বন্যায় দেড় লাখ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত
ভেসে গেছে ৮২৫ কোটি মাছের পোনা
বাহরাম খান
২৮ জুন ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এবারের অপ্রত্যাশিত বন্যায় দেড় লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ৮০ হাজার পুকুর, দিঘি ও মাছের খামার ক্ষতির কবলে পড়ছে। ভেসে গেছে ৮২৫ কোটি মাছের পোনা। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তর-সংস্থা সূত্রে এসব প্রাথমিক তথ্য জানা গেছে। বন্যা চলমান থাকায় এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি খাতে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭৯ হাজার ৭১২ হেক্টর আউশ ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বোনা আমন ৩০ হাজার ১৩৬ হেক্টর, সবজি ১৫ হাজার ৪২৬ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ১ হাজার ৬১ হেক্টর ও অন্যান্য ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ হাজার হেক্টর। দেশের মোট ২০ জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির এ চিত্র জানা গেছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে হবিগঞ্জে-৩২ হাজার ৯১৩ হেক্টর। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয়েছে রংপুরে, ১০ হেক্টর। সিলেটে সর্বমোট ক্ষতি হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৪ হেক্টর ফসলি জমির। এছাড়া মৌলভীবাজারে প্রায় ১৩ হাজার, ময়মনসিংহে ১০৬, জামালপুরে প্রায় ৭ হাজার, নেত্রকোনায় প্রায় ২ হাজার, শেরপুরে প্রায় ৫০০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ১৫ হাজার, টাঙ্গাইলে প্রায় ৯ হাজার, গাজীপুরে ১৫০ হেক্টর, কিশোরগঞ্জে ৩৪৬, নারায়ণগঞ্জে সাড়ে ৩শ, বগুড়ায় প্রায় ৩ হাজার, সিরাজগঞ্জে সাড়ে ১৫ হাজার, কুড়িগ্রামে প্রায় ১৬ হাজার, লালমনিরহাটে ৪০০, গাইবান্ধায় ২ হাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ২০০, সুনামগঞ্জে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব তথ্য প্রতিদিন হালনাগাদ হচ্ছে। বন্যার পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এলে সার্বিক অবস্থার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বন্যায় কৃষিখাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, মাঠে বড় ফসল না থাকায় বন্যার ভয়াবহতার তুলনায় কৃষির ক্ষতি তেমন বেশি হয়নি। রোপা আমনের বীজতলার কিছু ক্ষতি হয়েছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ভাসমান বীজতলাসহ কৃষকদের সহযোগিতার সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানা গেছে। গত রোববার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫৮ হাজার ৩১৭ খামারির ৭৯ হাজার ২৯০টি পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২২ হাজার টন মাছ এবং ৮২৫ কোটি মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে মাছ ও পোনা মিলিয়ে খামারিদের ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকার বেশি।
মৎস্য ও প্রাণী অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টাকার দিক থেকে ২০০ কোটি টাকার উপরে চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ৫২ কোটি, হবিগঞ্জে ৪২ কোটি, সিলেটে ৫০ কোটি, কিশোরগঞ্জে ১১ কোটি, ময়মনসিংহে এক কোটি, নেত্রকোনা ১১ কোটি, জামালপুর ২১ লাখ এবং শেরপুরে ৩৩ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানা গেছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বন্যায় দেড় লাখ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত
ভেসে গেছে ৮২৫ কোটি মাছের পোনা
এবারের অপ্রত্যাশিত বন্যায় দেড় লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ৮০ হাজার পুকুর, দিঘি ও মাছের খামার ক্ষতির কবলে পড়ছে। ভেসে গেছে ৮২৫ কোটি মাছের পোনা। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তর-সংস্থা সূত্রে এসব প্রাথমিক তথ্য জানা গেছে। বন্যা চলমান থাকায় এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি খাতে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭৯ হাজার ৭১২ হেক্টর আউশ ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বোনা আমন ৩০ হাজার ১৩৬ হেক্টর, সবজি ১৫ হাজার ৪২৬ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ১ হাজার ৬১ হেক্টর ও অন্যান্য ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ হাজার হেক্টর। দেশের মোট ২০ জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির এ চিত্র জানা গেছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে হবিগঞ্জে-৩২ হাজার ৯১৩ হেক্টর। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয়েছে রংপুরে, ১০ হেক্টর। সিলেটে সর্বমোট ক্ষতি হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৪ হেক্টর ফসলি জমির। এছাড়া মৌলভীবাজারে প্রায় ১৩ হাজার, ময়মনসিংহে ১০৬, জামালপুরে প্রায় ৭ হাজার, নেত্রকোনায় প্রায় ২ হাজার, শেরপুরে প্রায় ৫০০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ১৫ হাজার, টাঙ্গাইলে প্রায় ৯ হাজার, গাজীপুরে ১৫০ হেক্টর, কিশোরগঞ্জে ৩৪৬, নারায়ণগঞ্জে সাড়ে ৩শ, বগুড়ায় প্রায় ৩ হাজার, সিরাজগঞ্জে সাড়ে ১৫ হাজার, কুড়িগ্রামে প্রায় ১৬ হাজার, লালমনিরহাটে ৪০০, গাইবান্ধায় ২ হাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ২০০, সুনামগঞ্জে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব তথ্য প্রতিদিন হালনাগাদ হচ্ছে। বন্যার পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এলে সার্বিক অবস্থার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বন্যায় কৃষিখাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, মাঠে বড় ফসল না থাকায় বন্যার ভয়াবহতার তুলনায় কৃষির ক্ষতি তেমন বেশি হয়নি। রোপা আমনের বীজতলার কিছু ক্ষতি হয়েছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ভাসমান বীজতলাসহ কৃষকদের সহযোগিতার সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানা গেছে। গত রোববার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫৮ হাজার ৩১৭ খামারির ৭৯ হাজার ২৯০টি পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২২ হাজার টন মাছ এবং ৮২৫ কোটি মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে মাছ ও পোনা মিলিয়ে খামারিদের ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকার বেশি।
মৎস্য ও প্রাণী অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টাকার দিক থেকে ২০০ কোটি টাকার উপরে চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ৫২ কোটি, হবিগঞ্জে ৪২ কোটি, সিলেটে ৫০ কোটি, কিশোরগঞ্জে ১১ কোটি, ময়মনসিংহে এক কোটি, নেত্রকোনা ১১ কোটি, জামালপুর ২১ লাখ এবং শেরপুরে ৩৩ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানা গেছে।