পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিপীড়ন শুরু
অগ্নিঝরা মার্চ
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও তারা অত্যাচার-নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলাগাড়ী, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ১০০ জন নিহত এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত হন। শহরে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং অবাঙালিরা সম্মিলিতভাবে বাঙালিদের বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়।
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সমাগত মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় বিরামহীনভাবে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। তিনি বলেন, আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোনো সমাধান না হলে বাঙালিরা নিজেদের পথ বেছে নেবে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের প্রতি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাশত করা হবে না।
এদিকে রংপুর হাসপাতালের সামনে ক্রুদ্ধ জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি সেনারা রংপুর সেনানিবাসসংলগ্ন এলাকায় নিরস্ত্র অধিবাসীদের ওপর বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং বহু আহত হন। চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনারা নৌবন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে কয়েক হাজার বীর বাঙালি তাদের ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে কিছু অস্ত্র নিজেরাই খালাস করে ১২টি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা পথরোধ করে। সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড রচনাকারী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ২০০ শ্রমিক শহিদ হন।
মিরপুরে অবাঙালিরা সাদা পোশাকধারী পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাঙালিদের বাড়িঘরের শীর্ষে ওড়ানো বাংলাদেশের পতাকা এবং কালো পতাকা নামিয়ে জোর করে তাতে আগুন দেয় এবং পাকিস্তানি পতাকা তোলে। রাতে বিহারিরা এখানে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টার স্থায়ী বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান শেষ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তার ঘোষণা দেওয়া।
তিনি বলেন, আজ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আলোচনা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করতে প্রস্তুত নয়।
পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবনে জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তিনি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ ও দুর্ভাগ্যজনক। এ অঞ্চলের শোষিত জনগণের প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রয়েছে। আমি তাদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার একটি জাতীয় দায়িত্ব রয়েছে। আমি পাকিস্তান অখণ্ড রাখার জন্য জীবনদান করতে প্রস্তুত।
এদিন টিভিকেন্দ্রে প্রহরারত সৈন্যরা টিভিকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে সন্ধ্যা থেকে ঢাকা টিভির কর্মীরা টিভির সব ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার থেকে বিরত থাকেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতারা এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র গণবিপ্লবকে আরও জোরদার করার জন্য সংগ্রামী বাংলার ব্যাপক জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সাংবাদিকরা জরুরি সভায় মিলিত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হয়রানিমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান।
এদিন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সদর দপ্তর যশোরে বাঙালি অফিসাররা প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করেন। রাইফেলসের জওয়ানরা ‘জয় বাংলা-বাংলার জয়’ গান গাইতে গাইতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং তারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার প্রতি পূর্ণ সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার জানিয়ে ফ্ল্যাগ স্যালুট করেন। ভোলা ও বগুড়ায়ও রাইফেলসের জওয়ানরা নিজ নিজ ছাউনিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাইফেলস ব্যাটালিয়নে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের খবর দ্রুত পৌঁছে যায় সামরিক জান্তা জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে। নরঘাতক ইয়াহিয়া প্রতিশোধ আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গোপনে দেশের প্রতিটি সামরিক ছাউনিতে নির্দেশ পাঠায় যে, আর সময় দেওয়া যাবে না। সুযোগ বুঝে বাঙালি নিধন কর্মসূচি ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। ক্রুদ্ধ ইয়াহিয়া-টিক্কারা গোপন বৈঠক করে প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টেও অপারেশন শুরু করার নির্দেশ জারি করে।
গোপনে তারা যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, খান এ সবুর খান, মাওলানা ইউসুফ, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামানদের সঙ্গে। এরই মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী এ চক্রটি রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠনের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি দেশজুড়ে প্রচারণা চালাতে থাকে যে, ভারতীয় হিন্দুবাদীরা ষড়যন্ত্র করে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করতেই পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুশমনি শুরু করেছে। আর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব ওই ষড়যন্ত্রের হোতা হিসাবে দেশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অগ্নিঝরা মার্চ
