অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা
jugantor
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় চাপ আরও বাড়বে
অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা

  যুগান্তর প্রতিবেদন  

০৩ আগস্ট ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। গত জুনের তুলনায় জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৯৩ কোটি ডলার। জুনে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৯১ কোটি ডলার।

জুলাইয়ে হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে সাড়ে ২৩ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি এসেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত মে মাসেই পূর্ভাবাস দিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, এর প্রভাবে রপ্তানি আয় কমে যাবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব রপ্তানি বিল এখনো বকেয়া রয়েছে সেগুলো দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এখন প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয় বিদেশে আটকে রয়েছে। যেগুলোর দেশে আনার সময় পেরিয়ে গেলেও আসছে না।

এদিকে রপ্তানি আয় কমায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় আগামী দিনে চাপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রপ্তানি। এটি কমে গেলে ডলারের প্রবাহও কমে যাবে। তখন চাপও বাড়বে। এতে মুদ্রাবাজারে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রপ্তানি কমার কারণে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯২ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত জুনে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৯১ কোটি ডলার। গত জুনের তুলনায় জুলাইয়ে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ২৩ শতাংশ।

গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৯ মাসই রপ্তানি আয় ছিল ৪০০ কোটি ডলারের ওপরে। বাকি ৩ মাস ছিল ৪০০ কোটি ডলারের নিচে। গত অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট ও মে মাসে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলারের নিচে ছিল।

সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয় ছিল ৪০০ কোটি ডলারের ওপরে। এর মধ্যে ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও জুনে রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি ছিল। সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কমবে, এটা আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল।

কেননা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। যে কারণে অনেক দেশ সুদের হার বাড়িয়ে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসছে ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকার দেশগুলো থেকে। ওইসব দেশে মন্দা থাকায় রপ্তানি আয়ও কমছে।

এদিকে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ডলার, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের মে মাসে এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ ২১৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বাড়ায়, প্রবাসীদের নানা সুবিধা দেওয়ায় এবং হুন্ডির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ সামনে বাড়বে। গত অর্থবছরে দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এসেছিল ১৭৭ কোটি ডলার।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের প্রধান খাত আমদানি ব্যয় ও এলসি খোলা কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমা এবং এলসিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় আগামী দিনে এ খাতে ব্যয় আরও কমবে।

তবে বকেয়া ঋণ ও এলসির অর্থ পরিশোধ করার কারণে চাপ বাড়বে। গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। এলসি খোলা বেড়েছে ৩২ শতাংশ। তবে অর্থবছরের শেষদিকে এসে আমদানি কমতে শুরু করেছে।

গত মার্চে আমদানি বেড়ে ৭৯৩ কোটি ডলারে উঠেছিল। এপ্রিল থেকে তা কমতে শুরু করেছে। গত মে মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৬৭৩ কোটি ডলার। জুনে সাময়িক হিসাবে আমদানি হয়েছে ৭১০ কোটি ডলার। অর্থাৎ, আগের মাসের চেয়ে আবার বেড়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় চাপ আরও বাড়বে

অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
০৩ আগস্ট ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। গত জুনের তুলনায় জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৯৩ কোটি ডলার। জুনে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৯১ কোটি ডলার।

জুলাইয়ে হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে সাড়ে ২৩ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি এসেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত মে মাসেই পূর্ভাবাস দিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, এর প্রভাবে রপ্তানি আয় কমে যাবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব রপ্তানি বিল এখনো বকেয়া রয়েছে সেগুলো দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এখন প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয় বিদেশে আটকে রয়েছে। যেগুলোর দেশে আনার সময় পেরিয়ে গেলেও আসছে না। 

এদিকে রপ্তানি আয় কমায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় আগামী দিনে চাপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রপ্তানি। এটি কমে গেলে ডলারের প্রবাহও কমে যাবে। তখন চাপও বাড়বে। এতে মুদ্রাবাজারে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রপ্তানি কমার কারণে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। 

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯২ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত জুনে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৯১ কোটি ডলার। গত জুনের তুলনায় জুলাইয়ে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ২৩ শতাংশ।

গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৯ মাসই রপ্তানি আয় ছিল ৪০০ কোটি ডলারের ওপরে। বাকি ৩ মাস ছিল ৪০০ কোটি ডলারের নিচে। গত অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট ও মে মাসে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলারের নিচে ছিল।

সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয় ছিল ৪০০ কোটি ডলারের ওপরে। এর মধ্যে ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও জুনে রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি ছিল। সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কমবে, এটা আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল।

কেননা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। যে কারণে অনেক দেশ সুদের হার বাড়িয়ে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসছে ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকার দেশগুলো থেকে। ওইসব দেশে মন্দা থাকায় রপ্তানি আয়ও কমছে। 

এদিকে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ডলার, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের মে মাসে এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ ২১৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বাড়ায়, প্রবাসীদের নানা সুবিধা দেওয়ায় এবং হুন্ডির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ সামনে বাড়বে। গত অর্থবছরে দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এসেছিল ১৭৭ কোটি ডলার।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের প্রধান খাত আমদানি ব্যয় ও এলসি খোলা কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমা এবং এলসিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় আগামী দিনে এ খাতে ব্যয় আরও কমবে।

তবে বকেয়া ঋণ ও এলসির অর্থ পরিশোধ করার কারণে চাপ বাড়বে। গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। এলসি খোলা বেড়েছে ৩২ শতাংশ। তবে অর্থবছরের শেষদিকে এসে আমদানি কমতে শুরু করেছে।

গত মার্চে আমদানি বেড়ে ৭৯৩ কোটি ডলারে উঠেছিল। এপ্রিল থেকে তা কমতে শুরু করেছে। গত মে মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৬৭৩ কোটি ডলার। জুনে সাময়িক হিসাবে আমদানি হয়েছে ৭১০ কোটি ডলার। অর্থাৎ, আগের মাসের চেয়ে আবার বেড়েছে।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন