ঝিনাইদহ জেলার সাহিত্য নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলা সাহিত্যে ঝিনাইদহ
প্রান্তছোঁয়া আকাশ
গড়াই, কুমার, নবগঙ্গা, বেগবতী, চিত্রা, ভৈরব, কোদলা, কপোতাক্ষ নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা প্রাচীন জনপদের নাম ঝিনাইদহ। চারদিক সবুজ। ফসলে সাজানো মাঠ যেন আবহমান বাংলার রূপ ধরে রেখেছে। হিজল ফুল, পলাশ ফুল, রজনীগন্ধা, গাঁদা ফুলের সুবাসে জেগে ওঠে মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা কবিত্ব। মরমি কবি পাগলাকানাই, বাউল সম্রাট লালন সাঁই, পাঞ্জু শাহ, দুদু সাঁই, অমুল্য শাহ, খোরশেদ বয়াতি, আরোজ আলী বয়াতি জন্ম নিয়েছেন এখানে। বাঘা যতীন। যার প্রকৃত নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। পিতার বাড়ি বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার সাধুহাটি রিশখালী গ্রামে। ইংরেজ শোষণের আমলে এক অকুতভয় বীর ছিলেন তিনি। কৃষিজ সম্পদে ভরপুর এ জনপদ বারো আউলিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট, গাজী-কালু চম্পাবতীর উপাখ্যান ধন্য, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, কবি গোলাম মোস্তফা, কবি শামসুদ্দিন আহমেদ, কেবি আল মামুন, মোহাম্মদ আবুবকর, মুহা. মুতাচ্ছিম বিল্লাহ মিন্টু, সুমন শিকদার, এম শাহীদুজ্জামান মিঞা, মিজানুর রহমান তোতাসহ অসংখ্য কবি সাহিত্যিক গুণিজন শিল্পী, সাংবাদিক জন্ম নিয়েছেন এ জনপদে। আজো গ্রামে গ্রামে অসংখ্য বাউল ও সাধকরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নীলকুঠি, জমিদারবাড়ি, মুসলিম ও হিন্দু সভ্যতার নিদর্শনগুলো। নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো ছলিম চৌধুরী তথা মিয়ার দালানের গায়ে খোদাই করা নান্দনিক ছন্দের কবিতাখানি স্ত্রী প্রেমের শ্রেষ্ঠ উপহার। গণিতবিদ কেপি বসু, বিপ্লবী ইলা মিত্রের পুণ্যভূমিও এ ঝিনাইদহ।
সুদূর অতীত থেকে এখানকার সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য। তবে লোকসাহিত্যের পাশাপাশি নাগরিক সাহিত্য সেভাবে বিকশিত হয়নি। জাতীয়ভাবে যাদের নাম স্মরণ করা হয় তারা মূলত এখানকার ভূমিপুত্র। যেমন কবি গোলাম মোস্তাফা, ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক খোন্দকার রিয়াজুল হক, চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, রবিউল হুসাইনের নাম উল্লেখ করার মতো। আরও রয়েছেন গৌরি কিশোর ঘোষ, জামাল নজরুল ইসলাম (বিজ্ঞানী), শামসুদ্দীন আহমেদ, মহসিন শস্ত্রপাণি প্রমুখ। জন্মেছেন এখানে। বিকশিত হয়েছেন ঢাকা কিংবা কলকাতায়। সর্বশ্রেষ্ঠ লোক-কবি লালন সাঁই। তার ভাব-গীতির সুর-লহরী অমিয় সুধা বর্ষণ করে চলেছে আজো। বাংলার প্রাণের কবি, মানুষ কবি, দার্শনিক কবি, মরমি কবি তাপস কবি লালন শুধু বাংলার নন, সারা বিশ্বে তার কবি প্রতিভা জাতি ধর্ম দেশ কাল ও ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করে মানুষের শাশ্বত রূপরেখা এঁকে দিয়েছেন। এ লালনের জন্ম তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহাকুমার হরিণাকুণ্ডু থানার অন্তর্গত হরিশপুর গ্রামে। এ গ্রামের অবস্থান কুষ্টিয়া জেলার সীমানা থেকে মাত্র এক মাইল উত্তর-পূর্বকোণে। হরিশপুর শুধু লালনের জন্মভূমিই নয়, এ গ্রামে জন্মেছেন পাঞ্জু শাহ, শামসউদ্দীন খোন্দকার, জহরদ্দী শাহ, দুদ্দু শাহসহ অনেকে। মদন দাস গোস্বামী, গোপাল দাস ঠাকুর, বৈষ্ণব বাউল সাধক পাঞ্জু শাহর অনুজ ওছিম শাহ, ফকির মাহমুদ বিশ্বাসসহ অসংখ্য সুফি দরবেশদের পদচিহ্ন রয়েছে এ জনপদে। বেড়বাড়ি গ্রামে কবি পাগলা কানাইয়ের জন্ম। সব মিলিয়ে সৃষ্টিধর্মী লোক কবিদের পুণ্যভূমিও বলা চলে ঝিনাইদহ। দুদ্দু সাঁইর রচনাশৈলী অত্যন্ত উঁচুমানের ছিল। তার জীবন ও কর্মের ওপর গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। দেশে বিদেশে দুদ্দু সাঁইর ওপর একাধিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।
ধর্ম মানুষকে আলাদা করে দিতে পারে না এবং দেয় না। সেটি প্রমাণ করেছেন কবি খান্দকার বজলু সাঁই। তিনিও জন্মেছেন এ জেলার হরিশপুর গ্রামে। ১৯১৪ সালে জন্ম নেওয়া বজলু সাঁই বেঁচে ছিলেন ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। লিখেছেন শত শত গান। বলে রাখা ভালো যে, সিরাজ সাঁইয়ের মাজার ঝিনাইদহের হরিশপুরে। লালন সাঁইয়ের মাজার কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে। পশ্চিমবাংলার গাঁ ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদের মানুষের জীবনযাত্রায় অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। এখানে কবি সাহিত্যিক, লেখক শিল্পীর আলাদা ভাবসত্তা লক্ষ্যণীয়।
এ অঞ্চলে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে ৭১ পরবর্তী চেতনার আঁচড় থাকলেও আঁকড়ে ধরেননি কেউ। সৃষ্টি হয়নি উল্লেখ করার মতো নতুন কিছু। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল সারা দেশের মধ্যে প্রথম সশস্ত্র সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছে ঝিনাইদহের বিষয়খালীতে। শৈলকুপায় একাধিক স্থানে যুদ্ধের চিহ্ন আজো রয়ে গেছে। গণকবর, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হাতের নাগালে পাওয়ার পরও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলের লেখকদের মনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। খুব কম সংখ্যক কবিতা গানে কিংবা নাটকে মুক্তিযুদ্ধে অত্র এলাকার সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। যা হয়েছে তা সাহিত্যচর্চার হলেও উল্লেখ করার মতো হয়েছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। তবে ষাটের দশক থেকে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নজির রয়েছে। চিরদিনের জন্য চলে গেছেন কিংবদন্তি সাংবাদিক অ্যাডভোকেট কালীকিংকর মন্টু, অ্যাডভোকেট এমএ আনসারী মন্টু, মিজানুর রহমান তোতা, নুরুজ্জামান মন্টু, কাউসার আলী, মিহির গোস্বামী, অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ সাহসহ অনেকে। এরা ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ঢের লেখালেখি করেছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রকাশ করেছেন সংবাদপত্র। ‘দিশারী’ নামের একটি পত্রিকা এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো। দৈনিক নবগঙ্গা নামের অন্য একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন মরহুম এমএ আনসারী। ফাতেমা আরা চায়নার সম্পাদনায় আজো প্রকাশিত হচ্ছে সাপ্তাহিক নির্বাণ। মোঃ শহীদুল ইসলামের প্রকাশনায় ‘দৈনিক নব চিত্র’ কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
