বাজেটে মধ্যবিত্তকেও বাঁচানোর ব্যবস্থা থাকা দরকার
jugantor
নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি
বাজেটে মধ্যবিত্তকেও বাঁচানোর ব্যবস্থা থাকা দরকার

  ড. আর এম দেবনাথ  

০১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

মনে হয় সরকার খুব অস্বস্তিতে আছে! তাদের দরকার টাকা, বেশি বেশি রাজস্ব, বেশি বেশি রাজস্ব আয়। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে কর হ্রাসের, কর ছাড়ের প্রস্তাব। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের প্রায় সব সংগঠনই প্রাক-বাজেট সংলাপ-আলোচনায় চাচ্ছে কর ছাড়, কর মওকুফ।

সর্বশেষ কাগজে দেখলাম ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) দাবি। খবরের শিরোনাম : ‘শিল্প খাতে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর প্রত্যাহার দাবি’। শুধু এফবিসিসিআই নয়, প্রায় সব ব্যবসায়ী সংগঠনই এ ধরনের দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে তুলে ধরছে।

এখন ব্যাপারটা বোঝা দরকার। সরকারের টাকার দরকার। প্রয়োজনীয় ও লক্ষ্যমাফিক রাজস্ব আয় হচ্ছে না। ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা কম। কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে, বলা যায় অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় তলানিতে। নিজেরাই বুজতে পারছি, আমাদের কর-রাজস্ব বাড়ানো দরকার। তদুপরি রয়েছে এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) খবরদারি। তাদের সাফ কথা-প্রতিবছর জিডিপির এক শতাংশ করে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে।

ঠিকই আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের ধারণারও মিল আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কর আসবে কোত্থেকে? চারদিক থেকে আসছে কর হ্রাসের প্রস্তাব। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় মন্দা আছে। কেনা-বেচায় মন্দা আছে। শিল্প উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। মানুষের আয়-রোজগার কম। অনেক মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছে। যশোরের গরুর খামারিরা গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকসানের মুখোমুখি হওয়ায় পশু বিক্রি করে দিচ্ছে।

বরিশালের লঞ্চ মালিকরা ‘প্যাসেঞ্জারের’ অভাবে লঞ্চ বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এসিআই মটরসের বাইসাইকেল ও ট্রাক্টর বিক্রিতে মন্দা চলছে। হ্রাস পেয়েছে তাদের বিক্রি। অনলাইন ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ফুড পান্ডার ব্যবসায় মন্দা নামায় কর্মীদের কর্মচ্যুত করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে রেমিট্যান্স প্রাপকরা এখন আর কোনো টাকা অ্যাকাউন্টে রাখছেন না। যা পাচ্ছেন তা-ই তুলে ফেলছেন। এদিকে গ্রামীণ আমানত, ব্যাংক আমানত হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাংক খাতে আমানত বৃদ্ধি যৎসামান্য।

তারপরও কথা আছে। মূল্যস্ফীতি ও সুদ ‘অ্যাপ্লিকেশনের’ হিসাব বাদ দিলে ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধি তো পায়ইনি, বরং কমেছে-অর্থাৎ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। মানুষ কেনাকাটা কমাচ্ছে। শিক্ষা খরচ কমাচ্ছে। ভোগ কমাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খরচ আর বহন করতে পারছে না। দুই-তিন লাখ প্রাইভেট কোম্পানি করদাতা থাকলেও তাদের অধিকাংশই কর রিটার্ন দিতে পারেনি এখনো। পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকে। খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, সয়াবিন-পাম অয়েল, দুধ, ফল ইত্যাদির বাজার থাকে চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তাদের বাজার মন্দা।

এই যে পরিস্থিতি ও ব্যবসার অবস্থার কথা তুলে ধরলাম, তাতে রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা কীভাবে হবে? অথচ রাজস্ব বৃদ্ধি করতেই হবে। এ অবস্থায় একটাই করণীয় আছে সরকারের। কর হ্রাস, কর ছাড়ের কথা বলবে না, রাজস্ব বৃদ্ধির সুপারিশ করতে পারে-এমন লোকদের সরকারের ডাকা উচিত। কথা বলা দরকার তাদের সঙ্গে। তারা বুদ্ধি দিক কীভাবে গরিব, মধ্যবিত্তের বোঝা না বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানো যায়। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব।

আমার ধারণা, এমন পরামর্শদাতা দেশে আছে। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বুদ্ধি তো আছেই। দুইয়ে মিলে একটা কিছু দাঁড় করানো যেতে পারে। আমার পরামর্শ, কথা বলুন এমন লোকদের সঙ্গে, যারা বর্তমান বৈরী অবস্থার মধ্যেও রাজস্ব বৃদ্ধির পথ দেখাতে পারেন। তবে তা অবশ্যই গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে হতে হবে।

আশা করি, সরকার এখন থেকে তাদের প্রাক-বাজেট আলোচনার ধারাটা পরিবর্তন করবে। একদিকে কথা বলবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সঙ্গে, অন্যদিকে কথা হবে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে। যারা কর হ্রাস, কর ছাড়ের কথা বলবেন, তারা তাদের বক্তব্য লিখিত জমা দেবেন এবং তা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে রাজস্ব বোর্ড দেখতে পারে অবশ্যই। এতে কোনো বাধা নেই। এমন যেন না হয় যে কর ছাড়ের কথাই প্রাধান্য পেল, আর বর্তমান অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কোনো মতবিনিময় হলো না।

বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত কারা? কারা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে খারাপ অবস্থায় আছেন? বলাই বাহুল্য, মূল্যস্ফীতিতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব এবং নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ। এ কথাও বলাই বাহুল্য যে, গরিবরা সংগঠিত নয়, নয় সংগঠিত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। তাদের সঙ্গে কথা বলাটার জরুরি দিকটি কেউই বিবেচনা করেন না। সবাই ধরে নেন ‘উন্নয়ন’ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এরা উপকৃত হবে। অথচ তা হওয়ার নয়, কোনোদিনই হয়নি। অতএব তাদের দিকে নজর দেওয়া দরকার। বিশেষ করে এবার। এবার মানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকালে। বোঝা যাচ্ছে, ‘বাজেটযজ্ঞ’ শুরু হয়ে গেছে। মাল-মসলা জোগাড় হচ্ছে। এখন আগামী বাজেট সম্পর্কে দুটি কথা বলা দরকার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য কী হওয়া উচিত? আমি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, মাথাপিছু আয়, বেসরকারি বিনিয়োগ ইত্যাদির কথা বলছি না। এসব বড় বড় বিষয়। আলোচিত হচ্ছে, হবে। মাথায় থাকবে এসব। থাক, তাতে আপত্তি কার? তবে আমার মতে, এবারের বাজেট হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্তকে বাঁচানোর বাজেট।

এজন্য যদি তিনটি কাজের কথা বলতে হয় তাহলে বলব : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এর লেজে লেজে অনেক কাজ আসবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গেই সম্পর্কিত বাজার, গরিব মানুষের ভাগ্য, মধ্যবিত্তের ভাগ্য। মূল্যস্ফীতিতে বাজার লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়ে বেপরোয়া। এবারেও তা-ই হচ্ছে, অতীতেও তা-ই হয়েছে। সরকারের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ইস্যুতে দুটি বড়ই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে। রাজস্বনীতি, বাণিজ্যনীতি ও মুদ্রানীতির সমন্বয় ঘটাতে হবে।

শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল’ বলে একটা কাউন্সিল আছে। অর্থ, বাণিজ্য, রাজস্ব ও পরিকল্পনা বিভাগের লোকেরা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের ভূমিকাকে জোরালো করা দরকার। এর সঙ্গে সঙ্গে চলতে হবে খোলাবাজারি ব্যবস্থা। সরকার এসব করছে। টিসিবির মাধ্যমে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বিনামূল্যে এবং কম মূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হচ্ছে।

তবে এ ব্যবস্থা অপ্রতুল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এর কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। গরিব মানুষকে বাঁচানোর আর কোনো ব্যবস্থা নেই। খোলাবাজারি বিপণন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে আগের চেয়ে বেশি গতিতে। বিনামূল্যে ও অল্পমূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করার কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে। নিম্নবিত্তও গরিব হয়েছে। তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা বাজেটে অবশ্যই থাকতে হবে।

এখানে মধ্যবিত্ত সম্পর্কে একটা কথা বলতেই হয়। এরা হাত পাততে পারে না, মুখ বুজে সব সহ্য করে। টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে পারে না। ঋণ নিতে লজ্জা বোধ করে। সাহায্য নিতে দ্বিধা করে। অথচ তারা ভীষণ কষ্টে আছে। খাওয়া দাওয়া কমিয়েছে/কমাচ্ছে। ছোট ছোট বাসায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা খরচ কমিয়েছে। শিশুর দুধের খরচ কমিয়েছে। যাতায়াত খরচ কমিয়েছে। প্রোটিনজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ হ্রাস করেছে। খরচ কমানোর আর কোনো পথ নেই তাদের। প্রশ্ন হলো, সরকার তাদের জন্য কী করেছে এতদিন? আগামী দিনে কী করবে? আমি মনে করি, তাদের জন্যও বিশেষ কার্ড প্রবর্তন করে ভোগ্যপণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিছু কিছু ভোগ্যপণ্য আছে যা মধ্যবিত্ত ভোগ করে, সেগুলোর ওপর থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার বা হ্রাস করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি এবারের বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার তা হচ্ছে ছোট ছোট উদ্যোক্তার বিষয়। দেশে এ মুহূর্তে ৭০-৮০ লাখ ছোট ছোট উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, কারখানা মালিক আছে বলে কাগজে দেখি। এরাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বাজার অর্থনীতির জাঁতাকলে তারা আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। একে তো দেশের ভেতরেই রয়েছে বড় বড় কোম্পানি, যারা আজকাল সবকিছুতেই হাত দিয়েছে, ছোটরা ‘চাকর-বাকরে’ পরিণত হচ্ছে, তদুপরি রয়েছে সস্তা চীনা পণ্যের বাজার দখল। যা কিছুতেই হাত দেওয়া যায়, তাতেই চীনা পণ্য। এর ফলে দেশি পণ্য বাজার হারাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

দেশে কামার-কুমার ছিল বড় একটা শ্রমিক-কারিগর গোষ্ঠী। হাজার হাজার পরিবার এ কাজ করে পরিবার চালাত। চীনা পণ্যের প্রতিযোগিতায় তারা আজ বিলীন হওয়ার পথে। তাদের দরকার ছিল পুঁজি ও প্রযুক্তি। দুটির একটিও তাদের নেই। ফলে তারা একদিকে দেশীয় বড় বড় কোম্পানির হাতে মার খাচ্ছে, অন্যদিকে মার খাচ্ছে সস্তা চীনা পণ্যের কাছে। এর কি কোনো প্রতিকার করা যায় না? নিশ্চয়ই করা যায়। মুশকিল হচ্ছে, এদের কথা উঠলেই এসএমই’র কথা বলা হয়। এসএমই অন্য জিনিস। এসবও আজকাল বড়দের দলে পড়েছে। এতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র পেশাজীবীর কোনো উপকার হয় না।

এমনকি যে ঋণ এসএমই খাতে দেওয়ার কথা, তাও বিতরণ হয় না। কারণ তাদের ‘কোলেটারেল’ দেওয়ার ক্ষমতা নেই, সম্পত্তি মর্টগেজ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হওয়া দরকার তাদের জন্য। এরা বাঁচলে লাখ লাখ পরিবার বাঁচবে। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগে যা হওয়ার নয়, হাজার টাকায় তা সম্ভব। এই দুর্দিনে তাদের পাশে থাকা দরকার। এরা বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। ছোটরাই বাংলাদেশ। বড়রা টাকা বানায়, দেশত্যাগ করে। ছোটরা দেশ গড়বে, দেশে থাকবে। যেমনটা করে রেমিট্যান্স প্রেরক প্রবাসীরা। তারা সব রোজগার দেশে পাঠায়, আর কিছু লোক তা পাচার করে।

সবশেষে বলব, আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি কাজ করলে দেশবাসীর দোয়া পাবে সরকার। অতি ধনীদের ওপর ‘ট্যাক্স’ করুন। বর্তমানে ধনীর যে সংজ্ঞা তা হাস্যকর। সংজ্ঞাটা ঠিক করে অতি ধনীদের ওপর করারোপ করুন। এটা আজকাল আইএমএফও চায়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও তা-ই চায়। করারোপ করুন ‘উইন্ডফল গেইনসে’। তেল, পেঁয়াজ, লবণ, ছোলা, চিনি, ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা কীভাবে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, তা আমরা সবাই জানি। তাছাড়া এই দুর্দিনেও কোন ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে, তাও আমরা জানি। তাদের কাছ থেকে অধিকতর কর আদায় করতে বাধা কোথায়?

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি

বাজেটে মধ্যবিত্তকেও বাঁচানোর ব্যবস্থা থাকা দরকার

 ড. আর এম দেবনাথ 
০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

মনে হয় সরকার খুব অস্বস্তিতে আছে! তাদের দরকার টাকা, বেশি বেশি রাজস্ব, বেশি বেশি রাজস্ব আয়। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে কর হ্রাসের, কর ছাড়ের প্রস্তাব। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের প্রায় সব সংগঠনই প্রাক-বাজেট সংলাপ-আলোচনায় চাচ্ছে কর ছাড়, কর মওকুফ।

সর্বশেষ কাগজে দেখলাম ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) দাবি। খবরের শিরোনাম : ‘শিল্প খাতে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর প্রত্যাহার দাবি’। শুধু এফবিসিসিআই নয়, প্রায় সব ব্যবসায়ী সংগঠনই এ ধরনের দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে তুলে ধরছে।

এখন ব্যাপারটা বোঝা দরকার। সরকারের টাকার দরকার। প্রয়োজনীয় ও লক্ষ্যমাফিক রাজস্ব আয় হচ্ছে না। ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা কম। কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে, বলা যায় অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় তলানিতে। নিজেরাই বুজতে পারছি, আমাদের কর-রাজস্ব বাড়ানো দরকার। তদুপরি রয়েছে এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) খবরদারি। তাদের সাফ কথা-প্রতিবছর জিডিপির এক শতাংশ করে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে।

ঠিকই আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের ধারণারও মিল আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কর আসবে কোত্থেকে? চারদিক থেকে আসছে কর হ্রাসের প্রস্তাব। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় মন্দা আছে। কেনা-বেচায় মন্দা আছে। শিল্প উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। মানুষের আয়-রোজগার কম। অনেক মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছে। যশোরের গরুর খামারিরা গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকসানের মুখোমুখি হওয়ায় পশু বিক্রি করে দিচ্ছে।

বরিশালের লঞ্চ মালিকরা ‘প্যাসেঞ্জারের’ অভাবে লঞ্চ বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এসিআই মটরসের বাইসাইকেল ও ট্রাক্টর বিক্রিতে মন্দা চলছে। হ্রাস পেয়েছে তাদের বিক্রি। অনলাইন ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ফুড পান্ডার ব্যবসায় মন্দা নামায় কর্মীদের কর্মচ্যুত করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে রেমিট্যান্স প্রাপকরা এখন আর কোনো টাকা অ্যাকাউন্টে রাখছেন না। যা পাচ্ছেন তা-ই তুলে ফেলছেন। এদিকে গ্রামীণ আমানত, ব্যাংক আমানত হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাংক খাতে আমানত বৃদ্ধি যৎসামান্য।

তারপরও কথা আছে। মূল্যস্ফীতি ও সুদ ‘অ্যাপ্লিকেশনের’ হিসাব বাদ দিলে ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধি তো পায়ইনি, বরং কমেছে-অর্থাৎ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। মানুষ কেনাকাটা কমাচ্ছে। শিক্ষা খরচ কমাচ্ছে। ভোগ কমাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খরচ আর বহন করতে পারছে না। দুই-তিন লাখ প্রাইভেট কোম্পানি করদাতা থাকলেও তাদের অধিকাংশই কর রিটার্ন দিতে পারেনি এখনো। পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকে। খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, সয়াবিন-পাম অয়েল, দুধ, ফল ইত্যাদির বাজার থাকে চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তাদের বাজার মন্দা।

এই যে পরিস্থিতি ও ব্যবসার অবস্থার কথা তুলে ধরলাম, তাতে রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা কীভাবে হবে? অথচ রাজস্ব বৃদ্ধি করতেই হবে। এ অবস্থায় একটাই করণীয় আছে সরকারের। কর হ্রাস, কর ছাড়ের কথা বলবে না, রাজস্ব বৃদ্ধির সুপারিশ করতে পারে-এমন লোকদের সরকারের ডাকা উচিত। কথা বলা দরকার তাদের সঙ্গে। তারা বুদ্ধি দিক কীভাবে গরিব, মধ্যবিত্তের বোঝা না বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানো যায়। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব।

আমার ধারণা, এমন পরামর্শদাতা দেশে আছে। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বুদ্ধি তো আছেই। দুইয়ে মিলে একটা কিছু দাঁড় করানো যেতে পারে। আমার পরামর্শ, কথা বলুন এমন লোকদের সঙ্গে, যারা বর্তমান বৈরী অবস্থার মধ্যেও রাজস্ব বৃদ্ধির পথ দেখাতে পারেন। তবে তা অবশ্যই গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে হতে হবে।

আশা করি, সরকার এখন থেকে তাদের প্রাক-বাজেট আলোচনার ধারাটা পরিবর্তন করবে। একদিকে কথা বলবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সঙ্গে, অন্যদিকে কথা হবে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে। যারা কর হ্রাস, কর ছাড়ের কথা বলবেন, তারা তাদের বক্তব্য লিখিত জমা দেবেন এবং তা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে রাজস্ব বোর্ড দেখতে পারে অবশ্যই। এতে কোনো বাধা নেই। এমন যেন না হয় যে কর ছাড়ের কথাই প্রাধান্য পেল, আর বর্তমান অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কোনো মতবিনিময় হলো না।

বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত কারা? কারা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে খারাপ অবস্থায় আছেন? বলাই বাহুল্য, মূল্যস্ফীতিতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব এবং নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ। এ কথাও বলাই বাহুল্য যে, গরিবরা সংগঠিত নয়, নয় সংগঠিত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। তাদের সঙ্গে কথা বলাটার জরুরি দিকটি কেউই বিবেচনা করেন না। সবাই ধরে নেন ‘উন্নয়ন’ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এরা উপকৃত হবে। অথচ তা হওয়ার নয়, কোনোদিনই হয়নি। অতএব তাদের দিকে নজর দেওয়া দরকার। বিশেষ করে এবার। এবার মানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকালে। বোঝা যাচ্ছে, ‘বাজেটযজ্ঞ’ শুরু হয়ে গেছে। মাল-মসলা জোগাড় হচ্ছে। এখন আগামী বাজেট সম্পর্কে দুটি কথা বলা দরকার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য কী হওয়া উচিত? আমি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, মাথাপিছু আয়, বেসরকারি বিনিয়োগ ইত্যাদির কথা বলছি না। এসব বড় বড় বিষয়। আলোচিত হচ্ছে, হবে। মাথায় থাকবে এসব। থাক, তাতে আপত্তি কার? তবে আমার মতে, এবারের বাজেট হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্তকে বাঁচানোর বাজেট।

এজন্য যদি তিনটি কাজের কথা বলতে হয় তাহলে বলব : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এর লেজে লেজে অনেক কাজ আসবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গেই সম্পর্কিত বাজার, গরিব মানুষের ভাগ্য, মধ্যবিত্তের ভাগ্য। মূল্যস্ফীতিতে বাজার লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়ে বেপরোয়া। এবারেও তা-ই হচ্ছে, অতীতেও তা-ই হয়েছে। সরকারের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ইস্যুতে দুটি বড়ই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে। রাজস্বনীতি, বাণিজ্যনীতি ও মুদ্রানীতির সমন্বয় ঘটাতে হবে।

শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল’ বলে একটা কাউন্সিল আছে। অর্থ, বাণিজ্য, রাজস্ব ও পরিকল্পনা বিভাগের লোকেরা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের ভূমিকাকে জোরালো করা দরকার। এর সঙ্গে সঙ্গে চলতে হবে খোলাবাজারি ব্যবস্থা। সরকার এসব করছে। টিসিবির মাধ্যমে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বিনামূল্যে এবং কম মূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হচ্ছে।

তবে এ ব্যবস্থা অপ্রতুল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এর কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। গরিব মানুষকে বাঁচানোর আর কোনো ব্যবস্থা নেই। খোলাবাজারি বিপণন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে আগের চেয়ে বেশি গতিতে। বিনামূল্যে ও অল্পমূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করার কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে। নিম্নবিত্তও গরিব হয়েছে। তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা বাজেটে অবশ্যই থাকতে হবে।

এখানে মধ্যবিত্ত সম্পর্কে একটা কথা বলতেই হয়। এরা হাত পাততে পারে না, মুখ বুজে সব সহ্য করে। টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে পারে না। ঋণ নিতে লজ্জা বোধ করে। সাহায্য নিতে দ্বিধা করে। অথচ তারা ভীষণ কষ্টে আছে। খাওয়া দাওয়া কমিয়েছে/কমাচ্ছে। ছোট ছোট বাসায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা খরচ কমিয়েছে। শিশুর দুধের খরচ কমিয়েছে। যাতায়াত খরচ কমিয়েছে। প্রোটিনজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ হ্রাস করেছে। খরচ কমানোর আর কোনো পথ নেই তাদের। প্রশ্ন হলো, সরকার তাদের জন্য কী করেছে এতদিন? আগামী দিনে কী করবে? আমি মনে করি, তাদের জন্যও বিশেষ কার্ড প্রবর্তন করে ভোগ্যপণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিছু কিছু ভোগ্যপণ্য আছে যা মধ্যবিত্ত ভোগ করে, সেগুলোর ওপর থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার বা হ্রাস করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি এবারের বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার তা হচ্ছে ছোট ছোট উদ্যোক্তার বিষয়। দেশে এ মুহূর্তে ৭০-৮০ লাখ ছোট ছোট উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, কারখানা মালিক আছে বলে কাগজে দেখি। এরাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বাজার অর্থনীতির জাঁতাকলে তারা আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। একে তো দেশের ভেতরেই রয়েছে বড় বড় কোম্পানি, যারা আজকাল সবকিছুতেই হাত দিয়েছে, ছোটরা ‘চাকর-বাকরে’ পরিণত হচ্ছে, তদুপরি রয়েছে সস্তা চীনা পণ্যের বাজার দখল। যা কিছুতেই হাত দেওয়া যায়, তাতেই চীনা পণ্য। এর ফলে দেশি পণ্য বাজার হারাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

দেশে কামার-কুমার ছিল বড় একটা শ্রমিক-কারিগর গোষ্ঠী। হাজার হাজার পরিবার এ কাজ করে পরিবার চালাত। চীনা পণ্যের প্রতিযোগিতায় তারা আজ বিলীন হওয়ার পথে। তাদের দরকার ছিল পুঁজি ও প্রযুক্তি। দুটির একটিও তাদের নেই। ফলে তারা একদিকে দেশীয় বড় বড় কোম্পানির হাতে মার খাচ্ছে, অন্যদিকে মার খাচ্ছে সস্তা চীনা পণ্যের কাছে। এর কি কোনো প্রতিকার করা যায় না? নিশ্চয়ই করা যায়। মুশকিল হচ্ছে, এদের কথা উঠলেই এসএমই’র কথা বলা হয়। এসএমই অন্য জিনিস। এসবও আজকাল বড়দের দলে পড়েছে। এতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র পেশাজীবীর কোনো উপকার হয় না।

এমনকি যে ঋণ এসএমই খাতে দেওয়ার কথা, তাও বিতরণ হয় না। কারণ তাদের ‘কোলেটারেল’ দেওয়ার ক্ষমতা নেই, সম্পত্তি মর্টগেজ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হওয়া দরকার তাদের জন্য। এরা বাঁচলে লাখ লাখ পরিবার বাঁচবে। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগে যা হওয়ার নয়, হাজার টাকায় তা সম্ভব। এই দুর্দিনে তাদের পাশে থাকা দরকার। এরা বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। ছোটরাই বাংলাদেশ। বড়রা টাকা বানায়, দেশত্যাগ করে। ছোটরা দেশ গড়বে, দেশে থাকবে। যেমনটা করে রেমিট্যান্স প্রেরক প্রবাসীরা। তারা সব রোজগার দেশে পাঠায়, আর কিছু লোক তা পাচার করে।

সবশেষে বলব, আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি কাজ করলে দেশবাসীর দোয়া পাবে সরকার। অতি ধনীদের ওপর ‘ট্যাক্স’ করুন। বর্তমানে ধনীর যে সংজ্ঞা তা হাস্যকর। সংজ্ঞাটা ঠিক করে অতি ধনীদের ওপর করারোপ করুন। এটা আজকাল আইএমএফও চায়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও তা-ই চায়। করারোপ করুন ‘উইন্ডফল গেইনসে’। তেল, পেঁয়াজ, লবণ, ছোলা, চিনি, ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা কীভাবে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, তা আমরা সবাই জানি। তাছাড়া এই দুর্দিনেও কোন ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে, তাও আমরা জানি। তাদের কাছ থেকে অধিকতর কর আদায় করতে বাধা কোথায়?

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন