জয়দেবপুরে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ
অগ্নিঝরা মার্চ
যুগান্তর প্রতিবেদন
১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অগ্নিঝরা মার্চের ১৯তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ ছিল শুক্রবার। ঢাকা শহর থেকে ২২ মাইল দূরে অবস্থিত জয়দেবপুরে চীন নির্মিত অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল বাহিনীর একটি দলকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র করতে চেষ্টা করলে মারাত্মক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনগণও এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সৈন্যরা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে, ফলে কমপক্ষে ২০ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়।
এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশজুড়ে স্লোগান ওঠে- ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, বর্শা-বল্লম নিয়ে রাজপথে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
এই সংবাদে বঙ্গবন্ধু ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাঙালির ফিনকি দেওয়া রক্তের দাগ শহরে বন্দরে ছড়িয়ে আছে। জয়দেবপুরের মাটিও আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। বুলেট আর বেয়োনেট দিয়ে বাঙালির মুক্তির আন্দোলন স্তব্ধ করা কোনো শক্তির পক্ষে সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ ধরনের দুরাশা মনে মনে পোষণ করেন, তারা বেকুবের স্বর্গেই বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।’
১৯ মার্চ উপদেষ্টাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামরিকজান্তা ইয়াহিয়ার সঙ্গে ৯০ মিনিটব্যাপী তৃতীয় দফা বৈঠক করেন। বঙ্গবন্ধুর উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও ড. কামাল হোসেন। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সর্বদা ভালোটা আশা করি, কিন্তু আবার খারাপের জন্য প্রস্তুত হয়েই থাকি। আমার ভূমিকা বিশ্ববাসীর কাছে সুস্পষ্ট রয়েছে।’
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বাসভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ-তরুণীদের কুচকাওয়াজ ও অস্ত্রচালানো প্রশিক্ষণ চলে।
ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় এসে সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন। সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তার নেই। করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা এক বৈঠক করে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোবিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণআন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শক্তি দেখতে পাবেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অগ্নিঝরা মার্চ
জয়দেবপুরে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ
অগ্নিঝরা মার্চের ১৯তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ ছিল শুক্রবার। ঢাকা শহর থেকে ২২ মাইল দূরে অবস্থিত জয়দেবপুরে চীন নির্মিত অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল বাহিনীর একটি দলকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র করতে চেষ্টা করলে মারাত্মক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনগণও এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সৈন্যরা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে, ফলে কমপক্ষে ২০ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়।
এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশজুড়ে স্লোগান ওঠে- ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, বর্শা-বল্লম নিয়ে রাজপথে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
এই সংবাদে বঙ্গবন্ধু ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাঙালির ফিনকি দেওয়া রক্তের দাগ শহরে বন্দরে ছড়িয়ে আছে। জয়দেবপুরের মাটিও আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। বুলেট আর বেয়োনেট দিয়ে বাঙালির মুক্তির আন্দোলন স্তব্ধ করা কোনো শক্তির পক্ষে সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ ধরনের দুরাশা মনে মনে পোষণ করেন, তারা বেকুবের স্বর্গেই বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।’
১৯ মার্চ উপদেষ্টাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামরিকজান্তা ইয়াহিয়ার সঙ্গে ৯০ মিনিটব্যাপী তৃতীয় দফা বৈঠক করেন। বঙ্গবন্ধুর উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও ড. কামাল হোসেন। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সর্বদা ভালোটা আশা করি, কিন্তু আবার খারাপের জন্য প্রস্তুত হয়েই থাকি। আমার ভূমিকা বিশ্ববাসীর কাছে সুস্পষ্ট রয়েছে।’
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বাসভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ-তরুণীদের কুচকাওয়াজ ও অস্ত্রচালানো প্রশিক্ষণ চলে।
ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় এসে সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন। সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তার নেই। করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা এক বৈঠক করে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোবিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণআন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শক্তি দেখতে পাবেন।