বিভাগীয় শাস্তির মুখে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন
jugantor
ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি
বিভাগীয় শাস্তির মুখে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন

  গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি  

২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

প্রত্যাহার হওয়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার এএসআই সুমন সরকার বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন। সোমবার এক দোকান মালিককে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে নির্জন বাগানে আটকে রেখে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন সুমন। না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আর ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে জেলা পুলিশের সদর-গজারিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল হাসানের নেতৃত্ব তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় সুমনের দুই সহযোগীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক আরেক ঘটনায় ওই থানার আরও দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার মধ্যবাউশিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাকিল ফরাজীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খাজা আজমেরী ভ্যারাইটিজ স্টোরের সামনে মানুষের জটলা। এএসআই সুমন ক্লোজ হওয়ার ঘটনায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন এএসআই সুমন। এমনিতেই আমরা মামলা হয়রানির ভয়ে থাকি। তাই ঝমেলা থেকে এড়াতে নিয়মিত টাকা দিতাম।’

দুপুরে গজারিয়া থানায় ভুক্তিভোগী শাকিলের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। এএসআই সুমন ফেসবুক ও বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আমকে হুমকি দিচ্ছেন।’ প্রমাণ হিসাবে তিনি মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট দেখান। শাকিল বলেন, ‘এএসআই সুমন মিথ্যা ওয়ারেন্ট ও অনুসন্ধান স্লিপ দেখিয়ে নিরপরাধ মানুষকে মামলা থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার কথা বলে এবং কখনো কখনো ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।’ প্রমাণ হিসাবে মঙ্গলবার এএসআই সুমনের দেওয়া একটি অনুসন্ধান স্লিপ দেখান শাকিল, যেখানে তাকে মাদক মামলার পলাতক আসামি দেখানো হয়েছে। অনুসন্ধান স্লিপে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কথা উল্লেখ থাকলেও সেখানে যোগাযোগ করে এ সংক্রান্ত কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। এটা নিয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে এএসআই সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘একটি ঘটনা ঘটার পর নানাভাবে সেটিকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। পুরো ঘটনায় আমার একমাত্র ভুল ছিল আমি মামলার বিষয়টি সঠিকভাবে খতিয়ে দেখিনি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম।’

জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ সদর-গজারিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল হাসান বলেন, দোকান মালিকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করার ঘটনায় এএসআই সুমন সরকার ও তার দুই সহযোগী কনস্টেবল রকিবুল ইসলাম ও কনস্টেবল রবিউল ইসলামকে ক্লোজ করা হয়েছে। অন্যদিকে পৃথক এক ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করায় এএসআই আনিস ও কনস্টেবল নাসির হোসেনকে ক্লোজ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় শাকিল ফরাজীকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে জঙ্গলে আটকে রেখে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন গজারিয়া থানার এএসআই সুমন সরকার। খবর পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়।

ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

বিভাগীয় শাস্তির মুখে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন

 গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি 
২২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

প্রত্যাহার হওয়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার এএসআই সুমন সরকার বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন। সোমবার এক দোকান মালিককে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে নির্জন বাগানে আটকে রেখে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন সুমন। না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আর ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে জেলা পুলিশের সদর-গজারিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল হাসানের নেতৃত্ব তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় সুমনের দুই সহযোগীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক আরেক ঘটনায় ওই থানার আরও দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার মধ্যবাউশিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাকিল ফরাজীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খাজা আজমেরী ভ্যারাইটিজ স্টোরের সামনে মানুষের জটলা। এএসআই সুমন ক্লোজ হওয়ার ঘটনায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন এএসআই সুমন। এমনিতেই আমরা মামলা হয়রানির ভয়ে থাকি। তাই ঝমেলা থেকে এড়াতে নিয়মিত টাকা দিতাম।’

দুপুরে গজারিয়া থানায় ভুক্তিভোগী শাকিলের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। এএসআই সুমন ফেসবুক ও বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আমকে হুমকি দিচ্ছেন।’ প্রমাণ হিসাবে তিনি মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট দেখান। শাকিল বলেন, ‘এএসআই সুমন মিথ্যা ওয়ারেন্ট ও অনুসন্ধান স্লিপ দেখিয়ে নিরপরাধ মানুষকে মামলা থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার কথা বলে এবং কখনো কখনো ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।’ প্রমাণ হিসাবে মঙ্গলবার এএসআই সুমনের দেওয়া একটি অনুসন্ধান স্লিপ দেখান শাকিল, যেখানে তাকে মাদক মামলার পলাতক আসামি দেখানো হয়েছে। অনুসন্ধান স্লিপে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কথা উল্লেখ থাকলেও সেখানে যোগাযোগ করে এ সংক্রান্ত কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। এটা নিয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে এএসআই সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘একটি ঘটনা ঘটার পর নানাভাবে সেটিকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। পুরো ঘটনায় আমার একমাত্র ভুল ছিল আমি মামলার বিষয়টি সঠিকভাবে খতিয়ে দেখিনি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম।’

জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ সদর-গজারিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল হাসান বলেন, দোকান মালিকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করার ঘটনায় এএসআই সুমন সরকার ও তার দুই সহযোগী কনস্টেবল রকিবুল ইসলাম ও কনস্টেবল রবিউল ইসলামকে ক্লোজ করা হয়েছে। অন্যদিকে পৃথক এক ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করায় এএসআই আনিস ও কনস্টেবল নাসির হোসেনকে ক্লোজ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় শাকিল ফরাজীকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে জঙ্গলে আটকে রেখে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন গজারিয়া থানার এএসআই সুমন সরকার। খবর পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন