সিন্ডিকেট করা হলে এই খাত পঙ্গু হয়ে যাবে
jugantor
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি
সিন্ডিকেট করা হলে এই খাত পঙ্গু হয়ে যাবে

  যুগান্তর প্রতিবেদন  

২২ মে ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করা হলে এই খাত পঙ্গু হয়ে যাবে। এতে একদিকে যেমন অভিবাসন ব্যয় বাড়বে, আরেকদিকে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে শ্রমবাজারটি জিম্মি হয়ে পড়বে। মালয়েশিয়ার দেওয়া সিন্ডিকেটের শর্ত মেনে নিলে দেশের মাথাও নত হয়ে যাবে। তাই অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে হবে। শনিবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা এই দাবি করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বায়রার (রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন) সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি। সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন সংসদসীয় ককাসের সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর আলী, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি একে আজাদ, সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বায়রার সাবেক মহাসচিব রিয়াজুল ইসলাম ও শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান। প্রবন্ধে জানানো হয়, প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর কিছুদিন পরই মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারভান ঢাকায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী এম ইমরান আহমেদকে অফিশিয়াল চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয় ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে চায় মালয়েশিয়া। এদের আওতায় আরও ১০টি করে এজেন্সি সাব-এজেন্ট হিসাবে কাজ করবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে তেল ও চালের দাম বাড়লে এখানেও ব্যয় বাড়বে। সেই সঙ্গে এক দেশে সিন্ডিকেট হলে অন্যদেশের ক্ষেত্রেও হবে। এভাবে জনশক্তি খাত পঙ্গু হয়ে যাবে। এই খাত যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে রিজার্ভের ওপর চাপ আছে। তাই যে কোনোভাবে হোক মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে হবে। কিন্তু আমাদের রিজার্ভ কমে যাওয়ার মূল কারণ রেমিট্যান্স কমে যাওয়া নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কার্ব মার্কেটে (খোলাবাজার) ডলারের দাম বাড়ছে। এ কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে ২৫টি রিক্রুটিং এজন্সিকে বসিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এটা হতে পারে না। নিরাপদ অভিবাসন, স্বল্প অভিবাসন ব্যয় এবং বেশি মজুরি-এই তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্ধারণ করাটা প্রশ্নবিদ্ধ। এর মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা নেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানি খাতের বিরাট অবদান আছে। তাই এই খাত রক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি সিন্ডিকেট চাইতেন, তাহলে অনেক আগেই সেটি হয়ে যেত। তিনি চান না বলেই এখনো সেটি হয়নি, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এই সিন্ডিকেটে কারা আছেন, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। বাংলাদেশ থেকে কেউ মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে দিয়ে এটা করিয়েছে কি না, সেটিও দেখা দরকার। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে উন্মুক্তভাবে লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ২৫টি কোম্পানি দিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। সর্বনিম্ন ৫০০/৭০০ রিক্রুটিং এজেন্সি থাকা উচিত। সেটি না হলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাবে।

একে আজাদ বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে। মালয়েশিয়ার লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

নূর আলী বলেন, এই সিন্ডিকেট দেশ ও জনশক্তি খাতের ব্যাপক ক্ষতি করবে। আমরা কি এতটাই নির্লজ্জ যে দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট মেনে নেব। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

শ্যামল দত্ত বলেন, সব ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেট আছে। চালের বাজার, তেলের বাজার-সব জায়গায়। জনশক্তি রপ্তানিতেও এই অবস্থা। ক্রিমিনাল ২৫ জনের নাম প্রকাশ করতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেসব দেশে জবাবদিহি করতে হয় না, সেসব দেশে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। প্রশাসন ও সরকারের লোকজন ছাড়া এই ধরনের সিন্ডিকেট সম্ভব নয়।

আবুল বাসার বলেন, ২৫ জনকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি

সিন্ডিকেট করা হলে এই খাত পঙ্গু হয়ে যাবে

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২২ মে ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করা হলে এই খাত পঙ্গু হয়ে যাবে। এতে একদিকে যেমন অভিবাসন ব্যয় বাড়বে, আরেকদিকে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে শ্রমবাজারটি জিম্মি হয়ে পড়বে। মালয়েশিয়ার দেওয়া সিন্ডিকেটের শর্ত মেনে নিলে দেশের মাথাও নত হয়ে যাবে। তাই অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে হবে। শনিবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা এই দাবি করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বায়রার (রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন) সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি। সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন সংসদসীয় ককাসের সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর আলী, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি একে আজাদ, সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বায়রার সাবেক মহাসচিব রিয়াজুল ইসলাম ও শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান। প্রবন্ধে জানানো হয়, প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর কিছুদিন পরই মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারভান ঢাকায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী এম ইমরান আহমেদকে অফিশিয়াল চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয় ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে চায় মালয়েশিয়া। এদের আওতায় আরও ১০টি করে এজেন্সি সাব-এজেন্ট হিসাবে কাজ করবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে তেল ও চালের দাম বাড়লে এখানেও ব্যয় বাড়বে। সেই সঙ্গে এক দেশে সিন্ডিকেট হলে অন্যদেশের ক্ষেত্রেও হবে। এভাবে জনশক্তি খাত পঙ্গু হয়ে যাবে। এই খাত যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে রিজার্ভের ওপর চাপ আছে। তাই যে কোনোভাবে হোক মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে হবে। কিন্তু আমাদের রিজার্ভ কমে যাওয়ার মূল কারণ রেমিট্যান্স কমে যাওয়া নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কার্ব মার্কেটে (খোলাবাজার) ডলারের দাম বাড়ছে। এ কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে ২৫টি রিক্রুটিং এজন্সিকে বসিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এটা হতে পারে না। নিরাপদ অভিবাসন, স্বল্প অভিবাসন ব্যয় এবং বেশি মজুরি-এই তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্ধারণ করাটা প্রশ্নবিদ্ধ। এর মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা নেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানি খাতের বিরাট অবদান আছে। তাই এই খাত রক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি সিন্ডিকেট চাইতেন, তাহলে অনেক আগেই সেটি হয়ে যেত। তিনি চান না বলেই এখনো সেটি হয়নি, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এই সিন্ডিকেটে কারা আছেন, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। বাংলাদেশ থেকে কেউ মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে দিয়ে এটা করিয়েছে কি না, সেটিও দেখা দরকার। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে উন্মুক্তভাবে লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ২৫টি কোম্পানি দিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। সর্বনিম্ন ৫০০/৭০০ রিক্রুটিং এজেন্সি থাকা উচিত। সেটি না হলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাবে।

একে আজাদ বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে। মালয়েশিয়ার লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

নূর আলী বলেন, এই সিন্ডিকেট দেশ ও জনশক্তি খাতের ব্যাপক ক্ষতি করবে। আমরা কি এতটাই নির্লজ্জ যে দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট মেনে নেব। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

শ্যামল দত্ত বলেন, সব ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেট আছে। চালের বাজার, তেলের বাজার-সব জায়গায়। জনশক্তি রপ্তানিতেও এই অবস্থা। ক্রিমিনাল ২৫ জনের নাম প্রকাশ করতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেসব দেশে জবাবদিহি করতে হয় না, সেসব দেশে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। প্রশাসন ও সরকারের লোকজন ছাড়া এই ধরনের সিন্ডিকেট সম্ভব নয়।

আবুল বাসার বলেন, ২৫ জনকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন