বঙ্গবন্ধু টানেল ঠিক সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা
শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
১৬ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের’ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চলতি বছর ডিসেম্বরে কিংবা তারও আগে কাজ শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও এ আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনার কারণে চীনের সাংহাইয়ে লকডাউন ঘোষণা করায় টানেল নির্মাণের বিভিন্ন মালামাল সেখানের বন্দরে আটকা পড়েছে। প্রয়োজনীয় মালামালের অভাবে তাই টানেল নির্মাণ কাজেও ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে, যা নির্ধারিত সময়ে টানেল নির্মাণ শেষ করার পথে অন্তরায় হিসাবে দেখা দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে টানেলের ১ম ও ২য় টিউবের মুখ খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত টানেলের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও বাকি কাজ আগামী ৬ মাসের মধ্যে করা দুরূহ হবে।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ এমন শঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। রোববার বিকালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, চীনে অনেক মালামাল আটকে আছে। মূলত এ কারণেই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারার বিষয়ে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে। এরপরও আমরা বিকল্প উপায়ে মালামাল আনার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে।
জানা গেছে, মার্চের শেষ দিকে করোনার বিস্তারের কারণে সাংহাইয়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এতে ধস নেমেছে বন্দরের কার্যক্রমসহ সরবরাহ ব্যবস্থায়। সাংহাই বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম কার্যত বন্ধ। এ অবস্থা কতদিন চলবে তা নিশ্চিত বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীনের জিয়াংজু প্রদেশের টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্ল্যান্টে নির্মিত ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্ট ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছে। প্রথম টিউবে ৯ হাজার ৭৮টি ও দ্বিতীয় টিউবে ৯ হাজার ৮৩২টি সেগমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দুটি টিউবের সড়ক যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত করতে কাজ চলছে। প্রথম টিউবে লেন ও স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। দ্বিতীয় টিউবে লেন ও স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। টানেলের আনোয়ারা ও পতেঙ্গা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজও চলছে জোরেশোরে।
দেশে এই প্রথম কোনো নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চীনের সাংহাই নগরীর মতো চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। চীনের কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। বাঁশখালীতে হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। মহেশখালীতে হয়েছে এলএনজি স্টেশন। আনোয়ারায় হচ্ছে বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেখানে রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড। এসব প্রকল্পের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেল চালু হলে বদলে যাবে চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের চেহারা। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এসব অঞ্চল-এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বঙ্গবন্ধু টানেল ঠিক সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা
সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের’ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চলতি বছর ডিসেম্বরে কিংবা তারও আগে কাজ শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও এ আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনার কারণে চীনের সাংহাইয়ে লকডাউন ঘোষণা করায় টানেল নির্মাণের বিভিন্ন মালামাল সেখানের বন্দরে আটকা পড়েছে। প্রয়োজনীয় মালামালের অভাবে তাই টানেল নির্মাণ কাজেও ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে, যা নির্ধারিত সময়ে টানেল নির্মাণ শেষ করার পথে অন্তরায় হিসাবে দেখা দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে টানেলের ১ম ও ২য় টিউবের মুখ খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত টানেলের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও বাকি কাজ আগামী ৬ মাসের মধ্যে করা দুরূহ হবে।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ এমন শঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। রোববার বিকালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, চীনে অনেক মালামাল আটকে আছে। মূলত এ কারণেই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারার বিষয়ে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে। এরপরও আমরা বিকল্প উপায়ে মালামাল আনার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে।
জানা গেছে, মার্চের শেষ দিকে করোনার বিস্তারের কারণে সাংহাইয়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এতে ধস নেমেছে বন্দরের কার্যক্রমসহ সরবরাহ ব্যবস্থায়। সাংহাই বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম কার্যত বন্ধ। এ অবস্থা কতদিন চলবে তা নিশ্চিত বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীনের জিয়াংজু প্রদেশের টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্ল্যান্টে নির্মিত ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্ট ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছে। প্রথম টিউবে ৯ হাজার ৭৮টি ও দ্বিতীয় টিউবে ৯ হাজার ৮৩২টি সেগমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দুটি টিউবের সড়ক যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত করতে কাজ চলছে। প্রথম টিউবে লেন ও স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। দ্বিতীয় টিউবে লেন ও স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। টানেলের আনোয়ারা ও পতেঙ্গা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজও চলছে জোরেশোরে।
দেশে এই প্রথম কোনো নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চীনের সাংহাই নগরীর মতো চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। চীনের কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। বাঁশখালীতে হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। মহেশখালীতে হয়েছে এলএনজি স্টেশন। আনোয়ারায় হচ্ছে বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেখানে রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড। এসব প্রকল্পের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেল চালু হলে বদলে যাবে চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের চেহারা। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এসব অঞ্চল-এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।