বর্তমান সাহিত্যে জীবনের চেয়ে যৌনতার চর্চা বেশি
জুননু রাইন
১৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৫২ সালের ২ অক্টোবরে সিরাজগঞ্জ পৌরসভাধীন চররায়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ শহরেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা বিএল সরকারি স্কুল ও সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে। পিতা নূরুল হুদা, মাতা আজেদা হুদা অনেক আগেই গত হয়েছেন। স্ত্রী শহিদা মিনু। এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক। কলেজে পড়া অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। দায়িত্বশীল পদে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা। দীর্ঘদিন ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ। খুব ছোটবেলা থেকেই নাটক থিয়েটার ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ অসংখ্যক নাটকে সফলতার সঙ্গে অভিনয়। কবিতা লেখা এবং আবৃত্তি করা শখ এবং নেশা। আবৃত্তিতে শিল্পকলা পদকপ্রাপ্ত। প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ : ‘সেই যুবক সেই যৌবন’ ‘স্যালুট নেন রাষ্ট্রপতি’। ‘মহাসাগরের বুকে’ নামে একটি নাটক প্রকাশিত হয়েছে। নানা টানাপোড়েনের মাঝেও সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত আছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : জুননু রাইন
লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন?
খ ম আখতার হোসেন : শ্রম ও সাধনা হলো লেখক হওয়ার পূর্ব শর্ত। এর সঙ্গে প্রয়োজন মেধা ও ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞান। স্থানান্তর হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে বৃহত্তর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য খানিকটা সহায়ক হতে পারে।
সিরাজগঞ্জের সাহিত্যেচর্চা আগের তুলনায় কতটা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়?
: সিরাজগঞ্জ শহর সমৃদ্ধ সাহিত্যচর্চার উত্তরাধিকার বহন করে, যা বর্তমানে প্রায় অনুপস্থিত। কালেভদ্রে দু-একটা ভাঁজপত্রের দেখা মিললেও সাহিত্য নিয়ে তেমন আলোচনা বা সাহিত্য নিয়ে কনো বৈঠক ইদানীং চোখে পড়ে না।
বর্তমানে সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রধান্য পাচ্ছে। কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত?
: বর্তমান সাহিত্যে জীবনের চেয়ে যৌনতার চর্চা হয় বেশি। জীবন ধারণের নানা অনুসঙ্গে ভরা বাস্তবমুখী সাহিত্য এখন খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যবান
: জীবনে এখন ভালোবাসার দারুণ খরা। অথচ জীবন যদি ভালোবাসায় ভরপুর না হয় তাহলে তো তাকে পরিপূর্ণ জীবন বলা যায় না। ভালোবাসাই কেবল মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে। যা কিনা আগামী প্রেমময় পৃথিবী বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের বর্তমান সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান, কতটা বিকৃতির শিকার?
: আমরা তো এখন প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। অথচ বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির ছোঁয়া হলো সঞ্জীবনীর মতো। আর সেটুকু না পেলে জীবন হয় শুষ্ক কৃত্রিম।
স্কুল কলেজে এখন আর আগের মতো বার্ষিক ম্যাগাজিন বের হয় না। এর কারণ এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়?
: উৎসাহী শিক্ষক এবং ছাত্রের অভাবে স্কুল কলেজগুলোতে এখন বার্ষিক ম্যাগাজিন বের হয় না। শিক্ষকের প্রাইভেট ব্যস্ততা আর ছাত্রের ইন্টারনেট প্রীতি ছাত্রছাত্রীদের এমন একটি মহৎ কাজ থেকে বঞ্চিত রেখেছে। নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক আর উৎসাহী ছাত্রের মিলিত প্রচেষ্টাই কেবল এ সংকট কাটাতে পারে। এখানে অর্থ কোনো বাধা নয়।
প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যের জন্য কতটা ভালো কতটা মন্দ?
: বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির বিশ্ব। সুতরাং প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে এখন আর কোনো কিছুই কল্পনা করা যায় না। প্রযুক্তিকে আশ্রয় করেই সবকিছু বেড়ে উঠছে, এগিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। ভালো মন্দ বিচারে না গিয়ে সবকিছুকে সময়ের মাপকাঠিতে ফেলতে হবে। সময় এখন প্রযুক্তিনির্ভর। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়। সাহিত্যও এর থেকে আলাদা কিছু নয়।
বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন? কেমন হওয়া উচিত?
: বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা অনেকটাই সামন্ততান্ত্রিক। ওপরে যে লেবাসেই থাকুক না কেন এর সঙ্গে যে জণগণের সম্পৃক্ততা নেই তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বর্তমান সাহিত্যে জীবনের চেয়ে যৌনতার চর্চা বেশি
১৯৫২ সালের ২ অক্টোবরে সিরাজগঞ্জ পৌরসভাধীন চররায়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ শহরেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা বিএল সরকারি স্কুল ও সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে। পিতা নূরুল হুদা, মাতা আজেদা হুদা অনেক আগেই গত হয়েছেন। স্ত্রী শহিদা মিনু। এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক। কলেজে পড়া অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। দায়িত্বশীল পদে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা। দীর্ঘদিন ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ। খুব ছোটবেলা থেকেই নাটক থিয়েটার ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ অসংখ্যক নাটকে সফলতার সঙ্গে অভিনয়। কবিতা লেখা এবং আবৃত্তি করা শখ এবং নেশা। আবৃত্তিতে শিল্পকলা পদকপ্রাপ্ত। প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ : ‘সেই যুবক সেই যৌবন’ ‘স্যালুট নেন রাষ্ট্রপতি’। ‘মহাসাগরের বুকে’ নামে একটি নাটক প্রকাশিত হয়েছে। নানা টানাপোড়েনের মাঝেও সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত আছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : জুননু রাইন
লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন?
খ ম আখতার হোসেন : শ্রম ও সাধনা হলো লেখক হওয়ার পূর্ব শর্ত। এর সঙ্গে প্রয়োজন মেধা ও ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞান। স্থানান্তর হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে বৃহত্তর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য খানিকটা সহায়ক হতে পারে।
সিরাজগঞ্জের সাহিত্যেচর্চা আগের তুলনায় কতটা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়?
: সিরাজগঞ্জ শহর সমৃদ্ধ সাহিত্যচর্চার উত্তরাধিকার বহন করে, যা বর্তমানে প্রায় অনুপস্থিত। কালেভদ্রে দু-একটা ভাঁজপত্রের দেখা মিললেও সাহিত্য নিয়ে তেমন আলোচনা বা সাহিত্য নিয়ে কনো বৈঠক ইদানীং চোখে পড়ে না।
বর্তমানে সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রধান্য পাচ্ছে। কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত?
: বর্তমান সাহিত্যে জীবনের চেয়ে যৌনতার চর্চা হয় বেশি। জীবন ধারণের নানা অনুসঙ্গে ভরা বাস্তবমুখী সাহিত্য এখন খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যবান
: জীবনে এখন ভালোবাসার দারুণ খরা। অথচ জীবন যদি ভালোবাসায় ভরপুর না হয় তাহলে তো তাকে পরিপূর্ণ জীবন বলা যায় না। ভালোবাসাই কেবল মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে। যা কিনা আগামী প্রেমময় পৃথিবী বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের বর্তমান সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান, কতটা বিকৃতির শিকার?
: আমরা তো এখন প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। অথচ বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির ছোঁয়া হলো সঞ্জীবনীর মতো। আর সেটুকু না পেলে জীবন হয় শুষ্ক কৃত্রিম।
স্কুল কলেজে এখন আর আগের মতো বার্ষিক ম্যাগাজিন বের হয় না। এর কারণ এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়?
: উৎসাহী শিক্ষক এবং ছাত্রের অভাবে স্কুল কলেজগুলোতে এখন বার্ষিক ম্যাগাজিন বের হয় না। শিক্ষকের প্রাইভেট ব্যস্ততা আর ছাত্রের ইন্টারনেট প্রীতি ছাত্রছাত্রীদের এমন একটি মহৎ কাজ থেকে বঞ্চিত রেখেছে। নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক আর উৎসাহী ছাত্রের মিলিত প্রচেষ্টাই কেবল এ সংকট কাটাতে পারে। এখানে অর্থ কোনো বাধা নয়।
প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যের জন্য কতটা ভালো কতটা মন্দ?
: বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির বিশ্ব। সুতরাং প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে এখন আর কোনো কিছুই কল্পনা করা যায় না। প্রযুক্তিকে আশ্রয় করেই সবকিছু বেড়ে উঠছে, এগিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। ভালো মন্দ বিচারে না গিয়ে সবকিছুকে সময়ের মাপকাঠিতে ফেলতে হবে। সময় এখন প্রযুক্তিনির্ভর। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়। সাহিত্যও এর থেকে আলাদা কিছু নয়।
বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন? কেমন হওয়া উচিত?
: বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা অনেকটাই সামন্ততান্ত্রিক। ওপরে যে লেবাসেই থাকুক না কেন এর সঙ্গে যে জণগণের সম্পৃক্ততা নেই তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।