৮৪ বছরের রেকর্ড ভাঙল তুরস্কের ভূমিকম্প
ইসরাত জাহান স্বর্না
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মাত্র এক মিনিটের ভূকম্পন! মুহূর্তে লন্ডভন্ড তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহর। সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার সীমান্ত শহরগুলোও। ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল তুরস্কে ভূমিকম্প নতুন কিছু নয়। নিয়মিত ঘটনা। ঘরের মানুষ বললেও অত্যুক্তি হয় না।
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০২০ সাল। ওই বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ৩৩ হাজারবারেরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছিল। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে চার মাত্রার বেশি ছিল ৩২২টি। তুরস্কের বেশ জনপ্রিয় একটি প্রবাদ-‘জমিনই নিয়তি’। এই প্রবাদই বলে দেয় ভূমিকম্পের সঙ্গে তুর্কিদের সম্পর্ক কতটা গভীর।
কিন্তু সোমবারের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে গেছে তুরস্কে। ১৯৩৯ সালের পর ৮৪ বছরে এমন ভূমিকম্প দেখেনি তুরস্ক। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বলছে, ১৯৩৯ সালেও তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেসময় অন্তত ৩৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
জর্জিয়া টেক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক সায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক কার্ল ল্যাং সিএনএনকে বলেছেন, সোমবার যে এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে, ওই এলাকায় ভূমিকম্পের প্রবণতা অনেক। সোমবারের ভূমিকম্পটি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পগুলোর চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
ঘনঘন ভূমিকম্পের কারণ ‘সক্রিয় প্লেটে’ অবস্থান : বিশ্বের সবচেয়ে ভূকম্পনপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি তুরস্ক। দেশটির অবস্থান সেখানে, যেখানে সক্রিয়ভাবে গতিশীল বেশ কয়েকটি টেকটোনিক প্লেট একত্রিত হয়েছে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, আরবীয়, ইউরেশিয়ান ও আফ্রিকান প্লেট দ্বারা বেষ্টিত আনাতোলিয়ান টেকটোনিক প্লেটে তুরস্ক অবস্থিত। তুরস্কের সিসমিক ম্যাপ অনুযায়ী, এই প্লেটগুলোর গতিবিধি এখন পর্যন্ত সক্রিয় হওয়ায় দেশে প্রায়ই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
একটি বড় ভূমিকম্প ইস্তাম্বুলে আঘাত হানতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছিলেন। কান্দিরি অবজারভেটরি গবেষকদের মতে, ১৯৯৯ সালের পর তুরস্কের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূমিকম্পটি শত শত ভবন ধসে পড়াসহ বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এর আগে তুরস্কের ডুজসে ১৯৯৯ সালে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। যাতে ইস্তাম্বুলে এক হাজার জনসহ মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এলজিগে একটি ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, যাতে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। ওই বছরই অক্টোবরে ৭.০ মাত্রার ভূমিকম্পে ১১৪ জন মারা যায় এবং আহত হয় এক হাজারেরও বেশি মানুষ।
গাজিয়ানতেপের ভূমিকম্পে অশোধিত খাদ্য সরবরাহের পাইপলাইনে কোনো লিক না ধরা পড়লেও সতর্কতা অবলম্বনে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে সিহান রপ্তানি টার্মিনালে তুরষ্ক তেলের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংঘটিত ভূমিকম্পে তুরস্ক ও আজারবাইজানের উৎপাদকদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত লাখ লাখ ব্যারেল বহনকারী অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় পাইপলাইন কোম্পনি বোটাস জানিয়েছে. গ্যাসের সংযোগ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের গাজনিয়াতেপ হাতায় এবং কাহরামানমারাস প্রদেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
৮৪ বছরের রেকর্ড ভাঙল তুরস্কের ভূমিকম্প
মাত্র এক মিনিটের ভূকম্পন! মুহূর্তে লন্ডভন্ড তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহর। সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার সীমান্ত শহরগুলোও। ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল তুরস্কে ভূমিকম্প নতুন কিছু নয়। নিয়মিত ঘটনা। ঘরের মানুষ বললেও অত্যুক্তি হয় না।
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০২০ সাল। ওই বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ৩৩ হাজারবারেরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছিল। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে চার মাত্রার বেশি ছিল ৩২২টি। তুরস্কের বেশ জনপ্রিয় একটি প্রবাদ-‘জমিনই নিয়তি’। এই প্রবাদই বলে দেয় ভূমিকম্পের সঙ্গে তুর্কিদের সম্পর্ক কতটা গভীর।
কিন্তু সোমবারের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে গেছে তুরস্কে। ১৯৩৯ সালের পর ৮৪ বছরে এমন ভূমিকম্প দেখেনি তুরস্ক। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বলছে, ১৯৩৯ সালেও তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেসময় অন্তত ৩৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
জর্জিয়া টেক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক সায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক কার্ল ল্যাং সিএনএনকে বলেছেন, সোমবার যে এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে, ওই এলাকায় ভূমিকম্পের প্রবণতা অনেক। সোমবারের ভূমিকম্পটি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পগুলোর চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
ঘনঘন ভূমিকম্পের কারণ ‘সক্রিয় প্লেটে’ অবস্থান : বিশ্বের সবচেয়ে ভূকম্পনপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি তুরস্ক। দেশটির অবস্থান সেখানে, যেখানে সক্রিয়ভাবে গতিশীল বেশ কয়েকটি টেকটোনিক প্লেট একত্রিত হয়েছে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, আরবীয়, ইউরেশিয়ান ও আফ্রিকান প্লেট দ্বারা বেষ্টিত আনাতোলিয়ান টেকটোনিক প্লেটে তুরস্ক অবস্থিত। তুরস্কের সিসমিক ম্যাপ অনুযায়ী, এই প্লেটগুলোর গতিবিধি এখন পর্যন্ত সক্রিয় হওয়ায় দেশে প্রায়ই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
একটি বড় ভূমিকম্প ইস্তাম্বুলে আঘাত হানতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছিলেন। কান্দিরি অবজারভেটরি গবেষকদের মতে, ১৯৯৯ সালের পর তুরস্কের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূমিকম্পটি শত শত ভবন ধসে পড়াসহ বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এর আগে তুরস্কের ডুজসে ১৯৯৯ সালে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। যাতে ইস্তাম্বুলে এক হাজার জনসহ মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এলজিগে একটি ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, যাতে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। ওই বছরই অক্টোবরে ৭.০ মাত্রার ভূমিকম্পে ১১৪ জন মারা যায় এবং আহত হয় এক হাজারেরও বেশি মানুষ।
গাজিয়ানতেপের ভূমিকম্পে অশোধিত খাদ্য সরবরাহের পাইপলাইনে কোনো লিক না ধরা পড়লেও সতর্কতা অবলম্বনে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে সিহান রপ্তানি টার্মিনালে তুরষ্ক তেলের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংঘটিত ভূমিকম্পে তুরস্ক ও আজারবাইজানের উৎপাদকদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত লাখ লাখ ব্যারেল বহনকারী অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় পাইপলাইন কোম্পনি বোটাস জানিয়েছে. গ্যাসের সংযোগ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের গাজনিয়াতেপ হাতায় এবং কাহরামানমারাস প্রদেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।