অবশেষে জেলে
সিরিয়াল কিলার হেলালের জীবন রূপকথার মতো
সিরিয়াল কিলার বাউল হেলাল ছদ্মবেশে জীবন ২০ বছর। এরমধ্যে সে ৪ বছর ভৈরবে কাটিয়েছে। সেখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখে খোদেজা বেগম ওরফে খুদু বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করে সংসারও করছিল। বাউল সেলিমের অন্য নাম হলো-হেলাল উদ্দিন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে খুনি হেলাল। ভৈরব পৌর শহরের আমলাপাড়া এলাকার আবু তাহের মিয়ার একটি ছোট ঘরে সে স্ত্রীসহ ভাড়া থাকত। ভৈরবে তাকে ফকির নামে চিনতেন লোকজন। তার বাড়ি বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ায়। ২০০১ সালে এক হত্য মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পরই গা ঢাকা দেয় সে। বেশ ধরে বাউলের। এরপর ভৈরব, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়।
জানা যায়, ৪ বছর আগে ভৈরবে খোদেজা বেগম নামের এক ভিক্ষুকের সঙ্গে পরিচয় হয়। বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল এলাকায়। পরে খোদেজাকে বিয়ে করে সে। বিয়ের পর তারা ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করে। আড়াই মাস আগে তারা পঞ্চবটির বাসা ছেড়ে আমলাপাড়ার ভাড়া বাসায় ওঠে। প্রতিদিন সকালে স্ত্রী খোদেজা ভিক্ষা করতে গ্রামে চলে যেত। আর বাউল সেলিম বাসা থেকে বের হয়ে রেলস্টেশনে চলে যেত। রেলস্টেশন ও ট্রেনে গান গেয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে এবং স্ত্রী খোদেজার ভিক্ষার আয় দিয়ে সংসার চলত। এভাবেই ৪ বছর ধরে দুজনের সংসার চলেছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাউল সেলিম ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এর আগে কোনোভাবেই টের পায়নি সে র্যাবের জালে ধরা পড়বে। আটকের খবর পেয়ে তার স্ত্রী খোদেজা রেলস্টেশনে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন স্বামী খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের আমলাপাড়ার ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় দরজায় তালা ঝুলছে। খোদেজা বেগম বাসায় নেই। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছেন না। সাংবাদিক জেনে এগিয়ে এসে বাসার মালিক মো. আবু তাহের মিয়া জানান, আমরা তার নাম জানতাম না। তবে ফকির নামে ডাকতাম তাকে । সে কখনও তার প্রকৃত নাম বলত না। তিনি বলেন, বাউল সেলিম আগে পঞ্চবটি এলাকায় ভাড়া থাকত। গত আড়াই মাস আগে আমার বাসাটি মাসিক ১৩০০ টাকায় ভাড়া নেয়। দিনে সে বাসায় থাকত না। স্ত্রী ভিক্ষা করে। প্রতিদিন সকালে দুজনই বাসা থেকে বেরিয়ে যেত। বাসায় ফিরত সন্ধ্যার পর। বুধবার সন্ধ্যায় খবর পাই র্যাব তাকে গ্রেফতার করেছে।
প্রতিবেশী চায়ের দোকানদার মোরশেদ মিয়া জানান, এতবড় কিলার ছদ্মবেশে আছে আমরা টেরই পাইনি। আমরা জানতাম সে রেলস্টেশন ও ট্রেনে ট্রেনে গান গায়। সে আধ্যাত্মিক গান গায়। আমিও তার গান শুনেছি। ভালো গান গায় সে। তার স্ত্রী ভিক্ষা করত। র্যাবের হাতে আটকের পর জানতে পারি তার খুন ও সাজার কথা।
সিরিয়াল কিলারের বাউল হওয়ার কাহিনী যেন রূপকথাকেও হার মানায়। ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা ও ২০০৬ সালে রবিউল হত্যার আসামি সেলিম। সে একটি চুরির মামলায়ও জেল খেটেছে। র্যাব জানায়-বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এরপর থেকেই সে পলাতক। ১৯৯৭ সালে বিষ্ণু হত্যায় সে সরাসরি জড়িত। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে পলাতক। গত ৪ বছর আগে সে ভৈরবে এসে খোদেজাকে বিয়ে করে ছদ্মবেশে দিন কাটিয়েছে। ভৈরবে আসার পর ভাঙা তরি ছেঁড়া পাল শীর্ষক একটি গানের মডেল হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই গান দেখে তাকে এক ব্যক্তি চিনতে পারেন। বিষয়টি তিনি র্যাবকে অবহিত করেন। র্যাব দীর্ঘদিন তদন্ত করে বুধবার তাকে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে। এমন একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী ছদ্মবেশে কয়েক বছর ধরে ভৈরবে ছিল-এটা জেনে হতবাক ভৈরববাসী।
