মনিরামপুরে যুবককে পিটিয়ে ও মুখে বিষ ঢেলে হত্যা
প্রেম করার ‘অপরাধ’
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
যশোরের মনিরামপুরে ‘প্রেম করার অপরাধে’ পারভেজ হাসান (১৯) নামের এক যুবককে দুই দফায় বেধড়ক মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে মেয়ের বাবাসহ অন্য স্বজনরা। রোববার সকালে খুলনা আড়ইশ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় মেয়ের বাবা ডা. ইমরান হোসেন ও তার (ইমরান) মামা সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত পারভেজ যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তিনি শৈশব থেকে মনিরামপুরের বাগডোবা গ্রামে তার নানা বাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকেই লেখাপড়া করতেন। গেল বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এ বছর তার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য পাসপোর্টও তৈরি করা হয়েছিল। নানা বাড়িতে প্রতিবেশী ডা. ইমরান হোসেনের মেয়ে রিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পারভেজের পরিবার গরিব হওয়ায় এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি রিয়ার পরিবার।
পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারী ও মা কোহিনুর বেগম জানান, ২৩ জানুয়ারি বিকালে বাড়ি থেকে স্থানীয় রোহিতা বাজারে যাওয়ার পথে রিয়ার বাবা ইমরানসহ অন্য স্বজনরা পারভেজকে টেনেহিঁচড়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি ও ইট দিয়ে নির্যাতন করে মিজানুর রহমানসহ রিয়ার স্বজনরা। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মিজানুরের বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পারভেজকে দেখেন তারা। নির্যাতনকারীদের পা ধরে পারভেজের প্রাণ ভিক্ষা চান। পরে সেখান থেকে পারভেজকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিছুটা সুস্থ হলে ২৫ জানুয়ারি পারভেজ বাড়ি ফেরে। দুদিন পর ২৭ জানুয়ারি রোহিতা বাজারে গেলে সেখান থেকে আবারও তাকে তুলে নিয়ে যায় রিয়ার বাবাসহ কয়েকজন। তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে মুখে কীটনাশক (বিষ) ঢেলে ডোবায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসার পর পারভেজকে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে খুলনা আড়ইশ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পারভেজ মারা যায়। এ ঘটনায় শনিবার পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারী বাদী হয়ে মনিরামপুর থানায় মামলা করেছেন।
পারভেজের খালা জাহানারা বেগম বলেন, হাসপাতালে আমার কোলেই পারভেজ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মারা যাওয়ার আগে সে জানায়, তাকে মারধর করার পর জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছিল তারা। পারভেজের বয়ানের ভিডিও রেকর্ডও রয়েছে। এমন একটি ভিডিও ক্লিপ যুগান্তরের হাতেও এসেছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমি মারধরের সঙ্গে জড়িত নই। মেয়ের পরিবারের লোকজন ছেলেটিকে ধরে তার বাড়িতে এনেছিল। পরে তারাই ছেলেটিকে চড়-থাপ্পড় দেয়।
মনিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়ের বাবা ইমরানসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রেম করার ‘অপরাধ’
মনিরামপুরে যুবককে পিটিয়ে ও মুখে বিষ ঢেলে হত্যা
যশোরের মনিরামপুরে ‘প্রেম করার অপরাধে’ পারভেজ হাসান (১৯) নামের এক যুবককে দুই দফায় বেধড়ক মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে মেয়ের বাবাসহ অন্য স্বজনরা। রোববার সকালে খুলনা আড়ইশ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় মেয়ের বাবা ডা. ইমরান হোসেন ও তার (ইমরান) মামা সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত পারভেজ যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তিনি শৈশব থেকে মনিরামপুরের বাগডোবা গ্রামে তার নানা বাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকেই লেখাপড়া করতেন। গেল বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এ বছর তার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য পাসপোর্টও তৈরি করা হয়েছিল। নানা বাড়িতে প্রতিবেশী ডা. ইমরান হোসেনের মেয়ে রিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পারভেজের পরিবার গরিব হওয়ায় এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি রিয়ার পরিবার।
পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারী ও মা কোহিনুর বেগম জানান, ২৩ জানুয়ারি বিকালে বাড়ি থেকে স্থানীয় রোহিতা বাজারে যাওয়ার পথে রিয়ার বাবা ইমরানসহ অন্য স্বজনরা পারভেজকে টেনেহিঁচড়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি ও ইট দিয়ে নির্যাতন করে মিজানুর রহমানসহ রিয়ার স্বজনরা। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মিজানুরের বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পারভেজকে দেখেন তারা। নির্যাতনকারীদের পা ধরে পারভেজের প্রাণ ভিক্ষা চান। পরে সেখান থেকে পারভেজকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিছুটা সুস্থ হলে ২৫ জানুয়ারি পারভেজ বাড়ি ফেরে। দুদিন পর ২৭ জানুয়ারি রোহিতা বাজারে গেলে সেখান থেকে আবারও তাকে তুলে নিয়ে যায় রিয়ার বাবাসহ কয়েকজন। তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে মুখে কীটনাশক (বিষ) ঢেলে ডোবায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসার পর পারভেজকে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে খুলনা আড়ইশ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পারভেজ মারা যায়। এ ঘটনায় শনিবার পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারী বাদী হয়ে মনিরামপুর থানায় মামলা করেছেন।
পারভেজের খালা জাহানারা বেগম বলেন, হাসপাতালে আমার কোলেই পারভেজ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মারা যাওয়ার আগে সে জানায়, তাকে মারধর করার পর জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছিল তারা। পারভেজের বয়ানের ভিডিও রেকর্ডও রয়েছে। এমন একটি ভিডিও ক্লিপ যুগান্তরের হাতেও এসেছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমি মারধরের সঙ্গে জড়িত নই। মেয়ের পরিবারের লোকজন ছেলেটিকে ধরে তার বাড়িতে এনেছিল। পরে তারাই ছেলেটিকে চড়-থাপ্পড় দেয়।
মনিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়ের বাবা ইমরানসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।