ভিন্নধর্মী একজন লেখক ছিলেন কেব আল মামুন। পেশায় বিজ্ঞান শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষা সংস্কৃতির শিহরণ জাগানো মানুষ ছিলেন তিনি। জেলা শহরে সাহিত্য সংস্কৃতিবিষয়ক যে কোনো আয়োজনে থাকতেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীমের সম্পাদনায় বিজ্ঞান সাময়িকীর অন্যতম লেখক ছিলেন কেবি আল মামুন। ২০০২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। তার নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে এখানে গঠিত হয়েছিল উদিতি সাহিত্য সংসদ এবং এ সংগঠনের নামে ‘উদিতি’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশও করতেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি ‘দিপীকা’ নামে একটি বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন। কেবি আল মামুনের অগ্রন্থিত লেখা নিয়ে সুমন শিকদারের গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় বেগবতী প্রকাশনী একটি বই প্রকাশ করেছেন। ‘স্বকাল’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকা এবং জিয়ারুল হোসেনের সম্পাদনায় ‘কিংশুক সাহিত্য পত্রিকা’ বের হচ্ছে কোটচাঁদপুর উপজেলা শহর থেকে। মহেশপুর আবৃতি সংসদ ‘সাকো’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করে থাকে।
মহেশপুরে কালুখালী গ্রামে মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগার ২০০১ সালে এমএ টুটুল নামের এক তরুণ গড়ে তোলেন। সেখানে রয়েছে ৬ হাজারের মতো বই। শৈলকুপার অজপাড়া গাঁয়ে কাঁচেরকোল গ্রামে এনএম খান লাইব্রেরি ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোটচাঁদপুর পৌর সাধারণ পাঠাগার ১৯০৯ সালে স্থাপিত। সাহিত্য-গবেষণার হাজারো সমৃদ্ধ বইয়ের সমাহার এখানে। ঝিনাইদহ শহরের পাবলিক লাইব্রেরি ১৯১৪ সালে গড়ে ওঠে। এ ছাড়া শহরের বাজারপাড়া এলাকায় (পুরাতন জামরুল তলা) রয়েছে সরকারি গ্রন্থাগার। ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের দাপটে দিনে দিনে লাইব্রেরিগুলোর হাল আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এক সময় কালীগঞ্জ মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের (বর্তমানে সরকারি) ইংরেজির অধ্যাপক মরহুম কাজী বদরুল আলমের তত্ত্বাবধানে ৯০ দশকে ‘সাপ্তহিক নির্বাণ’ সাহিত্য আসর, সাংবাদিক শেখ মিজানুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘চলন্তিকা সাহিত্য আসর’ ও জেলা সাহিত্য পরিষদ আলাদা আলাদাভাবে সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছে। দেড় যুগ আগে ‘যুগান্তর স্বজন সমাবেশ’ অধুনিক ধারার পাঠচক্র চালু করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এনএম শাহজালাল ও অশোক কুমারের নেতৃত্বে চলছিল পাঠচক্রটি। এখন সেটি স্থবির হয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্য কোথাও পাঠচক্র হয় বা হয়ে থাকে এমন খবর নেই। তবে সাহিত্য ও গোবেষণাধর্মী প্রকাশনা ‘বেগবতী’ ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। নামি দামি কবি সাহিত্যিকদের লেখায় সমৃদ্ধ ছিল ওই সংখ্যাগুলো। অবশ্য ইতোপূর্বে ‘বেগবতী’ বেশ কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করেছে। যার মধ্যে দেশভাগের অন্তরদহন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বাউল সংখ্যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ‘বেগবতী’র আয়োজনে ‘মঙ্গলসভা’ নামে একটি সাহিত্য-গবেষণাবিষয়ক আলোচনা-আড্ডা স্থানীয় সাহিত্যিক-পাঠকদের মাঝে চঞ্চলতা সৃষ্টি করেছে।
এখানে অবস্থানকারী কবি, সাহিত্যিক, গবেষকদের মধ্যে রয়েছেন, কবি অনিরুদ্ধ রায়হান, অতীন অভীক, অঞ্জন মেহেদী, আমিনুর রহমান, আরেফিন অনু, আক্তারুজ্জামান রকিব, উত্তম চক্রবর্তী, উপায়ন আনাম, এম তৌহিদুজ্জামান ডাবলু, এটিএম খায়রুল আনাম, এমদাদ শুভ্র, গুলজার হোসেন গরিব, চঞ্চল শাহরিয়ার, টিপু সুলতান, তপন গাঙ্গুলী, তপন রায়, তপু রায়হান, দীপক সাহা, দুলাল মুখার্জি, নাসরিন নবী, নয়ন তালুকদার, নিখিল পাল, ননী গোপাল বিশ্বাস, নির্মলেন্দু পোদ্দার, নয়ন বিশ্বাস, পথিক শহিদুল, পারভিন শশী, প্রদীপ ব্যানার্জী, প্রবর রিপন, ফিরোজ খান নুন, বাপ্পি জোয়ার্দার, বি এম রেজাউল করিম, মনিকা আইচ, মনোয়ার হোসেন মণি, মশিয়ার রহমান, মিতুল সাইফ, মিঠু হাফিজ, আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ আবুবকর, মো. জিয়ারুল হোসেন, মো. আমিনুর ইসলাম, মোসলেম উদ্দিন, মৃন্ময় মনির, যাকির যাপন, রণক মুহাম্মদ রফিক, রণবীর শের, শাহরিয়ার রুদ্র, শামীম নওরোজ, শাহনেওয়াজ মিঠু, শাজান শীলন, শিশির আজম, শেখ আলাউদ্দিন, শেখ লিপি আহমেদ, শেখর শরীফ, শেলী রহমান, শ্যামসুন্দর কুণ্ডু, শ্যামলী কর্মকার, সামসুজ্জামান লাবলু, সানোয়ার শান্তি, সুমন শিকদার, সুনিতা শর্মা। এরা নিয়মিত লিখছেন। সাহিত্য ভান্ডার ভরে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
এখন করোনার প্রভাবে জীবন মানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। এরপরও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা তুলে ধরার মতো। সংগঠনগুলো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তার ভেতরে রয়েছে গণশিল্পী সংস্থা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ, বিহঙ্গ সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র, জাগরণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠি, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, অংকুর নাট্য একাডেমি, মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, কাঞ্চনপুর নাট্য গোষ্ঠী, চারুগৃহ থিয়েটার, নৃত্যালয় একাডেমি, কথন সাংস্কৃতিক সংসদ-কসাস, জেলা বাউল সমিতি, মোহনা সাংস্কৃতিক একাডেমি, শৈলকুপার কুমার নাট্যদল, গাড়াগঞ্জ থিয়েটার, কোটচাঁদপুরে মিতালী সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ, মহেশপুরে বনলতা নাট্য সংসদ, গণশিল্পী সংস্থা কালীগঞ্জ শাখা, হরিণাকুণ্ডুতে লালন একাডেমি (হরিশপুর) প্রভৃতি।
বিভিন্ন সংকটে, আনন্দ উদযাপনে সংস্কৃতি কর্মীরা যেমন গান লিখেছেন, তেমনি রচনা করেছেন নাটক। বছরের নানা সময়ে এবং জাতীয় দিবসগুলোতে তাদের শৈল্পিক সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলো দর্শকদের মন কাড়ে। এ কথা বলা যায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে সাহিত্যচর্চা অগ্রসরমাণ। সেখানে নবীন-প্রবীণের সমাহার রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও লেখকদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হবে, এমন আশা করাই যায়।
বাংলা সাহিত্যে ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ জেলার সাহিত্য নিয়ে বিশেষ আয়োজন
প্রান্তছোঁয়া আকাশ
মিজানুর রহমান
২০ মে ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গড়াই, কুমার, নবগঙ্গা, বেগবতী, চিত্রা, ভৈরব, কোদলা, কপোতাক্ষ নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা প্রাচীন জনপদের নাম ঝিনাইদহ। চারদিক সবুজ। ফসলে সাজানো মাঠ যেন আবহমান বাংলার রূপ ধরে রেখেছে। হিজল ফুল, পলাশ ফুল, রজনীগন্ধা, গাঁদা ফুলের সুবাসে জেগে ওঠে মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা কবিত্ব। মরমি কবি পাগলাকানাই, বাউল সম্রাট লালন সাঁই, পাঞ্জু শাহ, দুদু সাঁই, অমুল্য শাহ, খোরশেদ বয়াতি, আরোজ আলী বয়াতি জন্ম নিয়েছেন এখানে। বাঘা যতীন। যার প্রকৃত নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। পিতার বাড়ি বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার সাধুহাটি রিশখালী গ্রামে। ইংরেজ শোষণের আমলে এক অকুতভয় বীর ছিলেন তিনি। কৃষিজ সম্পদে ভরপুর এ জনপদ বারো আউলিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট, গাজী-কালু চম্পাবতীর উপাখ্যান ধন্য, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, কবি গোলাম মোস্তফা, কবি শামসুদ্দিন আহমেদ, কেবি আল মামুন, মোহাম্মদ আবুবকর, মুহা. মুতাচ্ছিম বিল্লাহ মিন্টু, সুমন শিকদার, এম শাহীদুজ্জামান মিঞা, মিজানুর রহমান তোতাসহ অসংখ্য কবি সাহিত্যিক গুণিজন শিল্পী, সাংবাদিক জন্ম নিয়েছেন এ জনপদে। আজো গ্রামে গ্রামে অসংখ্য বাউল ও সাধকরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নীলকুঠি, জমিদারবাড়ি, মুসলিম ও হিন্দু সভ্যতার নিদর্শনগুলো। নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো ছলিম চৌধুরী তথা মিয়ার দালানের গায়ে খোদাই করা নান্দনিক ছন্দের কবিতাখানি স্ত্রী প্রেমের শ্রেষ্ঠ উপহার। গণিতবিদ কেপি বসু, বিপ্লবী ইলা মিত্রের পুণ্যভূমিও এ ঝিনাইদহ।
সুদূর অতীত থেকে এখানকার সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য। তবে লোকসাহিত্যের পাশাপাশি নাগরিক সাহিত্য সেভাবে বিকশিত হয়নি। জাতীয়ভাবে যাদের নাম স্মরণ করা হয় তারা মূলত এখানকার ভূমিপুত্র। যেমন কবি গোলাম মোস্তাফা, ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক খোন্দকার রিয়াজুল হক, চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, রবিউল হুসাইনের নাম উল্লেখ করার মতো। আরও রয়েছেন গৌরি কিশোর ঘোষ, জামাল নজরুল ইসলাম (বিজ্ঞানী), শামসুদ্দীন আহমেদ, মহসিন শস্ত্রপাণি প্রমুখ। জন্মেছেন এখানে। বিকশিত হয়েছেন ঢাকা কিংবা কলকাতায়। সর্বশ্রেষ্ঠ লোক-কবি লালন সাঁই। তার ভাব-গীতির সুর-লহরী অমিয় সুধা বর্ষণ করে চলেছে আজো। বাংলার প্রাণের কবি, মানুষ কবি, দার্শনিক কবি, মরমি কবি তাপস কবি লালন শুধু বাংলার নন, সারা বিশ্বে তার কবি প্রতিভা জাতি ধর্ম দেশ কাল ও ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করে মানুষের শাশ্বত রূপরেখা এঁকে দিয়েছেন। এ লালনের জন্ম তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহাকুমার হরিণাকুণ্ডু থানার অন্তর্গত হরিশপুর গ্রামে। এ গ্রামের অবস্থান কুষ্টিয়া জেলার সীমানা থেকে মাত্র এক মাইল উত্তর-পূর্বকোণে। হরিশপুর শুধু লালনের জন্মভূমিই নয়, এ গ্রামে জন্মেছেন পাঞ্জু শাহ, শামসউদ্দীন খোন্দকার, জহরদ্দী