অবশেষে জেলে : হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিমকে (৪৫) শুক্রবার বিকালে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে র্যাব-১২ স্পেশাল কোম্পানি তাকে সদর থানায় সোপর্দ করে। পরে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিষ্কৃতি হাগিদকের আদালতে হাজির করা হলে আদালত কাস্টডি পরোয়ানামূলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, একটি হত্যা মামলায় হেলাল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। সাজা থেকে বাঁচতে গত ২০ বছর বাউল বেশে বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেন।
পুলিশ জানায়, হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে লুলা হেলাল ওরফে বাউল সেলিম বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। ২০০১ সালে বগুড়ার মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর সে গা ঢাকা দেয়। এ সাজার ওয়ারেন্টমূলে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
আদালতে তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন-মা বিলকিস বেওয়া, ছেলে হেদায়েতুল ইসলামসহ (বাউল সেলিমের ছেলে) কয়েকজন আত্মীয়।
মা বিলকিস বেওয়া জানান, অনেক বছর হলো ছেলে হেলালের সঙ্গে দেখা নেই। ছেলে হেদায়েতুল ইসলাম জানান, তার জন্ম ২০০২ সালের এপ্রিলে। যখন তার বয়স ৮-৯ বছর তখন বাবাকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন। এরপর আর কখনও দেখেননি। তবে কয়েকদিন ধরে বাবাকে টিভিতে দেখানো হচ্ছে। বাবার সঙ্গে তার কোনো স্মৃতি নেই।
সিরিয়াল কিলার হেলালের জীবন রূপকথার মতো
অবশেষে জেলে
বগুড়া ব্যুরো ও ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সিরিয়াল কিলার বাউল হেলাল ছদ্মবেশে জীবন ২০ বছর। এরমধ্যে সে ৪ বছর ভৈরবে কাটিয়েছে। সেখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখে খোদেজা বেগম ওরফে খুদু বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করে সংসারও করছিল। বাউল সেলিমের অন্য নাম হলো-হেলাল উদ্দিন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে খুনি হেলাল। ভৈরব পৌর শহরের আমলাপাড়া এলাকার আবু তাহের মিয়ার একটি ছোট ঘরে সে স্ত্রীসহ ভাড়া থাকত। ভৈরবে তাকে ফকির নামে চিনতেন লোকজন। তার বাড়ি বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ায়। ২০০১ সালে এক হত্য মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পরই গা ঢাকা দেয় সে। বেশ ধরে বাউলের। এরপর ভৈরব, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়।
জানা যায়, ৪ বছর আগে ভৈরবে খোদেজা বেগম নামের এক ভিক্ষুকের সঙ্গে পরিচয় হয়। বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল এলাকায়। পরে খোদেজাকে বিয়ে করে সে। বিয়ের পর তারা ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করে। আড়াই মাস আগে তারা পঞ্চবটির বাসা ছেড়ে আমলাপাড়ার ভাড়া বাসায় ওঠে। প্রতিদিন সকালে স্ত্রী খোদেজা ভিক্ষা করতে গ্রামে চলে যেত। আর বাউল সেলিম বাসা থেকে বের হয়ে রেলস্টেশনে চলে যেত। রেলস্টেশন ও ট্রেনে গান গেয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে এবং স্ত্রী খোদেজার ভিক্ষার আয় দিয়ে সংসার চলত। এভাবেই ৪ বছর ধরে দুজনের সংসার চলেছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাউল সেলিম ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এর আগে কোনোভাবেই টের পায়নি সে র্যাবের জালে ধরা পড়বে। আটকের খবর পেয়ে তার স্ত্রী খোদেজা রেলস্টেশনে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন স্বামী খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের আমলাপাড়ার ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় দরজায় তালা ঝুলছে। খোদেজা বেগম বাসায় নেই। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছেন না। সাংবাদিক জেনে এগিয়ে এসে বাসার মালিক মো. আবু তাহের মিয়া জানান, আমরা তার নাম জানতাম না। তবে ফকির নামে ডাকতাম তাকে । সে কখনও তার প্রকৃত নাম বলত না। তিনি বলেন, বাউল সেলিম আগে পঞ্চবটি এলাকায় ভাড়া থাকত। গত আড়াই মাস আগে আমার বাসাটি মাসিক ১৩০০ টাকায় ভাড়া নেয়। দিনে সে বাসায় থাকত না। স্ত্রী ভিক্ষা করে। প্রতিদিন সকালে দুজনই বাসা থেকে বেরিয়ে যেত। বাসায় ফিরত সন্ধ্যার পর। বুধবার সন্ধ্যায় খবর পাই র্যাব তাকে গ্রেফতার করেছে।
প্রতিবেশী চায়ের দোকানদার মোরশেদ মিয়া জানান, এতবড় কিলার ছদ্মবেশে আছে আমরা টেরই পাইনি। আমরা জানতাম সে রেলস্টেশন ও ট্রেনে ট্রেনে গান গায়। সে আধ্যাত্মিক গান গায়। আমিও তার গান শুনেছি। ভালো গান গায় সে। তার স্ত্রী ভিক্ষা করত। র্যাবের হাতে আটকের পর জানতে পারি তার খুন ও সাজার কথা।
সিরিয়াল কিলারের বাউল হওয়ার কাহিনী যেন রূপকথাকেও হার মানায়। ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা ও ২০০৬ সালে রবিউল হত্যার আসামি সেলিম। সে একটি চুরির মামলায়ও জেল খেটেছে। র্যাব জানায়-বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এরপর থেকেই সে পলাতক। ১৯৯৭ সালে বিষ্ণু হত্যায় সে সরাসরি জড়িত। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে পলাতক। গত ৪ বছর আগে সে ভৈরবে এসে খোদেজাকে বিয়ে করে ছদ্মবেশে দিন কাটিয়েছে। ভৈরবে আসার পর ভাঙা তরি ছেঁড়া পাল শীর্ষক একটি গানের মডেল হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই গান দেখে তাকে এক ব্যক্তি চিনতে পারেন। বিষয়টি তিনি র্যাবকে অবহিত করেন। র্যাব দীর্ঘদিন তদন্ত করে বুধবার তাকে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে। এমন একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী ছদ্মবেশে কয়েক বছর ধরে ভৈরবে ছিল-এটা জেনে হতবাক ভৈরববাসী।
অবশেষে জেলে : হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিমকে (৪৫) শুক্রবার বিকালে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে র্যাব-১২ স্পেশাল কোম্পানি তাকে সদর থানায় সোপর্দ করে। পরে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিষ্কৃতি হাগিদকের আদালতে হাজির করা হলে আদালত কাস্টডি পরোয়ানামূলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, একটি হত্যা মামলায় হেলাল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। সাজা থেকে বাঁচতে গত ২০ বছর বাউল বেশে বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেন।
পুলিশ জানায়, হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে লুলা হেলাল ওরফে বাউল সেলিম বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। ২০০১ সালে বগুড়ার মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর সে গা ঢাকা দেয়। এ সাজার ওয়ারেন্টমূলে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
আদালতে তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন-মা বিলকিস বেওয়া, ছেলে হেদায়েতুল ইসলামসহ (বাউল সেলিমের ছেলে) কয়েকজন আত্মীয়।
মা বিলকিস বেওয়া জানান, অনেক বছর হলো ছেলে হেলালের সঙ্গে দেখা নেই। ছেলে হেদায়েতুল ইসলাম জানান, তার জন্ম ২০০২ সালের এপ্রিলে। যখন তার বয়স ৮-৯ বছর তখন বাবাকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন। এরপর আর কখনও দেখেননি। তবে কয়েকদিন ধরে বাবাকে টিভিতে দেখানো হচ্ছে। বাবার সঙ্গে তার কোনো স্মৃতি নেই।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023