বিএনপি নেতা গয়েশ্বর গ্রেফতার অনিন্দ্য আটক
স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতির বাসায় তল্লাশি
যুগান্তর রিপোর্ট
৩১ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে তাকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে ডিএমপি কমিশনার জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি পুলিশের ওপর হামলার নির্দেশদাতা। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে শান্তিনগরের বাসা থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর ইস্কাটনের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের পল্লবীর বাসায় অভিযান চালিয়েছে ডিবি পুলিশ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযানের বিষয়টি রাত ১টা পর্যন্ত স্বীকার করা হয়নি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রাতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাত সোয়া ১০টায় গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক শেষ করে গাড়িতে করে তিনি পুরান ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন। গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে তার গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে জানান, রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের বৈঠক ছিল। বৈঠকের পর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে এলে রাত সোয়া ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
বিএনপির এক নেতা জানান, গাড়িতে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদও ছিলেন। তাকে নামিয়ে দিয়ে গয়েশ্বর রায়কে তুলে নেয়া হয়। এ ঘটনার পর গয়েশ্বর রায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার সময় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছিল। তাতে বিএনপি কর্মীদের পিটুনিতে আহত হন কয়েক পুলিশ সদস্য। এ সময় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে দুজন বিএনপি নেতাকে তারা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটকের খবর পাওয়া গেলো। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় রায়ের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণের পর দলের নেতা-কর্মীদের রাজপথে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। খালেদা জিয়ার সাজার রায় হলে সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
মধ্যরাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি রাত সাড়ে ১২টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, রাতে পুলিশ অতর্কিতভাবে শফিউল বারীর ইস্কাটনের বাসায় অভিযান চালায়। তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন অভিযান চলছিল।
অশুভ ইঙ্গিত : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানান। ফখরুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিরোধী দলশূন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চায় বর্তমান সরকার। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্যই সরকার খালেদা জিয়াকে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য করছে। একইভাবে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ দেশব্যাপী প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে পথের কাঁটা দূর করতে চাচ্ছে। এদিকে রাতে নয়াপল্টনে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে গয়েশ্বরের রায়কে আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী আহমেদ।
তরিকুল ইসলামের ছেলে আটক : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে শান্তিনগরের বাসা থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছে দলটি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাকে তুলে নেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে অনিন্দ্যকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেনি পুলিশ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর গ্রেফতার অনিন্দ্য আটক
স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতির বাসায় তল্লাশি
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে তাকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে ডিএমপি কমিশনার জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি পুলিশের ওপর হামলার নির্দেশদাতা। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে শান্তিনগরের বাসা থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর ইস্কাটনের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের পল্লবীর বাসায় অভিযান চালিয়েছে ডিবি পুলিশ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযানের বিষয়টি রাত ১টা পর্যন্ত স্বীকার করা হয়নি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রাতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাত সোয়া ১০টায় গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক শেষ করে গাড়িতে করে তিনি পুরান ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন। গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে তার গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে জানান, রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের বৈঠক ছিল। বৈঠকের পর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে এলে রাত সোয়া ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
বিএনপির এক নেতা জানান, গাড়িতে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদও ছিলেন। তাকে নামিয়ে দিয়ে গয়েশ্বর রায়কে তুলে নেয়া হয়। এ ঘটনার পর গয়েশ্বর রায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার সময় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছিল। তাতে বিএনপি কর্মীদের পিটুনিতে আহত হন কয়েক পুলিশ সদস্য। এ সময় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে দুজন বিএনপি নেতাকে তারা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটকের খবর পাওয়া গেলো। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় রায়ের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণের পর দলের নেতা-কর্মীদের রাজপথে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। খালেদা জিয়ার সাজার রায় হলে সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
মধ্যরাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি রাত সাড়ে ১২টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, রাতে পুলিশ অতর্কিতভাবে শফিউল বারীর ইস্কাটনের বাসায় অভিযান চালায়। তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন অভিযান চলছিল।
অশুভ ইঙ্গিত : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানান। ফখরুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে বিরোধী দলশূন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চায় বর্তমান সরকার। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্যই সরকার খালেদা জিয়াকে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য করছে। একইভাবে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ দেশব্যাপী প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে পথের কাঁটা দূর করতে চাচ্ছে। এদিকে রাতে নয়াপল্টনে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে গয়েশ্বরের রায়কে আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী আহমেদ।
তরিকুল ইসলামের ছেলে আটক : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে শান্তিনগরের বাসা থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করেছে দলটি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাকে তুলে নেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে অনিন্দ্যকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেনি পুলিশ।