শাহ, দুদ্দু শাহসহ অনেকে। মদন দাস গোস্বামী, গোপাল দাস ঠাকুর, বৈষ্ণব বাউল সাধক পাঞ্জু শাহর অনুজ ওছিম শাহ, ফকির মাহমুদ বিশ্বাসসহ অসংখ্য সুফি দরবেশদের পদচিহ্ন রয়েছে এ জনপদে। বেড়বাড়ি গ্রামে কবি পাগলা কানাইয়ের জন্ম। সব মিলিয়ে সৃষ্টিধর্মী লোক কবিদের পুণ্যভূমিও বলা চলে ঝিনাইদহ। দুদ্দু সাঁইর রচনাশৈলী অত্যন্ত উঁচুমানের ছিল। তার জীবন ও কর্মের ওপর গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। দেশে বিদেশে দুদ্দু সাঁইর ওপর একাধিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।
ধর্ম মানুষকে আলাদা করে দিতে পারে না এবং দেয় না। সেটি প্রমাণ করেছেন কবি খান্দকার বজলু সাঁই। তিনিও জন্মেছেন এ জেলার হরিশপুর গ্রামে। ১৯১৪ সালে জন্ম নেওয়া বজলু সাঁই বেঁচে ছিলেন ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। লিখেছেন শত শত গান। বলে রাখা ভালো যে, সিরাজ সাঁইয়ের মাজার ঝিনাইদহের হরিশপুরে। লালন সাঁইয়ের মাজার কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে। পশ্চিমবাংলার গাঁ ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদের মানুষের জীবনযাত্রায় অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। এখানে কবি সাহিত্যিক, লেখক শিল্পীর আলাদা ভাবসত্তা লক্ষ্যণীয়।
এ অঞ্চলে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে ৭১ পরবর্তী চেতনার আঁচড় থাকলেও আঁকড়ে ধরেননি কেউ। সৃষ্টি হয়নি উল্লেখ করার মতো নতুন কিছু। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল সারা দেশের মধ্যে প্রথম সশস্ত্র সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছে ঝিনাইদহের বিষয়খালীতে। শৈলকুপায় একাধিক স্থানে যুদ্ধের চিহ্ন আজো রয়ে গেছে। গণকবর, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হাতের নাগালে পাওয়ার পরও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলের লেখকদের মনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। খুব কম সংখ্যক কবিতা গানে কিংবা নাটকে মুক্তিযুদ্ধে অত্র এলাকার সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। যা হয়েছে তা সাহিত্যচর্চার হলেও উল্লেখ করার মতো হয়েছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। তবে ষাটের দশক থেকে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নজির রয়েছে। চিরদিনের জন্য চলে গেছেন কিংবদন্তি সাংবাদিক অ্যাডভোকেট কালীকিংকর মন্টু, অ্যাডভোকেট এমএ আনসারী মন্টু, মিজানুর রহমান তোতা, নুরুজ্জামান মন্টু, কাউসার আলী, মিহির গোস্বামী, অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ সাহসহ অনেকে। এরা ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ঢের লেখালেখি করেছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রকাশ করেছেন সংবাদপত্র। ‘দিশারী’ নামের একটি পত্রিকা এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো। দৈনিক নবগঙ্গা নামের অন্য একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন মরহুম এমএ আনসারী। ফাতেমা আরা চায়নার সম্পাদনায় আজো প্রকাশিত হচ্ছে সাপ্তাহিক নির্বাণ। মোঃ শহীদুল ইসলামের প্রকাশনায় ‘দৈনিক নব চিত্র’ কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
ভিন্নধর্মী একজন লেখক ছিলেন কেব আল মামুন। পেশায় বিজ্ঞান শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষা সংস্কৃতির শিহরণ জাগানো মানুষ ছিলেন তিনি। জেলা শহরে সাহিত্য সংস্কৃতিবিষয়ক যে কোনো আয়োজনে থাকতেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীমের সম্পাদনায় বিজ্ঞান সাময়িকীর অন্যতম লেখক ছিলেন কেবি আল মামুন। ২০০২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। তার নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে এখানে গঠিত হয়েছিল উদিতি সাহিত্য সংসদ এবং এ সংগঠনের নামে ‘উদিতি’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশও করতেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি ‘দিপীকা’ নামে একটি বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন। কেবি আল মামুনের অগ্রন্থিত লেখা নিয়ে সুমন শিকদারের গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় বেগবতী প্রকাশনী একটি বই প্রকাশ করেছেন। ‘স্বকাল’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকা এবং জিয়ারুল হোসেনের সম্পাদনায় ‘কিংশুক সাহিত্য পত্রিকা’ বের হচ্ছে কোটচাঁদপুর উপজেলা শহর থেকে। মহেশপুর আবৃতি সংসদ ‘সাকো’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করে থাকে।
মহেশপুরে কালুখালী গ্রামে মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগার ২০০১ সালে এমএ টুটুল নামের এক তরুণ গড়ে তোলেন। সেখানে রয়েছে ৬ হাজারের মতো বই। শৈলকুপার অজপাড়া গাঁয়ে কাঁচেরকোল গ্রামে এনএম খান লাইব্রেরি ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোটচাঁদপুর পৌর সাধারণ পাঠাগার ১৯০৯ সালে স্থাপিত। সাহিত্য-গবেষণার হাজারো সমৃদ্ধ বইয়ের সমাহার এখানে। ঝিনাইদহ শহরের পাবলিক লাইব্রেরি ১৯১৪ সালে গড়ে ওঠে। এ ছাড়া শহরের বাজারপাড়া এলাকায় (পুরাতন জামরুল তলা) রয়েছে সরকারি গ্রন্থাগার। ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের দাপটে দিনে দিনে লাইব্রেরিগুলোর হাল আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এক সময় কালীগঞ্জ মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের (বর্তমানে সরকারি) ইংরেজির অধ্যাপক মরহুম কাজী বদরুল আলমের তত্ত্বাবধানে ৯০ দশকে ‘সাপ্তহিক নির্বাণ’ সাহিত্য আসর, সাংবাদিক শেখ মিজানুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘চলন্তিকা সাহিত্য আসর’ ও জেলা সাহিত্য পরিষদ আলাদা আলাদাভাবে সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছে। দেড় যুগ আগে ‘যুগান্তর স্বজন সমাবেশ’ অধুনিক ধারার পাঠচক্র চালু করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এনএম শাহজালাল ও অশোক কুমারের নেতৃত্বে চলছিল পাঠচক্রটি। এখন সেটি স্থবির হয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্য কোথাও পাঠচক্র হয় বা হয়ে থাকে এমন খবর নেই। তবে সাহিত্য ও গোবেষণাধর্মী প্রকাশনা ‘বেগবতী’ ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। নামি দামি কবি সাহিত্যিকদের লেখায় সমৃদ্ধ ছিল ওই সংখ্যাগুলো। অবশ্য ইতোপূর্বে ‘বেগবতী’ বেশ কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করেছে। যার মধ্যে দেশভাগের অন্তরদহন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বাউল সংখ্যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ‘বেগবতী’র আয়োজনে ‘মঙ্গলসভা’ নামে একটি সাহিত্য-গবেষণাবিষয়ক আলোচনা-আড্ডা স্থানীয় সাহিত্যিক-পাঠকদের মাঝে চঞ্চলতা সৃষ্টি করেছে।
এখানে অবস্থানকারী কবি, সাহিত্যিক, গবেষকদের মধ্যে রয়েছেন, কবি অনিরুদ্ধ রায়হান, অতীন অভীক, অঞ্জন মেহেদী, আমিনুর রহমান, আরেফিন অনু, আক্তারুজ্জামান রকিব, উত্তম চক্রবর্তী, উপায়ন আনাম, এম তৌহিদুজ্জামান ডাবলু, এটিএম খায়রুল আনাম, এমদাদ শুভ্র, গুলজার হোসেন গরিব, চঞ্চল শাহরিয়ার, টিপু সুলতান, তপন গাঙ্গুলী, তপন রায়, তপু রায়হান, দীপক সাহা, দুলাল মুখার্জি, নাসরিন নবী, নয়ন তালুকদার, নিখিল পাল, ননী গোপাল বিশ্বাস, নির্মলেন্দু পোদ্দার, নয়ন বিশ্বাস, পথিক শহিদুল, পারভিন শশী, প্রদীপ ব্যানার্জী, প্রবর রিপন, ফিরোজ খান নুন, বাপ্পি জোয়ার্দার, বি এম রেজাউল করিম, মনিকা আইচ, মনোয়ার হোসেন মণি, মশিয়ার রহমান, মিতুল সাইফ, মিঠু হাফিজ, আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ আবুবকর, মো. জিয়ারুল হোসেন, মো. আমিনুর ইসলাম, মোসলেম উদ্দিন, মৃন্ময় মনির, যাকির যাপন, রণক মুহাম্মদ রফিক, রণবীর শের, শাহরিয়ার রুদ্র, শামীম নওরোজ, শাহনেওয়াজ মিঠু, শাজান শীলন, শিশির আজম, শেখ আলাউদ্দিন, শেখ লিপি আহমেদ, শেখর শরীফ, শেলী রহমান, শ্যামসুন্দর কুণ্ডু, শ্যামলী কর্মকার, সামসুজ্জামান লাবলু, সানোয়ার শান্তি, সুমন শিকদার, সুনিতা শর্মা। এরা নিয়মিত লিখছেন। সাহিত্য ভান্ডার ভরে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
এখন করোনার প্রভাবে জীবন মানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। এরপরও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা তুলে ধরার মতো। সংগঠনগুলো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তার ভেতরে রয়েছে গণশিল্পী সংস্থা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ, বিহঙ্গ সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র, জাগরণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠি, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, অংকুর নাট্য একাডেমি, মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, কাঞ্চনপুর নাট্য গোষ্ঠী, চারুগৃহ থিয়েটার, নৃত্যালয় একাডেমি, কথন সাংস্কৃতিক সংসদ-কসাস, জেলা বাউল সমিতি, মোহনা সাংস্কৃতিক একাডেমি, শৈলকুপার কুমার নাট্যদল, গাড়াগঞ্জ থিয়েটার, কোটচাঁদপুরে মিতালী সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ, মহেশপুরে বনলতা নাট্য সংসদ, গণশিল্পী সংস্থা কালীগঞ্জ শাখা, হরিণাকুণ্ডুতে লালন একাডেমি (হরিশপুর) প্রভৃতি।
বিভিন্ন সংকটে, আনন্দ উদযাপনে সংস্কৃতি কর্মীরা যেমন গান লিখেছেন, তেমনি রচনা করেছেন নাটক। বছরের নানা সময়ে এবং জাতীয় দিবসগুলোতে তাদের শৈল্পিক সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলো দর্শকদের মন কাড়ে। এ কথা বলা যায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে সাহিত্যচর্চা অগ্রসরমাণ। সেখানে নবীন-প্রবীণের সমাহার রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও লেখকদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হবে, এমন আশা করাই যায়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023