নারায়ণগঞ্জে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মৃত ৬ মুক্তিযোদ্ধা!
গেজেট নাম্বার ও স্বাক্ষর জালিয়াতি
রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ
২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মৃত ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নাম্বার ব্যবহার করে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই ৬ মৃত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নাম্বারের পাশে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে জীবিত ৬ মুক্তিযোদ্ধার নাম। জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন কাণ্ডে অপ্রস্তুত অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও। জানা গেছে, সম্প্রতি সোনারগাঁ উপজেলার বেসামরিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়েছে। তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি শুধু হয়রানি করতেই এমন গর্হিত কাজ করেছে কোনো চক্র।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগে স্বাক্ষর করা ৮ মুক্তিযোদ্ধার ৬ জনই মৃত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নাম্বার ব্যবহার করেছে। তাদের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। অবাক বিষয় হলো, ৪৫ বছর আগে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরও রয়েছে সেই অভিযোগপত্রে। চার সদস্যের বেসামরিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে ভারতীয় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে ৮ মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নম্বর ও সই জাল করে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জনই মৃত। ৪৫ বছর আগে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা মীরের গেজেট নম্বর-৭২৯। আবুল কাসেম নামে স্বাক্ষর করা একজনের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে মৃত মোস্তফা মীরের গেজেট নম্বরটি। এদিকে ওই অভিযোগপত্রের সূত্র ধরে সেই আবুল কাসেমের নম্বরে ফোন কল দেওয়া হলে তিনি অসংলগ্ন তথ্য দেন। তার গেজেট নম্বর জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জানান ৯২৯। অথচ ডিসি কার্যালয় বরাবর দেওয়া অভিযোগ উল্লেখ রয়েছে আবুল কাসেমের গেজেট নম্বর-৭২৯। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০ বছর আগে মারা গেছেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ। তার গেজেট নম্বর ৭২৩। মৃত আবদুল লতিফের গেজেট নম্বরটি ব্যবহার করে স্বাক্ষর করেছেন গোলাম মোস্তফা। ৭ বছর আগে মারা যান মো. সামসুল হক। তার বাড়ি সাদীপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও কাজীপাড়া গ্রামে। তার গেজেট নম্বর ৫৬২। মৃত সামসুল হকের গেজেট নম্বরটি মো. সৈয়দ হোসেনের স্বাক্ষর করা নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে। ৫ বছর আগে মারা গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান ভূঁইয়া। তার গেজেট নম্বর-৬৭১। তার বাড়ি জামপুর ইউনিয়নের মিরেরবাগ গ্রামে। মৃত সোলায়মান ভূঁইয়ার ৬৭১ নম্বর গেজেটের নম্বরটি সোলায়মান মুন্সি নামের একজনের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে। ১ মাস আগে মারা গেছেন মতিউর রহমান। তার গেজেট নম্বর-৭২৫। তিনি মারা যাওয়ার পরও অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ১ মাস আগে মারা যান আছাদুজ্জামান। তার গেজেট নম্বর-৫৮৬। তিনি মারা যাওয়ার পরও অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা মনে করছেন সোনারগাঁ উপজেলায় বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এ ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ওই অভিযোগপত্রে যাচাই-বাছাই কমিটিতে আলতাফ হোসেন ও অ্যাডভোকেট সফিউদ্দিন ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে এ লিখিত অভিযোগ করতে পারেন, তা বোধগম্য নয়। মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম, গেজেট নম্বর ও স্বাক্ষর জাল করে জেলা প্রশাসনে আবেদন করার ঘটনাটি সত্যি। কারণ, নারায়ণগঞ্জের মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আমার মুখস্ত। সম্প্রতি ডিসি অফিসে জমা হওয়া অভিযোগপত্রে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম দেখে বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসকের নজরে আনি। তখনই জেলা প্রশাসক তা আমলে নেন। এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি বলেন, চিহ্নিত চক্রটি বারবার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করার জন্য এ ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম, গেজেট নম্বর ও স্বাক্ষর জাল করে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে একটি চক্র। তদন্ত কমিটি গঠন করে এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দিলেই আমরা বলতে পারব ‘কারা মারা গেছেন। আবেদনটি বৈধ নাকি অবৈধ।’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
নারায়ণগঞ্জে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মৃত ৬ মুক্তিযোদ্ধা!
গেজেট নাম্বার ও স্বাক্ষর জালিয়াতি
মৃত ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নাম্বার ব্যবহার করে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই ৬ মৃত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নাম্বারের পাশে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে জীবিত ৬ মুক্তিযোদ্ধার নাম। জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন কাণ্ডে অপ্রস্তুত অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও। জানা গেছে, সম্প্রতি সোনারগাঁ উপজেলার বেসামরিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়েছে। তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি শুধু হয়রানি করতেই এমন গর্হিত কাজ করেছে কোনো চক্র।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগে স্বাক্ষর করা ৮ মুক্তিযোদ্ধার ৬ জনই মৃত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নাম্বার ব্যবহার করেছে। তাদের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। অবাক বিষয় হলো, ৪৫ বছর আগে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরও রয়েছে সেই অভিযোগপত্রে। চার সদস্যের বেসামরিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে ভারতীয় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে ৮ মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নম্বর ও সই জাল করে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জনই মৃত। ৪৫ বছর আগে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা মীরের গেজেট নম্বর-৭২৯। আবুল কাসেম নামে স্বাক্ষর করা একজনের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে মৃত মোস্তফা মীরের গেজেট নম্বরটি। এদিকে ওই অভিযোগপত্রের সূত্র ধরে সেই আবুল কাসেমের নম্বরে ফোন কল দেওয়া হলে তিনি অসংলগ্ন তথ্য দেন। তার গেজেট নম্বর জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জানান ৯২৯। অথচ ডিসি কার্যালয় বরাবর দেওয়া অভিযোগ উল্লেখ রয়েছে আবুল কাসেমের গেজেট নম্বর-৭২৯। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০ বছর আগে মারা গেছেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ। তার গেজেট নম্বর ৭২৩। মৃত আবদুল লতিফের গেজেট নম্বরটি ব্যবহার করে স্বাক্ষর করেছেন গোলাম মোস্তফা। ৭ বছর আগে মারা যান মো. সামসুল হক। তার বাড়ি সাদীপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও কাজীপাড়া গ্রামে। তার গেজেট নম্বর ৫৬২। মৃত সামসুল হকের গেজেট নম্বরটি মো. সৈয়দ হোসেনের স্বাক্ষর করা নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে। ৫ বছর আগে মারা গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান ভূঁইয়া। তার গেজেট নম্বর-৬৭১। তার বাড়ি জামপুর ইউনিয়নের মিরেরবাগ গ্রামে। মৃত সোলায়মান ভূঁইয়ার ৬৭১ নম্বর গেজেটের নম্বরটি সোলায়মান মুন্সি নামের একজনের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে। ১ মাস আগে মারা গেছেন মতিউর রহমান। তার গেজেট নম্বর-৭২৫। তিনি মারা যাওয়ার পরও অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ১ মাস আগে মারা যান আছাদুজ্জামান। তার গেজেট নম্বর-৫৮৬। তিনি মারা যাওয়ার পরও অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা মনে করছেন সোনারগাঁ উপজেলায় বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এ ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ওই অভিযোগপত্রে যাচাই-বাছাই কমিটিতে আলতাফ হোসেন ও অ্যাডভোকেট সফিউদ্দিন ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে এ লিখিত অভিযোগ করতে পারেন, তা বোধগম্য নয়। মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম, গেজেট নম্বর ও স্বাক্ষর জাল করে জেলা প্রশাসনে আবেদন করার ঘটনাটি সত্যি। কারণ, নারায়ণগঞ্জের মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আমার মুখস্ত। সম্প্রতি ডিসি অফিসে জমা হওয়া অভিযোগপত্রে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম দেখে বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসকের নজরে আনি। তখনই জেলা প্রশাসক তা আমলে নেন। এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি বলেন, চিহ্নিত চক্রটি বারবার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করার জন্য এ ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম, গেজেট নম্বর ও স্বাক্ষর জাল করে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে একটি চক্র। তদন্ত কমিটি গঠন করে এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দিলেই আমরা বলতে পারব ‘কারা মারা গেছেন। আবেদনটি বৈধ নাকি অবৈধ।’