজন কর্মকর্তা খিন মং লাত নিরাপত্তা বাহিনীর মারধরে নিহত হয়েছেন। সু চির একজন আইনজীবীকেও খুঁজছিল সেনাবাহিনী। পরামর্শক গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের ঘুষি মেরে, বুটের লাথি দিয়ে, পিটিয়ে ও টেনেহিঁচড়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা নিয়ে যান। এছাড়া তারা অনেক বাড়িতে গুলি চালান এবং আসবাবপত্র তছনছ করেন।
রোববার ইয়াঙ্গুনের অন্তত তিনটি এলাকায় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। তবে হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশের লাশিও শহরেও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক মন্দিরের শহর বাগানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এছাড়া আরও আধা ডজন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিন সবচেয়ে বেশি লোক জমায়েত হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। সেখানে আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহতদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালন করার পর অবস্থান ধর্মঘট করেন। মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইর একজন আন্দোলনকারী নেতা জনতার উদ্দেশে বলেন, তারা মানুষকে পাখির মতো হত্যা করছে। তাদের বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহ না করি আমরা তাহলে কী করব? আমরা অবশ্যই বিদ্রোহ করব।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ‘তহবিল গঠনের চেষ্টা’ : মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে চান। দেশটির জান্তা সরকারের নিয়োগ দেওয়া একজন লবিস্ট এ তথ্য জানিয়েছেন। ইসরাইলি-কানাডিয়ান লবিস্ট বেন মানাশে জানান, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে সামরিক সরকার।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের জেনারেলরা তাকে ও তার প্রতিষ্ঠান ‘ডিকেন্স অ্যান্ড ম্যাডসন কানাডা’কে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগে সহায়তা করতেও দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির বদলে পশ্চিম ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আগাতে তারা জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা চীনের পুতুল হতে চান না।