পায়রাবন্দরের গভীরতম রাবনাবাদ চ্যানেল হস্তান্তর

অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা

 কামরুল হাসান, রাঙ্গাবালী ও আজিজুর রহমান সুজন, পায়রাবন্দর  
২৭ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ড্রেজিং স্কিম পায়রাবন্দরের ‘রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ সফলভাবে শেষ হয়েছে।

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়িত এ কাজটি বেলজিয়ামভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান ডে নুল সম্পন্ন করে।

পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ওই প্রতিষ্ঠানটি রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের গভীরতম এ চ্যানেল হস্তান্তর করেছে।

বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

এতে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরের চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হয়েছে।

যার দৈর্ঘ্য ৭৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১১০ থেকে ২০০ মিটার। এ বন্দর বর্তমানে দেশের গভীরতম বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে।

ফলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩২ দশমিক ২ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট বড় আকৃতির জাহাজ ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে সরাসরি পায়রাবন্দরে ভিড়তে পারবে।

এদিকে চ্যানেল হস্তান্তর উপলক্ষ্যে এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বন্দরের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন স্কিম পরিচালক কমোডর রাজীব ত্রিপুরা, জান ডে নুল-এর প্রকল্প পরিচালক ইয়াং মনস, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ-সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব। 

সংবাদ সম্মেলনে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, এ বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং প্রকল্পটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প, যা পায়রাবন্দর সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।

বন্দরের এ সক্ষমতার মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছর মে মাসে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে পায়রাবন্দরের প্রথম টার্মিনাল উদ্বোধন করার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বন্দরের রাজস্ব আয় বাড়বে।

চ্যানেলের নাব্য ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হওয়ায় ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে খাদ্যশস্য, সার, আমদানিকৃত গাড়ি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নগরী ও পাশের দেশগুলোতে পরিবহণে খরচ ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে।

পায়রাবন্দর বাংলাদেশ স্বাধীনের পর নির্মিত দেশের প্রথম স্মার্ট বন্দর। এ বন্দর এখন আর সম্ভাবনা নয়, বাস্তবতা। ২০২৩ সালকে তিনি পায়রাবন্দরের বছর বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। 

রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় একটি আধুনিক মাস্টার প্ল্যানের আওতায় এ বন্দরটি ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬,৫০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

আগামীতে বন্দরে প্রথম টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, কনটেইনার টার্মিনাল-১, করটেইনার টার্মিনাল-২, লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল, কোল টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল ইত্যাদি।

ইতোমধ্যে এ বন্দরকে ঘিরে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ও উপযুক্ত বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছেন। 

স্কিম পরিচালক কমোডর রাজীব ত্রিপুরা বলেন, এ ধরনের দীর্ঘ ৭৫ কিলোমিটার চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাস্তবায়নের আগে দীর্ঘ কয়েক বছর স্টাডি ও সমীক্ষা করা হয়েছে।

ওই স্টাডি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিশ্লেষণ করা হয়। পরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করে চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক মানের একটি চ্যানেল ডিজাইন করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়। এ চ্যানেল ব্যবহার করে এখন অনায়াসেই বৃহৎ জাহাজ বন্দরে চলাচল করতে সক্ষম হবে। 

জান ডে নুলের প্রকল্প পরিচালক ইয়াং মনস বলেন, বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের কাজে সরাসরিভাবে যুক্ত হতে পারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।

এ প্রকল্পে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের চ্যানেল সফলভাবে খনন শেষ করে আজ খুবই আনন্দ হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ-সদস্য মহিব্বুর রহমান মুহিব বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষ হওয়ার ফলে পায়রাবন্দর বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠ বন্দরে পরিণত হয়েছে।

এ বন্দরের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন