ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে বাড়াচ্ছে পরিচিতি
jugantor
মাদারীপুরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক
ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে বাড়াচ্ছে পরিচিতি

  খোন্দকার রুহুল আমিন, টেকেরহাট (মাদারীপুর)  

১৯ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

মাদারীপুরে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকা সবখানেই বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। চালাচ্ছে নানা অপকর্ম। চুরি-ছিনতাই বা আধিপত্য ধরে রাখতে একে অপরের সঙ্গে মারামারি ও সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে এর সদস্যরা। আর এই সংঘর্ষ বা মারামারির ভিডিও ধারণ করে আপলোড করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময় মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে এ অপরাধীরা। ফলে বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এতে কমছে না অপরাধও। পুলিশ বলছে, এদের দমনে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জোরে হর্ন বাজিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিবাদ করায় ২৬ অক্টোবর মাদারীপুরের শিবচরের সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপুকে রাস্তা থেকে তুলে নেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরে রড দিয়ে আহত করে উপশহর এলাকায় ফেলে রাখা হয়। রাহুল, ফাহাদ, হামজা ও আব্দুলাসহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ দেওয়ার ৭ দিন পরে মামলা হলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি।

৫ নভেম্বর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন সদর উপজেলার দক্ষিণ দুধখালীর দিনমজুর শামীম আকন। তার অভিযোগ, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। ওই এলাকায় কথা কাটাকাটির জেরে পূর্ব রাস্তি এলাকার শাকিব হাওলাদার, রমিজ ও তুষারের নেতৃত্বাধীন গ্যাং সদস্যরা তাকে হাতুড়িপেটা করে।

সূত্র জানায়, এসব গ্যাংয়ের অনেকেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রয়েছে। আর মারামারি ও সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজেদের পরিচিত বাড়াতে। এমন বেশকিছু ভিডিও ভাইরালও হয়েছে ফেসবুকে। এসব ভিডিও দেখে অনেকের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপু বলেন, পূর্বের কোনো শত্রুতা ছিল না ওদের সঙ্গে। শুধু মোটরসাইকেলে জোরে হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করায় আমার ওপর হামলা চালানো হয়। ৭-৮ জন মিলে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।

দিনমজুর শামীম আকন বলেন, দুধখালী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে প্রথমে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য শাকিব হাওলাদার, রমিজ, তুষার ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় আমার ওপর ওরা হামলা চালায়। সবাই মিলে আমাকে হাতুড়িপেটা করে। চিৎকার-চ্যাঁচামেচির একপর্যায়ে রাস্তার ওপর ফেলে পালিয়ে যায়।

মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, মাদারীপুর জেলাজুড়ে এক আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। চুরি, ছিনতাই বা নিজেদের আধিপত্য দেখাতেও গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। এদের হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা পথচারী। এসব গ্যাং দমনে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে আইনি প্রক্রিয়া। অভিভাবকদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা হবে।

মাদারীপুরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে বাড়াচ্ছে পরিচিতি

 খোন্দকার রুহুল আমিন, টেকেরহাট (মাদারীপুর) 
১৯ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

মাদারীপুরে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকা সবখানেই বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। চালাচ্ছে নানা অপকর্ম। চুরি-ছিনতাই বা আধিপত্য ধরে রাখতে একে অপরের সঙ্গে মারামারি ও সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে এর সদস্যরা। আর এই সংঘর্ষ বা মারামারির ভিডিও ধারণ করে আপলোড করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময় মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে এ অপরাধীরা। ফলে বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এতে কমছে না অপরাধও। পুলিশ বলছে, এদের দমনে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জোরে হর্ন বাজিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিবাদ করায় ২৬ অক্টোবর মাদারীপুরের শিবচরের সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপুকে রাস্তা থেকে তুলে নেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরে রড দিয়ে আহত করে উপশহর এলাকায় ফেলে রাখা হয়। রাহুল, ফাহাদ, হামজা ও আব্দুলাসহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ দেওয়ার ৭ দিন পরে মামলা হলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি।

৫ নভেম্বর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন সদর উপজেলার দক্ষিণ দুধখালীর দিনমজুর শামীম আকন। তার অভিযোগ, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। ওই এলাকায় কথা কাটাকাটির জেরে পূর্ব রাস্তি এলাকার শাকিব হাওলাদার, রমিজ ও তুষারের নেতৃত্বাধীন গ্যাং সদস্যরা তাকে হাতুড়িপেটা করে।

সূত্র জানায়, এসব গ্যাংয়ের অনেকেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রয়েছে। আর মারামারি ও সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজেদের পরিচিত বাড়াতে। এমন বেশকিছু ভিডিও ভাইরালও হয়েছে ফেসবুকে। এসব ভিডিও দেখে অনেকের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপু বলেন, পূর্বের কোনো শত্রুতা ছিল না ওদের সঙ্গে। শুধু মোটরসাইকেলে জোরে হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করায় আমার ওপর হামলা চালানো হয়। ৭-৮ জন মিলে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।

দিনমজুর শামীম আকন বলেন, দুধখালী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে প্রথমে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য শাকিব হাওলাদার, রমিজ, তুষার ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় আমার ওপর ওরা হামলা চালায়। সবাই মিলে আমাকে হাতুড়িপেটা করে। চিৎকার-চ্যাঁচামেচির একপর্যায়ে রাস্তার ওপর ফেলে পালিয়ে যায়।

মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, মাদারীপুর জেলাজুড়ে এক আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। চুরি, ছিনতাই বা নিজেদের আধিপত্য দেখাতেও গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। এদের হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা পথচারী। এসব গ্যাং দমনে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে আইনি প্রক্রিয়া। অভিভাবকদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন