‘ঈশ্বর চাইলে শিরোপা যাবে বাংলাদেশে’

মেয়েদের সাফ ফুটবল নিয়ে কৃষ্ণা রানী সরকার
 ওমর ফারুক রুবেল, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে 
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

টাঙ্গাইলের মেয়ে কৃষ্ণা রানী সরকার অনূর্ধ্ব-১৪ ও ১৬ দল পেরিয়ে এখন জাতীয় দলে। আগেরদিন মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয়ে এক গোল করেছেন। ‘ঈশ্বর চাইলে সাফের শিরোপা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে যাবে,’ বলেন তিনি। বুধবার সকালে কাঠমান্ডুর আর্মি হেডকোয়ার্টার্স মাঠে অনুশীলন শেষে কথা বলেছেন কৃষ্ণা।

প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়। হোটেলে ফেরার পর পার্টি হয়েছে?

কৃষ্ণা : ভারতের সঙ্গে জিতেছি। এতে সবাই খুশি। সমানে আরও দুটি ম্যাচ। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। শিরোপা জিতেই উল্লাস করতে চাই।

প্রশ্ন : ক্যারিয়ারে অনেক ভালো ম্যাচ খেলেছেন। এই জয়টিকে কোথায় রাখবেন?

কৃষ্ণা : সিনিয়র পর্যায়ে এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে জেতা সবচেয়ে বড় অর্জন। ফাইটিং ম্যাচ হয়েছে। আমিও গোল পেয়েছি। সব মিলিয়ে আমার কাছে এই ম্যাচটি শীর্ষে থাকবে।

প্রশ্ন : দুর্দান্ত খেললেন। ম্যাচসেরা হলেন। এ নিয়ে কতবার?

কৃষ্ণা : ক্যারিয়ারে কতবার ম্যাচসেরা হয়েছি, মনে নেই। সিনিয়র পর্যায়ে হয়তো এটাই প্রথম।

প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের কৃতিত্বের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে?

কৃষ্ণা : না, কথা বলতে পারিনি। মা-বাবার কাছে স্মার্টফোন নেই। তাই কথা বলা হয়নি। ঢাকায় থাকা ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে।

প্রশ্ন : ছোট ভাই কী বলল?

কৃষ্ণা : ও (পলাশ সরকার) কাল (মঙ্গলবার) খেলা দেখেছে। আগের দুই ম্যাচে গোল না পাওয়ায় রাগ করেছিল। ভারতের বিপক্ষে জেতার পর আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

প্রশ্ন : এত খেলা থাকতে ফুটবলে কীভাবে এলেন?

কৃষ্ণা : ছোটবেলা থেকে আমি চঞ্চল। টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ৩৬নং উত্তর বাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম। মেয়েদের চেয়ে ছেলে বন্ধু বেশি ছিল আমার। ছেলেদের সঙ্গে সাইকেল চালানো থেকে শুরু করে সব ধরনের খেলাধুলাই করতাম। সেখান থেকে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে বাছাই করেন ফুটবলের জন্য। ২০১১ সালে খেলা শুরু করি। জাতীয় দলে খেলছি ২০১৪ থেকে।

প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে গোল করার পর কোচের কাছ থেকে কেমন অভিনন্দন পেলেন?

কৃষ্ণা : স্যার আমাদের অনেক আদর করেন। জয়ের পর আরও বেশি স্নেহ করেছেন।

প্রশ্ন : আপনার ক্যারিয়ারের এটাই কি সেরা ম্যাচ?

কৃষ্ণা : বয়সভিত্তিক দলে সেরা ম্যাচ আছে অনেক। জাতীয় দলে এটাই সেরা।

প্রশ্ন : ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমের চিত্র কেমন ছিল?

কৃষ্ণা : সবাই চিৎকার করছিল। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাই আনন্দটা একটু বেশি করেছি।

প্রশ্ন : কোচের মতে, এখান থেকেই মেয়েদের ফুটবলের বাঁকবদল শুরু হলো। আপনার কি মত?

কৃষ্ণা : আমাদের সিনিয়র আপুরা ভারত ও নেপালের কাছে হেরেছেন। আমরা বয়সভিত্তিক ফুটবলে ভালো ফল করতে শুরু করি। অ-১৪ ও অ-১৬ দলে উন্নতি করেছি। ওখান থেকে সিনিয়র দলে আসা। আমরা যখন প্রথম সিনিয়র দলে আসি, তখনো ৫/৬টি করে গোল খেতাম। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় ছয় বছর ধরে একসঙ্গে আছি আমরা। স্যার ঠিকই বলেছেন। আমাদের মেয়েদের ফুটবলে বাঁকবদল হয়েছে। যার প্রমাণ ভারতের বিপক্ষে জয়।

প্রশ্ন : ফাইনালে মনে হয় ভারতকেই পাবেন। আরেকটি লড়াই। কী ভাবছেন?

কৃষ্ণা : ফাইনালে জিততে চাই। তার আগে ভুটানের বিপক্ষে সেমিফাইনাল। এই ম্যাচ উতরে যেতে চাই। জানি অনেক বেশি ফাইট দিতে হবে।

প্রশ্ন : তাহলে আশা করতে পারি সাফের শিরোপা এই প্রথম যাচ্ছে বাংলাদেশে?

কৃষ্ণা : ঈশ্বর যদি চান, তাহলে অবশ্যই যাবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন