ছাত্রলীগ কর্মীদের লাঠিপেটা

সেই এএসপিকে বরগুনা থেকে সরানো হলো

পুলিশের তদন্ত কমিটি, ১২ জন ক্লোজড
 যুগান্তর প্রতিবেদন ও বরগুনা প্রতিনিধি 
১৭ আগস্ট ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিপেটার ঘটনায় আলোচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মহরম আলীকে বরগুনা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে। গত সোমবার শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া এএসপি মহরম আলীসহ ১২ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে।

জাতীয় শোক দিবসে সোমবার বরগুনা-১ আসনের সংসদ-সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সামনেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুলিশ লাঠিপেটা করে। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার বরগুনা শহরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ফিরছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাদের সমর্থকরা। দুপুর ১২টার দিকে তারা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে জেলা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত একটি পক্ষ শিল্পকলা একাডেমির ছাদ থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তাদের ওপরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সংসদ-সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও কর্তব্যরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সোমাবার রাতে সংসদ-সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের উদ্দেশ্যই ছিল মারধর করা। এ সময় তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহরম আলীকে বরখাস্তের দাবি জানান। তিনি বলেন, মহরম আলী ছাত্রলীগের ছোট ছোট বাচ্চাদের যেভাবে নির্যাতন করেছেন। তাতে ক্লোজ করলে বিচার শেষ হয়ে যাবে না। বাচ্চাদের কেন অকারণে পেটাল তার জন্য মহরমকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়া বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পরামর্শ ছাড়াই জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সম্মেলনের আগে কাউন্সিল বাধ্যতামূলক, এ কমিটি দেওয়ার আগে সেটাও করা হয়নি।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান সোমবার রাতে সংবাদ সম্মলেন করে বলেন, ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা তাদের ওপর হামলা করেছিলেন। পুলিশ না থাকলে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারত।

পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী হাছান বলেন, শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এসএম তারেক রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পাথরঘাটা সার্কেল) তোফায়েল হোসেন সরকার ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (ইন্সপেক্টর) মো. শাহবুদ্দিন খান।

জানা গেছে, ৩০তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর বরগুনা জেলায় ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি যোগদান করেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বাড়ি সুনামগঞ্জ।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন