বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ‘অ্যালার্মিং’অবস্থায়: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
১৯ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ‘অ্যালার্মিং’ অবস্থায় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ নিয়ে সরকারের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকও বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে অসত্য কথা বলছে।
আইএমএফ মনে করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবায়নে সমস্যা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের জুনের শেষদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৬ বিলিয়ন ডলারের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কথা বলা হয়েছিল, তা আসলে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা একেবারেই অশনিসংকেত। বুধবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত সোমবার অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি স্থায়ী কমিটির ওই সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। সরকারি হিসাবে গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের দুই মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায়, তাহলে অতিদ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষ হওয়ায় কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে শ্রীলংকার চলমান পরিস্থিতি এর নিকৃষ্টতম উদাহরণ।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমদানি ব্যয় আমাদের বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতিমাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
বর্তমান এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, বর্তমান বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই দায়ী। দেশকে রক্ষার জন্য, মানুষকে বাঁচানোর জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই মুহূর্তে সর্বজনীন ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে অনতিবিলম্বে এই সরকারকে হটানোর বিকল্প নেই।
মূল্যস্ফীতি অসংগতিপূর্ণ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডলারের দাম ১০০ ছাড়িয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম, কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ১০৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ সংগতিপূর্ণ নয়। শহরের চেয়ে গ্রামের মূল্যস্ফীতি গ্রামে বেশি। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। রিজার্ভ বিপজ্জনক লেভেলে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতাসাধারণের ত্রাহি অবস্থা।
এর ওপর সরকারের দলীয় সিন্ডিকেটের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম, সয়াবিন তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ভরা মৌসুমে চালের দাম যেখানে সব সময় স্বাভাবিক নিয়মে যায়, সেখানে গত তিন দিনে অনেক বেড়ে গেছে।
মেগা প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান গণস্বার্থবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা ভর্তি করতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এসব প্রকল্পকে জনগণের ঋণের বোঝা ভারী করার শ্বেতহস্তী প্রকল্প হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মাত্র ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য রূপপুর প্রকল্পটি কার স্বার্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে জনমনে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।
সরকারের শীর্ষ মহলের প্রত্যক্ষ মদদ, প্রশ্রয় ও অংশীদারত্বে পিকে হালদারের মতো অর্থ আত্মসাৎকারীর সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, দুদক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া কোনোক্রমেই প্রায় ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো আর্থিক জালিয়াতি করে দেশ থেকে নির্বিঘ্নে পলায়ন করা সম্ভব নয়। আর কত অর্থ আত্মসাৎকারী ও অর্থ পাচারকারী পিকে হালদাররা রয়েছে, যারা এখনো ধরা পড়েনি, জনগণ তা জানতে চায়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়-ব্যয় তদন্তের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, স্যাটেলাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের নিয়োগ না দিয়ে দলবাজ কিংবা শীর্ষ নেতৃত্বের স্বজনতোষণের ফলে সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ফেল করেছে, যা দেশকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার বলে সভা মনে করে।
পদ্মা সেতুতে যাতায়াতে সরকারের নির্ধারিত টোল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা অত্যন্ত বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে যারা যাতায়াত করবেন, তাদের আগে যে ব্যয় হতো এর থেকে অনেক বেশি ব্যয় হবে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে বিএনপি নেতারা যাতায়াত করতে গেলে তাদেরকে ক্ষমা চেয়ে যাতায়াত করতে হবে-আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের এরকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব কথা আমরা ইগনোর করি। এসব অপ্রকৃতিস্থ লোকদের মতো কথা। ওটা কী ওনাদের (আওয়ামী লীগের) পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে বানিয়েছেন, নাকি আমাদের জনগণের টাকা দিয়ে বানিয়েছেন। পুরোটাই তো আমাদের পকেটের টাকা কেটে নিয়েছেন। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে ওখান থেকে চুরি করেছেন। সুতরাং এসব কথা তাদের মুখে শোভা পায় না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ‘অ্যালার্মিং’অবস্থায়: মির্জা ফখরুল

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ‘অ্যালার্মিং’ অবস্থায় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ নিয়ে সরকারের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকও বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে অসত্য কথা বলছে।
আইএমএফ মনে করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবায়নে সমস্যা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের জুনের শেষদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৬ বিলিয়ন ডলারের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কথা বলা হয়েছিল, তা আসলে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা একেবারেই অশনিসংকেত। বুধবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত সোমবার অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি স্থায়ী কমিটির ওই সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। সরকারি হিসাবে গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের দুই মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায়, তাহলে অতিদ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষ হওয়ায় কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে শ্রীলংকার চলমান পরিস্থিতি এর নিকৃষ্টতম উদাহরণ।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমদানি ব্যয় আমাদের বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতিমাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
বর্তমান এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, বর্তমান বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই দায়ী। দেশকে রক্ষার জন্য, মানুষকে বাঁচানোর জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই মুহূর্তে সর্বজনীন ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে অনতিবিলম্বে এই সরকারকে হটানোর বিকল্প নেই।
মূল্যস্ফীতি অসংগতিপূর্ণ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডলারের দাম ১০০ ছাড়িয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম, কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ১০৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ সংগতিপূর্ণ নয়। শহরের চেয়ে গ্রামের মূল্যস্ফীতি গ্রামে বেশি। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। রিজার্ভ বিপজ্জনক লেভেলে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতাসাধারণের ত্রাহি অবস্থা।
এর ওপর সরকারের দলীয় সিন্ডিকেটের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম, সয়াবিন তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ভরা মৌসুমে চালের দাম যেখানে সব সময় স্বাভাবিক নিয়মে যায়, সেখানে গত তিন দিনে অনেক বেড়ে গেছে।
মেগা প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান গণস্বার্থবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা ভর্তি করতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এসব প্রকল্পকে জনগণের ঋণের বোঝা ভারী করার শ্বেতহস্তী প্রকল্প হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মাত্র ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য রূপপুর প্রকল্পটি কার স্বার্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে জনমনে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।
সরকারের শীর্ষ মহলের প্রত্যক্ষ মদদ, প্রশ্রয় ও অংশীদারত্বে পিকে হালদারের মতো অর্থ আত্মসাৎকারীর সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, দুদক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া কোনোক্রমেই প্রায় ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো আর্থিক জালিয়াতি করে দেশ থেকে নির্বিঘ্নে পলায়ন করা সম্ভব নয়। আর কত অর্থ আত্মসাৎকারী ও অর্থ পাচারকারী পিকে হালদাররা রয়েছে, যারা এখনো ধরা পড়েনি, জনগণ তা জানতে চায়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়-ব্যয় তদন্তের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, স্যাটেলাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের নিয়োগ না দিয়ে দলবাজ কিংবা শীর্ষ নেতৃত্বের স্বজনতোষণের ফলে সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ফেল করেছে, যা দেশকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার বলে সভা মনে করে।
পদ্মা সেতুতে যাতায়াতে সরকারের নির্ধারিত টোল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা অত্যন্ত বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে যারা যাতায়াত করবেন, তাদের আগে যে ব্যয় হতো এর থেকে অনেক বেশি ব্যয় হবে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে বিএনপি নেতারা যাতায়াত করতে গেলে তাদেরকে ক্ষমা চেয়ে যাতায়াত করতে হবে-আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের এরকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব কথা আমরা ইগনোর করি। এসব অপ্রকৃতিস্থ লোকদের মতো কথা। ওটা কী ওনাদের (আওয়ামী লীগের) পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে বানিয়েছেন, নাকি আমাদের জনগণের টাকা দিয়ে বানিয়েছেন। পুরোটাই তো আমাদের পকেটের টাকা কেটে নিয়েছেন। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে ওখান থেকে চুরি করেছেন। সুতরাং এসব কথা তাদের মুখে শোভা পায় না।