বুকার পেলেন প্রথম ভারতীয় লেখক গীতাঞ্জলি শ্রী
প্রথম ভারতীয় লেখক হিসাবে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতলেন গীতাঞ্জলী শ্রী। হিন্দি ভাষায় লেখা ‘রেত সামাধি’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ ‘টুম্ব অব স্যান্ড’র জন্য এই স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
এই প্রথম হিন্দি সাহিত্যের কোনো উপন্যাস আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেল। উপন্যাসটি হিন্দি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনুবাদক ডেইজি রকওয়েল। খবর বিবিসির।
ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের প্রেক্ষাপটে একটি পরিবারের উপাখ্যান উঠে এসেছে ‘টুম্ব অব স্যান্ড’ উপন্যাসে। স্বামীর মৃত্যুর পর ৮০ বছর বয়সি এক নারীকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী।
‘রেত সামাধি’ হিন্দি ভাষার প্রথম গ্রন্থ, যা ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থমূল্যের এই পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় গীতাঞ্জলী বলেন, ‘আমি কখনোই বুকার পাওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। ভাবিনি কখনো আমার ভাগ্যে এই পুরস্কার জুটবে। বিশাল এক স্বীকৃতি। আমি অভিভূত, বিস্মিত, সম্মানিত এবং কৃতজ্ঞ।’
ভারতের উত্তর প্রদেশের এই লেখক বলেন, ‘আমার এবং আমার এই বইয়ের অন্তরে বইছে হিন্দি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ভাষার সমৃদ্ধ ও বিকাশমান সাহিত্যের ঐতিহ্য। এসব ভাষার অসাধারণ কিছু লেখকের বিষয়ে জানতে পারলে বিশ্বসাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হবে।’
আন্তর্জাতিক বুকারের বিচারক প্যানেলের সভাপতি ফ্রাংক ওয়েইন বলেন, বইটির কাহিনীর শক্তি, শোক উসকে দেওয়ার ক্ষমতা আর সহজ আনন্দের উচ্ছ্বাস বিমোহিত করেছে তাদের।
তিনি বলেন, ‘ভারত এবং দেশভাগ নিয়ে এটি দ্যুতিময় এক উপন্যাস। এর মনোমুগ্ধকর বর্ণনাশৈলী আর তীক্ষ্ণ আবেগের ঢেউ তরুণ ও বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ, পরিবার ও একটি দেশকে সময় পরিভ্রমণ করিয়ে আনবে।’ ফ্রাংক ওয়েইন আরও বলেন, এর আগে তিনি এমন উপন্যাস আর পড়েননি। তার ভাষায়, ‘প্রাণোচ্ছলতা’ আর ‘আবেগ’ এই উপন্যাসকে এমন একটি বইয়ে পরিণত করেছে যা ‘এ মুহূর্তে বিশ্বের পাঠকের পড়া জরুরি।’
পুরস্কারের অর্থ গীতাঞ্জলী শ্রী এবং বইয়ের অনুবাদক যুক্তরাষ্ট্র-নিবাসী ডেইজি রকওয়েলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। প্রতিবছর যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা যে কোনো আন্তর্জাতিক ভাষায় লেখা একটি বইকে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার দেওয়া হয়।
বুকার পুরস্কার ও ম্যান বুকার পুরস্কারের মর্যাদারই আরেকটি পুরস্কার এটি। এ বছর আন্তর্জাতিক বুকারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল মিয়েকো কাওয়াকামি, বোরা চুং, জন ফসে, ক্লাউডিয়া পিনেরিও ও সাবেক পুরস্কার বিজয়ী ওলগা তোরারচুকের লেখা আরও পাঁচটি বই।
ভারতের উত্তর প্রদেশের মনিপুরী শহরে জন্ম নেওয়া ৬৪ বছর বয়সি গীতাঞ্জলী শ্রী তিনটি উপন্যাস এবং কয়েকটি গল্প সংকলনের রচয়িতা। ‘টুম্ব অব স্যান্ড’ যুক্তরাজ্যে তার প্রকাশ হওয়া প্রথম বই। হিন্দি ভাষায় ‘রেত সামাধি’ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গীতাঞ্জলী বলেন, তার উপন্যাসে যে মানবিক গল্প বলা হয়েছে, সংস্কৃতিভেদে তার একটি সর্বজনীন আবেদন রয়েছে।
উপন্যাসের অনুবাদক রকওয়েল বলেন, তিনি এ পর্যন্ত যা কিছু অনুবাদ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম কঠিন কাজ ছিল ‘টুম্ব অব স্যান্ড’, কারণ গীতাঞ্জলীর লেখার ‘নিরীক্ষাধর্মী বৈশিষ্ট্য’ এবং ‘ভাষা প্রকাশের নিজস্ব শৈলী’ অনুবাদে আনা ছিল দুরূহ। তবে সেই অভিজ্ঞতা তাকে দিয়েছে আনন্দ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বুকার পেলেন প্রথম ভারতীয় লেখক গীতাঞ্জলি শ্রী
প্রথম ভারতীয় লেখক হিসাবে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতলেন গীতাঞ্জলী শ্রী। হিন্দি ভাষায় লেখা ‘রেত সামাধি’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ ‘টুম্ব অব স্যান্ড’র জন্য এই স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
এই প্রথম হিন্দি সাহিত্যের কোনো উপন্যাস আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেল। উপন্যাসটি হিন্দি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনুবাদক ডেইজি রকওয়েল। খবর বিবিসির।
ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের প্রেক্ষাপটে একটি পরিবারের উপাখ্যান উঠে এসেছে ‘টুম্ব অব স্যান্ড’ উপন্যাসে। স্বামীর মৃত্যুর পর ৮০ বছর বয়সি এক নারীকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী।
‘রেত সামাধি’ হিন্দি ভাষার প্রথম গ্রন্থ, যা ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থমূল্যের এই পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় গীতাঞ্জলী বলেন, ‘আমি কখনোই বুকার পাওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। ভাবিনি কখনো আমার ভাগ্যে এই পুরস্কার জুটবে। বিশাল এক স্বীকৃতি। আমি অভিভূত, বিস্মিত, সম্মানিত এবং কৃতজ্ঞ।’
ভারতের উত্তর প্রদেশের এই লেখক বলেন, ‘আমার এবং আমার এই বইয়ের অন্তরে বইছে হিন্দি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ভাষার সমৃদ্ধ ও বিকাশমান সাহিত্যের ঐতিহ্য। এসব ভাষার অসাধারণ কিছু লেখকের বিষয়ে জানতে পারলে বিশ্বসাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হবে।’
আন্তর্জাতিক বুকারের বিচারক প্যানেলের সভাপতি ফ্রাংক ওয়েইন বলেন, বইটির কাহিনীর শক্তি, শোক উসকে দেওয়ার ক্ষমতা আর সহজ আনন্দের উচ্ছ্বাস বিমোহিত করেছে তাদের।
তিনি বলেন, ‘ভারত এবং দেশভাগ নিয়ে এটি দ্যুতিময় এক উপন্যাস। এর মনোমুগ্ধকর বর্ণনাশৈলী আর তীক্ষ্ণ আবেগের ঢেউ তরুণ ও বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ, পরিবার ও একটি দেশকে সময় পরিভ্রমণ করিয়ে আনবে।’ ফ্রাংক ওয়েইন আরও বলেন, এর আগে তিনি এমন উপন্যাস আর পড়েননি। তার ভাষায়, ‘প্রাণোচ্ছলতা’ আর ‘আবেগ’ এই উপন্যাসকে এমন একটি বইয়ে পরিণত করেছে যা ‘এ মুহূর্তে বিশ্বের পাঠকের পড়া জরুরি।’
পুরস্কারের অর্থ গীতাঞ্জলী শ্রী এবং বইয়ের অনুবাদক যুক্তরাষ্ট্র-নিবাসী ডেইজি রকওয়েলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। প্রতিবছর যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা যে কোনো আন্তর্জাতিক ভাষায় লেখা একটি বইকে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার দেওয়া হয়।
বুকার পুরস্কার ও ম্যান বুকার পুরস্কারের মর্যাদারই আরেকটি পুরস্কার এটি। এ বছর আন্তর্জাতিক বুকারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল মিয়েকো কাওয়াকামি, বোরা চুং, জন ফসে, ক্লাউডিয়া পিনেরিও ও সাবেক পুরস্কার বিজয়ী ওলগা তোরারচুকের লেখা আরও পাঁচটি বই।
ভারতের উত্তর প্রদেশের মনিপুরী শহরে জন্ম নেওয়া ৬৪ বছর বয়সি গীতাঞ্জলী শ্রী তিনটি উপন্যাস এবং কয়েকটি গল্প সংকলনের রচয়িতা। ‘টুম্ব অব স্যান্ড’ যুক্তরাজ্যে তার প্রকাশ হওয়া প্রথম বই। হিন্দি ভাষায় ‘রেত সামাধি’ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গীতাঞ্জলী বলেন, তার উপন্যাসে যে মানবিক গল্প বলা হয়েছে, সংস্কৃতিভেদে তার একটি সর্বজনীন আবেদন রয়েছে।
উপন্যাসের অনুবাদক রকওয়েল বলেন, তিনি এ পর্যন্ত যা কিছু অনুবাদ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম কঠিন কাজ ছিল ‘টুম্ব অব স্যান্ড’, কারণ গীতাঞ্জলীর লেখার ‘নিরীক্ষাধর্মী বৈশিষ্ট্য’ এবং ‘ভাষা প্রকাশের নিজস্ব শৈলী’ অনুবাদে আনা ছিল দুরূহ। তবে সেই অভিজ্ঞতা তাকে দিয়েছে আনন্দ।