কালীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন
jugantor
এমপির বিরুদ্ধে খবর প্রকাশের প্রতিবাদ
কালীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন

  সংবাদ বিজ্ঞপ্তি  

২৮ মে ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জোর করে প্রখর রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন করানোর অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় একজন সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদের অংশ হিসাবে তাদের মানববন্ধন করানো হচ্ছে।

এক সপ্তাহ ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানো হলেও তা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘনকারী অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলহাজ আমজাদ আলী ও ফাইজুর রহমান মহিলা কলেজ, শহীদ নুর আলী কলেজ, শোয়াইবনগর মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানো হয়েছে।

স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার সম্প্রতি ‘তুই শিবির করিস’ বলে সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ খবর ‘মিথ্যা’ প্রমাণ করতে উপজেলার সব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোর করে মানববন্ধন করানো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন না করানোর সুস্পষ্ট নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বলা হয়েছে-‘ব্যক্তিগত স্বার্থ তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে কোনো মন্ত্রী বা সচিবের ভিআইপি প্রটোকলেও ব্যবহার করা যাবে না।’ অথচ এমপির কথিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ করতে ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করানো হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে কেন মানববন্ধন করা হলো-এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি কোনো কলেজ বা স্কুলের প্রধানরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধ্য করাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার চাপ রয়েছে। একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, স্থানীয় এমপি ও তার লোকজনের হুমকির কারণে তারা এ মানববন্ধন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে অনেকে বলছেন, মানববন্ধন করাতে প্রতিষ্ঠান প্রতি ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ লোভ সামলাতে না পেরে শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন করাচ্ছেন।

মানববন্ধন করার কারণ জানতে চাইলে শহীদ নুর আলী কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদ সাত্তার তরু বলেন, সবাই করছেন, তাই শিক্ষার্থীরাও করছে।

তিনি দাবি করেন, রোদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাঁড় করানো হয়নি। রুস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, অ্যাসেম্বলির শেষ মুহূর্তে এক শিক্ষক একটি ব্যানার ধরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করতে বলেন। পরে দেখি ব্যানারে লেখা-এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মানববন্ধন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মধুসূদন সাহা বলেন, বিষয়টি আমি সামাজিক গণমাধ্যমে দেখেছি। বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘এমন মানববন্ধন করলে সমস্যা কি? এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কোনো আদেশ আছে কিনা আমি জানি না।’

সাংবাদিকদের উলটো প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি করছেন?’ অবশ্য পরে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে এ ধরনের মানববন্ধন করা বেআইনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া জেরিন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর জেনেছি। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন কর্মসূচি পালন করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে।

জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, মানববন্ধনের খবর শুনেছি। তবে তা শিক্ষার্থীরা করছে কিনা আমার জানা নেই। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমপির বিরুদ্ধে খবর প্রকাশের প্রতিবাদ

কালীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন

 সংবাদ বিজ্ঞপ্তি 
২৮ মে ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জোর করে প্রখর রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন করানোর অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় একজন সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদের অংশ হিসাবে তাদের মানববন্ধন করানো হচ্ছে।

এক সপ্তাহ ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানো হলেও তা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘনকারী অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলহাজ আমজাদ আলী ও ফাইজুর রহমান মহিলা কলেজ, শহীদ নুর আলী কলেজ, শোয়াইবনগর মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানো হয়েছে।

স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার সম্প্রতি ‘তুই শিবির করিস’ বলে সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ খবর ‘মিথ্যা’ প্রমাণ করতে উপজেলার সব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোর করে মানববন্ধন করানো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন না করানোর সুস্পষ্ট নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বলা হয়েছে-‘ব্যক্তিগত স্বার্থ তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে কোনো মন্ত্রী বা সচিবের ভিআইপি প্রটোকলেও ব্যবহার করা যাবে না।’ অথচ এমপির কথিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ করতে ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করানো হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে কেন মানববন্ধন করা হলো-এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি কোনো কলেজ বা স্কুলের প্রধানরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধ্য করাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার চাপ রয়েছে। একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, স্থানীয় এমপি ও তার লোকজনের হুমকির কারণে তারা এ মানববন্ধন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে অনেকে বলছেন, মানববন্ধন করাতে প্রতিষ্ঠান প্রতি ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ লোভ সামলাতে না পেরে শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন করাচ্ছেন।

মানববন্ধন করার কারণ জানতে চাইলে শহীদ নুর আলী কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদ সাত্তার তরু বলেন, সবাই করছেন, তাই শিক্ষার্থীরাও করছে।

তিনি দাবি করেন, রোদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাঁড় করানো হয়নি। রুস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, অ্যাসেম্বলির শেষ মুহূর্তে এক শিক্ষক একটি ব্যানার ধরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করতে বলেন। পরে দেখি ব্যানারে লেখা-এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মানববন্ধন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মধুসূদন সাহা বলেন, বিষয়টি আমি সামাজিক গণমাধ্যমে দেখেছি। বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘এমন মানববন্ধন করলে সমস্যা কি? এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কোনো আদেশ আছে কিনা আমি জানি না।’

সাংবাদিকদের উলটো প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি করছেন?’ অবশ্য পরে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে এ ধরনের মানববন্ধন করা বেআইনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া জেরিন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর জেনেছি। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন কর্মসূচি পালন করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে।

জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, মানববন্ধনের খবর শুনেছি। তবে তা শিক্ষার্থীরা করছে কিনা আমার জানা নেই। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন