কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা
বাবার নামের মিলে জেল খাটছেন কলেজছাত্র
তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
বাবার নামে মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে জেল খাটছেন আল আমিন নামের এক নিরপরাধ কলেজছাত্র। বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার আইনজীবী শিশির মনির আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও রংপুরের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৫ সালে রংপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের আবুজার রহমান (২৮), আলমগীর হোসেন (২৭), নাজির হোসেন (৩২), আবদুল করিম (২৯) ও আমিনুর রহমান (২৯)। তাদের মধ্যে আলমগীর পলাতক। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমগীর গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের মো. হান্নানের ছেলে।
আর কারাগারে থাকা আল আমিন গঙ্গাচড়া উপজেলার হাজিরপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে। তাকে গত ১৮ মার্চ রাতে রংপুরের সিও বাজার মসজিদ ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আল আমিন ২০১৫ সালে ওই ঘটনার সময় স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলেন।
জন্ম সনদ অনুযায়ী আল আমিনের জন্ম ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনি ২০১১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি), ২০১৫ সালে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আদিতমারী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
গত ৩০ মার্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে গ্রেফতার নিরপরাধ আল আমিনকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর রংপুর পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন আল আমিনের ভাই আলী হোসাইন।
আবেদনে আল আমিনের ন্যায়বিচারের জন্য মানবিক সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে ২৮ মে আল আমিনের পক্ষে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত পিবিআইকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে নিরপরাধ আল আমিনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ মে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ও মা লালমনিরহাটে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। এ সময় কিশোরী বাড়িতে একা ছিল। এই সুযোগে আবুজার রহমান সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যায় কিশোরীর বাড়িতে যায় এবং তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের একটি খেতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা। রাতে বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে আবুজারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। প্রায় সাত বছর আদালতে বিচার চলার পর ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান।
বাবার নামের মিলে জেল খাটছেন কলেজছাত্র
কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা
তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
যুগান্তর প্রতিবেদন
০৯ জুন ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাবার নামে মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে জেল খাটছেন আল আমিন নামের এক নিরপরাধ কলেজছাত্র। বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার আইনজীবী শিশির মনির আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও রংপুরের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৫ সালে রংপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের আবুজার রহমান (২৮), আলমগীর হোসেন (২৭), নাজির হোসেন (৩২), আবদুল করিম (২৯) ও আমিনুর রহমান (২৯)। তাদের মধ্যে আলমগীর পলাতক। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমগীর গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের মো. হান্নানের ছেলে।
আর কারাগারে থাকা আল আমিন গঙ্গাচড়া উপজেলার হাজিরপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে। তাকে গত ১৮ মার্চ রাতে রংপুরের সিও বাজার মসজিদ ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আল আমিন ২০১৫ সালে ওই ঘটনার সময় স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলেন।
জন্ম সনদ অনুযায়ী আল আমিনের জন্ম ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনি ২০১১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি), ২০১৫ সালে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আদিতমারী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
গত ৩০ মার্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে গ্রেফতার নিরপরাধ আল আমিনকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর রংপুর পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন আল আমিনের ভাই আলী হোসাইন।
আবেদনে আল আমিনের ন্যায়বিচারের জন্য মানবিক সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে ২৮ মে আল আমিনের পক্ষে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত পিবিআইকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে নিরপরাধ আল আমিনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ মে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ও মা লালমনিরহাটে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। এ সময় কিশোরী বাড়িতে একা ছিল। এই সুযোগে আবুজার রহমান সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যায় কিশোরীর বাড়িতে যায় এবং তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের একটি খেতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা। রাতে বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে আবুজারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। প্রায় সাত বছর আদালতে বিচার চলার পর ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023