দেশে বিশ্বব্যাংকের কর্মকাণ্ড কতটা জনবান্ধব?
বিশ্বব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক’ (আইবিআরডি) নামে ১৯৪৪ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির অব্যবহিত আগে। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর, বিশেষত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় ওই সময়ে যেসব ঔপনিবেশিক দেশ স্বাধীনতা লাভ করছিল, সেসব সদ্যস্বাধীন দেশের যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্যই তখন যুদ্ধকালীন মিত্রজোটের সদস্যদের নিয়ে আইবিআরডি গঠিত হয়েছিল।
বস্তুত এর নামের মধ্যেই তার কাজের প্রকৃতির ব্যাখ্যা ছিল এবং বিশ্বব্যাংক নাম ধারণ করার আগপর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা সেভাবেই কাজ করে আসছিল, যার আওতায় পুনর্গঠন সহায়তার পাশাপাশি মৌলিক অবকাঠামো ও পরিমাপযোগ্য আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর সেসব সহায়তার আওতায় ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে এশিয়ার কিছু দেশ অতি সীমিত পরিসরে হলেও মোটামুটিভাবে উপকৃত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
কিন্তু আইবিআরডি থেকে বিশ্বব্যাংক নাম ধারণ করার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এর সদস্য দেশগুলোর পুনর্গঠন ও মৌলিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম থেকে বহুলাংশে সরে আসে এবং এক্ষেত্রে এ সমালোচনাও চালু আছে যে, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, সমাজের মৌলিক উন্নতিসাধন সংক্রান্ত তার যে মূল কাজ, সেটিকে আড়াল করার জন্যই সে সময়ের চতুর নীতিনির্ধারকরা আইবিআরডির স্থলে নামকরণ করেন বিশ্বব্যাংক। আর যখন থেকে এটি বিশ্বব্যাংক নাম ধারণ করে, তখন থেকে এটি মূলত ঋণের বিনিময়ে পরামর্শ বিলানোর এক আগ্রাসী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং সেসব পরামর্শ শেষ পর্যন্ত গ্রহীতাদের কাছে চরম পীড়াদায়ক ও অস্বস্তিকর খবরদারিতে রূপান্তরিত হয়। তাদের এ ধরনের খবরদারিতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশকেই ভুগতে হয়েছে, যেগুলোর কোনো কোনোটি এখনো স্থায়ী ক্ষত হয়ে আছে এবং এরূপ একাধিক পোড়া ক্ষতের অস্তিত্ব বাংলাদেশেও রয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ আদর্শের প্রশ্নে কোনোদিন আপস করেননি। আদর্শিক কারণেই তিনি বিশ্বব্যাংকের মতো একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আগ্রহে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশকে ১৬ কোটি ৭৪ লাখ মার্কিন ডলার ঋণদানের প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মধ্যে ৫ কোটি ডলার পণ্যঋণ এবং ১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার প্রকল্পঋণ। কিন্তু ঋণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিশ্বব্যাংক যথাসময়ে ওই অর্থ ছাড় করেনি আর ওই সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল অনুদান আঙ্গিকের পুনর্গঠন সহায়তা, যা প্রদানের সুযোগ বিশ্বব্যাংকের ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রকৃত প্রয়োজনকে বিশ্বব্যাংক সেদিন শুধু উপেক্ষাই করেনি, অনুদানের পরিবর্তে তারা ঋণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটিও দ্রুততার সঙ্গে পূরণ করেনি।
১৯৭৫-পরবর্তী সামরিক সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে জেঁকে বসে। এ সময়ে তাদের পরামর্শেই লোকসান বন্ধের কথা বলে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের কলকারখানাগুলো পানির দামে (পানি কিনে খাওয়ার রীতি তখনও ব্যাপকভাবে চালু হয়নি) বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এগুলো যাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাদের অধিকাংশই প্রকৃত উদ্যোক্তা ছিলেন না বিধায় তাদের কিনে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়; কিংবা সেগুলো বন্ধ করে সে জায়গায় অন্যকিছু করার মতলব নিয়েই তারা সেগুলো কিনেছিলেন। মোট কথা, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মেনে বাংলাদেশকে শিল্প-বিমুক্তকরণের কাজটি তখন বেশ অবলীলায়ই সম্পন্ন হয়। অথচ বিরাষ্ট্রীয়করণের এ কাজটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় গুছিয়ে করতে পারলে ওই প্রতিটি কারখানাই এদেশে টিকে যেতে পারত। উল্লেখ্য, এ শিল্পগুলোর অধিকাংশই ১৯৬০-এর দশকে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে স্থাপন করা হয়েছিল। ফলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার আওতায় চালাতে পারলে এগুলো লাভজনকভাবে টিকে না থাকার কোনোই কারণ ছিল না। কিন্তু বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সে পথে চালিত না করে বিশেষ দেশ বা বিদেশি গোষ্ঠীর পণ্যের বাজারে পরিণত করতে চেয়েছিল বলেই রাষ্ট্রীয় কলকারখানাগুলোকে তারা ঢালাওভাবে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশকে বস্ত্রশিল্প (ফেব্রিক) স্থাপনে উদ্যোগী না হয়ে আমদানিকৃত কাপড়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি পোশাকশিল্প গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছিল। তাদের অভিমত ছিল, বস্ত্রশিল্প বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না এবং তা করে চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না; তার চেয়ে বরং শুধু তৈরি পোশাকশিল্পে মনোনিবেশ করাটাই হবে এদেশের জন্য শ্রেয়তর বিকল্প। এরূপ পরিস্থিতিতে আমলা-নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমলারা যেখানে নিয়তই দাতাদের মাধ্যমে বৃত্তি, বিদেশ ভ্রমণ, পরামর্শ সেবা (কনসালটেন্সি), নিজের ও পোষ্যদের চাকরিবাকরি ইত্যাদি দ্বারা লাভবান হয়ে থাকেন, সেখানে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শের বাইরে চলে যাবে-এটা ছিল একেবারেই অকল্পনীয় এবং তা ঘটেওনি। এ অবস্থায় সরকারের আর্থিক নীতির (কর, শুল্ক, সুদের হার, প্রণোদনা প্রভৃতি) অনানুকূল্যে পড়ে দেশে মৌলিক বস্ত্রশিল্প স্থাপনের কাজ অনেকখানি পিছিয়ে পড়ে। অবশ্য এরূপ বৈরিতার মুখেও যে সে সময় কিছু বস্ত্র কারখানা গড়ে উঠেছিল, সেটি সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দূরদৃষ্টি ও সাহসের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।
বস্ত্রশিল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের উপরিউক্ত ধরনের পরামর্শের ব্যাপারে এরূপ সমালোচনাও চালু আছে যে, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত একটি দেশের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা সেদেশের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়েই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশকে এরূপ ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর এ প্রসঙ্গে এটাও বলা দরকার, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া পরামর্শের একটি বড় অংশই এরূপ অস্বচ্ছতায় ভরা বলে অভিযোগ রয়েছে, যার ভূরিভূরি প্রমাণ বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার মধ্যে দেখা যায়।
রেলকে লাভজনক করার কথা বলে বাংলাদেশে রেলপথের একটি বিরাট অংশ বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শদাতা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও। সবচেয়ে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য পরিবহণ হিসাবে সারা পৃথিবীতেই যেখানে রেল জনপ্রিয়, সেখানে বিশ্বব্যাংক কার স্বার্থে ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার এদেশে রেলপথ উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল? সুনির্দিষ্ট তথ্য হচ্ছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মোটরযান উৎপাদক, বিপণনকারী ও পরিবহণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টাই ছিল এক্ষেত্রে মুখ্য।
সাম্প্রতিক উদাহরণে আসা যাক। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ও অর্থায়নে যমুনা নদীকে সরুকরণের একটি প্রকল্প সম্প্রতি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)। এতদিন নদী ও অন্যান্য জলাশয় দখলের কাজটি মূলত করত বেসরকারি লোকজন। স্থানে স্থানে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও তা করতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও এসব দখলদারিত্বের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠছে! এটি কি তাহলে নিকট ভবিষ্যতের পৃথিবীতে পুঁজিবাদী শোষণের নতুন কোনো কৌশল, কাঠামো ও প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে? তবে এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, জলবায়ু সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ঘোষণা অনুযায়ী নদী দখল ও তা ধ্বংসকরণের মতো গুরুতর পরিবেশবিনাশী প্রকল্পে কোনোভাবেই বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের কথা নয়। আর বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও নদী দখলের মতো কাজটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বিশ্বব্যাংক কি তাহলে জেনেশুনেই এরূপ অবৈধ কাজে যুক্ত হচ্ছে? উল্লেখ্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে ওই নদী সরুকরণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
নতুন সম্পর্কের আওতায় বিশ্বব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশকে ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণদানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ২ মে। যে পাঁচটি প্রকল্পে এ ঋণ দেওয়া হবে, সেগুলোর মধ্যে অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া বাদে বাকি সবকটিই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সেবাদাতা ও সেবাগ্রহণকারী অংশীজনদের ব্যবস্থাপনা দক্ষতার উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্প। অর্থাৎ সংশ্লিষ্টদের বুদ্ধি-পরামর্শদানই হচ্ছে এ প্রকল্পগুলোর মূল কাজ। আর এ পরামর্শ দেওয়া হবে দুর্যোগ মোকাবিলা, সবুজ বিনিয়োগ, সবুজায়ন ও পরিবেশসম্মত এসএমই স্থাপন বিষয়ে। হায় ভাগ্য! প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এসব পরামর্শ! দুর্যোগের সঙ্গে বসবাসের উপায় ও কৌশলের বিষয়ে এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের চেয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শকরা বেশি জানেন? সবুজায়নের জন্য কখন কী করতে হবে, সে ধারণা বাংলাদেশের সৃজনশীল কৃষক ও সাধারণ মানুষের চেয়ে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পারিতোষিকের বিশেষজ্ঞদের বেশি রয়েছে?
অবশিষ্ট প্রকল্পটির মাধ্যমে ভারত, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের মূল সুবিধাভোগী হবে আসলে ভারত। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট যোগাযোগ অবকাঠামো ব্যবহার করে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ আরও বেশি করে বাংলাদেশের নৌ, সমুদ্র ও স্থলবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাবে; এবং ধারণা করা যায়, এতে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তবে এর ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি যে আরও স্ফীত হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। অবশ্য এটা ঠিক যে, এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো না কোনো দেশ অবশ্যই লাভবান হবে।
তথ্যগতভাবে এটা ঠিক যে, টাকার অঙ্কে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী এবং ঋণ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে বৃহত্তম কিস্তি গ্রহীতাও। নিজেরা খেয়ে, না খেয়ে বা আধপেট খেয়ে হলেও এদেশের সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রকে নিয়মিত অর্থ জুগিয়েছে বিশ্বব্যাংকের মতো মহাজনদের ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করার জন্য। সামনে যেসব নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেসবের কিস্তিও হয়তো সেভাবেই পরিশোধ করা হবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক সময়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি হয়নি।’ কিন্তু কিস্তি খেলাপি না হলেও গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে গৃহীত ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের কতটা এদেশের বাস্তব ও গুণগত উন্নয়নে কাজে লেগেছে এবং আসন্ন পাঁচ প্রকল্প কী কাজে লাগবে, সেসব যথার্থই গুরুতর প্রশ্ন বৈকি! তবে নতুন পাঁচ প্রকল্পের কারণে বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ডেস্কগুলোর কর্মী ও পরামর্শকদের চাকরি যে প্রকল্পের মেয়াদ পর্যন্ত মোটামুটি স্থায়ী হয়ে গেল, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। কিন্তু এ প্রকল্পগুলোর আওতায় গৃহীত ঋণের দ্বারা বাংলাদেশ যে সত্যি সত্যি লাভবান হবে, সে বিষয়ে কি নিশ্চিত হওয়া গেছে?
আবু তাহের খান : সাবেক পরিচালক, বিসিক; ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত
atkhan56@gmail.com
দেশে বিশ্বব্যাংকের কর্মকাণ্ড কতটা জনবান্ধব?
আবু তাহের খান
২৮ মে ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক’ (আইবিআরডি) নামে ১৯৪৪ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির অব্যবহিত আগে। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর, বিশেষত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় ওই সময়ে যেসব ঔপনিবেশিক দেশ স্বাধীনতা লাভ করছিল, সেসব সদ্যস্বাধীন দেশের যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্যই তখন যুদ্ধকালীন মিত্রজোটের সদস্যদের নিয়ে আইবিআরডি গঠিত হয়েছিল।
বস্তুত এর নামের মধ্যেই তার কাজের প্রকৃতির ব্যাখ্যা ছিল এবং বিশ্বব্যাংক নাম ধারণ করার আগপর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা সেভাবেই কাজ করে আসছিল, যার আওতায় পুনর্গঠন সহায়তার পাশাপাশি মৌলিক অবকাঠামো ও পরিমাপযোগ্য আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর সেসব সহায়তার আওতায় ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে এশিয়ার কিছু দেশ অতি সীমিত পরিসরে হলেও মোটামুটিভাবে উপকৃত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
কিন্তু আইবিআরডি থেকে বিশ্বব্যাংক নাম ধারণ করার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এর সদস্য দেশগুলোর পুনর্গঠন ও মৌলিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম থেকে বহুলাংশে সরে আসে এবং এক্ষেত্রে এ সমালোচনাও চালু আছে যে, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, সমাজের মৌলিক উন্নতিসাধন সংক্রান্ত তার যে মূল কাজ, সেটিকে আড়াল করার জন্যই সে সময়ের চতুর নীতিনির্ধারকরা আইবিআরডির স্থলে নামকরণ করেন বিশ্বব্যাংক। আর যখন থেকে এটি বিশ্বব্যাংক নাম ধারণ করে, তখন থেকে এটি মূলত ঋণের বিনিময়ে পরামর্শ বিলানোর এক আগ্রাসী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং সেসব পরামর্শ শেষ পর্যন্ত গ্রহীতাদের কাছে চরম পীড়াদায়ক ও অস্বস্তিকর খবরদারিতে রূপান্তরিত হয়। তাদের এ ধরনের খবরদারিতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশকেই ভুগতে হয়েছে, যেগুলোর কোনো কোনোটি এখনো স্থায়ী ক্ষত হয়ে আছে এবং এরূপ একাধিক পোড়া ক্ষতের অস্তিত্ব বাংলাদেশেও রয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ আদর্শের প্রশ্নে কোনোদিন আপস করেননি। আদর্শিক কারণেই তিনি বিশ্বব্যাংকের মতো একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আগ্রহে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশকে ১৬ কোটি ৭৪ লাখ মার্কিন ডলার ঋণদানের প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মধ্যে ৫ কোটি ডলার পণ্যঋণ এবং ১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার প্রকল্পঋণ। কিন্তু ঋণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিশ্বব্যাংক যথাসময়ে ওই অর্থ ছাড় করেনি আর ওই সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল অনুদান আঙ্গিকের পুনর্গঠন সহায়তা, যা প্রদানের সুযোগ বিশ্বব্যাংকের ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রকৃত প্রয়োজনকে বিশ্বব্যাংক সেদিন শুধু উপেক্ষাই করেনি, অনুদানের পরিবর্তে তারা ঋণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটিও দ্রুততার সঙ্গে পূরণ করেনি।
১৯৭৫-পরবর্তী সামরিক সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে জেঁকে বসে। এ সময়ে তাদের পরামর্শেই লোকসান বন্ধের কথা বলে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের কলকারখানাগুলো পানির দামে (পানি কিনে খাওয়ার রীতি তখনও ব্যাপকভাবে চালু হয়নি) বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এগুলো যাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাদের অধিকাংশই প্রকৃত উদ্যোক্তা ছিলেন না বিধায় তাদের কিনে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়; কিংবা সেগুলো বন্ধ করে সে জায়গায় অন্যকিছু করার মতলব নিয়েই তারা সেগুলো কিনেছিলেন। মোট কথা, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মেনে বাংলাদেশকে শিল্প-বিমুক্তকরণের কাজটি তখন বেশ অবলীলায়ই সম্পন্ন হয়। অথচ বিরাষ্ট্রীয়করণের এ কাজটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় গুছিয়ে করতে পারলে ওই প্রতিটি কারখানাই এদেশে টিকে যেতে পারত। উল্লেখ্য, এ শিল্পগুলোর অধিকাংশই ১৯৬০-এর দশকে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে স্থাপন করা হয়েছিল। ফলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার আওতায় চালাতে পারলে এগুলো লাভজনকভাবে টিকে না থাকার কোনোই কারণ ছিল না। কিন্তু বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সে পথে চালিত না করে বিশেষ দেশ বা বিদেশি গোষ্ঠীর পণ্যের বাজারে পরিণত করতে চেয়েছিল বলেই রাষ্ট্রীয় কলকারখানাগুলোকে তারা ঢালাওভাবে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশকে বস্ত্রশিল্প (ফেব্রিক) স্থাপনে উদ্যোগী না হয়ে আমদানিকৃত কাপড়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি পোশাকশিল্প গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছিল। তাদের অভিমত ছিল, বস্ত্রশিল্প বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না এবং তা করে চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না; তার চেয়ে বরং শুধু তৈরি পোশাকশিল্পে মনোনিবেশ করাটাই হবে এদেশের জন্য শ্রেয়তর বিকল্প। এরূপ পরিস্থিতিতে আমলা-নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমলারা যেখানে নিয়তই দাতাদের মাধ্যমে বৃত্তি, বিদেশ ভ্রমণ, পরামর্শ সেবা (কনসালটেন্সি), নিজের ও পোষ্যদের চাকরিবাকরি ইত্যাদি দ্বারা লাভবান হয়ে থাকেন, সেখানে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শের বাইরে চলে যাবে-এটা ছিল একেবারেই অকল্পনীয় এবং তা ঘটেওনি। এ অবস্থায় সরকারের আর্থিক নীতির (কর, শুল্ক, সুদের হার, প্রণোদনা প্রভৃতি) অনানুকূল্যে পড়ে দেশে মৌলিক বস্ত্রশিল্প স্থাপনের কাজ অনেকখানি পিছিয়ে পড়ে। অবশ্য এরূপ বৈরিতার মুখেও যে সে সময় কিছু বস্ত্র কারখানা গড়ে উঠেছিল, সেটি সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দূরদৃষ্টি ও সাহসের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।
বস্ত্রশিল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের উপরিউক্ত ধরনের পরামর্শের ব্যাপারে এরূপ সমালোচনাও চালু আছে যে, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত একটি দেশের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা সেদেশের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়েই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশকে এরূপ ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর এ প্রসঙ্গে এটাও বলা দরকার, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া পরামর্শের একটি বড় অংশই এরূপ অস্বচ্ছতায় ভরা বলে অভিযোগ রয়েছে, যার ভূরিভূরি প্রমাণ বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার মধ্যে দেখা যায়।
রেলকে লাভজনক করার কথা বলে বাংলাদেশে রেলপথের একটি বিরাট অংশ বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শদাতা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও। সবচেয়ে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য পরিবহণ হিসাবে সারা পৃথিবীতেই যেখানে রেল জনপ্রিয়, সেখানে বিশ্বব্যাংক কার স্বার্থে ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার এদেশে রেলপথ উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল? সুনির্দিষ্ট তথ্য হচ্ছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মোটরযান উৎপাদক, বিপণনকারী ও পরিবহণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টাই ছিল এক্ষেত্রে মুখ্য।
সাম্প্রতিক উদাহরণে আসা যাক। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ও অর্থায়নে যমুনা নদীকে সরুকরণের একটি প্রকল্প সম্প্রতি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)। এতদিন নদী ও অন্যান্য জলাশয় দখলের কাজটি মূলত করত বেসরকারি লোকজন। স্থানে স্থানে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও তা করতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও এসব দখলদারিত্বের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠছে! এটি কি তাহলে নিকট ভবিষ্যতের পৃথিবীতে পুঁজিবাদী শোষণের নতুন কোনো কৌশল, কাঠামো ও প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে? তবে এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, জলবায়ু সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ঘোষণা অনুযায়ী নদী দখল ও তা ধ্বংসকরণের মতো গুরুতর পরিবেশবিনাশী প্রকল্পে কোনোভাবেই বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের কথা নয়। আর বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও নদী দখলের মতো কাজটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বিশ্বব্যাংক কি তাহলে জেনেশুনেই এরূপ অবৈধ কাজে যুক্ত হচ্ছে? উল্লেখ্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে ওই নদী সরুকরণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
নতুন সম্পর্কের আওতায় বিশ্বব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশকে ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণদানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ২ মে। যে পাঁচটি প্রকল্পে এ ঋণ দেওয়া হবে, সেগুলোর মধ্যে অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া বাদে বাকি সবকটিই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সেবাদাতা ও সেবাগ্রহণকারী অংশীজনদের ব্যবস্থাপনা দক্ষতার উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্প। অর্থাৎ সংশ্লিষ্টদের বুদ্ধি-পরামর্শদানই হচ্ছে এ প্রকল্পগুলোর মূল কাজ। আর এ পরামর্শ দেওয়া হবে দুর্যোগ মোকাবিলা, সবুজ বিনিয়োগ, সবুজায়ন ও পরিবেশসম্মত এসএমই স্থাপন বিষয়ে। হায় ভাগ্য! প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এসব পরামর্শ! দুর্যোগের সঙ্গে বসবাসের উপায় ও কৌশলের বিষয়ে এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের চেয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শকরা বেশি জানেন? সবুজায়নের জন্য কখন কী করতে হবে, সে ধারণা বাংলাদেশের সৃজনশীল কৃষক ও সাধারণ মানুষের চেয়ে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পারিতোষিকের বিশেষজ্ঞদের বেশি রয়েছে?
অবশিষ্ট প্রকল্পটির মাধ্যমে ভারত, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের মূল সুবিধাভোগী হবে আসলে ভারত। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট যোগাযোগ অবকাঠামো ব্যবহার করে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ আরও বেশি করে বাংলাদেশের নৌ, সমুদ্র ও স্থলবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাবে; এবং ধারণা করা যায়, এতে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তবে এর ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি যে আরও স্ফীত হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। অবশ্য এটা ঠিক যে, এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো না কোনো দেশ অবশ্যই লাভবান হবে।
তথ্যগতভাবে এটা ঠিক যে, টাকার অঙ্কে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী এবং ঋণ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে বৃহত্তম কিস্তি গ্রহীতাও। নিজেরা খেয়ে, না খেয়ে বা আধপেট খেয়ে হলেও এদেশের সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রকে নিয়মিত অর্থ জুগিয়েছে বিশ্বব্যাংকের মতো মহাজনদের ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করার জন্য। সামনে যেসব নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেসবের কিস্তিও হয়তো সেভাবেই পরিশোধ করা হবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক সময়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি হয়নি।’ কিন্তু কিস্তি খেলাপি না হলেও গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে গৃহীত ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের কতটা এদেশের বাস্তব ও গুণগত উন্নয়নে কাজে লেগেছে এবং আসন্ন পাঁচ প্রকল্প কী কাজে লাগবে, সেসব যথার্থই গুরুতর প্রশ্ন বৈকি! তবে নতুন পাঁচ প্রকল্পের কারণে বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ডেস্কগুলোর কর্মী ও পরামর্শকদের চাকরি যে প্রকল্পের মেয়াদ পর্যন্ত মোটামুটি স্থায়ী হয়ে গেল, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। কিন্তু এ প্রকল্পগুলোর আওতায় গৃহীত ঋণের দ্বারা বাংলাদেশ যে সত্যি সত্যি লাভবান হবে, সে বিষয়ে কি নিশ্চিত হওয়া গেছে?
আবু তাহের খান : সাবেক পরিচালক, বিসিক; ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত
atkhan56@gmail.com
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023