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিপীড়ন শুরু
পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও তারা অত্যাচার-নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলাগাড়ী, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ১০০ জন নিহত এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত হন। শহরে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং অবাঙালিরা সম্মিলিতভাবে বাঙালিদের বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়।
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সমাগত মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় বিরামহীনভাবে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। তিনি বলেন, আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোনো সমাধান না হলে বাঙালিরা নিজেদের পথ বেছে নেবে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের প্রতি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাশত করা হবে না।
এদিকে রংপুর হাসপাতালের সামনে ক্রুদ্ধ জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি সেনারা রংপুর সেনানিবাসসংলগ্ন এলাকায় নিরস্ত্র অধিবাসীদের ওপর বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং বহু আহত হন। চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনারা নৌবন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে কয়েক হাজার বীর বাঙালি তাদের ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে কিছু অস্ত্র নিজেরাই খালাস করে ১২টি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা পথরোধ করে। সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড রচনাকারী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ২০০ শ্রমিক শহিদ হন।
মিরপুরে অবাঙালিরা সাদা পোশাকধারী পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাঙালিদের বাড়িঘরের শীর্ষে ওড়ানো বাংলাদেশের পতাকা এবং কালো পতাকা নামিয়ে জোর করে তাতে আগুন দেয় এবং পাকিস্তানি পতাকা তোলে। রাতে বিহারিরা এখানে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টার স্থায়ী বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান শেষ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তার ঘোষণা দেওয়া।
তিনি বলেন, আজ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আলোচনা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করতে প্রস্তুত নয়।
পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবনে জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তিনি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ ও দুর্ভাগ্যজনক। এ অঞ্চলের শোষিত জনগণের প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রয়েছে। আমি তাদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার একটি জাতীয় দায়িত্ব রয়েছে। আমি পাকিস্তান অখণ্ড রাখার জন্য জীবনদান করতে প্রস্তুত।
এদিন টিভিকেন্দ্রে প্রহরারত সৈন্যরা টিভিকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে সন্ধ্যা থেকে ঢাকা টিভির কর্মীরা টিভির সব ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার থেকে বিরত থাকেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতারা এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র গণবিপ্লবকে আরও জোরদার করার জন্য সংগ্রামী বাংলার ব্যাপক জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সাংবাদিকরা জরুরি সভায় মিলিত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হয়রানিমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান।
এদিন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সদর দপ্তর যশোরে বাঙালি অফিসাররা প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করেন। রাইফেলসের জওয়ানরা ‘জয় বাংলা-বাংলার জয়’ গান গাইতে গাইতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং তারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার প্রতি পূর্ণ সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার জানিয়ে ফ্ল্যাগ স্যালুট করেন। ভোলা ও বগুড়ায়ও রাইফেলসের জওয়ানরা নিজ নিজ ছাউনিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাইফেলস ব্যাটালিয়নে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের খবর দ্রুত পৌঁছে যায় সামরিক জান্তা জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে। নরঘাতক ইয়াহিয়া প্রতিশোধ আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গোপনে দেশের প্রতিটি সামরিক ছাউনিতে নির্দেশ পাঠায় যে, আর সময় দেওয়া যাবে না। সুযোগ বুঝে বাঙালি নিধন কর্মসূচি ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। ক্রুদ্ধ ইয়াহিয়া-টিক্কারা গোপন বৈঠক করে প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টেও অপারেশন শুরু করার নির্দেশ জারি করে।
গোপনে তারা যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, খান এ সবুর খান, মাওলানা ইউসুফ, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামানদের সঙ্গে। এরই মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী এ চক্রটি রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠনের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি দেশজুড়ে প্রচারণা চালাতে থাকে যে, ভারতীয় হিন্দুবাদীরা ষড়যন্ত্র করে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করতেই পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুশমনি শুরু করেছে। আর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব ওই ষড়যন্ত্রের হোতা হিসাবে দেশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে।