চট্টগ্রামে একদিনে পেঁয়াজের দাম বাড়ল ১৫ টাকা
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
২৬ জুন ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কুরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। একইভাবে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তি। পাইকারির চেয়ে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সামনে কুরবানির ঈদ। এ সময় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। এটাকে পুঁজি করে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের কয়েকটি সিন্ডিকেট কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকট থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া টানা বর্ষণে বিভিন্ন জেলা থেকে পেঁয়াজ সময়মতো আসতে পারেনি। কিন্তু চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, গুদামগুলোয় শত শত বস্তা পেঁয়াজ বিক্রির জন্য মজুত করে রাখা হয়েছে। হঠাৎ দাম বৃদ্ধিকে সামনের কুরবানির ঈদে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরির পাঁয়তারা বলে মনে করা হচ্ছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী জানান, সরকার দেশের কৃষকদের লাভবান করতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ কারণে বাজারে সে দেশের পেঁয়াজ নেই। শুধু ভারতীয় নয়, অন্য কোনো দেশ যেমন: চীন, মিয়ানমার ও তুরস্কের পেঁয়াজ বাজারে নেই। ফলে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দামও বাড়তি। এছাড়াও গত সপ্তাহে টানা বর্ষণে এবং চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতায় পণ্যটির স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত হয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মোকাম থেকে পেঁয়াজ আসেনি। আবার জলাবদ্ধতায় চাক্তাইয়ের কয়েকটি গুদামে পানি ঢুকে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। যেসব গুদামে পানি ঢুকেছে, সেখানে নতুন করে পেঁয়াজের ট্রাক আসেনি। এসব কারণে নিত্যপণ্যটির দাম বাড়ছে।
শুক্রবার নগরীর খুচরা বাজারগুলোয় বড় আকারের দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫৮ টাকা ৬০ টাকা ও মাঝারি আকারের ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার মানভেদে দাম ৫ টাকা কমবেশি রয়েছে। অথচ গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছিলেন ক্রেতারা। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বা প্রত্যন্ত বাজারগুলোয় পণ্যটির দাম আরও বেশি। খাতুনগঞ্জের পাইকারি মোকামেও দাম বেড়ে প্রতি কেজি বড় আকারের দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ এবং মাঝারি আকারের ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দেশে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কোনো কারণ ছাড়াই পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ১০ টাকার বেশি।
বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতাসাধারণ। চকবাজারের বাসিন্দা একরামুল হক জানান, বাজারে অন্য জিনিসের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা সহনীয় ছিল। এটি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজের যা সরবরাহ আছে তা দিয়ে ঈদ সামাল দেওয়া যাবে। সংকট তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখছি না। তবে দর তো ওঠানামা করে। ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে দামটা কমে যেত। এখনো আমরা যেহেতু আমদানি অনুমতি পাইনি, তাই ঈদের সময় সামান্য দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে।
বাজারদর : সরবরাহ সংকটে চট্টগ্রামে বেগুন, শসা, লাউ, চালকুমড়া, লতিসহ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি শসা ৬০ থেকে ৭০, বেগুন ৫০ থেকে ৬০, চিচিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, পটল ৪০, লাউ প্রতি পিস ৫০, চালকুমড়া প্রতি পিস ৩০, লতি ৪০, কাঁচা মরিচ ৬০, টম্যাটো ১২০ এবং চায়না গাজর ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই প্রতি কেজি ২৩০, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ এবং দুই থেকে তিন কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন থেকে চার কেজি ওজনের কাতল প্রতি কেজি ৩৫০, পাঙাশ ১৫০, সরপুঁটি ২০০, তেলাপিয়া ১৭০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ এবং শিং আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার নাগালের বাইরে ইলিশ। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
চট্টগ্রামে একদিনে পেঁয়াজের দাম বাড়ল ১৫ টাকা
কুরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। একইভাবে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তি। পাইকারির চেয়ে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সামনে কুরবানির ঈদ। এ সময় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। এটাকে পুঁজি করে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের কয়েকটি সিন্ডিকেট কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকট থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া টানা বর্ষণে বিভিন্ন জেলা থেকে পেঁয়াজ সময়মতো আসতে পারেনি। কিন্তু চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, গুদামগুলোয় শত শত বস্তা পেঁয়াজ বিক্রির জন্য মজুত করে রাখা হয়েছে। হঠাৎ দাম বৃদ্ধিকে সামনের কুরবানির ঈদে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরির পাঁয়তারা বলে মনে করা হচ্ছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী জানান, সরকার দেশের কৃষকদের লাভবান করতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ কারণে বাজারে সে দেশের পেঁয়াজ নেই। শুধু ভারতীয় নয়, অন্য কোনো দেশ যেমন: চীন, মিয়ানমার ও তুরস্কের পেঁয়াজ বাজারে নেই। ফলে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দামও বাড়তি। এছাড়াও গত সপ্তাহে টানা বর্ষণে এবং চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতায় পণ্যটির স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত হয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মোকাম থেকে পেঁয়াজ আসেনি। আবার জলাবদ্ধতায় চাক্তাইয়ের কয়েকটি গুদামে পানি ঢুকে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। যেসব গুদামে পানি ঢুকেছে, সেখানে নতুন করে পেঁয়াজের ট্রাক আসেনি। এসব কারণে নিত্যপণ্যটির দাম বাড়ছে।
শুক্রবার নগরীর খুচরা বাজারগুলোয় বড় আকারের দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫৮ টাকা ৬০ টাকা ও মাঝারি আকারের ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার মানভেদে দাম ৫ টাকা কমবেশি রয়েছে। অথচ গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছিলেন ক্রেতারা। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বা প্রত্যন্ত বাজারগুলোয় পণ্যটির দাম আরও বেশি। খাতুনগঞ্জের পাইকারি মোকামেও দাম বেড়ে প্রতি কেজি বড় আকারের দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ এবং মাঝারি আকারের ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দেশে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কোনো কারণ ছাড়াই পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ১০ টাকার বেশি।
বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতাসাধারণ। চকবাজারের বাসিন্দা একরামুল হক জানান, বাজারে অন্য জিনিসের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা সহনীয় ছিল। এটি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজের যা সরবরাহ আছে তা দিয়ে ঈদ সামাল দেওয়া যাবে। সংকট তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখছি না। তবে দর তো ওঠানামা করে। ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে দামটা কমে যেত। এখনো আমরা যেহেতু আমদানি অনুমতি পাইনি, তাই ঈদের সময় সামান্য দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে।
বাজারদর : সরবরাহ সংকটে চট্টগ্রামে বেগুন, শসা, লাউ, চালকুমড়া, লতিসহ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি শসা ৬০ থেকে ৭০, বেগুন ৫০ থেকে ৬০, চিচিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, পটল ৪০, লাউ প্রতি পিস ৫০, চালকুমড়া প্রতি পিস ৩০, লতি ৪০, কাঁচা মরিচ ৬০, টম্যাটো ১২০ এবং চায়না গাজর ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই প্রতি কেজি ২৩০, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ এবং দুই থেকে তিন কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন থেকে চার কেজি ওজনের কাতল প্রতি কেজি ৩৫০, পাঙাশ ১৫০, সরপুঁটি ২০০, তেলাপিয়া ১৭০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ এবং শিং আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার নাগালের বাইরে ইলিশ। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে।