এমসি কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা
নেপথ্যে প্রেমিকের বন্ধুর ব্ল্যাকমেইল
আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে টাকা আদায়
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রী আত্মহত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোন থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর সূত্র ধরে শ্যামল দাস নামের এক যুবককে গ্রেফতারের পরই পুরো বিষয়টি বেরিয়ে আসে। শ্যামল দাস ওই ছাত্রীর প্রেমিকের বন্ধু।
প্রেমিকের মোবাইল ফোন থেকে ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি চুরি করে তা দিয়েই ব্ল্যাকমেইলিং করে আসছিল শ্যামল। সে (শ্যামল) ওই ছাত্রীর কাছ থেকে কয়েকবার টাকাও নিয়েছে বিকাশের মাধ্যমে। এর পরই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ছাত্রী।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, শ্যামল বুধবার সেই ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ছাত্রীর প্রেমিকের কাছে বিকাশে টাকা চায়। বিকাশ থেকে টাকা তোলার সময়ই সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে শ্যামলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে শ্যামল দাস। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা যায়, আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ওই ছাত্রী এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছরের ২৫ মে এমসি কলেজের নতুন হোস্টেলের চারতলার ৪০৩নং কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি হোস্টেলের তৃতীয়তলায় ৩০৭নং কক্ষে থাকতেন। তখন পুলিশ জানিয়েছিল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। পরে পুলিশ তদন্তে নামে।
শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রীর মোবাইল ফোন থেকে নানা তথ্য পেয়েছেন তারা। সেসব তথ্য থেকে জানা যায়, ছাত্রী আত্মহত্যার আগের দিন ২৪ মে একটি মোবাইল ফোনে তিনি বিকাশে ২২শ টাকা পাঠান। সেই সূত্র ধরে টিলাগড় এলাকায় যে দোকান থেকে ক্যাশ আউট করা হয় সেই দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ৩ জনকে সন্দেহভাজনের তালিকায় আনা হয়। কিন্তু তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।
তদন্তকারী কর্মকর্তা নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে ওই তিন ছেলের ওপর নজর রাখছিলেন। ২ আগস্ট নতুন একটি ফেসবুক আইডি খুলে সেসব ছাবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ছাত্রীর প্রেমিকের কাছে টাকা দাবি করে শ্যামল দাস। সেই টাকা দেওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ছাত্রীর প্রেমিক। আর সিলেট বিমানবন্দর থানার জালালাবাদ আবাসিক এলাকার একটি বিকাশ এজেন্ট থেকে টাকা তোলার সময় বুধবার রাতে শ্যামলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ব্ল্যাকমেইলের কথা স্বীকার করে সে। বৃহস্পতিবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালতে তোলা হলে শ্যামল দাস স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
গ্রেফতারকৃত শ্যামল দাসের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মশাকলি গ্রামে। একই গ্রামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্র শ্যামলের বন্ধু। ওই ছাত্রই আত্মহত্যা করা ছাত্রীর প্রেমিক। বন্ধুত্বের সুবাদে চলতি বছরের শুরুতে শ্যামল ঢাকায় গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের রুমে ওঠে। সেখানে থাকা অবস্থায় সে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মোবাইল ফোন থেকে ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি নিজের মোবাইল ফোনে নিয়ে নেয়।
পরে ছদ্মনামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে ওই ছাত্রীকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। ছাত্রী তা গ্রহণ করলে তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবিগুলো পাঠিয়ে টাকা চায়। তা না হলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে ছাত্রী টাকা দেওয়ার কথা বলে ছবিগুলো আপলোড না করার অনুরোধ জানায়।
সেদিন ২৪ মে বিকালে ছাত্রী তার দেওয়া একটি এজেন্ট নম্বরে ২২শ টাকা পাঠায়। এর পরদিন শ্যামল দাস জানতে পারে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি নিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে ফের একটি নতুন আইডি খুলে ছাত্রীর প্রেমিক ঢাবি ছাত্রের আইডিতে ছবিগুলো পাঠিয়ে টাকা দাবি করে শ্যামল। ঢাবি ছাত্রের পাঠানো টাকা তোলার সময় শ্যামল গ্রেফতার হয়।
শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, শ্যামল দাসের দেওয়া তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করা হবে। তার ফোনেও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে ওই ছাত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
