শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধ করা জরুরি
ড. মো. শফিকুল ইসলাম
১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের কথা শুনতে হয় আমাদের। গণমাধ্যমে দেখতে পাই, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক টর্চার সেল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে এ টর্চার সেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়।
কিন্তু এ টর্চার সেলে যে নির্যাতন হয়, তার বিচার তেমন হয় না বললেই চলে। নামমাত্র বিচার হয় কিছু ঘটনার। সম্প্রতি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যা নিয়ে নতুন শিক্ষার্থীরা খুবই আতঙ্কে রয়েছে। এটি আমাদের সমাজের জন্য বিব্রতকর।
গত এক-দেড় মাসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ১০টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকি দুই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়বেনই না বলে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে লিখিত আবেদন করেও বিচার না পেয়ে এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে। এরকম অনেক লিখিত অভিযোগ দিলেও নানা চাপে প্রশাসন অনেক সময় বিচার করতে পারে না। আবার অনেক শিক্ষার্থী আরও নির্যাতনের ভয়ে কোনো অভিযোগ দেয় না। নীরবে সহ্য করে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নবীন শিক্ষার্থীদের এক বাজে সংস্কৃতির মধ্যে পড়তে হয়, যা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে কাজ করে। এজন্য অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে বাধ্য হন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ জানুয়ারি লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথমবর্ষের এক ছাত্র তার বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীকর্তৃক র্যাগিংয়ের শিকার হয়। এখানে বড় ভাইদের চিনতে না পারায় তাকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয় এবং গালাগাল করা হয়। এছাড়া রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জুনিয়র শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছিল একই বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। পরে তার বিভাগের শিক্ষকরা অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করে দেয়। গত বছর আমার কর্মস্থল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীর ওপর চালানো হয় বর্বরতা। আহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কাতরাচ্ছে-এমন অবস্থা হয়েছিল। মা-বাবা কী যে দুশ্চিন্তায় ছিল, তা বলে বোঝান যাবে না। যদিও এসব ঘটনা এখনো তদন্তাধীন; আশা করি, সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে-কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেভাবে র্যাগিংয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বুঝতে পারি, কতটা বেপরোয়া ছিল নির্যাতনকারীরা।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হলে ভয়ে থাকে, তাকে র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয় কি না! এসব নির্যাতন এবং র্যাগিং কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। এসব বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্যাতন ও র্যাগিংবিরোধী আইন করা উচিত। শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদ পরিবেশে নির্ভয়ে পড়াশোনা করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং বন্ধে নীতিমালা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সরকার। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সন্ত্রাস ও র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে কেন শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হবে? কোথাও কোথাও এমনকি শিক্ষকরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব কোনোটাই সভ্য দেশে কাম্য নয়। যদি কেউ কোনো অপরাধ করে থাকে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রয়েছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আমরা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছি? বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্তচিন্তার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এসব টর্চার সেল বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এগুলো কখনো দেখিনি। যারা এসব করে, তারা কোনো আদর্শ বা চেতনা ধারণ করে না। কিছু নামধারী ছাত্র কোনো একটি সংগঠনের ছায়াতলে এসে এসব অপকর্ম করে থাকে; দোষ হয় সংগঠনের। তাই যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন; তাদের বলব, আপনারা যোগ্য ও সঠিক আদর্শ বহনকারী ও মেধাবী-এসব বিবেচনায় নিয়ে নেতৃত্ব গড়ে তুলুন। তাহলে জাতি পাবে সঠিক নেতৃত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু এবং সুন্দর কর্মপরিবেশ না থাকলে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, শুধু তদন্ত হয়; সে তদন্তের কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ পায় না এবং বাস্তবায়নও হতে দেখা যায় না। তাহলে কীভাবে অন্যায় বন্ধ হবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। অন্যথায় নবীন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকবে। এমন কী অনেক বিষয়ে শিক্ষকরাও আতঙ্কে থাকেন।
বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা জাতিকে কী বার্তা দিচ্ছে? সমাজে চরমভাবে অবক্ষয় হচ্ছে। এজন্য সরকার, সাংবাদিক, শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের গুণী মানুষদের আরও সোচ্চার হতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক উন্নয়নও ঘটে। তাহলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে। সরকার দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছে; বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনতে শুরু করেছে। এমন একটা সময়ে ছাত্র নামধারী কিছু মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্ব। শিক্ষার্থীদের মন থেকে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি র্যাগিং সেল গঠন করতে হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সেলকে শক্তিশালী করাসহ অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা, গবেষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের চর্চা হোক এবং অপরাজনীতি বন্ধ হোক-এ কামনা করি। নতুন প্রজন্ম ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে এগিয়ে আসুক এবং গঠনমূলক রাজনীতি করে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখুক-এটাই হোক এ সময়ের ব্রত। সঠিক রাজনীতির চর্চা হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে, মায়ের বুক খালি করার রাজনীতি নয়। যারা সহপাঠীকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করতে পারে এবং হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিতে পারে, তারা ছাত্র নামের কলঙ্ক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত এসব ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধ করা জরুরি
দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের কথা শুনতে হয় আমাদের। গণমাধ্যমে দেখতে পাই, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক টর্চার সেল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে এ টর্চার সেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়।
কিন্তু এ টর্চার সেলে যে নির্যাতন হয়, তার বিচার তেমন হয় না বললেই চলে। নামমাত্র বিচার হয় কিছু ঘটনার। সম্প্রতি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যা নিয়ে নতুন শিক্ষার্থীরা খুবই আতঙ্কে রয়েছে। এটি আমাদের সমাজের জন্য বিব্রতকর।
গত এক-দেড় মাসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ১০টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকি দুই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়বেনই না বলে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে লিখিত আবেদন করেও বিচার না পেয়ে এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে। এরকম অনেক লিখিত অভিযোগ দিলেও নানা চাপে প্রশাসন অনেক সময় বিচার করতে পারে না। আবার অনেক শিক্ষার্থী আরও নির্যাতনের ভয়ে কোনো অভিযোগ দেয় না। নীরবে সহ্য করে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নবীন শিক্ষার্থীদের এক বাজে সংস্কৃতির মধ্যে পড়তে হয়, যা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে কাজ করে। এজন্য অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে বাধ্য হন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ জানুয়ারি লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথমবর্ষের এক ছাত্র তার বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীকর্তৃক র্যাগিংয়ের শিকার হয়। এখানে বড় ভাইদের চিনতে না পারায় তাকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয় এবং গালাগাল করা হয়। এছাড়া রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জুনিয়র শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছিল একই বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। পরে তার বিভাগের শিক্ষকরা অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করে দেয়। গত বছর আমার কর্মস্থল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীর ওপর চালানো হয় বর্বরতা। আহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কাতরাচ্ছে-এমন অবস্থা হয়েছিল। মা-বাবা কী যে দুশ্চিন্তায় ছিল, তা বলে বোঝান যাবে না। যদিও এসব ঘটনা এখনো তদন্তাধীন; আশা করি, সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে-কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেভাবে র্যাগিংয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বুঝতে পারি, কতটা বেপরোয়া ছিল নির্যাতনকারীরা।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হলে ভয়ে থাকে, তাকে র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয় কি না! এসব নির্যাতন এবং র্যাগিং কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। এসব বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্যাতন ও র্যাগিংবিরোধী আইন করা উচিত। শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদ পরিবেশে নির্ভয়ে পড়াশোনা করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং বন্ধে নীতিমালা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সরকার। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সন্ত্রাস ও র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে কেন শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হবে? কোথাও কোথাও এমনকি শিক্ষকরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব কোনোটাই সভ্য দেশে কাম্য নয়। যদি কেউ কোনো অপরাধ করে থাকে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রয়েছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আমরা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছি? বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্তচিন্তার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এসব টর্চার সেল বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এগুলো কখনো দেখিনি। যারা এসব করে, তারা কোনো আদর্শ বা চেতনা ধারণ করে না। কিছু নামধারী ছাত্র কোনো একটি সংগঠনের ছায়াতলে এসে এসব অপকর্ম করে থাকে; দোষ হয় সংগঠনের। তাই যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন; তাদের বলব, আপনারা যোগ্য ও সঠিক আদর্শ বহনকারী ও মেধাবী-এসব বিবেচনায় নিয়ে নেতৃত্ব গড়ে তুলুন। তাহলে জাতি পাবে সঠিক নেতৃত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু এবং সুন্দর কর্মপরিবেশ না থাকলে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, শুধু তদন্ত হয়; সে তদন্তের কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ পায় না এবং বাস্তবায়নও হতে দেখা যায় না। তাহলে কীভাবে অন্যায় বন্ধ হবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। অন্যথায় নবীন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকবে। এমন কী অনেক বিষয়ে শিক্ষকরাও আতঙ্কে থাকেন।
বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা জাতিকে কী বার্তা দিচ্ছে? সমাজে চরমভাবে অবক্ষয় হচ্ছে। এজন্য সরকার, সাংবাদিক, শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের গুণী মানুষদের আরও সোচ্চার হতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক উন্নয়নও ঘটে। তাহলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে। সরকার দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছে; বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনতে শুরু করেছে। এমন একটা সময়ে ছাত্র নামধারী কিছু মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্ব। শিক্ষার্থীদের মন থেকে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি র্যাগিং সেল গঠন করতে হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সেলকে শক্তিশালী করাসহ অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা, গবেষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের চর্চা হোক এবং অপরাজনীতি বন্ধ হোক-এ কামনা করি। নতুন প্রজন্ম ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে এগিয়ে আসুক এবং গঠনমূলক রাজনীতি করে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখুক-এটাই হোক এ সময়ের ব্রত। সঠিক রাজনীতির চর্চা হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে, মায়ের বুক খালি করার রাজনীতি নয়। যারা সহপাঠীকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করতে পারে এবং হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিতে পারে, তারা ছাত্র নামের কলঙ্ক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত এসব ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