প্রয়োজন আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

 ঐশি আলম পৃথ্বি 
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের শহরগুলোয়, বিশেষ করে রাজধানীতে যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা পচনশীল-অপচনশীল আবর্জনা একদিকে যেমন পরিবেশ নষ্ট করছে, অন্যদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এগুলো পড়ে থাকে কলোনি, অলিগলি, পার্ক, পতিত জমিতে, এমনকি প্রধান সড়কের পাশেও।

রাজধানীতে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় সেকেলে পদ্ধতিতে। বিনগুলোয় প্লাস্টিক, শাকসবজি-ফলমূল বা ডিমের খোসা, বাসাবাড়ি বা হোটেলের বিভিন্ন খাবার, পলিব্যাগ, কাগজপত্র, ফোম-সবকিছু একসঙ্গে ফেলে রাখা হয়। সংগৃহীত বর্জ্যরে ৭০ শতাংশ পচনশীল এবং বাকি ৩০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। কিন্তু পচনশীল-অপচনশীল বর্জ্য একসঙ্গে থাকায় তা যতটুকু পুনর্ব্যবহার করা যেত, তার পুরোটা কাজে লাগানো সম্ভব হয় না। আবর্জনাগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয় খোলা ভ্যানে পুরোনো পদ্ধতিতে। ফলে তা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভাগাড়ে নেওয়া পর্যন্ত দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। উন্নত দেশগুলোয় আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করা হয় রাতে, যাতে পথচারীরা অস্বস্তির শিকার না হন। কিন্তু আমাদের রাজধানীতে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয় ভোরে এবং সারা দিন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকাজুড়ে চলতে থাকে এ কাজ।

বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি মূলত সম্পন্ন করে প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডাররা (পিসিএসপি)। তারা বর্জ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন পয়েন্টে জমা করে, যে পয়েন্টগুলো থাকে সড়কের পাশে। এসব পয়েন্ট থেকে বোতল, প্লাস্টিক ও রিসাইকেলযোগ্য জিনিসগুলো সংগ্রহ করে আরেকটি গোষ্ঠী। এতে আবর্জনাগুলো আরও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। বর্জ্য সংগ্রহের পর এসব পয়েন্ট থেকে তা চলে যায় ভাগাড়ে, অর্থাৎ ল্যান্ডফিলে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য রয়েছে দুটি ল্যান্ডফিল। এর একটি আমিনবাজারে, অন্যটি মাতুয়াইলে। বর্জ্যরে এসব ভাগাড় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে উন্নীত করা হলেও এগুলো এখনো চলছে পুরোনো পদ্ধতিতে। সেখানে আবর্জনা ঢেকে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এগুলো পড়ে থাকে খোলা আকাশের নিচে। তার ওপর ময়লার একাংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতে দূষিত হচ্ছে বায়ু। এই ল্যান্ডফিলগুলোয় আবর্জনার ধারণক্ষমতা ৩০ ফুট। কিন্তু বিকল্প কোনো ভাগাড় না থাকায় আবর্জনার স্তূপ বাড়ছে বহুতল ভবনের মতো। বর্তমানে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে আবর্জনা জমতে জমতে ৯০ ফুট ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার তিনগুণ আবর্জনা এখানে জমেছে। ফলে এখানে ময়লার গাড়ি চালানো অনিরাপদ হয়ে গেছে। যখন-তখন ঘটছে দুর্ঘটনা।

আবর্জনাকে কেবল ভাগাড়ে না জমিয়ে প্রয়োজন একে সম্পদে পরিণত করা। বর্জ্যকে রিসাইকেল করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ২১টি কারখানায় প্লাস্টিকের বোতল রিসাইকেল করে তৈরি করা হচ্ছে প্লাস্টিক ফ্লেক্স, যা রপ্তানি হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, বেলজিয়াম, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়, যার ৩০ শতাংশ অজৈব। এর একটি বড় অংশ প্লাস্টিক বোতল, যা রিসাইকেল করে একদিকে যেমন বর্জ্য কমিয়ে আনা সম্ভব, একই সঙ্গে সম্ভব বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা।

রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। বর্জ্যরে বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রয়োজন আধুনিক পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন। এজন্য যেমন আইন প্রণয়ন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি। এছাড়া যারা বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে, তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার, যেন তারা সঠিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারে। এতে বর্জ্য রিসাইকেল করা সহজ হবে।

ঐশি আলম পৃথ্বি : শিক্ষার্থী

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন