জাবিতে অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের মহড়া
jugantor
তুচ্ছ ঘটনা
জাবিতে অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের মহড়া
সাংবাদিকদের ওপর হামলা * প্রতিবাদে মানববন্ধন

  জাবি প্রতিনিধি  

২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

ক্যান্টিনে বসা নিয়ে মারামারির জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার ভাসানী চত্বরে মহড়া দেওয়া হয়। ওই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। এছাড়া প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে তর্ক-বিতর্কের জেরে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধর করেন। এর প্রতিশোধ নিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে একদল শিক্ষার্থী রামদা, লোহার পাইপ, কাচের বোতলসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হল থেকে বের হয়ে বটতলার ভাসানী চত্বরে যান। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন বাংলাদেশ টুডের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ ও ডিবিসি নিউজের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় তাদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। তারা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন। ছিঁড়ে ফেলেন জুবায়ের আহমেদের জামা। এরপর বটতলায় প্রায় দেড় ঘণ্টা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের অস্ত্রশস্ত্রসহ মহড়ার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আগে থেকেই অবস্থান নেয় প্রক্টরিয়াল টিম। শিক্ষার্থীরা বটতলার ভাসানী চত্বরে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রক্টরিয়াল টিম তাদের বাধা দেয়। সেখানে তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী বাগবিতণ্ডা হয়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আহমেদ গালিবের হাতে রামদা, সহসম্পাদক মৃন্ময় দাস, ৪৮ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের রাইয়ানুজ্জামান আকিব, ৪৮ ব্যাচের গণিত বিভাগের ফয়সাল আমিন আলিফ আলফা, ৪৯ ব্যাচের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অনুপ সরকার দীপ, ৪৯ ব্যাচের রসায়ন বিভাগের মাহমুদুল হাসান শান্তসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মীর হাতে লোহার পাইপ ও কাচের বোতল দেখা যায়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ, সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান, আবুল কালাম আজাদ, সজীব হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেনের নির্দেশে প্রতিশোধ নিতে হল থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়ায় বের হন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ঘটনাস্থলেই দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন অন্য সাংবাদিকরা। এ সময় উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। হাবিবুর রহমান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতাম না। জানলে আসতামও না। এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন : দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন হয়। এতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশফার রহমান নবীন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায়, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ‘ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়ায় ফুটেজ নিতে গেলে হামলার স্বীকার হন সাংবাদিকরা। এখানে কেউ নিরাপদ নয়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকলাপ বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

হামলার ঘটনায় বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ : হামলার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাংবাদিক জুবায়ের আহমেদ। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘একাধিক শিক্ষার্থী আমার ওপর ও মামুনের ওপর লোহার পাইপ, রামদা নিয়ে হামলা চালান। হামলায় আমরা আহত হয়েছি। আমার শার্ট ছিঁড়ে গেছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তুচ্ছ ঘটনা

জাবিতে অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের মহড়া

সাংবাদিকদের ওপর হামলা * প্রতিবাদে মানববন্ধন
 জাবি প্রতিনিধি 
২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

ক্যান্টিনে বসা নিয়ে মারামারির জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার ভাসানী চত্বরে মহড়া দেওয়া হয়। ওই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। এছাড়া প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে তর্ক-বিতর্কের জেরে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধর করেন। এর প্রতিশোধ নিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে একদল শিক্ষার্থী রামদা, লোহার পাইপ, কাচের বোতলসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হল থেকে বের হয়ে বটতলার ভাসানী চত্বরে যান। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন বাংলাদেশ টুডের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ ও ডিবিসি নিউজের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় তাদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। তারা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন। ছিঁড়ে ফেলেন জুবায়ের আহমেদের জামা। এরপর বটতলায় প্রায় দেড় ঘণ্টা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের অস্ত্রশস্ত্রসহ মহড়ার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আগে থেকেই অবস্থান নেয় প্রক্টরিয়াল টিম। শিক্ষার্থীরা বটতলার ভাসানী চত্বরে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রক্টরিয়াল টিম তাদের বাধা দেয়। সেখানে তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী বাগবিতণ্ডা হয়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আহমেদ গালিবের হাতে রামদা, সহসম্পাদক মৃন্ময় দাস, ৪৮ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের রাইয়ানুজ্জামান আকিব, ৪৮ ব্যাচের গণিত বিভাগের ফয়সাল আমিন আলিফ আলফা, ৪৯ ব্যাচের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অনুপ সরকার দীপ, ৪৯ ব্যাচের রসায়ন বিভাগের মাহমুদুল হাসান শান্তসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মীর হাতে লোহার পাইপ ও কাচের বোতল দেখা যায়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ, সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান, আবুল কালাম আজাদ, সজীব হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেনের নির্দেশে প্রতিশোধ নিতে হল থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়ায় বের হন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ঘটনাস্থলেই দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন অন্য সাংবাদিকরা। এ সময় উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। হাবিবুর রহমান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতাম না। জানলে আসতামও না। এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন : দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন হয়। এতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশফার রহমান নবীন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায়, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ‘ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়ায় ফুটেজ নিতে গেলে হামলার স্বীকার হন সাংবাদিকরা। এখানে কেউ নিরাপদ নয়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকলাপ বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

হামলার ঘটনায় বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ : হামলার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাংবাদিক জুবায়ের আহমেদ। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘একাধিক শিক্ষার্থী আমার ওপর ও মামুনের ওপর লোহার পাইপ, রামদা নিয়ে হামলা চালান। হামলায় আমরা আহত হয়েছি। আমার শার্ট ছিঁড়ে গেছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন