রাষ্ট্রের পক্ষে গার্ড অব অনার
চিরনিদ্রায় ড. আকবর আলি খান
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আকবর আলি খানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গুলশান-১ আজাদ মসজিদে জুমার নামাজের পর তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর মসজিদ প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। জানাজায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে আকবর আলি খানের লাশ গুলশানে তার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে স্বজন ও বিশিষ্টজনরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান প্রমুখ।
এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আকাশ থেকে যেন একটা নক্ষত্র খসে পড়ল। তার মতো সজ্জন, সাহসী, দক্ষ প্রশাসকের সংখ্যা কম ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে উনাকে বহুবার দেখেছি। তখন উনার অল্প বয়স। ত্রিশের আশপাশে হবে। তিনি যে কঠিন পরিশ্রম করেছেন বিদেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য তা অনন্য।
আজকে জাতির বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। বিশেষত এই সময়ে যখন একটা অশনিসংকেত চারদিকে। সত্য কথা বলার লোক নেই। কদিন আগেও তিনি বলেছেন, ইভিএম করবেন না। তিনি সব সময় জনগণের বক্তব্যকে মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি কখনো সত্য বলতে ভয় পান নাই।’
মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকায় এ ধরনের মানুষদের অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এখানে এ বিষয়ে কিছুটা অপ্রতুলতা আছে, অনীহা আছে। আমরা চাই যে, সব সত্য কথা বলা যাবে না। আর আকবর আলি খান ছিলেন এ রকম যে, সব সত্য কথা বলতে হবে। এটাই ছিল তার আসল কোয়ালিফিকেশন।’
গোলাম রহমান বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টির জন্য তিনি অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার ফলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা এবং অন্যান্য ভাতা ক্রমান্বয়ে প্রচলিত হয়।’
সোহরাব হোসেন বলেন, ‘তিনি লেখক হিসেবে, চিন্তাবিদ হিসেবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে যা দিয়েছেন তা অতুলনীয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে মনে রাখবে। তিনি তার লেখা ও কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন।’
বৃহস্পতিবার রাতে ৭৮ বছর বয়সে মারা যান আকবর আলি খান। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে আকবর আলি খানের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
এরপর সরকারি চাকরি দিয়ে পেশাজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও ছিলেন তিনি। সে সময় সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করায় তার বিচার করে পাকিস্তান সামরিক সরকার। তার অনুপস্থিতিতে দেওয়া হয় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।
স্বাধীনতার পর আবার আমলা হিসেবে পেশাজীবনে প্রবেশ করেন। চাকরি জীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সচিব পদে নিযুক্ত হন। তিনি সরকারের অর্থসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পরে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হন। আকবর আলি খান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি।
অর্থনীতি বিষয়ে ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ এবং ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ নামে তার দুটি বই বেশ জনপ্রিয়।
বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির শোক : আকবর আলি খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা; গণফোরাম সভাপতি জননেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী; ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া; জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আকবর আলি খানের মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি একজন জনমুখী স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন। দেশের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন সৎ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক মানুষ। জাতি তার শূন্যতা অনুভব করবে। তিনি দেশের সম্পদ ছিলেন। নতুন প্রজন্মের আমলাদের কাছে তিনি আদর্শবান শিক্ষক হতে পারেন।
চিরনিদ্রায় ড. আকবর আলি খান
রাষ্ট্রের পক্ষে গার্ড অব অনার
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আকবর আলি খানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গুলশান-১ আজাদ মসজিদে জুমার নামাজের পর তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর মসজিদ প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। জানাজায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে আকবর আলি খানের লাশ গুলশানে তার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে স্বজন ও বিশিষ্টজনরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান প্রমুখ।
এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আকাশ থেকে যেন একটা নক্ষত্র খসে পড়ল। তার মতো সজ্জন, সাহসী, দক্ষ প্রশাসকের সংখ্যা কম ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে উনাকে বহুবার দেখেছি। তখন উনার অল্প বয়স। ত্রিশের আশপাশে হবে। তিনি যে কঠিন পরিশ্রম করেছেন বিদেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য তা অনন্য।
আজকে জাতির বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। বিশেষত এই সময়ে যখন একটা অশনিসংকেত চারদিকে। সত্য কথা বলার লোক নেই। কদিন আগেও তিনি বলেছেন, ইভিএম করবেন না। তিনি সব সময় জনগণের বক্তব্যকে মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি কখনো সত্য বলতে ভয় পান নাই।’
মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকায় এ ধরনের মানুষদের অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এখানে এ বিষয়ে কিছুটা অপ্রতুলতা আছে, অনীহা আছে। আমরা চাই যে, সব সত্য কথা বলা যাবে না। আর আকবর আলি খান ছিলেন এ রকম যে, সব সত্য কথা বলতে হবে। এটাই ছিল তার আসল কোয়ালিফিকেশন।’
গোলাম রহমান বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টির জন্য তিনি অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার ফলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা এবং অন্যান্য ভাতা ক্রমান্বয়ে প্রচলিত হয়।’
সোহরাব হোসেন বলেন, ‘তিনি লেখক হিসেবে, চিন্তাবিদ হিসেবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে যা দিয়েছেন তা অতুলনীয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে মনে রাখবে। তিনি তার লেখা ও কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন।’
বৃহস্পতিবার রাতে ৭৮ বছর বয়সে মারা যান আকবর আলি খান। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে আকবর আলি খানের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
এরপর সরকারি চাকরি দিয়ে পেশাজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও ছিলেন তিনি। সে সময় সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করায় তার বিচার করে পাকিস্তান সামরিক সরকার। তার অনুপস্থিতিতে দেওয়া হয় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।
স্বাধীনতার পর আবার আমলা হিসেবে পেশাজীবনে প্রবেশ করেন। চাকরি জীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সচিব পদে নিযুক্ত হন। তিনি সরকারের অর্থসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পরে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হন। আকবর আলি খান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি।
অর্থনীতি বিষয়ে ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ এবং ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ নামে তার দুটি বই বেশ জনপ্রিয়।
বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির শোক : আকবর আলি খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা; গণফোরাম সভাপতি জননেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী; ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া; জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আকবর আলি খানের মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি একজন জনমুখী স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন। দেশের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন সৎ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক মানুষ। জাতি তার শূন্যতা অনুভব করবে। তিনি দেশের সম্পদ ছিলেন। নতুন প্রজন্মের আমলাদের কাছে তিনি আদর্শবান শিক্ষক হতে পারেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023