ঢাবি শিক্ষার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ
ঢাবি প্রতিনিধি
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। এতে ওই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক জখম এবং বাম চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বুধবার সারাদিন তাকে হল ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে আটকে রাখা হয়। অপকর্মের দায় থেকে মুক্তি পেতে ‘শিবির’ করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। পরে বিকালে মারাত্মক আহত অবস্থায় কৌশলে ওই ছাত্র কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। আহত শিক্ষার্থী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এহসান রফিক। তিনি তার ক্লাসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারী। এহসানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। তার বাবা রফিকুল ইসলাম বৈশাখী টেলিভিশনের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। হামলায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হল ছাত্রলীগ সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের অনুসারী। তাহসান ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের অনুসারী।
আহত এহসান জানান, মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক প্রায় তিন মাস আগে তার কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেয়। ওমর ফারুকের কাছে এহসান বিভিন্ন সময় ক্যালকুলেটরটি চাইলেও তিনি তা ফেরত দেননি। যখনই এহসান ক্যালকুলেটর চাইতেন, ওমর বলতেন ‘পরে দিব’। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ওমর ফারুকের কাছে এহসান ক্যালকুলেটর চাইলে ওমর ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে মারধর শুরু করেন। পরে তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফের (শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী) মাধ্যমে এহসানকে টিভি রুমে ডেকে নেন। এ সময় টিভি রুমে উপস্থিত ছিলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তানিম (আইইআর) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন (উর্দু) ও আবু তাহের (পপুলেশন সায়েন্সেস)। তারা এহসানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করেন। কিন্তু তারা ফেসবুকে কিছুই না পেয়ে জোর করে ‘শিবির’ করার স্বীকারোক্তি আদায়ে তাকে বেদম মারধর করেন এবং হল থেকে বের করে দেয়ার ঘোষণা দেন।
পরে সেখানে এহসানকে আরেক দফা মারধর করা হয়। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল, সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রড, লঠিসোটা দিয়ে বেদম মারপিট করেন। মারধরের একপর্যায়ে এহসান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ রাত সাড়ে ৩টায় এহসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে এসে হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদের (১৬ নম্বর) কক্ষে তথ্য না প্রকাশের জন্য প্রলোভন ও হুমকি দিয়ে আটকে রাখা হয়। সকালে এহসানের অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হলে এনে একই কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে বিকালে কৌশলে কক্ষটি থেকে পালিয়ে আসে এহসান। খবর পেয়ে আহত এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম ছেলের কাছে আসেন। ঘটনার বিচার চেয়ে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ঢাবি শিক্ষার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ
ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। এতে ওই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক জখম এবং বাম চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বুধবার সারাদিন তাকে হল ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে আটকে রাখা হয়। অপকর্মের দায় থেকে মুক্তি পেতে ‘শিবির’ করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। পরে বিকালে মারাত্মক আহত অবস্থায় কৌশলে ওই ছাত্র কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। আহত শিক্ষার্থী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এহসান রফিক। তিনি তার ক্লাসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারী। এহসানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। তার বাবা রফিকুল ইসলাম বৈশাখী টেলিভিশনের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। হামলায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হল ছাত্রলীগ সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের অনুসারী। তাহসান ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের অনুসারী।
আহত এহসান জানান, মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক প্রায় তিন মাস আগে তার কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেয়। ওমর ফারুকের কাছে এহসান বিভিন্ন সময় ক্যালকুলেটরটি চাইলেও তিনি তা ফেরত দেননি। যখনই এহসান ক্যালকুলেটর চাইতেন, ওমর বলতেন ‘পরে দিব’। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ওমর ফারুকের কাছে এহসান ক্যালকুলেটর চাইলে ওমর ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে মারধর শুরু করেন। পরে তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফের (শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী) মাধ্যমে এহসানকে টিভি রুমে ডেকে নেন। এ সময় টিভি রুমে উপস্থিত ছিলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তানিম (আইইআর) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন (উর্দু) ও আবু তাহের (পপুলেশন সায়েন্সেস)। তারা এহসানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করেন। কিন্তু তারা ফেসবুকে কিছুই না পেয়ে জোর করে ‘শিবির’ করার স্বীকারোক্তি আদায়ে তাকে বেদম মারধর করেন এবং হল থেকে বের করে দেয়ার ঘোষণা দেন।
পরে সেখানে এহসানকে আরেক দফা মারধর করা হয়। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল, সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রড, লঠিসোটা দিয়ে বেদম মারপিট করেন। মারধরের একপর্যায়ে এহসান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ রাত সাড়ে ৩টায় এহসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে এসে হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদের (১৬ নম্বর) কক্ষে তথ্য না প্রকাশের জন্য প্রলোভন ও হুমকি দিয়ে আটকে রাখা হয়। সকালে এহসানের অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হলে এনে একই কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে বিকালে কৌশলে কক্ষটি থেকে পালিয়ে আসে এহসান। খবর পেয়ে আহত এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম ছেলের কাছে আসেন। ঘটনার বিচার চেয়ে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।