নেপথ্যে প্রেমিকের বন্ধুর ব্ল্যাকমেইল
এমসি কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা
আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে টাকা আদায়
সিলেট ব্যুরো
০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রী আত্মহত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোন থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর সূত্র ধরে শ্যামল দাস নামের এক যুবককে গ্রেফতারের পরই পুরো বিষয়টি বেরিয়ে আসে। শ্যামল দাস ওই ছাত্রীর প্রেমিকের বন্ধু।
প্রেমিকের মোবাইল ফোন থেকে ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি চুরি করে তা দিয়েই ব্ল্যাকমেইলিং করে আসছিল শ্যামল। সে (শ্যামল) ওই ছাত্রীর কাছ থেকে কয়েকবার টাকাও নিয়েছে বিকাশের মাধ্যমে। এর পরই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ছাত্রী।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, শ্যামল বুধবার সেই ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ছাত্রীর প্রেমিকের কাছে বিকাশে টাকা চায়। বিকাশ থেকে টাকা তোলার সময়ই সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে শ্যামলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে শ্যামল দাস। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা যায়, আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ওই ছাত্রী এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছরের ২৫ মে এমসি কলেজের নতুন হোস্টেলের চারতলার ৪০৩নং কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি হোস্টেলের তৃতীয়তলায় ৩০৭নং কক্ষে থাকতেন। তখন পুলিশ জানিয়েছিল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। পরে পুলিশ তদন্তে নামে।
শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রীর মোবাইল ফোন থেকে নানা তথ্য পেয়েছেন তারা। সেসব তথ্য থেকে জানা যায়, ছাত্রী আত্মহত্যার আগের দিন ২৪ মে একটি মোবাইল ফোনে তিনি বিকাশে ২২শ টাকা পাঠান। সেই সূত্র ধরে টিলাগড় এলাকায় যে দোকান থেকে ক্যাশ আউট করা হয় সেই দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ৩ জনকে সন্দেহভাজনের তালিকায় আনা হয়। কিন্তু তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।
তদন্তকারী কর্মকর্তা নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে ওই তিন ছেলের ওপর নজর রাখছিলেন। ২ আগস্ট নতুন একটি ফেসবুক আইডি খুলে সেসব ছাবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ছাত্রীর প্রেমিকের কাছে টাকা দাবি করে শ্যামল দাস। সেই টাকা দেওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ছাত্রীর প্রেমিক। আর সিলেট বিমানবন্দর থানার জালালাবাদ আবাসিক এলাকার একটি বিকাশ এজেন্ট থেকে টাকা তোলার সময় বুধবার রাতে শ্যামলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ব্ল্যাকমেইলের কথা স্বীকার করে সে। বৃহস্পতিবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালতে তোলা হলে শ্যামল দাস স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
গ্রেফতারকৃত শ্যামল দাসের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মশাকলি গ্রামে। একই গ্রামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্র শ্যামলের বন্ধু। ওই ছাত্রই আত্মহত্যা করা ছাত্রীর প্রেমিক। বন্ধুত্বের সুবাদে চলতি বছরের শুরুতে শ্যামল ঢাকায় গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের রুমে ওঠে। সেখানে থাকা অবস্থায় সে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মোবাইল ফোন থেকে ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি নিজের মোবাইল ফোনে নিয়ে নেয়।
পরে ছদ্মনামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে ওই ছাত্রীকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। ছাত্রী তা গ্রহণ করলে তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবিগুলো পাঠিয়ে টাকা চায়। তা না হলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে ছাত্রী টাকা দেওয়ার কথা বলে ছবিগুলো আপলোড না করার অনুরোধ জানায়।
সেদিন ২৪ মে বিকালে ছাত্রী তার দেওয়া একটি এজেন্ট নম্বরে ২২শ টাকা পাঠায়। এর পরদিন শ্যামল দাস জানতে পারে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি নিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে ফের একটি নতুন আইডি খুলে ছাত্রীর প্রেমিক ঢাবি ছাত্রের আইডিতে ছবিগুলো পাঠিয়ে টাকা দাবি করে শ্যামল। ঢাবি ছাত্রের পাঠানো টাকা তোলার সময় শ্যামল গ্রেফতার হয়।
শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, শ্যামল দাসের দেওয়া তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করা হবে। তার ফোনেও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে ওই ছাত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023