মাংসের পর চড়েছে মাছের দাম
রোজা ঘিরে বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম আকাশচুম্বী। এখন প্রতিকেজি গরু ৭৫০ টাকা এবং প্রতিকেজি খাসি ১১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যেই অসাধু সিন্ডিকেট বাড়তি মুনাফা করতে ব্রয়লার মুরগির দাম অনেক বাড়িয়েছে। ভোক্তা অধিকারের পদক্ষেপের কারণে দাম কিছুটা কমলেও প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার ওপরে। তাই সাধ থাকলেও মাংস কিনতে পারছেন না অনেক ভোক্তা।
এ কারণে ক্রেতা ঝুঁকেছেন মাছের দিকে। কিন্তু সেখানেও নিস্তার নেই। চাহিদা বাড়ার সুযোগে মাছের দামও কেজিতে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিডজন (১২ পিস) ডিম ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে মাছ-মাংস ও ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে।
দেশের ৮ বিভাগের গ্রাম-শহরের ১৬০০ নিম্নআয়ের পরিবারের ওপর জরিপ করেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। জরিপে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির চাপে খাবারের খরচ মেটাতে মানুষ এখন ব্যাপক কাটছাঁট করে চলছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে।
যেমন ছয় মাস আগেও যেসব পরিবার মাসে চারবার মুরগি খেত, এখন তারা দুবার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্নআয়ের পরিবার ধার করে চলছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। গত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। কিন্তু আয় বাড়েনি।
রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে খুচরা মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রতিকেজি তেলাপিয়া মাছ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা রোজার আগে ১৫০-১৬০ টাকা ছিল। বড় পাঙ্গাশের কেজি ২০০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোট পাঙ্গাশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০; যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা, রুই মাছ ৩২০-৩৬০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৩৮০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৪৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিডজন (১২ পিস) ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ১৪০-১৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নয়াবাজারে মাছ কিনতে আসা মো. নাঈম বলেন, গত বছর রোজায় প্রতিকেজি পাঙ্গাশ মাছ ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এবার রোজার আগে দাম ছিল ১৫০ টাকা। এখন ১৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছ পাঙ্গাশ। মুনফাখোরদের কারসাজিতে এই মাছও এখন বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম বাড়ায় বাজারে নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস বাড়ছে। মাছ-মাংস কিনতে সাধ থাকলেও অনেকের সাধ্য নেই। পণ্যের সংকট না থাকলেও রোজা ঘিরে মূল্য নানা অজুহাতে বাড়ানো হয়েছে। তাই তদারকির আওতায় এনে দাম সহনীয় করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি। সব সময় বিশ্ববাজারকে দোষারোপ করা যায় না। কর কমিয়ে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। মাছ-মাংস ছাড়া কম্প্রোমাইজ ডায়েটে ঢাকায় ৪ জনের পরিবারের খাদ্যের ওপর ব্যয় ৭ হাজার ১৩১ টাকা লাগছে। সেখানে মাছ-মাংস যুক্ত হলে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকায় দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিকদের নিম্নআয়ের মানুষের মিনিমাম আয় এর চেয়ে অনেক কম। তাই বাজারে নজর দিতে হবে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে সংশ্লিষ্টদের অধিদপ্তরে তলব করে বক্তব্য শোনা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আশা করি দাম আরও কমবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অস্বস্তিতে ভোক্তা
মাংসের পর চড়েছে মাছের দাম
রোজা ঘিরে বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম আকাশচুম্বী। এখন প্রতিকেজি গরু ৭৫০ টাকা এবং প্রতিকেজি খাসি ১১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যেই অসাধু সিন্ডিকেট বাড়তি মুনাফা করতে ব্রয়লার মুরগির দাম অনেক বাড়িয়েছে। ভোক্তা অধিকারের পদক্ষেপের কারণে দাম কিছুটা কমলেও প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার ওপরে। তাই সাধ থাকলেও মাংস কিনতে পারছেন না অনেক ভোক্তা।
এ কারণে ক্রেতা ঝুঁকেছেন মাছের দিকে। কিন্তু সেখানেও নিস্তার নেই। চাহিদা বাড়ার সুযোগে মাছের দামও কেজিতে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিডজন (১২ পিস) ডিম ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে মাছ-মাংস ও ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে।
দেশের ৮ বিভাগের গ্রাম-শহরের ১৬০০ নিম্নআয়ের পরিবারের ওপর জরিপ করেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। জরিপে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির চাপে খাবারের খরচ মেটাতে মানুষ এখন ব্যাপক কাটছাঁট করে চলছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে।
যেমন ছয় মাস আগেও যেসব পরিবার মাসে চারবার মুরগি খেত, এখন তারা দুবার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্নআয়ের পরিবার ধার করে চলছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। গত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। কিন্তু আয় বাড়েনি।
রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে খুচরা মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রতিকেজি তেলাপিয়া মাছ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা রোজার আগে ১৫০-১৬০ টাকা ছিল। বড় পাঙ্গাশের কেজি ২০০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোট পাঙ্গাশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০; যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা, রুই মাছ ৩২০-৩৬০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৩৮০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৪৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিডজন (১২ পিস) ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ১৪০-১৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নয়াবাজারে মাছ কিনতে আসা মো. নাঈম বলেন, গত বছর রোজায় প্রতিকেজি পাঙ্গাশ মাছ ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এবার রোজার আগে দাম ছিল ১৫০ টাকা। এখন ১৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছ পাঙ্গাশ। মুনফাখোরদের কারসাজিতে এই মাছও এখন বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম বাড়ায় বাজারে নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস বাড়ছে। মাছ-মাংস কিনতে সাধ থাকলেও অনেকের সাধ্য নেই। পণ্যের সংকট না থাকলেও রোজা ঘিরে মূল্য নানা অজুহাতে বাড়ানো হয়েছে। তাই তদারকির আওতায় এনে দাম সহনীয় করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি। সব সময় বিশ্ববাজারকে দোষারোপ করা যায় না। কর কমিয়ে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। মাছ-মাংস ছাড়া কম্প্রোমাইজ ডায়েটে ঢাকায় ৪ জনের পরিবারের খাদ্যের ওপর ব্যয় ৭ হাজার ১৩১ টাকা লাগছে। সেখানে মাছ-মাংস যুক্ত হলে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকায় দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিকদের নিম্নআয়ের মানুষের মিনিমাম আয় এর চেয়ে অনেক কম। তাই বাজারে নজর দিতে হবে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে সংশ্লিষ্টদের অধিদপ্তরে তলব করে বক্তব্য শোনা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আশা করি দাম আরও কমবে।