নির্বাচন কমিশনের চিঠি সরকারের নতুন কৌশল: মির্জা ফখরুল
jugantor
নির্বাচন কমিশনের চিঠি সরকারের নতুন কৌশল: মির্জা ফখরুল

  যুগান্তর প্রতিবেদন  

২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠিকে অতীতের মতো ভোট করার সরকারের নতুন কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এবার একটু চাপাচাপি বেশি। পড়শিরা বলছেন, আগের মতো ভোট আর চলবে না। জাপানের রাষ্ট্রদূত তো বলেই ফেললেন, কখনো শুনিনি আগের রাতে ভোট হয়। এজন্য আবার নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে লেটেস্ট কৌশল হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বিএনপিকে একটা চিঠি দেওয়া।’

সংকট একটাই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সে সংকট হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার কে থাকবে? নির্বাচনকালীন যদি আওয়ামী লীগ থাকে, এই সরকার থাকে, তাহলে কোনোদিনই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হতে পারবে না-এটা প্রমাণিত। শুধু জাতীয় সংসদে নয়, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোয়ও প্রমাণিত। সুতরাং আসল জায়গায় আসেন। তা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। সেটা নিয়ে কাজ করুন। সেটা নিয়ে কথা বলুন, ঘোষণা দিন। তা না হলে অন্য কোনো কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠির বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হবে বলেও জানান।

নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই চিঠি দিয়ে অযথা কেন হয়রান হচ্ছেন। আপনারা ভদ্র লোকের মতো থাকেন, বেতন-টেতন নেন। অতীতে নির্বাচন কমিশন ছিল, তারা শুধু ট্রেনিং বাবদ কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছেন। আপনারা এরকম কিছু আছে কি না, সেগুলো দেখেন। অযথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এসব কথা বলে নিজেকে খাটো করবেন না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নতুন খেলায় নেমেছে। খেলাটি হচ্ছে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলব, ভোটের কথা বলব, ভোটও করব। কিন্তু আমার কাজটা আমি করব। আমার মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করব, আমার মতো করে প্রশাসন চলবে, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি-সব আমার কথায় চলবে এবং আমি যা চাইব, সেভাবে চলবে। আবারও একই পাঁয়তারা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব শেষ করে দিয়েছে। তারা (সরকার) শুধু বলে এত উন্নয়ন করেছে, আমরা উন্নয়ন দেখতে পাই না। মাঝখানে বরিশাল গিয়েছিলাম। বরিশাল থেকে আসার পথে পদ্মা সেতুর ওপরে দেখি অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রিপেয়ার করা হচ্ছে। এক বছর পার হয়নি, অলরেডি রিপেয়ারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেতুর রাস্তায় যে বিটুমিন, সেই বিটুমিনের আস্তর খুলে যাচ্ছে। এই হচ্ছে তাদের উন্নয়নের নমুনা। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছে।’

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানে মানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নাও, মানে মানে পদত্যাগ কর, মানে মানে সংসদ বিলুপ্ত কর। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কর। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার অধীনে এখানে নির্বাচন হবে এবং জনগণ ভোট দেবে। এটাই শেষ কথা।’ দেশকে রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে নেতাকর্মীদের সর্বাÍক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বে দাম কমলেও দেশে কমে না সব চুরি করার কারণে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা আজ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। একটি মহলের স্বার্থরক্ষা করতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা লুট করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আজীবন ক্ষমতায় থাকতে গণহত্যা করেছে। ভোটের অধিকার সব জায়গায় কেড়ে নিয়েছে সরকার। ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা না থাকায় সিন্ডিকেট করে অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপি ধোঁকাবাজির রাজনীতি করে না, যা বলে তাই করে। বিএনপি মানুষের জন্য কাজ করে। দেশের মানুষের টাকা কেন লুটপাট করে পাচার করা হচ্ছে, এমন স্বাধীনতা চায়নি বাংলার জনগণ। স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ও আদর্শ আবারও প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খানের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।

নির্বাচন কমিশনের চিঠি সরকারের নতুন কৌশল: মির্জা ফখরুল

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৬ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠিকে অতীতের মতো ভোট করার সরকারের নতুন কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এবার একটু চাপাচাপি বেশি। পড়শিরা বলছেন, আগের মতো ভোট আর চলবে না। জাপানের রাষ্ট্রদূত তো বলেই ফেললেন, কখনো শুনিনি আগের রাতে ভোট হয়। এজন্য আবার নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে লেটেস্ট কৌশল হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বিএনপিকে একটা চিঠি দেওয়া।’

সংকট একটাই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সে সংকট হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার কে থাকবে? নির্বাচনকালীন যদি আওয়ামী লীগ থাকে, এই সরকার থাকে, তাহলে কোনোদিনই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হতে পারবে না-এটা প্রমাণিত। শুধু জাতীয় সংসদে নয়, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোয়ও প্রমাণিত। সুতরাং আসল জায়গায় আসেন। তা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। সেটা নিয়ে কাজ করুন। সেটা নিয়ে কথা বলুন, ঘোষণা দিন। তা না হলে অন্য কোনো কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠির বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হবে বলেও জানান।

নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই চিঠি দিয়ে অযথা কেন হয়রান হচ্ছেন। আপনারা ভদ্র লোকের মতো থাকেন, বেতন-টেতন নেন। অতীতে নির্বাচন কমিশন ছিল, তারা শুধু ট্রেনিং বাবদ কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছেন। আপনারা এরকম কিছু আছে কি না, সেগুলো দেখেন। অযথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এসব কথা বলে নিজেকে খাটো করবেন না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নতুন খেলায় নেমেছে। খেলাটি হচ্ছে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলব, ভোটের কথা বলব, ভোটও করব। কিন্তু আমার কাজটা আমি করব। আমার মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করব, আমার মতো করে প্রশাসন চলবে, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি-সব আমার কথায় চলবে এবং আমি যা চাইব, সেভাবে চলবে। আবারও একই পাঁয়তারা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব শেষ করে দিয়েছে। তারা (সরকার) শুধু বলে এত উন্নয়ন করেছে, আমরা উন্নয়ন দেখতে পাই না। মাঝখানে বরিশাল গিয়েছিলাম। বরিশাল থেকে আসার পথে পদ্মা সেতুর ওপরে দেখি অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রিপেয়ার করা হচ্ছে। এক বছর পার হয়নি, অলরেডি রিপেয়ারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেতুর রাস্তায় যে বিটুমিন, সেই বিটুমিনের আস্তর খুলে যাচ্ছে। এই হচ্ছে তাদের উন্নয়নের নমুনা। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছে।’

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানে মানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নাও, মানে মানে পদত্যাগ কর, মানে মানে সংসদ বিলুপ্ত কর। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কর। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার অধীনে এখানে নির্বাচন হবে এবং জনগণ ভোট দেবে। এটাই শেষ কথা।’ দেশকে রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে নেতাকর্মীদের সর্বাÍক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বে দাম কমলেও দেশে কমে না সব চুরি করার কারণে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা আজ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। একটি মহলের স্বার্থরক্ষা করতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা লুট করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আজীবন ক্ষমতায় থাকতে গণহত্যা করেছে। ভোটের অধিকার সব জায়গায় কেড়ে নিয়েছে সরকার। ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা না থাকায় সিন্ডিকেট করে অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপি ধোঁকাবাজির রাজনীতি করে না, যা বলে তাই করে। বিএনপি মানুষের জন্য কাজ করে। দেশের মানুষের টাকা কেন লুটপাট করে পাচার করা হচ্ছে, এমন স্বাধীনতা চায়নি বাংলার জনগণ। স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ও আদর্শ আবারও প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খানের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন