সৌদি আরব ও ইরানের পুনর্মিলনে অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র
jugantor
বাইফোকাল লেন্স
সৌদি আরব ও ইরানের পুনর্মিলনে অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র

  একেএম শামসুদ্দিন  

২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

১০ মার্চ সৌদি আরব ও ইরান আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করার ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে পুরো বিশ্ব। ২০১৬ সালে, সৌদি আরবে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর এ দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। একপর্যায়ে তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানিরা। অতঃপর এ ঘটনায় নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে এরা পুনর্মিলিত হলে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ভেতর অস্বস্তি শুরু হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এ অস্বস্তির অন্য একটি কারণও আছে। এ দুটি দেশের ভেতর সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে চীনের মধ্যস্থতা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বেশি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম ধর্মের মূল দুটি শাখার অনুসারী ইরান, শিয়া মুসলিম বিশ্ব এবং অপরদিকে সৌদি আরব সুন্নি মুসলিম বিশ্বাসের অনুসারী। ধর্মীয় এ বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব ও ইরানকে পারস্পরিক শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কের দোরগোড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে এতদিন যে ফায়দা লুটে আসছিল, তা বুঝি এবার বাধার মুখে পড়ল। সৌদি আরব ও ইরানের এ সম্পর্ক স্থাপনে চীনের যুক্ত থাকার বিষয়টি ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে। বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চীন যে ভূমিকা রেখেছে, তা প্রশংসার দাবিও রাখে বটে। অপরদিকে ইরান প্রশ্নে এ মধ্যস্থতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো হলো কিনা, তা পরিষ্কার নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তির দিকটি হলো, ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের এ সম্পর্ক এমন সময় পুনঃস্থাপিত হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা দেশটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছিল। ইরান এখন ভাবতে পারবে, তাদের একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা থেকে ইরান এখন বেরিয়ে যেতে পারবে। ভবিষ্যতে বড় শক্তিধর দেশকে তাদের পাশে পাবে। ওদিকে ইরান-সৌদি আরবের এক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইসরাইলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও।

এজন্য ইসরাইলের বিরোধী দল ও বেশ কয়েকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করছেন। তারা বলছেন, নেতানিয়াহু ইসরাইলের স্বার্থরক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সৌদি আরব ও ইরান যখন চীনের মধ্যস্থতায় পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছিল, তখন নিজে স্বার্থ হাসিলের জন্য বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ইসরাইলের রাজনৈতিক মহলে এতই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে যে, তারা ইরান ও সৌদির এ পুনর্মিলনকে সহজে মেনে নিতে পারছে না। বিরোধী নেতারা আরও বলেছে, ইসরাইলের বর্তমান সরকার কূটনৈতিক ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা করে আসছিল। ইরান ও সৌদি আরবের এক হওয়ার বিষয়টি ইসরাইলের পররাষ্ট্রনীতির জন্য শোচনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ পরাজয়। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতনিয়াহু এ বিষয়টি নিয়ে পালটা দায় চাপিয়েছেন তার পূর্বতন সরকারের ওপর। তিনি অভিযোগ করেছেন, এক বছর আগে যখন রিয়াদ ও তেহরান আলোচনা শুরু করেছিল, তখন সেটি ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তারা। কীভাবে তাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন এ বিষয়টি এগোলো। নেতানিয়াহু পশ্চিমা বিশ্বকেও এজন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, তৎকালীন ইসরাইল সরকার ও পশ্চিমাদের দুর্বলতার কারণে ইরানের স্বীকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন ইসরাইলের জন্য একরকম ভয়াবহ বিষয়। এটি ইরানের জন্য একটি বিরাট বিজয়। ইসরাইল যে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইরানের বিরুদ্ধে জোট গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা করে আসছিল, মধ্যপ্রাচ্যের এ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ইসরাইলের ওপর নিঃসন্দেহে একটি বড় আঘাত।

ইরানের প্রতি বিদ্বেষভাব শুধু ইসরাইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইহুদি মানেই তিনি যে দেশেরই নাগরিক হন না কেন, ইরানের যে কোনো বিষয়, তাদের কাছে স্পর্শকাতর বিষয় দাঁড়ায়। এ ব্যাপারে আমি আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই। বেশ কয়েক বছর আগে, ২০১১-২০১২ সালে আমি একটি উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়ায় অবস্থিত আর্মি ওয়ার কলেজ কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করি। সেমিনারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এর মধ্যে আমি ছাড়াও নাইজেরিয়া, মালে ও সৌদি আরবের ঊর্ধ্বতন মুসলিম সামরিক কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে যখন আলোচনা হচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্নেল পদবির কর্মকর্তা ক্ষিপ্তভাবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সরাসরি মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন, মিথ্যা তথ্য ও গল্প বলে তাদের ইরাক আক্রমণে বাধ্য করে। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়েছেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর ভর করে ইরাকের ওপর ওই অমানবিক যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন। কর্মকর্তাটি বুশকে একজন ঠকবাজ, মিথ্যাবাদী ও প্রবঞ্চক বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। এরপর আলোচনার ফ্লোর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য আরেক কর্মকর্তা আলোচনা শুরু করেন। তিনি অবশ্য ইহুদি ধর্মের বিশ্বাসী ব্যক্তি। তিনি ফ্লোর নিয়েই ইরানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। সব পশ্চিমা বিশ্ব তখন ইরানের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে সোচ্চার। কর্মকর্তাটি বলেন, ইরানকে যদি এক্ষুনি না থামানো যায়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ডেকে আনবে। তার বিশ্বাস, ইরান নাকি ইতোমধ্যে পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে; যা ইসরাইলের জন্য শুধু হুমকি নয়, বিশ্বের জন্য বিপজ্জনকও বটে। সুতরাং আর দেরি নয়, ইরানের ওপরও ইরাকের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ইহুদি কর্মকর্তার বক্তব্য শেষ হতেই ফ্লোর নিয়ে সেদিন ওই কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেছিলাম, ‘তুমি ইরান সম্পর্কে যে তথ্য উপস্থাপন করেছো, তার ভিত্তি কী? তুমি কি মনে করো, তোমরা যা বলো তা বাদ বাকি বিশ্ব, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ বিশ্বাস করে? ইরাকে আক্রমণের আগেও কিন্তু তোমাদের তৎকালীন পররাষ্ট্র সেক্রেটারি জেনারেল কলিন পাওয়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে বলেছিলেন, ইরাকে নাকি ব্যাপক ‘ওয়াপন অব মাস ডেসট্রাকশন’-এর অস্তিত্ব আছে। তোমাদের স্যাটেলাইটে গৃহীত ফটোগ্রাফেও নাকি স্পষ্ট দেখা গেছে, এরূপ ডাহা মিথ্যা কথা বলে ইরাকে আক্রমণ চালিয়ে লাখ লাখ মানুষ তোমরা হত্যা করেছো; দেশটিকে করেছো সম্পূর্ণ ধ্বংস। এ কথা কেবল তৃতীয় বিশ্বের মানুষই বলে না, কিছুক্ষণ আগে তোমাদেরই একজন কর্মকর্তা মিথ্যা তথ্যের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাদের সাবেক প্রেসিডেন্টকে দোষারোপ করে গেলেন।’ আমার এ বক্তব্যকে সাপোর্ট করে সেদিন নাইজেরিয়া ও মালের কর্মকর্তারও বক্তব্য রেখেছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য স্থাপন হোক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল শুধু নয়, অধিকাংশ পশ্চিমা দেশও চায় না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কের ফাটল ধরিয়ে রেখেছে। তাতে ইসরাইল যেমন নিজেদের নিরাপদ ভাবে, তেমনই অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে বিপুল অঙ্কের ব্যবসা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের তেলের সুবিধা তো তারা ভোগ করে আসছে অনেক আগে থেকেই। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একই ধরনের বৈদেশিক নীতি অবলম্বন করে থাকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেমন টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে, অপরদিকে চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের এ টানাপোড়েনের অন্য আরেকটি কারণও আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পর তেল উৎপাদন ও মূল্য নিয়ে সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের পরিবর্তনও এর জন্য দায়ী। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে সুরে হুমকি দিয়েছে, সৌদি আরব তা সহজে গ্রহণ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণও সৌদি আরবকে চীনের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও চীন তাদের সঙ্গে ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ক্রমেই বাড়তে থাকা ভূমিকাকে হুমকি হিসাবে দেখছেন। মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাদের দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, তাদেরই চোখের সামনে, কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সহযোগীদের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে দিনদিন ছোট করে দিয়ে, চীন শান্তির দূত হিসাবে অবতীর্ণ হচ্ছে।

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশ দুটির সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে কি বলা যায়? এর উত্তর হলো, না। এখনো এ দুটি দেশের মধ্যে অনেক ইস্যু নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বর্তমানে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সংঘাতের মূল বিষয় হিসাবে ইয়েমেনকেই ধরা হয়। এ সমস্যা, তা যতই জটিল ও স্পর্শকাতর হোক না কেন, সমাধানের মধ্যে, দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের মূল চাবিকাঠি নিহিত আছে। জানা গেছে, চীন এরই মধ্যে এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এরই মধ্যে ইয়েমেন সমস্যা সমাধানে চীন তার মধ্যস্থতার কিছুটা আভাস দিয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনার ক্ষেত্রে আপাতত দেশ দুটির নীতিনির্ধারকরা আশাবাদী বলেই মনে হচ্ছে। ফলে এ দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। পারস্পরিক উন্নয়ন ও মঙ্গলের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। এতে শুধু এ দুটো দেশের মধ্যেই নয়, এ ব্যবস্থা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে। এ ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশেগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে যদি ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে সারা মুসলিম জাহানের জন্যই তা মঙ্গলজনক। এ বিষয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘চীনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা এ অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করবে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পারস্পরিক উন্নয়ন ঘটাবে। তবে সৌদি আরব ও ইরানের এ নতুন সম্পর্কোন্নয়নে যে অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল; তা কাটিয়ে উঠতে তারা কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

বাইফোকাল লেন্স

সৌদি আরব ও ইরানের পুনর্মিলনে অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র

 একেএম শামসুদ্দিন 
২০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

১০ মার্চ সৌদি আরব ও ইরান আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করার ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে পুরো বিশ্ব। ২০১৬ সালে, সৌদি আরবে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর এ দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। একপর্যায়ে তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানিরা। অতঃপর এ ঘটনায় নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে এরা পুনর্মিলিত হলে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ভেতর অস্বস্তি শুরু হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এ অস্বস্তির অন্য একটি কারণও আছে। এ দুটি দেশের ভেতর সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে চীনের মধ্যস্থতা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বেশি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম ধর্মের মূল দুটি শাখার অনুসারী ইরান, শিয়া মুসলিম বিশ্ব এবং অপরদিকে সৌদি আরব সুন্নি মুসলিম বিশ্বাসের অনুসারী। ধর্মীয় এ বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব ও ইরানকে পারস্পরিক শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কের দোরগোড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে এতদিন যে ফায়দা লুটে আসছিল, তা বুঝি এবার বাধার মুখে পড়ল। সৌদি আরব ও ইরানের এ সম্পর্ক স্থাপনে চীনের যুক্ত থাকার বিষয়টি ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে। বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চীন যে ভূমিকা রেখেছে, তা প্রশংসার দাবিও রাখে বটে। অপরদিকে ইরান প্রশ্নে এ মধ্যস্থতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো হলো কিনা, তা পরিষ্কার নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তির দিকটি হলো, ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের এ সম্পর্ক এমন সময় পুনঃস্থাপিত হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা দেশটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছিল। ইরান এখন ভাবতে পারবে, তাদের একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা থেকে ইরান এখন বেরিয়ে যেতে পারবে। ভবিষ্যতে বড় শক্তিধর দেশকে তাদের পাশে পাবে। ওদিকে ইরান-সৌদি আরবের এক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইসরাইলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও।

এজন্য ইসরাইলের বিরোধী দল ও বেশ কয়েকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করছেন। তারা বলছেন, নেতানিয়াহু ইসরাইলের স্বার্থরক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সৌদি আরব ও ইরান যখন চীনের মধ্যস্থতায় পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছিল, তখন নিজে স্বার্থ হাসিলের জন্য বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ইসরাইলের রাজনৈতিক মহলে এতই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে যে, তারা ইরান ও সৌদির এ পুনর্মিলনকে সহজে মেনে নিতে পারছে না। বিরোধী নেতারা আরও বলেছে, ইসরাইলের বর্তমান সরকার কূটনৈতিক ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা করে আসছিল। ইরান ও সৌদি আরবের এক হওয়ার বিষয়টি ইসরাইলের পররাষ্ট্রনীতির জন্য শোচনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ পরাজয়। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতনিয়াহু এ বিষয়টি নিয়ে পালটা দায় চাপিয়েছেন তার পূর্বতন সরকারের ওপর। তিনি অভিযোগ করেছেন, এক বছর আগে যখন রিয়াদ ও তেহরান আলোচনা শুরু করেছিল, তখন সেটি ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তারা। কীভাবে তাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন এ বিষয়টি এগোলো। নেতানিয়াহু পশ্চিমা বিশ্বকেও এজন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, তৎকালীন ইসরাইল সরকার ও পশ্চিমাদের দুর্বলতার কারণে ইরানের স্বীকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন ইসরাইলের জন্য একরকম ভয়াবহ বিষয়। এটি ইরানের জন্য একটি বিরাট বিজয়। ইসরাইল যে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইরানের বিরুদ্ধে জোট গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা করে আসছিল, মধ্যপ্রাচ্যের এ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ইসরাইলের ওপর নিঃসন্দেহে একটি বড় আঘাত।

ইরানের প্রতি বিদ্বেষভাব শুধু ইসরাইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইহুদি মানেই তিনি যে দেশেরই নাগরিক হন না কেন, ইরানের যে কোনো বিষয়, তাদের কাছে স্পর্শকাতর বিষয় দাঁড়ায়। এ ব্যাপারে আমি আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই। বেশ কয়েক বছর আগে, ২০১১-২০১২ সালে আমি একটি উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়ায় অবস্থিত আর্মি ওয়ার কলেজ কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করি। সেমিনারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এর মধ্যে আমি ছাড়াও নাইজেরিয়া, মালে ও সৌদি আরবের ঊর্ধ্বতন মুসলিম সামরিক কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে যখন আলোচনা হচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্নেল পদবির কর্মকর্তা ক্ষিপ্তভাবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সরাসরি মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন, মিথ্যা তথ্য ও গল্প বলে তাদের ইরাক আক্রমণে বাধ্য করে। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়েছেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর ভর করে ইরাকের ওপর ওই অমানবিক যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন। কর্মকর্তাটি বুশকে একজন ঠকবাজ, মিথ্যাবাদী ও প্রবঞ্চক বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। এরপর আলোচনার ফ্লোর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য আরেক কর্মকর্তা আলোচনা শুরু করেন। তিনি অবশ্য ইহুদি ধর্মের বিশ্বাসী ব্যক্তি। তিনি ফ্লোর নিয়েই ইরানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। সব পশ্চিমা বিশ্ব তখন ইরানের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে সোচ্চার। কর্মকর্তাটি বলেন, ইরানকে যদি এক্ষুনি না থামানো যায়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ডেকে আনবে। তার বিশ্বাস, ইরান নাকি ইতোমধ্যে পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে; যা ইসরাইলের জন্য শুধু হুমকি নয়, বিশ্বের জন্য বিপজ্জনকও বটে। সুতরাং আর দেরি নয়, ইরানের ওপরও ইরাকের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ইহুদি কর্মকর্তার বক্তব্য শেষ হতেই ফ্লোর নিয়ে সেদিন ওই কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেছিলাম, ‘তুমি ইরান সম্পর্কে যে তথ্য উপস্থাপন করেছো, তার ভিত্তি কী? তুমি কি মনে করো, তোমরা যা বলো তা বাদ বাকি বিশ্ব, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ বিশ্বাস করে? ইরাকে আক্রমণের আগেও কিন্তু তোমাদের তৎকালীন পররাষ্ট্র সেক্রেটারি জেনারেল কলিন পাওয়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে বলেছিলেন, ইরাকে নাকি ব্যাপক ‘ওয়াপন অব মাস ডেসট্রাকশন’-এর অস্তিত্ব আছে। তোমাদের স্যাটেলাইটে গৃহীত ফটোগ্রাফেও নাকি স্পষ্ট দেখা গেছে, এরূপ ডাহা মিথ্যা কথা বলে ইরাকে আক্রমণ চালিয়ে লাখ লাখ মানুষ তোমরা হত্যা করেছো; দেশটিকে করেছো সম্পূর্ণ ধ্বংস। এ কথা কেবল তৃতীয় বিশ্বের মানুষই বলে না, কিছুক্ষণ আগে তোমাদেরই একজন কর্মকর্তা মিথ্যা তথ্যের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাদের সাবেক প্রেসিডেন্টকে দোষারোপ করে গেলেন।’ আমার এ বক্তব্যকে সাপোর্ট করে সেদিন নাইজেরিয়া ও মালের কর্মকর্তারও বক্তব্য রেখেছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য স্থাপন হোক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল শুধু নয়, অধিকাংশ পশ্চিমা দেশও চায় না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কের ফাটল ধরিয়ে রেখেছে। তাতে ইসরাইল যেমন নিজেদের নিরাপদ ভাবে, তেমনই অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে বিপুল অঙ্কের ব্যবসা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের তেলের সুবিধা তো তারা ভোগ করে আসছে অনেক আগে থেকেই। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একই ধরনের বৈদেশিক নীতি অবলম্বন করে থাকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেমন টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে, অপরদিকে চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের এ টানাপোড়েনের অন্য আরেকটি কারণও আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পর তেল উৎপাদন ও মূল্য নিয়ে সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের পরিবর্তনও এর জন্য দায়ী। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে সুরে হুমকি দিয়েছে, সৌদি আরব তা সহজে গ্রহণ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণও সৌদি আরবকে চীনের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও চীন তাদের সঙ্গে ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ক্রমেই বাড়তে থাকা ভূমিকাকে হুমকি হিসাবে দেখছেন। মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাদের দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, তাদেরই চোখের সামনে, কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সহযোগীদের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে দিনদিন ছোট করে দিয়ে, চীন শান্তির দূত হিসাবে অবতীর্ণ হচ্ছে।

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশ দুটির সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে কি বলা যায়? এর উত্তর হলো, না। এখনো এ দুটি দেশের মধ্যে অনেক ইস্যু নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বর্তমানে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সংঘাতের মূল বিষয় হিসাবে ইয়েমেনকেই ধরা হয়। এ সমস্যা, তা যতই জটিল ও স্পর্শকাতর হোক না কেন, সমাধানের মধ্যে, দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের মূল চাবিকাঠি নিহিত আছে। জানা গেছে, চীন এরই মধ্যে এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এরই মধ্যে ইয়েমেন সমস্যা সমাধানে চীন তার মধ্যস্থতার কিছুটা আভাস দিয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনার ক্ষেত্রে আপাতত দেশ দুটির নীতিনির্ধারকরা আশাবাদী বলেই মনে হচ্ছে। ফলে এ দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। পারস্পরিক উন্নয়ন ও মঙ্গলের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। এতে শুধু এ দুটো দেশের মধ্যেই নয়, এ ব্যবস্থা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে। এ ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশেগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে যদি ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে সারা মুসলিম জাহানের জন্যই তা মঙ্গলজনক। এ বিষয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘চীনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা এ অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করবে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পারস্পরিক উন্নয়ন ঘটাবে। তবে সৌদি আরব ও ইরানের এ নতুন সম্পর্কোন্নয়নে যে অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল; তা কাটিয়ে উঠতে তারা কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন